ভালবাসার গল্প: ইচ্ছের প্রণয়! পৃথী আক্তার! পর্ব-২
আহাদ চেম্বারে একটি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ বসে আছে ।ওর মনে চলছে নানা ভাবনা। অপারেশন টাইমের কথা ভাবলে এখনো তার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে । অপারেশনের ঐ মুহুর্ত টি যেন এখনো চোখের সামনে ভাসছে।
তখন ওটির মাঝে হুট করে ইচ্ছের স্পন্দন অস্বাভাবিক হতে থাকে। ধীরে ধীরে তা কমে যেতে শুরু করে।
আহাদ তখন থমকে যায়।রোগী অপারেশনের সময় ডাক্তারদের শক্ত থাকতে হয় ।যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের স্বাভাবিক থাকতে হবে । কিন্তু আহাদ তখন স্থির থাকতে পারেনি । ওর হাত দুটো কাঁপতে শুরু করে।
জীবনে এই প্রথম কোনো কেসের সময় যে আহাদের এমন অবস্থা হবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি ওটি রুমে উপস্থিত সবাই। আহাদ মুখ তুলে তাকায় ইচ্ছের মুখের দিকে। চোখের পাতা দুটি বন্ধ অথচ তাও মুখটা কত মায়াবী। মেয়েটির বলা কথাগুলো গুলো মাথায় ঘুরতে থাকে।
না!!! আমাকে আর সময় নষ্ট করলে চলবে না। আমি কথা দিয়েছি ওকে ওর পরিবারকে। ওকে ওর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিবো সুস্থ্য সহিত।আহাদ আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দ্রুত সবাইকে নির্দেশনা দেয় । এবং মেহরিন দ্রুত লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা করে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনুকূলে আসতে সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
স্যার ৫৮৯ কেবিনের পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে আপনাকে একবার যেতে হবে।
হঠাৎ কারো কথায় আহাদ ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। চোখের পাতা দুটি খুলে মাথা উঁচু করে একজন নার্সকে দেখতে পায় যে উক্ত কথাটি বলেছে।
ইচ্ছের জ্ঞান ফিরেছে? আহাদ একটু আস্তে বলে ।
জি স্যার, আপনি একবার গেলে ভালো হয় নার্সটি কথা বলে লাজুক হেসে আহাদের মুখের দিকে তাকায় এবং ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে থাকে। এই নার্সটি কিছু দিন আগে নতুন এসেছে। আহাদকে প্রথম দেখার ক্রাশ খেয়ে গেছিলো।
কিন্তু এ তো আর জানে না কাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে।
এই ক্রাশ হয়তো ওর জন্য বাঁশ হতে পারে।
কি ব্যাপার আপনি পেশেন্টের ইনফরমেশন দিতে এসেছেন নাকি তাকিয়ে থাকার মিশনে লেগেছে?আহাদ একটু জোরে ধমক দেয়।
নার্সটি আহাদের ধমকে মুখটা চুপসে যায়।
ইশ !!!!আমি এতদিন কার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম এতো পুরো জাঁদরেল মনে মনে কথা গুলো ভেবে ভেংচি কাটে।
ই...ইয়ে মানে আমি কিছু না...... বলে নার্সটি দৌড়ে চলে যায়। না জানি আবার কোন ধমক দেয়।
এতক্ষণ ধরে নার্সের প্রতিক্রিয়া দেখছিল আহাদ। নার্স কে তার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকায় আবার নার্সের ভাব ভঙ্গি দেখে ওর প্রচন্ড বিরক্ত হয়। শেষে না পেরে নার্সকে এক ধমক দেয়।
এরপর ইচ্ছের কথা মনে আসতে ও ইচ্ছের কেবিনের দিকে ছুটে যায়।
ইচ্ছে বেডে শুয়ে আছে চোখের পাতা দুটি অল্প অল্প করে খুলে রেখেছে। এইতো কিছুক্ষণ পূর্বে জ্ঞান ফিরেছে। ইচ্ছের বাবা মা ইচ্ছের জ্ঞান ফিরতে দেখায়
অনেক খুশি হয়েছে। তাদের চোখ মুখে যেন আনন্দের ফোয়ারা বইছে। তারা তৎক্ষণাৎ আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।
আহাদ ইচ্ছের কেবিনে প্রবেশ করলো। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ইচ্ছে মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাতে
আহাদ কে দেখতে পেয়ে অস্ফুর্ত স্বরে বললো,
আ...আহাদ স্যার.....
আহাদ ছুটে এলো ইচ্ছের কাছে ।
হুশ!!!! এখন কথা বলো না, প্রবলেম হবে বলে ইচ্ছেকে থামিয়ে দেয় । এরপর ইচ্ছের চোখের দিকে তাকাতে দেখতে পায় ইচ্ছের চোখে না বলা কি কথা আছে যেগুলো সে বলতে চায় । আহাদ অনেক্ষণ সে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমি জানি তোমার অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এখন কথা বলা তোমার জন্য ঠিক হবে না। তোমার বুকে চাপ পড়তে পারে যা তোমার জন্য মঙ্গল কর নয়।
এরপর ইচ্ছের চোখের দিকে চেয়ে আবার বলে,
আমি শুনবো তোমার কথা। আগে তুমি একটু সুস্থ্য হয়ে নাও বলে আহাদ ইচ্ছের বাবা-মাকে কিছু গাইড দিয়ে গেল।
ইচ্ছে আহাদের যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো ফ্যালফ্যাল করে। ওর মনে চলছে অনেক কথা যেগুলো
ও আহাদকে বলতে চায় । এরপর চোখ দুটি ধীরে ধীরে
বন্ধ করে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
সকালে মিষ্টি রোদের আলো চোখে পড়ায় ইচ্ছে চোখ খুলে তাকালো। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে। ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করলো। শরীরটা কেমন টন টন করছে ব্যথায়। পাশে সোফায় তার মা ঘুমিয়ে আছে দেখতে পেল। কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার টেবিলের দিকে তাকাতে দেখতে পেল পানির জগ ও গ্লাস। হাত বাড়িয়ে গ্লাস টা নিতে গেলে ঠাশ করে গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে গেল।
ইচ্ছে আঁতকে উঠলো !!!
কোনো কিছুর ঝনঝন করে পড়ে যাওয়ার শব্দে ইচ্ছের মা দ্রুত উঠে বসলেন
কি হয়েছে ইচ্ছে.... বলে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে মেঝেতে চোখ যেতে ইচ্ছে দিকে আবার তাকালো
আ..মি আমি পানি খ..খাবো ইচ্ছে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
ইচ্ছে মা দ্রুত উঠে ইচ্ছে পানি দিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা গ্লাসের টুকরো গুলো ঝাড়ু দিয়ে উঠিয়ে ফেললেন। পরে না আবার কার পা কেটে যায়।
ইচ্ছে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর কেবিনে একজন মেয়ে ডাক্তার প্রবেশ করলো ও সাথে দুজনে নার্স
ইচ্ছে এখন তোমার শরীর কেমন লাগছে? অকস্মাৎ কারো ডাকে ইচ্ছে চোখ মেলে তাকিয়ে একজন সুন্দর মেয়েকে দেখতে পেল। ইচ্ছে চিনে ইনাকে অপারেশন সময় ছিল ।
মেহরিন ইচ্ছেকে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হেসে আবার জিজ্ঞেস করল,
ইচ্ছে এখন কি তোমার খুব বেশি ব্যথা করছে? আমাকে বলো তাহলে আমি তোমাকে মেডিসিন দিবো।
না...আ... আমার এখন বেশি ব্যথা করছে না তবে একটু একটু ব্যাথা করছে ইচ্ছে খুব ধীরে ভাঙা গলায় বললো ।
একটু তো ব্যথা করবে তবে তা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। মেহরিন ইচ্ছের কথায় উত্তর দিয়ে পরমুহূর্তে মেহরিন ইচ্ছেকে চেক করে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল ।এরপর ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
ইচ্ছে তুমি জানো তুমি অনেক লাকি?
ইচ্ছে মেহরিন এর কথায় ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়।
মেহরিন ইচ্ছের তাকানোর মানে বুঝতে পেরে ঠোঁটে হাসি আরো একটু প্রসারিত করে বলে,
যখন তুমি ওটিতে ছিলে তখন হুট করে তোমার হ্নদস্পন কমে আসতে থাকে। তুমি জানো তুমি তো আমাদের এক মুহুর্তের জন্য ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
আর আহাদ স্যার আমরা যাকে আজ পর্যন্ত ওটির
সময় দুর্বল হতে দেখিনি সে এই প্রথম তোমার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল। পরমুহূর্তে অনেক চেষ্টার পর তোমার অবস্থা স্বাভাবিক হয় ।
উফ্ !কি একটা পরিস্থিতি যে আমরা ফেস করেছি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। তবে তুমি সত্যি অনেক লাকি তাইতো তুমি আবার সারভাইব করেছ।
ইচ্ছে মেহরিন এর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো।ওর ভেতরে চলছে অন্য কথা। ও একবার দেখতে চাইছে আহাদ কে।
আচ্ছা ইচ্ছে ,তুমি এখন রেস্ট নাও আমি আসি । আমার আবার রাউন্ডে যেতে হবে বলে মেহরিন উঠে দাঁড়ালো । ইচ্ছেকে মেহরিনের অনেক ভালো লেগেছে।
মেয়েটির মায়াবী মুখটা দেখে মেহরিন অনেক মায়া হয় মেয়েটির প্রতি। কি সুন্দর কোমল মুখশ্রী! অথচ মেয়েটির উপর দিয়ে কত বড় ঝড় গেল।মেহরিন মনে মনে দুঃখ প্রকাশ করে একবার ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে চলে ।
সময় দেখতে দেখতে চলে যায় । এই তো সাতদিন চলে গেছে। এই কয়দিনে ইচ্ছে আগের থেকে একটু স্টেবল
হয়েছে।কিন্তু ইচ্ছের মনে ঘুরছে নানা কথা। চোখ দুটি
বার খুঁজছে একজন কে কিন্তু এই সাত দিনে তার দেখা নেই। এইতো এই সাতদিনে অনেক ডাক্তার নার্স এসে ওকে দেখে গেছে অথচ একবারও আহাদ আসে নি।
আপনি কোথায় আহাদ স্যার ? একবারও কি আমাকে
দেখতে আসেনি? অপারেশন করে কী আপনার দায়িত্ব শেষ? আমি কি আপনার পেশেন্ট নই ? কথাগুলো অভিমান করে মনে মনে বলে আবার পরমুহূর্তে মুখ ভেংচি কাটে বললো,
আমাকে দেখতে আসেনা তাতে আমার কি? আমি কেন উনার কথা ভাববো? পঁচা ডাক্তারের কথা ভেবে তোর কাজ নেই ইচ্ছে। আসলেই ডাক্তার দের হ্নদয় নেই ।
নয়তো তোকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে একবারও দেখতে আসলো না। শুধু প্রথম দিন এসেছিল জ্ঞান ফিরার পর
আমি বুঝিনা না... আমার জ্ঞান না ফিরলে ওনার যে
সমস্যায় পড়তে হবে। পাজি ডাক্তার!!! আমি আর.... আপনার কথা ভাববো না। আপনি যেখানে খুশি সেখানে যান । আমার কাছে আর না আসেন... তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি শুধু সুস্থ্য হলে এখান থেকে চলে যাব হুম.... ।
কিন্তু মন কি মানতে চায় মন তো ঘুরে ফিরে ঐ তার কথা মনে পড়ে।চোখ দুটি একবার তাকে দেখতে চায় কিন্তু কেন ইচ্ছে বুঝতে পারছেনা।
চলবে?
কেমন হলো ? আপনাদের রেসপন্স চাই কিন্তু।আর আমি ইচ্ছের হার্ট ব্লকেজ গুগলের সহায়তা নিয়েছি। জানি না কতটুকু সত্য। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
আরও পড়ুন: ইচ্ছের প্রণয়|পৃথী আক্তার| পর্ব-৩
0 Comments