ইচ্ছের প্রণয়|পৃথী আক্তার| পর্ব-১

ভালবাসার গল্প: ইচ্ছের প্রণয়! পৃথী আক্তার! পর্ব-১

শুনেছি ডাক্তারদের নাকি হৃদয় নেই! কথাটা কি সত্যি, আহাদ স্যার?

মেয়েটি সামনে বসে থাকা আহাদ স্যারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

আহাদ তখন রোগীর ফাইলে মনোযোগ দিচ্ছিল। হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে থমকে গেল। ফাইল থেকে মুখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেল মেয়েটিকে। পরনে সাদা জামা, চোখে কৌতূহলের ঝিলিক, আর ঠোঁটে এক চিলতে মৃদু হাসি।


আহাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে হুট করে চিনে ফেলল—গত সপ্তাহে এসেছিল সে। নামটা কী যেন? হ্যাঁ, মনে পড়েছে—ইচ্ছে।

ইচ্ছে আবার প্রশ্ন করল, "কি হলো আহাদ স্যার? উত্তর দেবেন না?"

ইচ্ছে’র কথায় আহাদ একটু ভড়কে গেল। মেয়েটির বয়স কতই বা হবে—পনেরো-ষোলো। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেন, আহাদ বুঝতে পারল না।

আহাদ একটু ভেবে বলল, "তুমি কেন এমন প্রশ্ন করছো?"

"কারণ, অনেকেই বলে, ডাক্তাররা খুব কঠোর। ওদের নাকি কোনো আবেগ নেই। সত্যিই কি তাই?"

আহাদ শান্তভাবে উত্তর দিল, "ডাক্তাররা আবেগ রেখে কী করবে বলো? যদি প্রতিটি রোগীর কষ্ট নিজের মনে নিয়ে ফেলে, তবে তো সে নিজেই ভেঙে পড়বে।"

"আপনি তো হার্টের ডাক্তার। আপনার নিশ্চয়ই হৃদয় নেই?"

মেয়েটির এমন কথায় আহাদ হতবাক। ভ্রু কুঁচকে ইচ্ছে’র দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

"তোমার কেন এমন মনে হলো যে আমার হৃদয় নেই?"

"কারণ, আপনি তো সারাদিন মানুষের হৃদপিণ্ড কাটাছেঁড়া করেন। তাহলে আপনার নিজের হৃদয় কেমন করে থাকে, স্যার? সারা দিন যে অন্যের হৃদয় টুকরো টুকরো তার কিভাবে হ্নদয় থাকে?

শেষের কথাগুলো ইচ্ছে ধীরে, আহাদের চোখে চোখ রেখে বলল।

মেয়েটির এমন যুক্তিতে আহাদ খানিক হতভম্ব হয়ে গেল। হাসবে না কাঁদবে—বুঝতে পারল না। সিরিয়াসলি, এটা কোনো যুক্তি হলো!

তারপর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে বলল,

"আমি হার্টের ডাক্তার ঠিক আছে, কিন্তু আমি হার্টলেস নই। আমি তাদের হৃদয় অপারেশন করি যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে। তোমার ভাষায় যেটাকে টুকরো টুকরো বলা হয়, সেটা না করলে তারা সুস্থ হবে কী করে?

তাদের বাঁচিয়ে তোলার জন্যই তো হৃদয় টুকরো করতে হয়, বুঝেছো, পিচ্চি মেয়ে?"

আহাদ হালকা হেসে তাকাল ইচ্ছে’র দিকে।

ইচ্ছে আহাদের হাসির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ প্রশ্ন করল,

"আপনারা যখন অপারেশন করেন, তখন যদি সিরিয়াস কিছু হয়, তখন কি খুব কষ্ট পান? কান্না করেন?"

মেয়েটির প্রশ্নে আহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

"কষ্ট পাই ঠিকই, কিন্তু কান্না করি না।"

"তাহলে কি ডাক্তারদের কাঁদতে মানা?"

ইচ্ছে’র কণ্ঠে নিঃশব্দ কৌতূহল।

আহাদ হালকা হেসে বলল, "না, কাঁদা মানা নেই। তবে সময় মতো কাঁদা আর সময় মতো শক্ত থাকা—এটাই ডাক্তারদের শিক্ষা।"

ইচ্ছে আস্তে, খুব শান্ত গলায় বলল,

"তাহলে অপারেশনের সময় যদি আমার কিছু হয়, আপনি তো কান্না করবেন না, তাই তো?"

আকস্মিকভাবে মেয়েটির এমন কথায় আহাদ অবাক হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকাল মেয়েটির মুখের দিকে। মেয়েটি তখন মেঝেতে দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছে।

"মানে! তোমার অপারেশন?" আহাদ হতবাক।

ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।

"আমার অনেক দিন ধরে বুকে ব্যথা হচ্ছিল। আমি এক সপ্তাহ আগে আম্মুর সাথে এসেছিলাম। সেদিন একজন ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছিলেন। আজ সেই রিপোর্ট দিয়েছে। আমি ডাক্তারকে আম্মুর সাথে বলতে শুনেছি আমার নাকি হার্টে ব্লক হয়েছে। তাই নাকি আমার হার্টে অপারেশন করতে হবে। আর তিনি আপনার কথাই আম্মুকে বলছিলেন। তারা হয়তো এখনো আপনার সাথে এই বিষয়েই কথা বলছেন। তাই আমি চুপিচুপি আপনার কাছে চলে এসেছি।"

আহাদ হতবাক। এতো ছোট মেয়ের হার্ট ব্লক! অপারেশন করতে হবে! সে মেয়েটির দিকে তাকাল। মেয়েটির মুখে মায়াময় ভাব, চোখ দুটো অদ্ভুত সুন্দর। চোখে জল টলমল করছে—হয়তো কান্না চেপে রেখেছে। অবশ্যই সে ভয় পেয়েছে। ভয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, এতো অল্প বয়সী মেয়ে!

আহাদ কিছু বলার জন্য মুখ খুলল, ঠিক তখনই কক্ষে প্রবেশ করলেন ইচ্ছে’র মা আর ডাক্তার শিহাব, যিনি এতক্ষণ ইচ্ছে’র মায়ের সাথে কথা বলছিলেন।

"ইচ্ছে! তুমি এখানে কী করছো? জানো, তোমাকে আমি কখন থেকে খুঁজছি?"

ইচ্ছে’র মা একটু রাগ করে বললেন।

ইচ্ছে মায়ের ধমকে কেঁপে উঠল। আহাদ সেটা লক্ষ্য করল।

"আপনি শান্ত হোন। ইচ্ছে আমার সাথে কথা বলছিল," আহাদ শান্ত গলায় বলল।

আহাদের কথা শুনে ভদ্রমহিলা একটু শান্ত হলেন। ডাক্তার শিহাব এগিয়ে এসে আহাদকে কিছু ফিসফিস করে বললেন।

"ইচ্ছে, তুমি এখন বাইরে গিয়ে একটু বসো," আহাদ বলল।

ইচ্ছে একবার আহাদের দিকে, একবার মায়ের দিকে তাকাল। মায়ের চোখের ইশারায় ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আহাদ ইচ্ছের যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

আহাদ বসে আছে নিজের কেবিনে। চারপাশে নীরবতা, শুধু দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ যেন থেমে থেমে তাঁকে বাস্তবে টেনে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু আহাদ যেন কোথাও নেই, সে যেন হারিয়ে গেছে নিজের ভেতরের এক গহীন জগতে। সামনে টেবিলে রাখা খোলা ফাইল আর কিছু রিপোর্ট। ওই ফাইলের পাতাগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে আছে ইচ্ছের সমস্ত মেডিকেল হিস্ট্রি। মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।তৎক্ষণাৎ বুকটা ধক করে উঠলো। ভেতরটা কেমন নড়ে উঠলো। 

চোখের সামনে ভেসে উঠলো কোনো মায়ের আর্তনাদ। ইচ্ছে চলে যাওয়ার পর ইচ্ছের মা আহাদকে রিপোর্টটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,

"ডাক্তার সাহেব, রিপোর্টে যা আছে, তা কি সত্যি?"

আহাদ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল । রিপোর্টটা দেখে মাথা নাড়িয়ে জানালো সত্যি।  ভদ্রমহিলা কথাটি শুনে মেঝেতে ধপাস করে পড়ে হাওমাও করে কাঁদতে লাগলেন। আহাদ তাড়াতাড়ি তাঁকে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে পানি এনে দিল, শান্ত হতে বললো। তবুও তিনি শান্ত হলেন না। আর  হবেই বা কিভাবে নিজের সন্তানের এমন করুন অবস্থার কথা শুনে কোন মা শান্ত 

থাকতে পারে।ইচ্ছের মা কাঁদতে কাঁদতে তখন জানালেন,

"ইচ্ছে আমাদের একমাত্র সন্তান। ওকে নিয়ে আমাদের পৃথিবীর।

ঠিক তখনই ইচ্ছের বাবাও হসপিটালে এসে পৌঁছালেন। একমাত্র আদরের মেয়ের কথা শুনে তিনি যেন ভেঙেই পড়লেন।

"আমাদের মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায়, আমরা কী নিয়ে বাঁচবো, ডাক্তার সাহেব?"— ভদ্রলোকের কন্ঠে অসহায়ত্বের ছাপ।

আহাদ দুজনের দুঃখ ভারাক্রান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

"আপনাদের চিন্তা করার কিছু নেই। ইচ্ছের ব্যাপারে আমরা বোর্ড মিটিংয়ে বসবো। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ইচ্ছের চিকিৎসা শুরু করবো। ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে।"

আহাদের আশ্বাসে ইচ্ছের বাবা-মা কিছুটা স্বস্তি পেলেন। আহাদের ভিতরটাও যেন কেমন করছে।

কেবিনে বসে আহাদ  এই কথাগুলো ভাবছিলো। হঠাৎ উঠে ইচ্ছের ফাইলটি আবার হাতে নিলো। পাতাগুলোতে চোখ বুলাতে বুলাতে বুকটা কেমন যেন ধকধক করতে লাগলো। প্রতিদিন এমন হাজারো রিপোর্ট তাঁর হাতে আসে। কিন্তু আজকের এই রিপোর্ট তাঁকে পুরোপুরি অসাড় করে দিয়েছে।


আহাদ গভীর মনোযোগে আবার রিপোর্টের দিকে তাকালো:


Patient Name: Ichche Rahman

Age: 16 years 5 months

Consultant: Dr. Sharif Ahammed


Findings:

✔️ Patient is diagnosed with severe heart blockage.

✔️ 60% blockage found in the main artery.

✔️ Immediate surgical intervention is advised.


Remarks:

Delay in treatment may lead to serious complications.


আহাদ একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। বারবার মেয়েটির কথাগুলো মনে পড়ছে— তার সরল প্রশ্ন,  মায়াবী চোখের চাহনি।

এত অল্প বয়সে এত বড় বিপদ! অকালে হারিয়ে যাবে  ছোট একটি প্রাণ যার হয়তো জীবনে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা আছে।যদি একটু দেরি হয়, তাহলে হয়তো বড় কিছু ঘটে যেতে পারে।

এতটুকু মেয়ে! যার জীবনের গল্পটা এখনো শুরুই হয়নি,সে কিভাবে অকালে নিঃশেষ হতে পারে!

আহাদ আর দেরি না করে দ্রুত ফোন তুলে কাউকে ডেকে পাঠালো,

"তুমি ইমিডিয়েটলি আমার কেবিনে এসো, ফাস্ট।"

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো।

"স্যার, আসবো?"

"হ্যাঁ, ভেতরে এসো, রাফাত।"রাফাত আহাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট।

রাফাত দ্রুত এসে আহাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

"সব ঠিক তো, স্যার? কিছু হয়েছে?"

আহাদ গম্ভীর গলায় বললো,

"মেডিকেল বোর্ড মিটিংয়ের আয়োজন করো। আজ ঠিক তিনটার মধ্যে সবাই যেন উপস্থিত থাকে।"

রাফাত হতভম্ব হয়ে গেলো। এমন আদেশ এখন কীভাবে পালন করবে!

"কিন্তু স্যার... সবাই তো চলে গেছেন। এখন কীভাবে তাদের ডাকবো?"

আহাদ ঠাণ্ডা গলায়, কিন্তু দৃঢ়ভাবে বললো,

"I don’t care, Rafat. I said, everyone must attend the meeting. So, no excuses."বলে 

আহাদ সেখান থেকে চলে গেল, আর রাফাত হাঁ করে তাঁর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর আর দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত কাজে লেগে পড়লো।

 আহাদ— আহাদ সরকার ,কার্ডিয়াক সার্জন (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন)

পদবি: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, হৃদরোগ বিভাগ।

 মাত্র ৩০ বছর বয়সে নিজের দক্ষতা আর নিষ্ঠার মাধ্যমে অসংখ্য জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। আহাদের হাতে জীবন ফিরে পেয়েছে অনেকে। রোগীর প্রতি তাঁর মনোযোগ নিখুঁত, ত্রুটি একদম বরদাস্ত করে না। সহকর্মীদের কাছে সে যেমন আদর্শ, তেমনি আবার অনেকের কাছে হিংসার পাত্র।

ইচ্ছে মন খারাপ করে বসে আছে নিজের ঘরে।  তখন সবার সামনে মায়ের ধমকে খুব কষ্ট পেয়েছে। সবার সামনে তাকে কেন এভাবে বলতে হবে? সে কি ছোট বাচ্চা ? আবার নিজের অসুস্থতার কথা জেনে ইচ্ছের খুব কান্না পাচ্ছে। 

ও ধীরে ধীরে ওয়াশ রুমে চলে গেল । শরীরটা মনে হয় চলতে চাইছে না। ঝর্ণা ছেড়ে ধপ করে ঝর্নার নিচের বসে পড়ল। চোখের পাতা গুলো রক্তবর্ণের ন্যায় হয়ে গেল। কন্দন রত অবস্থায় মনে মনে বলতে লাগলো,

"আমি কি সত্যিই আর বেশি দিন বাঁচবো না!

আমার কি সত্যিই আর কারও সাথে কথা বলার সুযোগ থাকবে না!

আমি কি আর মায়ের কাছে গিয়ে বলার সুযোগ পাবোনা— 'মা, আমাকে দু নলা ভাত খাইয়ে দাও না। আমাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও না। তোমার গলার মিষ্টি গান আমার খুব প্রিয়। তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ আমি বড্ডো ভালোবাসি।

আমি কি আর বাবার কাছে গিয়ে দুষ্টুমি করতে পারবো

না! এটা ওটার জন্য বায়না ধরতে পারবোনা!

আমি কি আর বাবা মাকে বলতে পারবো- আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি।

"আমি কি সত্যিই সেভাবে হারিয়ে যাবো পৃথিবীর বুক থেকে,যেভাবে শীতের ঘন কুয়াশা নিঃশব্দে দুপুরের রোদের আলিঙ্গনে হারিয়ে যায়—

না কোনো শব্দ রেখে, না কোনো চিহ্ন রেখে।

যেন কখনো ছিলামই না— নিঃশব্দে, নিরবে,নিঃশেষে।"

ইচ্ছের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগছে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পানির মতো অশ্রু তার চোখ দিয়ে  গড়িয়ে কপোল বেয়ে পড়লো। ঝর্ণার পানির সাথে তা মিশে গেল।

সে জানে, তার জন্য পৃথিবীটা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। যেন তার আকাশ, তার বাতাস—সব কিছু একটু একটু করে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

ইচ্ছে ধীরে ধীরে  চোখের পাতা বন্ধ করলো।

আহাদ  জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে 

দূরে আকাশটা মেঘলা, হঠাৎ যেন চারপাশটা ভারী হয়েএসেছে। কিন্তু আহাদের মাথার ভেতর এখনো গুনগুন করে বাজছে ইচ্ছের সরল প্রশ্ন, ইচ্ছের বাবা-মায়ের কান্নার শব্দ।

ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক ৩টা। কনফারেন্স রুমে একে একে সবাই এসে জড়ো হয়েছে। আহাদের কড়া নির্দেশের জন্য কেউই সাহস করেনি এক মিনিটও দেরি করতে।

আহাদ কক্ষে প্রবেশ করলো। চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— "Thanks for coming on such short notice. Let’s begin."

সবার দৃষ্টি একযোগে আহাদের দিকে। টেবিলের সামনে রাখা ফাইলটি খুলে আহাদ বললো,

"আমি আপনাদের সামনে আজকের সবচেয়ে জরুরি কেস উপস্থাপন করছি। রোগীর নাম: ইচ্ছে রহমান। বয়স: মাত্র ১৬ বছর। সিভিয়ার হার্ট ব্লকেজ। ৬০% ব্লক এই বলে আহাদ থামলো । 


আমি এই রিপোর্ট তৈরি করেছি। পেশেন্টের অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। দ্রুত এনজিওপ্লাস্টি করা ছাড়া বিকল্প  নেই।"ডা. শরীফ আহমেদ বললেন  যিনি ইচ্ছের প্রধান কনসালটেন্ট ছিলেন ।

"অপারেশনের ঝুঁকি অনেক, বয়সটা খুবই কম। এত অল্প বয়সের রোগী, এতো বড় রিস্ক কে নেবে?"ড. আনোয়ার হোসেন কথাটি হুট করে বলে উঠলেন।

আনোয়ার হোসেনের কথায় সবাই তার দিকে তাকালো 

আহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।

রিস্ক না নিলে মেয়েটি বাঁচবে কি করে?  একজন ডাক্তার হয়ে এ কথা বলতে আপনার দ্বিধা হচ্ছে না 

ড.আনোয়ার হোসেন। আহাদ রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো। আহাদ যে খুব রেগে গেছে সবাই তা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলো। সাথে সবার মুখে একটা ভয় কাজ করলো কারন তারা জানে আহাদ ভীষণ রাগী। রেগে গেলে কাউকে কমে ছাড়ে না।

আনোয়ার হোসেনের মুখটা আহাদের ধমকে চুপসে গেল। মাথা নিচু করে বললো ,

"সরি স্যার"

আহাদ আনোয়ার হোসেনের কথা কানে নিলো না । সবার দিকে আবার তাকালো তাদের মতামতের জন্য।

 "Sir, পেশেন্টের বয়স খুবই কম। এই বয়সে হার্ট ব্লকেজ খুবই রেয়ার। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপারেশনের সময় হৃদস্পন্দন হঠাৎ কমে যেতে পারে। পেসমেকার প্রস্তুত রাখতে হবে।" ডা. মেহরিন ফারজানা কথাটা বললো। মেহরিন হসপিটালের একজন অন্যতম দক্ষ কার্ডিওলজিস্ট। 


মেহরিনের কথায় আহাদ মেহরিনের দিকে তাকালো।

মেয়েটি যথেষ্ট দক্ষ সবদিক থেকে। আহাদ মেহরিনের সাথে অনেক বার অপারেশন হ্যান্ডেল করেছে । মেয়েটি ওর থেকে তিন বছর ছোট ।মেহরিনের দক্ষতা আর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে অনেক বার মুগ্ধ হয়েছে।


মেহরিন আপনি  ইচ্ছের লাইফ সাপোর্টের দিকে খেয়াল রাখবেন।

— "Definitely, Dr.Ahad  আমি অপারেশনের সময় পেশেন্টের লাইফ সাপোর্ট ম্যানেজ করবো।"

আহাদ ধীরে মাথা নাড়লেন। চোখে তীক্ষ্ণ এক দৃঢ়তা ফুটে উঠলো। সামনে রাখা কলমটা হাতে নিয়ে শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,

— "এই অপারেশন শুধু একটা কেস না। এখানে জড়িয়ে আছে মেয়েটার ভবিষ্যৎ,পরিবারের সমস্ত স্বপ্ন, সমস্ত ভালোবাসা। আমরদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ওকে ফিরিয়ে আনার।

চারদিকে নিস্তব্ধতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। সবাই আহাদের কথার গভীরতা বুঝে গেছে। মুহূর্তের জন্য চারপাশ ভারী হয়ে উঠলো।


আহাদ আবার কথা বলা শুরু করলো। এবার তার কণ্ঠে ছিল নিরঙ্কুশ নেতৃত্বের সুর,

— "সময় খুব কম। আমি অপারেশন লিড করবো। মেহরিন, আপনি পেসমেকার আর লাইফ সাপোর্টের সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। ডা. শরীফ, আপনি এনজিওপ্লাস্টির সব প্রস্তুতি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করবেন। ড.আনোয়ার হোসেন, আপনি অপারেশন থিয়েটার পুরোপুরি প্রস্তুত রাখবেন।সব স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল যেন হুবহু মেনে চলা হয়। 

সবাই নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সাড়া দিলো। 

Remember, the patient’s life is in Our hands now." আহাদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে কনফারেন্স রুম থেকে চলে গেল।

রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। নিস্তব্ধ হাসপাতালের করিডোরে শুধু মাঝেমধ্যে নার্সদের দ্রুত পায়ে হেঁটে যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইচ্ছে এখন হাসপাতালের বেডে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। নিঃশ্বাস চলছে, কিন্তু যেন বড় ক্লান্ত, বড় ভারী। ওর ছোট্ট শরীরটা যেন অনেক বড় লড়াইয়ে হেরে গিয়ে এখন সামান্য বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু কে জানে, এই বিশ্রাম কতটা নিরাপদ!

ইচ্ছের অবস্থা ভালো না। কিছুক্ষণ আগেই ওকে  এখানে ভর্তি করা হয়েছে। পাশে বসে আছে ওর মা—নিরবে চোখের জল ফেলছেন। কেউ নেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো। মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে বুকটা যেন তার ফেটে যাচ্ছে। মুখ চেপে কান্না করে শুধু আল্লাহর নাম নিচ্ছে যেন তার মেয়েটাকে দ্রুত ঠিক করে দেন। নিরবে তিনি মেয়ের জন্য প্রার্থনা করছেন।ইচ্ছের বাবা তখন ভর্তি সংক্রান্ত সব ফর্মালিটিজ পূরণ করতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সময় যেন হাতে খুব কম, আর মেয়েটাকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁচাতে হবে।


 কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহাদ। ভিউ গ্লাসের ওপাশ থেকে আহাদ দেখছে ইচ্ছের ফ্যাকাশে মুখটা। বুকের ভেতর হঠাৎ একটা ধক করে উঠলো।

এইতো—এইতো সকাল বেলায় না মেয়েটা আমার সাথে কথা বলছিল। হাসছিল। যেন পৃথিবীর সবটা প্রাণ ওর মাঝে ।

আহাদ কি কখনো ভেবেছিল এত দ্রুত পরিস্থিতি এভাবে পাল্টে যাবে?

আহাদ সব কাজ শেষে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। ঠিক তখনই হঠাৎ ওর চোখে পড়ে স্ট্রেচারে শোয়ানো ইচ্ছেকে। থমকে যায় আহাদ। মনে হয়েছিল সময় যেন এক লহমায় থেমে গেছে। সমস্ত চিন্তা উড়ে গিয়ে আহাদ ছুটে গিয়েছিল ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছের শরীরটা তখন নিথর হয়ে পড়ছিলো। আহাদ আর এক মুহূর্ত দেরি করেনি। নিজের হাতেই ইচ্ছেকে কেবিনে শিফট করে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে। সে জানে, এক সেকেন্ড দেরি করাও ইচ্ছের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

সকালে রোদের আলো চোখে এসে পড়তে ইচ্ছে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। চোখ  মেলতে অচেনা জায়গা‌ দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে

মনে পরলো কালকে ওকে এখানে আনা হয়েছে। 

ইচ্ছে ধীরে ধীরে উঠে বসে পাশে তাকাতে মাকে দেখতে পেল যে কিনা সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।

"মা" ইচ্ছে ধীর গলায় ডাক দেয়।

ইচ্ছের কন্ঠ শুনে মা আঁতকে উঠে বসে পড়লেন, ইচ্ছের দিকে এগিয়ে গিয়ে ইচ্ছেকে জরিয়ে ধরে বললেন,

"ইচ্ছে! মা, তুই ঠিক আছিস? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? বল মা, আমাকে বল।"

ইচ্ছে মায়ের  চিন্তত মুখটা দেখে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বললো।

"আমি ঠিক আছি মা। কোথাও কষ্ট হচ্ছে না। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করো না, প্লিজ।"

ইচ্ছের মা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ইচ্ছের বাবা ও আহাদ কেবিনে ঢুকলো,

ইচ্ছের বাবার হাত ভর্তি কিছু কাগজ। মেয়েকে জেগে থাকতে দেখে ছুটে এলেন বিছানার পাশে।

"ইচ্ছে মা, তুই ঠিক আছিস তো? কাতর কন্ঠে বলে উঠলেন।

আমি ঠিক আছি বাবা , তুমি চিন্তা করো না আমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো তাইনা আহাদ স্যার? মৃদু হেসে শেষের কথাটি আহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

আহাদ ইচ্ছের কথায় ইচ্ছের দিকে তাকাতে দেখতে পেল  ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা । মেয়েটি এখনো তাকিয়ে আছে আহাদের দিকে।

হ্যাঁ, ইচ্ছে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আহাদ

কথাটি বলে আবার বললো,

আন্টি-আংকেল আপনারা এখন একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসুন আমি ইচ্ছের কাছে আছি।

আহাদের কথা শুনে ওনারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে তারপর সম্মতি জানালো। ইচ্ছেকে বলে উনারা বাইরে চলে গেলেন। ইচ্ছে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

আহাদ ইচ্ছের দৃষ্টি অনুসরণ করে এগিয়ে এসে একটি চেয়ার টেনে সেখানে বসলো। এরপর ইচ্ছের দিকে তাকালো।

ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটি মুখটা শুকিয়ে আছে। চোখ গুলো লাল লাল। কাল রাতে প্রচুর জ্বর এসেছিল। আহাদ সারারাত মেয়েটিকে এসে এসে চেকআপ করে গেছে। শেষ রাতের দিকে জ্বর কমে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে। এখন এই মেয়েটাকে কিভাবে বলবে একটু পর তার অপারেশনের কথা।আচ্ছা মেয়েটি কি ভয় পাবে?ভয় পাওয়াই তো স্বাভাবিক।

আচ্ছা ইচ্ছে তুমি ভবিষ্যতে কি হতে চাও? তোমার স্বপ্ন কী আমাকে বলবে? নিরবতা ভেঙ্গে আহাদ খুব শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ।

ইচ্ছে চুপচাপ তাকিয়ে রইল আহাদের চোখের দিকে। তারপর মুখটা একটু ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকাল। কাঁচের ওপারে আকাশটা মেঘলা, যেন একটু পর বৃষ্টি নামবে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে ইচ্ছে আস্তে বলল,

জানেন ,আহাদ স্যার, আমার স্বপ্ন খুব সাধারণ। আমি বড় হয়ে একটি হসপিটাল বানাতে চাই। এমন একটি হাসপাতাল... যেখানে গরিব মানুষরা ফ্রি-তে চিকিৎসা পাবে। তারা টাকা না থাকায় যেন কখনো চিকিৎসার অভাবে মরে না যায়। 

আহাদ স্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েটির স্বপ্ন এতটা নিখাদ, এতটা বড়—এটা সে কল্পনাও করেনি।

ইচ্ছে আবার বললো,

কিন্তু জানেন আহাদ স্যার… আমার এই স্বপ্নটা হয়তো আর কখনো বাস্তবে পরিণত হবে না।

হয়তো আমি বেঁচেই থাকবো না। হয়তো আমার সেই হাসপাতাল কখনো গড়েই উঠবে না… হয়তো আমি কারো জন্য কিছুই করতে পারবো না।

ইচ্ছের চোখের কোণে চিকচিক করে অশ্রুরা এসে ভিড় করলো।সে মুখ ঘুরিয় আহাদের দিকে তাকালো।এরপর ঠোঁটের কোণে একটা শক্ত করে চেপে ধরা হাসি রেখে বলল,

"তবু জানেন, স্যার… মনে মনে আমি hospital-এর নাম ভেবে রেখেছি—ইচ্ছের নীড় হসপিটাল।

ইচ্ছের কথাগুলো শুনে আহাদের ভিতরটা ধক করে উঠলো। মেয়েটির এমন আবেগ মাখা কথা আহাদের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিলো। মেয়েটির নিরব কষ্ট সে অনুভব করলো। মেয়েটি দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল ঠোঁটে লেগে আছে বেদনার মলিন হাসি।

কিছুক্ষণ পর কিছু একটা ভেবে আহাদ বললো ,

আচ্ছা ইচ্ছে তোমার নামের অর্থ জানো?

ইচ্ছে একটু অবাক হলো আহাদের প্রশ্নে। মাথা তুলে তাকালো,

"আমার নামের মানে ? ইচ্ছে মানে তো… যা মনে খুব করে চায়, বুকের ভিতরের গভীর আকাঙ্ক্ষা।"

আহাদ মাথা নেড়ে বলল,

"হ্যাঁ, ইচ্ছে মানে চাওয়া, ইচ্ছে মানে আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু জানো? ইচ্ছে মানে কখনো কখনো জীবন। কারণ মানুষ বেঁচে থাকে তার ইচ্ছেগুলোর জন্যই।"


ইচ্ছে চুপ করে শুনছিল।

আহাদ ধীরে ধীরে বলল,

"তুমি জানো, ইচ্ছে হারিয়ে গেলে, মানুষ বেঁচে থাকলেও তার মন বাঁচে না। তোমার নামটা শুধু তোমার নাম না, তোমার নামটাই তোমার শক্তি। তুমি চাইলে, তুমি পারবে। তুমি চাইলে, তুমি লড়তে পারবে। তুমি চাইলে, তুমি তোমার স্বপ্নটাকে বাস্তব করতে পারবে।"

ইচ্ছে আহাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো এরপর আহাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো ।

আহাদএকটু থেমে আবার খুব কোমল কণ্ঠে বললো 

"ইচ্ছে, আমি এখন তোমাকে এখন একটা কথা বলবো। তুমি ভয় পাবে  না, ঠিক আছে? আমি জানি তুমি সাহসী মেয়ে।"

ইচ্ছে আহাদের চোখের দিকে তাকালো যেখানে জমে আছে নানা কথা ।

"আপনি বলুন আহাদ স্যার, আমি শুনবো। আমি ভয় পাবো না।"

আহাদ ইচ্ছের দিকে মায়াময় দৃষ্টিতে তাকালো এরপর ধীর কন্ঠে বললো,

"তোমার অপারেশনের সময় এসে গেছে, ইচ্ছে। আর একটু পরেই তোমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। তুমি ভয় পেও না। আমরা সবাই আছি। আমি নিজে তোমার অপারেশনে থাকব। 

এই কথা শুনে ইচ্ছে মুহূর্তেই ভয় পেয়ে গেল। ওর বুক কেঁপে উঠলো, নিঃশ্বাস অগোছালো হয়ে গেল। কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে গেল। ঠোঁটটা একটু কাঁপল, কিন্তু কোনো শব্দ বের হলো না।

আহাদ ইচ্ছের ভীতু মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ওর কাঁচের মতো স্বচ্ছ চোখে স্পষ্ট আতঙ্ক। আহাদ বুঝতে পারলো, এখন এই মেয়েটার সবচেয়ে দরকার সাহস, ভালোবাসার স্পর্শ।

আহাদ ধীরে ধীরে ইচ্ছের হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিলো, উষ্ণ স্পর্শে ইচ্ছে কিছুটা কেঁপে উঠলো। খুব কোমল, খুব শান্ত কণ্ঠে আহাদ বললো—

— "ইচ্ছে, দেখো… ভয় পাওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ভয় পেয়ে যদি কেউ পেছাতে চায়, তখন ওর ইচ্ছেগুলো সত্যি হারে। তুমি কি তোমার ইচ্ছেগুলোকে হারাতে দেবে?"

ইচ্ছে কিছু বলতে পারলো না, শুধু মাথা নাড়লো—না।

আহাদ মুখে হালকা হাসি এনে বললো তাহলে তোমার ইচ্ছেকে পূরণ করার জন্য প্রস্তুত হও। খুব শ্রীঘ্রই সুস্থ্য ভাবে সবার মাঝে ফিরে এসো। আমরা তোমার সফলতা দেখতে চাই।

তাহলে তুমি অপারেশন করার জন্য রাজি তো?আহাদ ইচ্ছের মুখে  দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত কন্ঠে বললো।

ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকালো তারপর কিছু একটা ভেবে বললো,    "হুম আমি রাজি"

ইচ্ছের উত্তরে আহাদের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। হালকা হেসে বললো। 

তুমি ভয় পেয়ো না ইচ্ছে। আমি জানি তুমি খুব সাহসী।

তুমি নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করো। আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করছি বলে উঠে দাড়ালো।

ইচ্ছে আহাদের দিকে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকলো।

আহাদ ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে যেতে থাকলো ।

"আহাদ স্যার... আমি কি সত্যি ফিরে আসতে পারবো?যদি... যদি আমি না ফিরি... যদি আমি মাঝপথেই হারিয়ে যাই... ? ইচ্ছে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।

আহাদ ইচ্ছের কথা শুনে থেমে গেল। ওর বুকটা কেঁপে উঠল ইচ্ছের আবেগ ময়  কাতর প্রশ্ন শুনে। ইচ্ছে দিকে ঘুরে তাকিয়ে খুব ধীর গতিতে নরম কন্ঠে বললো ,

তুমি ফিরবে ইচ্ছে ইনশাআল্লাহ।

আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো 

তুমি শুধু তোমার ইচ্ছেকে বাঁচিয়ে রেখো। আহাদ আর না তাকিয়ে চলে গেল। ইচ্ছে আহাদকে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো।

#ইচ্ছের_প্রনয় —4

#পৃথী_আক্তার 


স্যার পেশেন্ট পালিয়েছে!


আকস্মিক নার্সের এমন কথায় আহাদ পিছন থেকে সামনে ঘুরে দাঁড়াল। দেখতে পেল একজন নার্স কে যায় চোখে মুখে আতঙ্ক ও ভয় ছড়িয়ে আছে।


What! 

কে পালিয়েছে ! আহাদ ভ্রু কুঁচকে নার্সকে জিজ্ঞেস করল ।


স্যার, ৫৮৯ কেবিনের ইচ্ছে নামের একটি মেয়ে ঐ,যে

যার একটু পর অপারেশন সে স্যার ,নার্স কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।


নার্সের কথা শ্রবণেন্দ্রিয় হতে আহাদ হতভম্ব গেল । মনে হলো ও ভুল শুনলো।


কি বললেন আপনি ইচ্ছে পালিয়েছে? চোখ বড়বড় করে 


হ্যাঁ স্যার,


কি সব বলছেন আপনি ইচ্ছে পালাতে যাবে কেন? হয়তো কেবিন থেকে বেরিয়েছে। আশেপাশে দেখুন পেয়ে যাবেন। আহাদ খুব ধীর গতিতে বললো যেন বিষয়টা ওর কাছে নিতান্তই তুচ্ছ মনে হলো।


কিছুক্ষণ পূর্বে ডক্টর মেহরিন নার্সটিকে পাঠায় ইচ্ছেকে অপারেশনের জন্য তৈরি করতে। নার্সটি ইচ্ছের কেবিনে ঢুকার পর বেড খালি দেখে। মুহূর্তেই নার্সের ভ্রু কুঁচকে যায়। ওয়াশ রুম ও বেলকনিতে ইচ্ছকে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। ঠিক তখনই কেবিনে প্রবেশ করে 

ইচ্ছের বাবা মা । ইচ্ছেকে ঘুম পাড়িয়ে তারা গিয়েছিল 

বাড়িতে কারণ ইচ্ছে অপারেশনের জন্য অনেক টাকা লাগবে। আর এমনি এমনি এত টাকা জোগাড় তো আর মুখের কথা নয়। কিন্তু তারা ফিরে এসে মেয়েকে

না দেখে  নার্সের দিকে তাকাতে নার্স ইচ্ছের ব্যাপারে বলে। ইচ্ছেকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে ইচ্ছের বাবা মা থমকে যায়।দিশেহারা হয়ে মেয়ে কে খুঁজতে থাকে। আর নার্সটি ছুটে আসে আহাদের কেবিনে।কারণ কিছুক্ষণ পর আহাদ অপারেশন করবে। নার্সটি আহাদের কথায়

আহাদের দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি মাথা নাড়িয়ে না বলে ,


না স্যার আমরা ওকে খুঁজেছি কিন্তু পাই নি পরমুহূর্তে নার্সটি আবার বিস্মিত হয়ে বললো ,

স্যার আমার মনে হয় কি জানেন মেয়েটি সত্যি পালিয়েছে। হয়তো অপারেশনের ভয়ে ।


নার্সটির কথায় আহাদ প্রথমে ইগনোর করলেও পরমুহূর্তে আর  তার কথা ফেলে দিতে পারলো না ।


সত্যি তো ! অপারেশনের ভয়ে আবার ইচ্ছে কোথাও লুকিয়ে নেই তো। কিন্তু আমি যতটুকু ওকে দেখেছি ও তো লুকানোর মতো মেয়ে না কথা গুলো মনে মনে বলে

পরমুহূর্তে  ছুটে গেল ইচ্ছের কেবিনে। নার্সটিও আহাদের পিছনে পিছনে ছুটলো।


আহাদ কেবিনে প্রবেশ করতেই ইচ্ছের মা আহাদের দিকে ছুটে গিয়ে কন্দনরত অবস্থায় তাকে ফললো,


ডাক্তার সাহেব আমার........ আমার মেয়েটাকে খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার মেয়েটাকে খুঁজে দিননা বলে ইচ্ছের মা কাঁদতে থাকলো হাওমাও করে। 


আ ..হা.. ইচ্ছের আম্মু তুমি এমন কান্না করছো কেন?

তুমি শান্ত হও নাহলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে এভাবে কান্না করলে ইচ্ছেকে পাওয়া যাবে না। ইচ্ছে বাবা উনাকে শান্ত কন্ঠে বললেন।


তুমি শান্ত হতে বলছো? কীভাবে শান্ত হবো আমি?আরে ইচ্ছেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের মেয়েকে পাওয়ার যাচ্ছে না আর তুমি বলছো শান্ত হতে। তুমি কি করে বুঝবে মায়ের কষ্ট  ইচ্ছের মা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন।


ইচ্ছের মায়ের এমন রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে ইচ্ছের বাবা চুপসে গেল।  আবার অভিমানও

হলো বটে। তিনি কি মেয়েকে ভালবাসেন না? মেয়ের জন্য কি তার চিন্তা হচ্ছে না? এই যে মেয়ে হারিয়ে যাওয়া তার বুকের ভেতর যে কষ্ট হচ্ছে সেগুলো সে কিভাবে দেখাবেন। কিন্তু এখন স্ত্রীকে কিছু বলতেও পারবেন না। কারণ এখন মেয়ের শোকে তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।


আহাদ ইচ্ছের বাবা-মা কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে উনাদের বললো,

আপনারা শান্ত হোন । এভাবে কথা কাটাকাটি না করে একটু স্থির হয়ে দাঁড়ান। আমি দেখছি কি করা যায়।


এরপর আহাদ মোবাইল বের করে কাউকে ফোন দিলো 

ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতে,


রাফাত ৫৮৯ রুমের সামনে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে আমাকে  ইচ্ছের আপডেট দাও ইমিডিয়েটলি বলে 

ফোন টা রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পরে আহাদের ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসল। আহাদ দেখার সাথে সাথে তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিল।

হসপিটালের পিছনের দিকে একটি স্টোর রুমে বসে গুনগুন করে কাঁদছে ইচ্ছে আর বির বির করে বলছে,

আমি অপারেশন করবো না আমি কিছুতেই অপারেশন করবো না। ওরা..... ওরা আমাকে ব্যাথা দিবে।  ওরা...

 আমাকে কষ্ট দিবে বলে  জামার ওড়না দিয়ে মুখ বুজে কাঁদতে থাকলো।

ইচ্ছে বেরিয়ে এসো।

হঠাৎ কারো কন্ঠ শোনা মাত্র ইচ্ছের বুকটা ধক করে উঠল। এই বুঝি ওকে ধরে নিয়ে কুঁচি কুঁচি করে কাটবে। ও আরো গুটিয়ে চুপটি করে বসে থাকলো।

হুট করে দরজা খোলার শব্দে ইচ্ছে ছিটকে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো। অতিরিক্ত কান্নার কারণে চোখ

দিয়ে কেমন ঝাপসা দেখছে। স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে না কাউকে।

অকস্মাৎ কেউ  ওকে জড়িয়ে ধায় ও ঘাবড়ে গেল ।

পরমুহূর্তে ব্যক্তিটিকে চিনতে একটু ও সময় লাগলো না। অস্ফুর্ত স্বরে বলল ,

আম্মু......

ইচ্ছের মা ইচ্ছেকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো‌, তুই ঠিক আছিস ইচ্ছে? এখানে কি করছিস মা? বলে ইচ্ছের গালে হাত দিয়ে আদর করলো  ।

ইচ্ছের বাবা ও আহাদ এগিয়ে আসতে,

আ...আপনি এদিকে আসবেন না আহাদ স্যার......

ইচ্ছের কথায় মুহূর্তে আহাদ থেমে গেল।ও ভ্রূ কুঁচকে ইচ্ছে দিকে তাকিয়ে থাকলো । সবাই ইচ্ছের কথায় ইচ্ছের দিকে তাকালো...

আপনি.... এদিকে আ... আসবে না। আমি জানি আপনি আমায় ধরে নিয়ে যেয়ে টুকরো টুকরো করবেন

ইচ্ছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

ইচ্ছের কথায় আহাদ সহ বাকি সবাই হতভম্ব হয়ে গেল

কি !বলছিস কি !ডাক্তার সাহেব তোকে কেন টুকরো টুকরো করবে? ইচ্ছের বাবা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন।

হ্যাঁ বাবা উনি আমাকে একটু পর অপারেশন রুমে নিয়ে যেয়ে টুকরো টুকরো করবে। আমি যাবো না বাবা।

আমাকে মেরে ফেলবে বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।

আহাদ ভ্রু কুঁচকে ইচ্ছের কথায় ওর দিকে তাকালো ।

এরপর কিছু একটা ভেবে বললো,

দেখো ইচ্ছে আমি তোমাকে মারবো না। আমি কেন তোমাকে মেরে ফেলব ? বরং আমি তোমাকে বাঁচাতে চাই। অপারেশন না করলে তুমি সুস্থ্য হবে না।

আহাদের কথায় ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকালো,

এরপর কাঁদতে কাঁদতে বলল,

আমি অপারেশন করবো না। আমি চাই না সুস্থ্য হতে।

আপনি চলে যান। ডাক্তারদের হ্নদয় নেই । ওরা আমার হ্নদয় টুকরো টুকরো করে দিবে।

আহাদ তো ইচ্ছের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল।

সবাই ইচ্ছেকে বোঝানোর চেষ্টা করছে  যে অপারেশন করলে ও সুস্থ হয়ে  উঠবে। কেউ ওকে কষ্ট দিবে না ও কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। আর একটাই কথা ও অপারেশন করবে না।

আহাদ এবার আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না।

এগিয়ে গেল ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছে থমকে মায়ের হাত শক্ত করে ধরলো। আহাদ এগিয়ে যেয়ে ইচ্ছের হাত ধরে টেনে ওর দিকে নিয়ে আসলো নিজের দিকে।

Listen ইচ্ছে, তুমি কি জানো এই অপারেশনটা তোমার জন্য কতটা জরুরি?এখন তুমি যদি ওটি না করতে চাও তাহলে ঠিক আছে আমি ওটি করবো না।

কিন্তু তুমি একটা কথা ভেবে দেখেছ কি? আজ তুমি ওটি করলে না এতে তোমার জীবনের রিস্ক আরো বেড়ে যাবে। একবার তোমার বাবা মায়ের মুখে দিকে তাকাও  দেখতে পারছো তাদের চোখে তোমার জন্য 

তাদের ভালোবাসা । তোমাকে হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।  তুমি কি স্বার্থপর হতে চাও ?যারা তোমাকে এত ভালোবাসা দিলো তাদের জন্য একটু সেক্রিফাইস করতে পারবে না?

আহাদের কথায় ইচ্ছে ওর বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিলো সত্যি সেখানে রয়েছে আকাশসম ভালোবাসা। ইচ্ছে মাথা ঘুরিয়ে আবার তাকালো আহাদের দিকে 

আহাদ  ইচ্ছের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করল,

ইচ্ছে তুমি তখন আমাকে কি বলেছিলে ? তুমি বলেছিলে তোমার একটা স্বপ্ন আছে। তুমি বাঁচতে চাও

তাহলে এখন কেন তুমি পিছিয়ে যাচ্ছ । তাহলে কী আমি ধরে নেব ইচ্ছে স্বার্থপর  ,ইচ্ছে ভীতু? কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম ইচ্ছে সাহসী। যার মধ্যে রয়েছে বাঁচার ইচ্ছে। তবে কী আমি ভুল দিলাম।

ইচ্ছে আহাদের কথায় ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো 

ইচ্ছের এবার ভীষণ রাগ হলো আহাদের কথায়। ওকে কেন ভীতু বলবে? ওকে কেন স্বার্থপর বলবে।

আহাদ ইচ্ছের রাগী মুখটা দেখে মনে মনে খুশি হলো।

ওকে আরো রাগিয়ে দিতে বললো,

"তাহলে স্বার্থপর ভীতু ইচ্ছে, তুমি তোমার স্বার্থ নিয়ে ভাবো। এতক্ষণ তোমাকে বিরক্ত করার জন্য সরি।

আমি শুধু শুধু তোমার জন্য আমার সময় নষ্ট করলাম।

আমার আরো অন্য ওটি আছে। তারা অবশ্যই তোমার মতো ভীতু নয় বলে দরজার দিকে পা বাড়াতেই,

আমি ভীতু না আর না আমি স্বার্থপর। আমি অপারেশন করবো। ইচ্ছে রাগে কটমট করে জোরে জোরে বললো 

আহাদ থেমে দাঁড়ালো। ঠোঁটে মুচকি হাসির রেখা দেখা দিল। কিন্তু সে হাসি ইচ্ছেকে দেখালো না। গম্ভীর মুখে বললো,

কিন্তু তুমি তো বললে তুমি ওটি করতে চাও না?

আ.... আমি আগে বলেছি তো কি হয়েছে এখন বলছি আমি অপারেশন করবো। আপনি অপারেশনের ব্যবস্থা করুন।

তুমি ভেবে বলছো তো? আবার ভয় পেয়ে পালাবে না তো? আহাদ চোখ টিপে বলল।

আমি ভ..ভয় পাইনা। আর না আমি পালাবো। আমি সাহসী। ইচ্ছে সাহসী !ও ভীতু নয়। তবে আপনাকেও কথা দিতে হবে আপনি আমাকে আমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। আমাকে শেষ হতে দিবেন না ।

আমি বেঁচে থাকতে চাই।

আহাদ ইচ্ছের কথায় ইচ্ছের ওর নয়ন দুটির দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। মেয়েটি চোখে মুখে দেখতে পেল বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি। চোখ গুলো কান্না ফলে ফুলে লাল লাল হয়েছে। ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকাতে দেখতে পেল এক গভীর অভিব্যক্তি। আহাদ খুব ঠান্ডা কোমল কন্ঠে বলল,

আমি জানি না কি হবে । যদি আল্লাহ চায় তবে তুমি সবার মাঝে ফিরে আসতে পারবে। তবে আমি সর্বোচ্চ

চেষ্টা করবো তোমাকে সুস্থ্য ভাবে তোমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে।  তার জন্য তোমাকেও কিন্তু শক্ত ও সাহসী হতে হবে। তোমার মনোবল ঠিক থাকলে তুমি নিশ্চয় আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। ভয় পেয়ো না কেমন।

অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ইচ্ছেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে লাইট অন হতে ইচ্ছের  মা আঁতকে উঠলেন। তিনি তখন আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলেন নিরবে কন্দনরত অবস্থায়। ইচ্ছের বাবা একবার এপাশ তো আরেক বার ওপাশে হাঁটছেন আর সূরা পাঠ করছেন। দেখতে দেখতে চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল।তারা অপেক্ষা করছে কখন আহাদ বের হবে  কিছুক্ষণ পর ওটির লাইট অফ হতে ইচ্ছের বাবা ও মা ছুটে গেলেন দরজার সামনে।

আহাদ খুব শান্ত ভাবে বের হয়ে আসলো ,

ডাক্তার সাহেব আ... আমার মেয়ে 

ইচ্ছের বাবা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

আহাদ চোখ তুলে তাকালো দুজনের মুখের দিকে।

তাদের চোখে মুখে দুশ্চিন্তা ও ভয়ের আভা ফুটে উঠল।

অপারেশন সাকসেসফুল । চার পাঁচ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরতে পারে  । এখন কেবিনে শিফট করা হবে। আহাদ খুব কোমল কন্ঠে ধীরে ধীরে বললো।

আলহামদুলিল্লাহ ইচ্ছে বাবা মা একসাথে বললো । তাল চোখে মুখে এখন একটু হাসির রেখা দেখা দিল।

তাদের চোখ মুখ যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠল।আহাদ সে হাসির দিকে তাকিয়ে দির্ঘনিশ্বাস ফেললো।

আরও পড়ুন: ইচ্ছের প্রণয়|পৃথী আক্তার| পর্ব-২

Post a Comment

1 Comments