ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-৪
ইশার জ্ঞান ফিরলো অজ্ঞাত একটি কক্ষে। ইশা আস্তে করে উঠে বসলো সোফা থেকে।
ইশার মাথায় প্রচুর যন্ত্রণা করছে, সে এইখানে আসলো কিভাবে? এটা কোথায়? ইশা আস্তে করে উঠে দাড়ালো। মনে হচ্ছে সে কারোর অফিস রুমে আছে। ইশার অস্থিরতা বাড়ার আগেই আরহান কফির মগ হাতে তার অফিস রুমে ঢুকলো।
ইশা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” এটা আপনার রুম? আপনি আমাকে এইখানে এনেছেন?”
“ কেনো তুমি কি অন্য কাউকে আশা করেছিলে?”, আরহানের খাপছাড়া ভাবে ইশার রাগ লাগে। আরহানের ফোন বাজতেই ইশা বেরিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু আরহান ইশাকে থামিয়ে বলল, “ ওয়েট, কোথায় যাচ্ছো?”
“ আপনার তাতে কি ? আমার যেখানে ইচ্ছা আমি সেখানে যাবো?”
আমার অনেক কিছু।
আরহান কফির মগটা টেবিলে রেখে বলল।
মানে ?”
আমিনুল সাহেবের অর্ডার তুমি এই রুম থেকে বের হতে পারবে না। যতক্ষণ না সে ফিরছে।”,
এইসবের মানে কি ?”
আরহান ইশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কল রিসিভ করতে রুমের বাইরে গেলো। রুদ্র কল করেছে। রুদ্র হলো আরহানের অ্যাসিস্ট্যান্ট, যে আরহানের হয়ে কাজ করছে।
“ লোকটাকে কেনো মেরেছে জানতে পারলে?”, আরহান সতর্কতার সাথে জিজ্ঞেস করলো।
“ স্যার। যেই লোকটাকে গুলি করা হয়েছে। তার বায়োডাটা আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। লোকটার নাম আবুল খোন্দকার। সিসিটিভি ফুটেজে লোকটাকে খালের পাশ দিয়ে দৌড়ে আসতে দেখা যায়। তার পিছনে দুইটি বাইক দেখা যায়। বাইকের নাম্বার আমি সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তবে তাদের পোশাকে ছিল ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট, মুখে কালো হেলমেট আর হাতে কালো গ্ল্যাফস।”,
“ তাহলে আমাদের সন্দেহ ঠিক।”
“ একদম ঠিক স্যার। কায়ান এর জন্য যারা কাজ করে, ওদের সাথে গুলি করার স্টাইল থেকে শুরু করে, ওর লোকেদের ড্রেস আপ, বাইক সব মিলে যাচ্ছে। আমার ধারণা, আবুল খোন্দকার এমন কিছুর সাক্ষী হয়ে ছিলেন যেটা কায়ানের জন্য হুমকি হতে পারতো। তাই সরিয়ে দিয়েছে।”
“ যদি তাই হবে তাহলে ইউনিভার্সিটির সামনে কেনো লাশ ফেললো? এর পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। কায়ান কারণ ছাড়া কিছু করে না।”
“ কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। কায়ান যে এইখানেই আছে সেটার প্রমাণ এতো স্পষ্ট কেনো? যেনো সে ইচ্ছে করেই এইসব রেখে যাচ্ছে।”
“ Exactly, এটাই তো ও চায়। ও এই শহরে আছে সেটা আমরা গত চার মাস ধরে জানি কিন্তু কোথায় আছে? We have no clue. This is how he plays…..” বাকিটা বলে শেষ করার আগেই আরহান পায়ের আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকালো।
ইশা রুম থেকে প্রায় বের হয়েই যাচ্ছিলো। কিন্তু আরহানের সাথে চোখে চোখ পড়তেই ইশা দৌড়ে পালানোর আগেই আরহান শক্ত করে ইশার কব্জি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আরহানের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
“ What the hell do you think of yourself? কোথায় যাচ্ছো?”, আরহানের অগ্নিকন্ঠে ইশা একটা ঢোক গিলে তাকালো।
আরহান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কমিয়ে ইশার দিকে তাকাতেই দেখলো। ইশার হাত সে রাগের মাথায় এমন শক্ত করে ধরেছে যে ইশার হাতের কাচের চুড়ি কয়টা ঝন ঝনিয়ে নিচে পড়ে গেছে। আরহান ইশার হাত ছেড়ে দিলো।
তারপর শান্ত ও নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,” ভিতরে যাও। আমিনুল সাহেব এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।”
ইশা রাগে অভিমানে অফিস রুমের ভিতরে চলে গেলো। এমন কড়া মেজাজ সে আজ পর্যন্ত দেখেনি। লোকটার মনটা কি পাথরের তৈরি। কিভাবে ধরলো হাতটা একদম লাল করে ফেলেছে।
আরহান কয়েকটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভিতরে আসলো। ইশা চোখ মুখ কালো করে গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে আছে। আরহান ইশার হাতের কব্জির দিকে তাকালো। কেটে যায় নি তবে লাল হয়ে আরহানের হাতের আঙুলের ছাপ বসে আছে।
একটু পর আরহান এক বাটি বরফ এনে ইশার সামনে রাখতেই ইশা সম্পুর্ণ বিষয়টি অগ্রাহ্য করে অন্য দিকে তাকালো।
আরহান কষ্ট করে নিজের আওয়াজটা একটু নরম করে বলল, “ হাতটা এখানে ভিজিয়ে রাখো।
ইশা আবারো ইগনোর করায় আরহান চুপ করে তার পাশে বসলো তারপর ইশার হাত ধরতেই ইশা চোয়াল শক্ত করে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতে লাগলো।
আরহানের ধর্য্যের সীমারেখা পৌঁছাতেই বলল,“ কখনো আমার কথার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। আমি এক কথা দ্বিতীয়বার বলতে পছন্দ করি না। আমাকে রাগিয়ে দিলে তার ফল কি হয় তা নিশ্চই বুঝতে পেরেছো।” বলতে বলতেই আরহান ইশার হাত নিয়ে বরফ পানিতে ধরে রাখলো।
“এরপর থেকে কোনো কথা যেনো আমাকে আমাকে দ্বিতীয়বার রিপিট করতে না হয়।”
ইশা হতভম্ব হয়ে আরহানের বকা শুনছে। কি আশ্চর্য! তার চুড়ি ভেঙে, তাকে ব্যথা দিয়ে আবার লোকটা তাকেই বকা দিচ্ছে। লোকটার মাঝে অনুশোচনা বলতে কিছুই নেই।
“কি বললাম বুঝতে পেরেছো?”
ইশা ভ্রু তুলে তাকালো। তারপর বলল, “ নাহ। আপনার বাক্যের কোথাও আমি সরি শব্দটি পাই নি। তাই আপনি কি বলেছেন কিছুই বুঝিনি।”
“ আমি তোমাকে কেনো সরি বলবো ? দোষটা তোমার ছিলো।” আরহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
“ কিঃ! আমার দোষ ছিলো? আচ্ছা! আমার চুড়ি তো আমি নিজেই ভেঙেছি তাই না , আর আমার হাত আমি নিজেই চাপ দিয়ে লাল করে ফেলছি।’
“ Shut up। তুমি পালাতে গিয়েছিলে সে কারণে এইসব হয়েছে। You are responsible for this।”
“ এইখানেও আমার দোষ তাই না। আপনি তো দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা, তাই না?”
আরহান ইশার হাত ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ইশা সঙ্গে সঙ্গে বরফ পানি থেকে হাত তুলতেই দেখলো হাতের লালচে ভাব দূর হয়ে গেছে অনেকটা। আরহান কিছু বলার আগেই আমিনুল সাহেব এসে হাজির, তিনি এসে ইশাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলেন।
গাড়িতে উঠতেই ইশা প্রশ্ন করলো, “ আমাকে আরহান স্যারের অফিস থাকতে বলেছো কেনো?
“ তুমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় আমার চিন্তা দ্বিগুণ হয়েছে। তোমার বাসায় কিছু জানায় নি। তোমার ভাই তো তাহলে ভার্সিটিতেই এসে হইচই শুরু করতো। আরেকটা ম্যাডাম ও ছিলো তোমার কাছে পরে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তিনি চলে যান।
“ তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”
“ আমি গিয়েছিলাম পুলিশ স্টেশনে। এতো বড় ঘটনা আমি না গিয়ে থাকি কি করে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতন জায়গায় এমন পাশবিক আচরণ। এইসব তো মেনে নেওয়া যায় না।
“ কিছু জানতে পারলে?”
“ নাহ তারা মুখ খোলেনি। বলেছে তদন্ত চলছে।”
“ ব্যাস এটুকুই? লোকটাকে কেনো মেরেছে কিছু জানতে পারোনি?”
আমিনুল সাহেব হতাশ গলায় বললেন,” না। কিন্তু মনে হলো কি যেনো লুকিয়ে যাচ্ছে। আবার ফিরবার সময় একটা নামের চর্চা শুনলাম।”
“ কি নাম?”
“ কায়ান। যতবার এই নাম চর্চায় এসেছে মানে ভয়ানক কিছু আছে সামনে।”
“ কি নাম বললে? কায়ান? কে সে?”
“ মাফিয়া। অন্য সবার চাইতে আলাদা। পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ডে বেশিরভাগ সে নিজেই কন্ট্রোল করে। যতক্ষণ না তুমি তার কোনো ক্ষতি করছো সে তোমাকে কিছু করবে না। কিন্তু…. যদি তুমি ওর ক্ষতি করার চিন্তাও করো সে তোমাকে শেষ করে দিবে।’
আরোও পড়ুন:
0 Comments