রূপকথার শহর! (পর্ব-১৮) | নবনী নীলা

ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-১৮

আরহান তর্জনী দিয়ে ইশার চিবুক ধরে নিজের কাছে এনে বলল, “ কি বললে তুমি?”

“ আমি আপনার সাথে থাকবো ন….”, বলে শেষ করার আগেই আরহান ইশার ওষ্ঠদুটি ছুঁয়ে দিলো।

ইশা ঠেলে আরহানকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেই সে ইশার আরো চিবুক শক্ত করে ধরলো। 

কিছুক্ষণ পর আরহান সরে এসে ইশার দিকে তাকালো। ততক্ষণে তার চোখের পানি গায়েব, ঠোঁট দুটি রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। আরেকটুর জন্য যেনো ইশার দম আটকে যেতে বসেছিল।


আরহান এক হাতে ইশার গাল দুটি ধরে নিজের কাছে এনে বললো, “ তুমি আমার সাথে থাকতে বাধ্য। সে তুমি যতই কান্না করো না কেন —রেহাই পাবে না।”

“ আপনার যেনো আমার জন্য খুব সময় আছে।”, ইশা অন্য দিকে তাকিয়ে বির বির করে বললো।

আরহান ইশার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে বললো, “ আমার সব কিছুই তোমার জন্য।”

“ আমি বিশ্বাস করি না।”, ইশা নাক ফুলিয়ে বললো।

“ আমি কি করলে –তুমি বিশ্বাস করবে?”

ইশা আরো বিরক্ত হয়ে বললো, “ সেটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে?”

আরহান ভেবে পেলো না কি করলে তার বউয়ের রাগ কমবে। সে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, “ ঘুরতে যাবে?”

ইশা আড় চোখে আরহানের দিকে তাকালো।

“ কি হলো! বলো যাবে কিনা?”

“ এখন! খুব –আপনি নিয়ে যাবেন!”, তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো ইশা।

আরহান আলতো করে ইশার নাক টেনে বললো,

“ হ্যাঁ এখন। আর আমার বউকে —আমিই তো নিয়ে যাবো।”

ইশা ভ্রু কুঁচকে বললো, “ আপনার এইসব মিষ্টি কথায় আমি আর গলছি না।”

আরহান ইশাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলো। ইশা অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললো, “ কি করছেন কি —আপনি? আপনার মা বাবা দেখবে।”

আরহান কোনো উত্তর দিলো না।

ইশাকে কোলে করে সে নিজের রুম থেকে বের করে বাড়ির গেটের দিকে এগুতেই ইশার টনক নড়ে উঠলো। আসলেই কি লোকটা এই রাতে তাকে নিয়ে বের হবে? 

আরহান ইশাকে গাড়িতে বসাতেই সে চোখ বড় বড় করে তাকালো।

“ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”, ইশা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আরহান নিজের সিটবেল্ট পড়তে পড়তে বললো, “ চলো। তোমাকে রাতের শহর দেখাবো।”

ইশা মনে মনে আনন্দে দিশেহারা। তারপরও গম্ভীর হয়ে গাল ফুলিয়ে সে বসে রইলো।

ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় হাইওয়ে গুলো যেনো স্বপ্নের মতন লাগছে। 

ইশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “ আচ্ছা আপনি এমন কেনো?”

আরহান একপলক ইশার দিকে তাকিয়ে বললো, 

“ কেমন আমি?”

“ এইযে সবসময় ব্যাস্ত। আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেই আপনি এড়িয়ে যান। কিন্তু কেনো?”, ইশা মন খারাপ করে বললো।

ফাঁকা হাইওয়ের একপাশে আরহান গাড়ি হুট করে থামিয়ে দিলো। আরহানের গাড়ির পিছনে পিছনে ছিলো রুদ্রর গাড়ি, রুদ্রর সাথে আরো চারজন। যারা আশেপাশে নজরদারি করছে।

রুদ্র হঠাৎ স্যারের গাড়ি থেমে যেতে দেখে —হাই তুলতে তুলতে বললো, “ বড় মানুষের বড় বড় শখ। সেই শখের বলির পাঠা আমরা —বুঝেছো?”

ড্রাইভার আরহানের গাড়ির পিছনে গাড়ি থামিয়ে দিলো।

পিছনে বসে থাকা এক অফিসার বললো, “ ঠিকই বলেছেন। সারাদিন কাজ করতে হয়। তারপর রাতে একটু শান্তি নেই।”

আরহান গাড়ি  থামাতেই ইশা আশেপাশে তাকিয়ে বললো, “ এইখানে গাড়ি থামলেন কেনো?”

আরহান নিজের সিটবেল্ট খুলে নিজের কোলের দিকে ইশারা করতেই ইশা জীর্ণশীর্ণ হয়ে বললো, 

“ ছিঃ মাঝ রাস্তায়?”

“ আমি এইখানে আসতে বলেছি।”, আরহান সিরিয়াস হয়ে বলতেই ইশা না শুনার ভান করে বাইরে তাকালো। 

আরহান এগিয়ে এসে ইশার হাত ধরে তাকে টেনে নিজের কোলে বসতেই দুজনের মাঝে দুরত্ব একদম কমে গেলো। ইশার খোলা চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়েছে। আরহান সেই চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বললো, “ এইবার বলো। আমাকে নিয়ে তোমার কি কি অভিযোগ আছে?”

আরহানের এক হাত ইশার কোমড় জড়িয়ে আছে। অন্য হাত ইশার ঘাড়ে। 

ইশা চুপ করে আছে। আরহানের চোখের দিকে তাকালে যেনো সে সব ভুলে যায়।

“ আমি সময় দেই না। এই অভিযোগ?”, আরহান বলতেই ইশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

আরহান ইশার গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো, “ সরি বেবি।—-এখন থেকে তোমাকে আর এই অভিযোগের সুযোগ দিবো না। আই প্রমিজ।”

ইশার সর্ম্পূণ শরীর শিউরে উঠলো। ইশা আরহানকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই সে তাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো।

“ ছাড়ুন। মানুষ দেখবে।”, ইশা ধীর কন্ঠে বললো।

আরহান কোনো উত্তর দিলো না। সে ইশার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে। যা খুব দ্রুত বিট করছে, ইশার ভারী নিঃশ্বাসে —আরহান যেনো এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। 

ইশা আরহানের এই লক্ষণ খুব ভালো করে চেনে।

সে ইচ্ছে করে পিছনের দিকে হেলে যেতেই গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো। কিন্তু আরহান তাতেও সরে গেলো না। 

হর্নের শব্দে রুদ্র চমকে উঠলো। একটুর জন্য সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হর্নের শব্দে সে চেঁচিয়ে উঠে বললো, “ স্যার! —- সব ঠিক আছে?”

হঠাৎ রুদ্রের আওয়াজে ইশা ছিটকে সরে যেতেই আরো দুইতিন বার হর্ন বেজে উঠলো। আরহান চোয়াল শক্ত করে নিজের চুলে হাত চালাতে লাগলো।

রুদ্র আরো কয়েকবার হর্নের শব্দ শুনে গাড়ি থেকে নামলো। তারপর আরহানের গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই আরহান রক্ত চোখে বাইরে তাকালো। ততক্ষণে ইশা নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়েছে। লজ্জায় তার দুটি লাল হয়ে আছে।

“ স্যার —কোনো অসুবিধে?” রুদ্র সরল মনে প্রশ্ন করতেই।  আরহান দাঁতে দাঁত চিপে বললো, “ নাহ। তুমি গাড়িতে যাও।” রুদ্র কিছু না বুঝে আবার নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো।

ইশা লজ্জায় নিচের ঠোঁট কামড়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই আরহান ইশার পা দুটি তুলে নিজের কোলে রাখতেই ইশা চোখ বড় বড় করে তাকালো। তারপর নিজের পা সরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু আরহান শক্ত করে ইশার দুইপা নিজের কোলে রেখে বললো, “ একদম নড়বে না। You have already spoiled my mood.”তারপর আরহান ইশার পায়ের জুতা খুলে এক পাশে রাখলো।

এক হাত ইশার পা দুটি জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। ইশার শরীরে মৃদু একটা কাঁপুনি বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার ভীষণ ভালো লাগছে। 

“ সব অভিযোগ কি শেষ –ম্যাডাম?”, আরহান দৃষ্টি সামনে রেখে বললো।

“ আপনি হঠাৎ আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?” ইশা আরহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

আরহান ইশার পায়ে হাত বুলিয়ে বললো, “ তুমি অন্য কারোর বউ হবে।—- অন্য কেউ তোমাকে স্পর্শ করবে ভেবেই যেনো আমি নিজের মৃত্যু দেখছি। You belong to me. You can call me toxic, loving or obsessed. But this is what I feel for you.”

ইশার ঠোঁটের কোণে এক ঝিলিক হাসি। অনেক কষ্টে সে নিজের মুখের হাসি সংযত রেখেছে। তার বুকের ভিতর যেনো কেউ ঢাক ঢোল পিটিয়ে মারছে। যাক স্বীকার তো করেছে বদরাগীটা।

ইশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো, “ তাহলে আপনি আমাকে কিছু বলেন না কেনো? যখনই আমি আপনাকে কোনো প্রশ্ন করি —আপনি এড়িয়ে যান। কেনো?”

আরহান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, “ আমি যেই প্রফেশনে আছি। এটা খুব ডেঞ্জারাস, ইশা। এখানে প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে। আমি চাই না সেইসব বলে তোমাকে ভয় দিতে।” বলেই আরহান থামলো।

“ তুমি শুধু আমাকে সামলাও। বাকি সব আমি সামলে নিবো।”, বলেই সে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। আরহানের হাসি বলে দিচ্ছে তার মনের মধ্যে কি চলছে। ইশার পায়ে আরহানের স্পর্শ আরো দৃঢ় হচ্ছে। যার ফলে একটু পর পর ইশার শরীরে মৃদু কম্পন বয়ে যাচ্ছে।


রাহি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। 

আজ রাতে তার ঘুম হবে না।

কায়ানের বাড়ির বাইরের বাইরে বিশাল মাঠ। যেনো কোনো এক বিস্তৃর্ণ এলাকায় এই বাড়িটি। চারিদিকে বন জঙ্গল তার মাঝে এই বিশাল বাড়ি। আর বাড়ি ঘিরে মাঠ। 

চাঁদের আলোয় যদিও সেটা অপূর্ব লাগছে।

হঠাৎ দূরে কিছু একটা রাহির নজর কাড়লো। 

রাহি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। 

কে যেনো এই রাতে ঘোড়া চালিয়ে বেড়াচ্ছে বাড়ির আশেপাশে।

চাঁদের আলোয় কি যে মনোমুগ্ধকর সে দৃশ্য।

রাহি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ধীরে ধীরে তার মনটা ভালো হয়ে গেলো। 

ঘোড়া তার খুব পছন্দের। 

রাহির খুব ইচ্ছে করছে সে বাইরে গিয়ে ঘোড়ায় উঠবে কিন্তু তাকে কি সেটা করবে দিবে? নাহ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড় সমান দুইটি লোক। রাহি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। 

কায়ান নিচ থেকে খেয়াল করছে জানালার পাশে রাহি এক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। কায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো তারপর রুবানকে ঈশারা করতেই সে বুঝে গেলো তার করণীয় কি?

একজন হঠাৎ রাহির রুমে এসে বললো, “ বস আপনাকে নিচে যেতে বলেছে।”

রাহি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। কায়ানের চেহারা এখন স্পষ্ট। ঘোড়ার উপরে সে নিজেই বসে আছে।

দেখি ভোট দিয়ে যাও।

কায়ান, রাহি।🩷

আরহান, ইশা।🩵


কমেন্টে যেই রঙের হার্ট বেশি থাকবে। সেই জুটি নিয়ে আগামীকাল স্পেশাল পর্ব দিবো।

আরও পড়ুন: রূপকথার শহর! (পর্ব-১৯) | নবনী নীলা

Post a Comment

0 Comments