রূপকথার শহর! (পর্ব-২)| নবনী নীলা

ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর!

পর্ব-২

লেখা: নবনী নীলা

“দেখুন। আমাকে দেখতে এসেছেন না। চুপচাপ যা দেখার দেখে বিদেয় হোন।”, ইশা এগিয়ে এসে আরহানকে শাসিয়ে বলল।



“ ওকে, তাহলে শাড়ি খুলো যা দেখার দেখে নিচ্ছি।”, বলেই আরহান দেয়াল থেকে পিঠ সরিয়ে এগিয়ে আসলো।

ইশা চোখ বড় বড় করে তাকালো। সে কি ভুল কিছু শুনেছে? ইশার নিশ্বাসে অস্থিরতা বাড়ছে। 

“ কি বল..লেন?”, ইশা এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে বলল।

“ ভয় পেয়েছো নাকি? পিছিয়ে যাচ্ছো দেখছি।”, আরহান ইশার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল। ইশা শাড়ির আচলটা শক্ত করে ধরে থাকলো। 

“ ভয় পেয়ো না। আমি এইখানে তোমাকে শাড়ি ছাড়া দেখতে আসিনি। আর যদি জানতাম যাকে দেখতে যাচ্ছি সে তুমি তবে কোনোদিনই আসতাম না।”, আরহান একদম ইশার কানের কাছে ঠোঁট এনে বলল। ইশা আরেকটু বিভ্রান্ত করার চেষ্টা তার। 

ইশার শরীর শিউরে উঠলো। ইশা আরহানের দিকে তাকাতেই আরহান সরে আসলো। আরহানের ঠোঁটের কোণায় হাসি, যা অস্পষ্ট  তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে ঠিক বোঝা যায়।

“ বাই দ্যা ওয়ে, তুমি অজ্ঞান হবার যে নাটক 

টা করেছো কি ভেবেছো কেউ বুঝতে পারেনি? তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না?” 

একটু আগে ইশা যে অজ্ঞান হবার নাটক করেছে সেটা আর কেউ না বুঝলেও এই ধূর্ত লোকটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। সারাজীবন যেখানে নিজের বাড়ির মানুষকে বোকা বানিয়ে এসেছে সে, সেইখানে কিনা এই লোকটা! ইশার রাগে শরীর জ্বালা করছে।

“ হ্যা মনে করি।”, ইশা দাঁতে দাঁত চিপে বলল।

“ তাই তো দেখছি। কি যেনো বলে, ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে। পাগলের সুখ মনে মনে।”, আরহান একটু তাচ্ছিল্যের সাথে বলল।

“ দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। এটা ক্যাম্পাস না, যে আপনি আমাকে যা বলবেন তা আমি সব চুপচাপ শুনবো।”, ইশা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো।

“ আচ্ছা , তাই বুঝি? কি করবে তুমি? আমিও দেখতে চাই আর কি কি ট্যালেন্ট আছে তোমার।”, বলতে বলতে আরহান প্যান্টের পকেটে হাত ভরে ছাদের দেওয়ালে হেলান দিয়ে তাকালো।

এমন সময়ে ইশার মামা আমিনুল সাহেব ছাদে উঠলেন। আমিনুল সাহেবকে দেখে আরহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উনি এই বাড়িতে ? আমিনুল সাহেব সবটা জেনেই উপরে এসেছেন আরহানের সাথে কথা বলতে। 

“ কি কাকতালীয় ব্যাপার দেখেছো? এইখানে তোমার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।”, আমিনুল সাহেব বললেন।

আরহান পকেট থেকে হাত বের করে বললো,

 “ আমিও ভাবতে পারিনি ”, বলেই সে ইশার দিকে তাকালো। ইশা আড় চোখে একবার আরহানের দিকে তাকিয়েই হন হনহনিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।

আমিনুল সাহেব ইশার হনহনিয়ে বেরিয়ে যাওয়া দেখে বলল, “ তোমাকে তো বলা হয় নি ইশা আমার একমাত্র ভাগ্নি। আমাদের পরিবারে ও একটাই মেয়ে সন্তান।”


আরহান চুপ করে রইলো। আমিনুল সাহেবের গতকাল ইশাকে পানিশমেন্ট না দেওয়ার কারণটা এখন তার কাছে পরিষ্কার।

“দেখেছো তোমার ছেলের কান্ড। এইভাবে কোনো কিছু না বলে কেউ চলে আসে ?সে খুব বড় মাপের লোক হয়ে গেছে? এতো অহংকার কিসের তোমার ছেলের?”, ফারুক আহমেদ ড্রয়িং রুমে ঢুকেই চেঁচামেচি শুরু করলেন আমিনা বেগমের সাথে।

আরহান তার বাবার হইচই সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে গ্লাসে ঠান্ডা পানি ঢালছে। ফারুক সাহেবের চেঁচামেচি কিচেন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।

“ তোমার ছেলের এইসব স্বভাব আমার পছন্দ না। নিজেকে কি ভাবে সে?”, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন তিনি। 

আমিনা বেগম ভ্রু কুচকে বসে আছে। “ আমার ছেলে হয়েছে তো কি হয়েছে। ছেলে তো স্বভাব পেয়েছে তোমার। তুমি যেমন গোমড়ামুখো তোমার ছেলেও তেমন।”

ফারুক সাহেব কিছু বলতে যাবেন এই সময় সেখানে উপস্থিত হারুন সাহেব বললেন, “ হয়েছে ভাই। থামেন তো আপনারা। এইসব বাদ দেন। মেয়ে আপনাদের কেমন লাগলো? আমার তো আবার ওই বাড়িতে খবর দিতে হইব।”


হারুন হলেন দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারী।


“ মেয়ে অভদ্র।”, আরহান এক হাত পকেটে ভরে,পানির গ্লাস হাতে বলল।

“ ওহ, আর তুমি খুব ভদ্র। তোমার ভদ্রতার নমুনা তো দেখলাম আজকে।”, ফারুক সাহেব ধমকের সুরে বললেন।

“ কিঃ আমাকে অভদ্র বলেছে?”, ইশা হনহনিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল।


হারুন সাহেব পান চিবুতে চিবুতে ব্যঙ্গ করে বললেন,” হ্ বলসে। তুমি নাকি ছেলের গায়ে চা ফিকা মারসো।


ইশা চোখ পিট পিট করে একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়েই দৌড়ে নিজের দাদীর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।


আফিয়া খাতুন রাতের রুটি বানাচ্ছিলেন। হাতে থাকা বেলুন নিয়ে চোখে রাগিয়ে এগিয়ে এসে বললেন,” কি করেছে ও?”


“ ছেলের গায়ে চা ছুঁড়ে মেরেছে। ছেলে তো তাই বলল।,”


“ কোথায় সেই বাদরটা। নিজের দাদীর রুমে গিয়ে লুকিয়েছে না? আজকে ওর ভাই আসুক। ভাইয়ের আদরে একদম বাদর হয়েছে।”


ইশার দাদী জেবুন্নেসা বেগম, বয়স ৬৫ বছর। কিন্তু তাকে দেখে সেটা বুঝা যায় না। তার কথা বার্তা এখনো ঠনঠনে। ইশা গিয়ে নিজের দাদীর কোলে মাথা রাখলো। 


“ আচ্ছা তুমিই বলো। আমি ইচ্ছে করে কেনো একজনের গায়ে চা ফেলবো? কেউ বুঝতেই চাচ্ছে না ব্যাপারটা।,” ইশা গাল ফুলিয়ে বলল।


“ কার গায়ে চা ফেলসোস?”,


“ কার আবার আজকে যেই হনুমানটা দেখতে এসেছিল তার গায়ে।”,


“ হনুমান বলছিস কেনো? ছেলে তো আমার পছন্দ হয়েছে। যেমন লম্বা তেমন সুন্দর চেহারা। এমন নাতজামাই তো চাই।

ইশা আড় চোখে নিজের দাদীর দিকে  তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলল,” তাই নাকি ? তা তুমিই বিয়ে করে ফেলো। এতই যখন পছন্দ হয়েছে।”

তারপর আবার বলল,“ অসভ্য লোকটা আমাকে কি বলেছে জানো?”

“ কি বলেছে?”, জেবুন্নেসা বেগম ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন।

ইশা নিচে ঠোঁট কামড়ে বলল, “ বলেছে শাড়ি খুলতে, সে নাকি দেখবে। কি রকম অসভ্য একবার ভেবে দেখো ?”

জেবুন্নেসা হো হো হেসে উঠলেন। ইশা অবাক হয়ে তার দাদির হাসি দেখছে। “ এই বুড়ি হাসছো কেনো?”

“ বিয়ের পর তো এমনিতেই দেখাতে হবে, সেই জন্যে আগেই দেখতে চেয়েছে।”, বলেই আবার হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি।

“ ইস! বিয়ে করছে কে ওই বদরাগীকে? শুধু কি বদরাগী? অসভ্য একটা। নির্লজ্জ, বেহায়া।”

বলেই দাদীর পেটে আস্তে করে একটা গুতা দিতেই দুইজনেই হেসে ফেললো।

আমার  দাদীও জেবুন্নেসা বেগমের মতন দুষ্টু কথা বলে হো হো করে হেসে উঠে।

আরোও পড়ুন:

রূপকথার শহর পর্ব-৩| নবনী নীলা

Post a Comment

0 Comments