তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| পর্ব-৬

জীবনের গল্প: তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| পর্ব-৬

এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।",ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে তাকালো।

আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? আমার ভাল্লাগছে এসব। আমি বাসায় যাবো।", অস্থির হয়ে বললো টয়া।

ইয়াদ খেতে নিবে এমন সময় জিজ্ঞেস করলো," তুমি নিজের ডিনার শেষ করেছো? নাকি ওইসব ফেলেই এইখানে হাজির?"

ইয়াদের কথা শুনে টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ মলিন চোখে তাকিয়ে থেকে বললো," এভাবে তাকিয়ে থেকো না চোখ বের হয়ে আসবে। যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।" টয়া মুখ কালো করে বসে আছে। এইসবের উত্তর ফুত্তর সে দিতে ইচ্ছুক নয়।

এইদিকে টয়া না খেয়ে থাকলে ইয়াদ কি করে খাবে? এই মেয়ে যা জেদি না খেলে থাকবে তবু মুখে বলবে না। ইয়াদ চেয়ারটা টয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতেই টয়া রাগী চোখে তাকালো, ইয়াদ সেটা গ্রাহ্য করলো না। ইয়াদ চামচে করে পাস্তা আবার টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো," নাও এটা শেষ করো।"

" আপনার আমার প্রতি এতো কেয়ার দেখাতে হবে না।", রাগী চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।

ইয়াদ না সূচক মাথা নেড়ে বললো," কেয়ার কে দেখাচ্ছে? তুমি যে খাবারে উল্টা পাল্টা কিছু মিশাও নি তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে ? তাই তুমি খেয়ে নিলে আমি নিশ্চিত হয়ে বাকিটা খেতে পারবো।" ইয়াদের মুখ থেকে এমন কিছু শুনবে টয়া ভাবেনি। সে হতবাক হয়ে তাকিয়ে বললো," আমি উল্টা পাল্টা কিছু মিশিয়েছি? এইজন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই। আপনি কি সবাইকে নিজের মতো মনে করেন। মানুষ এতো অকৃতজ্ঞ কিভাবে হয়?", বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ টয়ার মুখে দ্বিতীয় বারের মতন খাবারটা দিয়ে বললো," এতো যে কথা বলো টায়ার্ড লাগে না?"

টয়া এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো পারে না এক্ষুনি ইয়াদকে কামড়ে দেয়। ইয়াদ চাইছে যতক্ষণ পারা যায় টয়াকে আটকে রাখে।

ইয়াদ খাবার শেষে নিজেই টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। টয়া রেগে পুরো অ্যাটম বম হয়ে আছে। একেই বলে অতি চালকের গলায় দড়ি তারই বা দরকার কি ছিল এখানে আসার? এইবার জন্মের মত ফেসে গেছে। টয়ার ইচ্ছে করছে হাতুড়ি দিয়ে দরজাটা ভেঙে ফেলে। ইয়াদ প্রথমে ভেবেছিলো টয়াকে যেতে দিবে কিন্তু না এখন সে মত পাল্টেছে।

এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল টয়া দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো। এবার কি করবে ইয়াদ দরজা তো তাকেই খুলতেই হবে ভেবেই উৎফুল্ল হয়ে গেলো টয়া। এই ফাঁকে টয়া কেটে পড়বে। ইয়াদ টয়ার হাব ভাব দেখে বুঝতে পারছে পালানোর জন্য টয়া প্রস্তুত কিন্তু এতো সহজে ইয়াদ তো ছাড়ছে না।

ইয়াদ দরজার ফাঁকে দেখলো বাহিরে রিতু দাড়িয়ে এবার তো দরজা খোলার প্রশ্নই উঠে না। ওই মেয়ে যদি সারারাত দাড়িয়ে থেকে বেল বজায় তাহলে থাকুক দাড়িয়ে।  আজকে টয়াকে সে যেতে দিবে না।

ইয়াদ দরজা না খুলে দরজার সামনে থেকে চলে যেতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো," কি হলো আপনি দরজা না খুলে কোথায় যাচ্ছেন? আপনি দেখছি আসলেই একটা চেঙ্গিস খান। দরজাটা খুলে দিন। শুনতে পেয়েছেন? আমার ঘুম পেয়েছে আমি বাসায় যাবো।" বলেই দরজা নিয়ে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে টয়া।

ইয়াদ টয়ার দিকে ঘুরে তাকালো তারপর বললো," ঘুম পেলে আমার রূমে গিয়ে শুয়ে পরো।" 

টয়ার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই সেটা ইয়াদের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ইয়াদের চোখে মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই সে যেনো মজা পাচ্ছে।

" আমি কেনো আপনার রূমে  ঘুমাবো? আমি তো বলেই দিয়েছি যে আমি আপনার সাথে থাকবো না। তাহলে জোর করেছেন কেনো? ", 

এবার ইয়াদের একটু রাগ হলো টয়ার কথায়। ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে বললো,"তোমার কথা কি আমাকে শুনতে হবে? শুনবো না আমি। কি করবে?"

টয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে আজ তাকে এখানেই থাকতে হবে কিন্তু টয়া সেটা কক্ষনো হতে দিবে না। 

বলেছি তো থাকবো না ", বলেই টয়া পিছিয়ে যেতে লাগলো ইয়াদ অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।

টয়া দেওয়ালের সাথে লেগে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ দুপাশে হাত রেখে টয়ার দিকে ঝুঁকে আসলো। টয়ার হার্টবিট যেনো কেয়েকগুন বেড়ে গেছে। টয়া তাও রাগ দেখিয়ে বলতে যাবে তখন ইয়াদ ক্ষীণ গলায় বলল," আমাকে এতো ভয় পাও কেনো? আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো?"

টয়া একটা ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো," এইসব বলে লাভ নেই।আমি থাকবো না। "

ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর টয়া চোখ দেখছে। কি সেই রাগ ওই চোখ দুটোতে। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে গেলো তারপর টয়ার হাত ধরে বললো," ঘুমাবে এসো।"

টয়া চিৎকার শুরু করতে লাগলো না না আমি যাবো না। ইয়াদ উপায় না পেয়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। ইয়াদের হটাৎ এমন কাণ্ডে টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের জামার কলার খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে টয়ার দিকে ঝুকে বললো," আর একটা চিৎকার দিলে তোমাকে কিন্তু আমি একদম  ফেলে দিবো।"

টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো," আর আপনাকে বুঝি আমি ছেড়ে দিবো?"

ইয়াদ একটু হেসে বললো," তুমি তো আমাকে ভয় পাও কি করবে?"

" আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? ", ইয়াদের কানের কাছে চেঁচিয়ে বললো টয়া।

" ভয় পাওয়ার কি আছে একটু পরই বুঝতে পারবে।",বলে আড় চোঁখে তাকালো ইয়াদ।

টয়া একটা ঢোক গিলে বললো," আমাকে নামান। আমি যাবো না।"

ইয়াদ টয়াকে নিজের রূমে নিয়ে এসে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর দরজা আটকে দিতেই টয়া খাট থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। বুকের ভিতরটা যেনো কেমন করে উঠলো। ইয়াদ দরজা আটকে দিয়েছে কেনো টয়ার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ চলে এসেছে। টয়া চেঁচিয়ে বললো," একি আপনি দরজা বন্ধ করেছেন কেনো। দরজা খুলুন।"

ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে আসতেই টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। টয়া ভয়ে পুরো শেষ হয়ে গেলো বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে।

ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে পুরো শার্টটা খুলে ফেললো। টয়া একদম দেওয়ালে সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার বাঁচবে কিভাবে? টয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ঘনো ঘনো নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে। টয়া কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।

ইয়াদ কাছে এসে দাড়াতেই টয়া চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে ঝুঁকে রইলো। কিছু বোঝার আগেই ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে নিলো। টয়া চোঁখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো," এবার ভয় পাচ্ছো বুঝি?"

টয়ার হাত ইয়াদের কাধে ছিলো এই কথা শুনে টয়া রাগ সামলাতে না পেরে ইয়াদের পিঠে জোড়ে এক খামচি বসিয়ে দিলো। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো খামচি দেওয়ার সাথে সাথে। ইয়াদ চোখ খুলে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতেই টয়া ভয়ে জড়সড় অবস্থা।তারপর সরে গিয়ে বললো," ভীতুর ডিম একটা।",বলেই ইয়াদ হেসে ফেললো। ইয়াদ মোটেও চায় না তার ভালোবাসা টয়ার ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াক।

টয়া বোকা হয়ে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদের ঘাড় মটকে দেয়। অসভ্য, বেয়াদব একটা ছেলে। টয়া চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠি শক্ত করে রাগ সামলাচ্ছে। রাগ সামলাতে না পেরে টয়া বলে বসলো," এসবের মানে কি?"

ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে ঘাড় ফিরলো ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এ মেয়েকে চুপ করানো বেশ কষ্টের কাজ। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো," কিছু না।" 

টয়া বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ইয়াদ তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করেছে ভেবেই গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। ইয়াদ কিছু করবেনা সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়েছে তাই কথার পিঠে কথা বলে বসলো," আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?" বলে টয়া উঠে বসতেই ইয়াদ হাত ধরে টয়াকে আবার বিছানার সাথে আটকে রেখে টয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।

টয়া কিছু বলতে গেলো কিন্তু ইয়াদের চোখে চোখ পড়ায় চুপ করে গেলো। ইয়াদ হটাৎ যেনোএক ঘোরের মাঝে চলে গেলো।  তারপর বললো," এইসব করে কোনো লাভ নেই তোমাকে যেতে দিবো না। আর একবার যদি আমি থাকবো না বলে চেঁচামেচি করেছো তাহলে প্রতিটা সেন্টেন্সের ওয়ার্ড গুনে গুনে মাসুল দিতে হবে বুঝেছো?"

ইয়াদের কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। টয়া ইয়াদের দিকে ফিরতেই, ইয়াদ টয়াকে আশ্বস্থ করে বললো," I mean it।,"বলেই ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে গেল। টয়া আর কোনো কথা বললো না তার আর কিছু করার নেই সে ঠিকই বুঝেছে তাই সে চাপতে চাপতে বিছানার একদম কোনায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই তার বুকের ভিতরটা কেমন যেন একটা করে উঠলো।

সকালে টয়া ইয়াদের আগেই উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়। টয়ার চুল এলোমেলো হয়ে আছে চুল থেকে রাবারব্যান্ড খুলে সে আবার বোকা হয়ে গেলো। সে কোথায় ভেবেছিলো মেয়ের রাবারব্যান্ড আসলে টাকা বাধার রাবারব্যান্ড দিয়ে ইয়াদ তার চুল বেধে দিয়েছে। কি শয়তানি বুদ্ধি রে বাবা।

ভাগ্যিস সে ইয়াদের আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। টয়া চোখ হটাৎ দরজায় লাগানো একটা পিংক স্টিকি নোট দেখতে পেলো টয়া এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলো। সেখানে লেখা:

Password hint : আর্নিহা তাবাসসুম টয়া।

ইয়াদ রাতে উঠেই টয়ার জন্য এইটা লিখে রেখেছিল কারন সকালে সে জানে টয়া সকালে আবার অস্থির হয়ে পড়বে। ইয়াদ অনেক রাতে ঘুমালে তার সকালে উঠতে দেরি হয়। ইয়াদ চাইলে পাসওয়ার্ড লিখতে পারতো কিন্তু  টয়াকে বিরক্ত করার সুযোগ তো হাতছাড়া করা যায় না। এদিকে টয়া পিংক স্টিকি নোট হাতে দাড়িয়ে আছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইখানে লেখা হিন্ট অর্নীহা তাবাসসুম টয়া কিন্তু পাসওয়ার্ড তো সব নাম্বার।  অ্যালফাবেট দিয়ে কিভাবে কি করবে? লোকটা এবার এই ধং করতে গেলো কেনো? পাসওয়ার্ড ডিরেক্ট লিখলে কি হতো?

টয়া ভাবতে বসে গেলো। তিন নম্বরের পাসওয়ার্ড! এই হিন্ট দিয়ে কিভাবে কি করবে? হটাৎ টয়ার মনে হলো তার পুরা নামে কয়টা অ্যালফাবেট আছে গুনে দেখা যাক। অর্নিহাতে আছে ছয়টা তারপর তাবাসসুমে আছে আটটা তারপর টয়াতে আছে চারটা তাহলে পাসওয়ার্ড কি হবে 684। টয়া এটা বের করতেই কয়েকমিনিট ব্যায় করে দিলো। অবশেষে 684  দিতেই দরজা খুলে গেল। কি যে শান্তি লাগছে তার সেটা শুধু সে নিজেই জানে। তবে পাসওয়ার্টা কেনো টয়ার নামের সাথেই মিল করে রাখলো ইয়াদ?

টয়া কয়েকবার কলিং বেল বাজালো এই রিতু মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। দরজা খোলার কোনো নাম নেই। টয়া অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দাড়ালো রিতু। ঘুমে তার চোখ জড়িয়ে এসেছিলো তবে টয়াকে দেখে সে ঘুম চলে গেছে। কাল রাতে ইয়াদের বাসায় গিয়ে ফিরেছে আজ সকালে!

করেছে টা কি সারারাত। রিতুর চাহিনি টয়াকে আরো বিব্রত করছে। এই মেয়ে আবার বেশি বুঝে সব কাজে। টয়া কোনো কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে শুয়ে পড়বে কারন কিছু বলতে গেলেই এই মেয়ে হাজারটা প্রশ্ন করবে। এতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই তার নেই। যেই ভাবা সেই কাজ টয়া বড় বড় পা করে নিজের রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। রিতুর কাছে টয়ার হাব ভাব ভালো লাগছে না।টয়া এতক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো অথচ চেঁচামেচি করলো না? টয়া তো এমন মেয়ে না!

নিশ্চই ভয়ংকর কিছু হয়েছে। রিতু পিছু পিছু গিয়ে টয়াকে প্রশ্ন করলো," গেছিলি কাল রাতে আর ফিরলি আজ সকালে! কাহিনী কি? "

টয়া এড়িয়ে যেতেও পারবেনা কারন তানা হলে রিতুর মনে সন্দেহ জাগবে আর সেটা হতে দেয়া যাবে না। টয়া শুকনো গলায় বললো," কই কিছু না তো। আসলে কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গেছিলো।"

রিতুর সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো কারন সে কাল রাতে ঐ মেয়েকে কিছুক্ষণ পরেই সে বেরিয়ে যেতে দেখেছে। তাহলে কি টয়া সারারাত ইয়াদের সাথে কথা বলেছে?  

রিতু টয়ার মাথার চুল টেনে বললো," তুই সারা রাত ইয়াদের সাথে কথা বলেছিস। ওই মেয়েকে দেখলাম কতো আগে বের হয়ে গেলো।"

টয়ার মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে কি বলবে সে নিজেই বুঝছে না। টয়া বিচলিত হয়ে বললো," আমার ঘুম পাচ্ছে আমি এখন ঘুমাবো, সবটা পরে তোকে বলবো।"

এই কথা শুনে  রিতুর সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। সারা রাত কি করেছে যে এখন ঘুমাতে হবে?

রিতু টয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টয়া আরো অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো। এই রিতুর বাচ্চা এমন করছে কেন? অসহ্য লাগছে। 

টয়া গলা ঝেড়ে বললো," কি করছিস? এভাবে আমার চারপাশে ঘুরছিস কেনো?"

 " তোদের মধ্যে কাল রাতে কি কিছু হয়েছে ? একসাথে ছিলি কিছু তো নিশ্চই হয়েছে।", একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো রিতু।

টয়া বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। টয়া একটা রাগ দেখিয়ে বললো," কিসব বলছিস?"

" কিছু না হলে বার বার ঠোঁট কামড়াচ্ছি কেনো? এক মেয়ে অর এক ছেলে একসাথে সারারাত ছিলো আর কিছু হয় নি বিশ্বাস করি কিভাবে?" রিতুর কথায় লজ্জায় টয়া লাল হয়ে গেল। 

" এতো বেশী বুঝিস কেনো?", একটা ঝাড়ি মেরে রিতুকে চুপ করানোর চেষ্টা করে টয়া।

" কি করছে রে? ঝাড়িটাও দেখি ঠিক মতন দিতে পারছিস না!", টয়া হুড়মুড়িয়ে নিজের রূমে ঢুকে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো।

যতক্ষন রিতু বাসায় আছে টয়া রুম থেকেই বের হবে না ভেবেই অনেক্ষন নিজের রুমে বসে ছিলো। তবে শেষমেশ বাধ্য হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে আসতে হলো। খিদে লেগেছিল তার, আজ ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি তার। বেরিয়ে রিতুকে না দেখে খুব শান্তি লাগছে তার। রিতু নিশ্চয় ভার্সিটিতে চলে  গেছে। টয়ার কয়েকটা পাউরুটি টোস্ট করে খেয়ে নিলো। রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে না তার।

ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নিরবের অনেকগুলো মিসড কল এসেছে। ফোন হাতে থাকার সাথে সাথে আবার  নিরবের কল এলো। টয়া ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই নিরব চিন্তিত গলায় বলল," কি হয়েছে তোর? ফোন দিলে ফোন ধরিস না। কেনো? ঠিক আছিস?"

" আরে না তেমন কিছু হয় নি। একটু ব্যাস্ত ছিলাম। তোর কি অবস্থা বল।"

" আমার সাথে এখন দেখা করতে পারবি? দরকার আছে।"

" হুম, পারবো তবে আমাকে ট্রিট দিতে হবে।"

" হ্যা সেতো তুই আমাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বি আমি জানি।"

" ভালো হবে দুজনে একসাথে বসে ভিক্ষা করবো। এখন ফোন রাখ। আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছি।"

টয়া ফোন রেখে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো। 

টয়া নিজের সব প্রিয় খাবার আজকে অর্ডার দিলো। নিরব বেটা ফকির হয়ে গেলেও সে ভাববে না আজকে। চোখের সামনে খাবার গুলো দেখে যেনো মনটাই ভালো হয়ে গেলো তার। নিরব পায়ের উপর পা তুলে বসে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া খাওয়া থামাচ্ছে না।

নীরব ভ্রু কুঁচকে বললো," এতো খায় কোনো মানুষ! আজ পর্যন্ত আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড দুসপ্তাহেও এতো খায় নাই।"

" প্রেম করিস তো সব শুঁটকি মাছের সাথে। একেকটাকে ফু দিলে উড়ে যাবে। সবগুলো তো ফিগারের চিন্তায় খায় না।", কটাক্ষ করে বললো টয়া।

" তুই মনে হয় খুব শক্তিশালী।", আড় চোখে তাকিয়ে বলল নিরব।

" তোর শুঁটকি মাছগুলোর থেকে বেটার। তা মিস্টার নিরব আপনার এ দশা কেনো? কি জন্য আমাকে ডাকলেন?", জুসের গ্লাসটা নিজের দিকে নিয়ে বললো টয়া।

" ওদের কথা বলিস না। আর প্রেমটেম করবো না। এরপর সোজা বিয়ে।", এক হাত টেবিলেরেখে সিরিয়াস হয়ে বললো নিরব।

বিয়ের নাম শুনেই টয়ার নিজের আর ইয়াদের বিয়ের কথা মনে পড়লো। মনে পড়তেই সে বিষম খেলো তারপর স্বাভাবিক হয়ে বললো," তোকে কে বিয়ে করতে যাবে? সেধে সেধে কার নিজের গলায় ফাসিঁ দিতে ইচ্ছে হবে?", উপহাস করে বললো টয়া।

" কেউ না করলে তুই তো আছিস।", একটু হেসে বললো নিরব।

নীরবের মুখে বিয়ের কথা শুনেই টয়ার মুখটা কেমন যেন হয়ে গেলো। 

" আরে চিল। মজা করছিলাম তোকে বিয়ে করলে হয়েছে আমার মাথা খারাপ করে দিবি তুই। এই রিস্ক আমি নিতে রাজি না।", তুরি বাজিয়ে বললো নিরব। 

শব্দে টয়ার হুশ ফিরল টয়া নড়ে চড়ে বললো," কি জন্যে আসতে বললি সেটা বল।"

নীরব দুই হাত টেবিলের সামনে রেখে বললো," তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড তাই বলছি এক ঘটনা শুন,"টয়া ভালোমত শুনতে মাথা আরো এগিয়ে আনলো। 

" সেদিন আমি বাইক নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তায় প্রচুর কাদা ছিলো বৃষ্টির কারণে। তাই ভুল বসতো বাইক কাদা উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক মেয়ের গায়ে কাদার ছিটকে যায়। আমিও খেয়াল করিনি তেমন।", এতটুকু শুনে টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো," বেয়াদব কোথাকার! চোখ বন্ধ করে গাড়ী চালাস নাকি।"

" চুপ কর! পরে কি হলো শুন। আমি ভদ্রতার জন্য বাইক থামিয়ে মেয়েটিকে সরি বলতে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটির জামায় কিন্তু বেশি কাদা লাগে নি। অল্প একটু ছিটকে পড়েছিলো। কিন্তু এদিক মেয়েটা পুরা ধানি লঙ্কা তা তো আমার জানা নেই। তারপর কি কি যে কোথা শুনালো বিশ্বাস করবি না কতো মানুষ যে জড়ো হয়ে গেছিলো। শেষমেশ কোনো ভাবে কেটে পড়েছিলাম।" একটু থেকে নিরব আবার বললো," মেয়েটা সরি শুনার পর বললো জানিস?," আপনার সরি দিয়ে আমি কি করবো? আপনার সরি দিয়ে কি আমার কাপড় কাচা হবে নাকি জামার দাগ উঠে দৌড় দিবে? আপনার সরি আপনি বাসায় নিয়ে গিয়ে তেলে ফ্রাই করে খাবেন।"

বিশ্বাস করবি না এমন মেয়ে বাপের জন্মে দেখি নাই। আমি জামার দাম দিয়ে দিতে চাইলাম বলে কিনা দাম দেওয়া লাগবে না জামাটা ধুয়ে দিলেই হবে। ভাব আমাকে বলছে কিনা তার জামা ধুয়ে দিতে?", নিরবের এই কাহিনি শুনে টয়া পেট ধরে হাসতে লাগলো।

নিরব টয়ার হাসি দেখে বললো," হাসি থামা। ওই মেয়েটাকে তুই খুজে বের করবি, এই জন্যেই তোকে ডেকেছি।", 

টয়া অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো," ওই মেয়েকে দিয়ে তুই কি করবি? আর আমি কই থেকে ঐ মেয়েকে খুজবো। 

" পারবি মেয়েটার গলায় তোদের ভার্সিটির আইডি কার্ড ছিলো। নাম রোল দেখে নিলে ভালো হতো কিন্তু তুই যে ভাবেই হোক খুজে বের কর। তুই এই কাজ করতে পারবি আমি জানি।", নিশ্চিত হয়ে বললো নিরব।

"তাতে আমার কি লাভ?", একটা ভ্রু তুলে বললো টয়া।

" তোদের এনজিও তে আমি ডোনেট করবো। আর তোর একবছরের নেটফ্লিক্স এর বিল আমি পে করবো।"

" বাহ্ । মেয়েটা দেখছি তোর মনে একেবারে বসে গেছে। ok Then deal done।", বলেই টয়া একটু চিন্তা করতে লাগল কিভাবে মেয়েটাকে খুজে বের করবে।

টয়া আর নিরব কথা বার্তা শেষে এনজিও তে গিয়ে কিছু কাজ সেরে নিলো, সেগুলো করতে করতে রাত হয়ে গেলো। টয়া ফ্ল্যাটে ফিরলো রাত ৯টায়।

ইয়াদ আজ আগেই কাজ শেষে  ফ্ল্যাটে ফিরেছে। রাতে একবার প্রভাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা আছে স্যারের অবস্থা নাকি যত সময় যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে। একবার গিয়ে দেখে আসাও দরকার। ইয়াদ সে কারণেই বের হচ্ছিল ইয়াদ লিফটের দিকে যাবে এমন সময় টয়া আর নিরব লিফট থেকে একসাথে বের হলো। ইয়াদ ব্যাপারটা খেয়াল করলো না সে নিজের রুমের কার্ডটা মানিব্যাগ এ ভরতে গিয়ে ভুল করে আইডি কার্ড সহ কিছু কার্ড ফেলে দেয় আর ইয়াদ সেগুলো তুলতেই সে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

টয়া ইয়াদকে দেখেই পালাই পালাই করছে ইয়াদ ব্যাস্ত থাকায় সে এ সুযোগে কেটে পরতে চাইলো। কিন্তু এই নিরব নামক আপদ ইয়াদের কার্ডগুলো তুলতে সাহায্য করতে গেলো। টয়া ইয়াদের পিছনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়লো যাতে ইয়াদ তাকে না দেখে। এদিকে তাড়া দুজনই কার্ডগুলো তুলে উঠে দাড়ালো। ইয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে নিরবকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো।

নিরব ইচ্ছে করেই ইয়াদের হেল্প করতে গেলো কারন এর আগে গালফ্রেন্ডে বলার কারণে টয়া অনেক রাগ করেছিলো নীরবের উপর। তাই এসুযোগে সবটা মিটিয়ে নেওয়া যাবে। এদিকে পিছে টয়ার ইচ্ছে করছে নিরবের কান ধরে টেনে নিয়ে আসে। আজ খুব মানবদরদী হয়ে উঠেছে বেয়াদপটা।

ইয়াদ নিরবকে দেখে মোটেও খুশী হয় নি। সে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। নিরব এসেছে তার মানে এতক্ষন টয়া নিরবের সাথে ছিলো ভেবেই ইয়াদের রাগের পরিমাণটা আরো বেড়ে গেলো। ইয়াদ আসে পাশে তাকিয়ে টয়াকে খুঁজতে লাগলো। টয়া সাথে সাথে দেওয়ালের ওপাশের মিশে দাড়ালো। কাউকে না দেখে ইয়াদ নিরবের কাছ থেকে নিজের আইডি কার্ডটা নিতে যাবে তখনই  ইয়াদের আইডি কার্ড  দিকে তাকাতেই নিরবের চোখ মুখ কুচকে গেলো। ইয়াদ আরফিন নামটা পরেই নিরব টয়ার দিকে তাকালো। টয়া লুকিয়ে লুকিয়ে তাদেরই দেখছিলো দুর থেকে।

নিরব এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো টয়া বুঝতে পারছেনা।

তাড়াতাড়ি কার্ড দিয়ে চলে এলেই পারে। নিরব এভাবে কি দেখছে ভাবতেই ইয়াদ পিছে ফিরে তাকাতেই টয়া পড়ে গেলো মহা বিপদে। টয়াকে ইয়াদ দেখে ফেলে। টয়া এখানে আছে তারমানে এরা দুজনেই এক সাথে ছিলো। ইয়াদ রাগটা সামলাচ্ছে কোনো ভাবে।

" ইয়াদ আফরান ", হিংস্রতার সাথে নিরব বলে উঠলো। 

ইয়াদ একটু অবাক হয়েই নিরবের দিকে তাকালো। সাহস হচ্ছে কিভাবে এই ছেলের এভাবে আমার নাম ধরে ডাকার। নিরবের মুখে নামটা শুনে টয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। নিরব তাহলে চিনে ফেলেছে! কিছু হওয়ার আগেই তাকে যেতে হবে। নয়তো বড় কোনো বিপদ হয়ে যাবে এইখানে। টয়া দৌড়ে নিরবের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর নিরব কিছু বলে উঠার আগেই টয়া নিরবের হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে ইয়াদের দিকে এগিয়ে দিলো। ইয়াদ কার্ডটা হাতে নিয়েই নিরবের দিকে তাকালো। 

টয়ার যে করেই হোক নিরবকে ইয়াদের সামনে থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নিরব সেদিনের পুরো ঘটনাটা জানে সেদিনের পর টয়া ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তার জন্যে নিরবের ইয়াদের প্রতি অনেক ক্ষোভ জমে আছে। সেদিন যা হয়েছিলো তারপর  টয়ার যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্যে একমাত্র দায়ী ইয়াদ। অবশেষে ইয়াদের মুখোমুখি হলো নিরব। নিরব নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারছে না।

নিরব ঝাঁঝালো গলায় বলল," আপনি সেই... বাকিটা বলার আগেই টয়া নিরবের হাত ধরে থামলো তারপর বলল," দেরী হয়ে যাচ্ছে চল।" টয়া নিরবকে টেনে নিয়ে আসতে লাগলো। টয়া সামনে ছিল তাই নিরব নিজের রাগ সামলে নিলো। টয়া কেনো তাকে থামলো সেটার উত্তর টয়াকে দিতেই হবে।

ইয়াদের মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো। টয়া তার সামনে কিভাবে অন্য ছেলের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে গেলো। এই বিষয়টার একটা হেস্ত নেস্ত হতেই হবে। ইয়াদ এই ব্যাপারটা আর নিতে পারছে না। 

টয়া নিরবকে রুমের ভিতরে নিয়ে এলো। ভিতরে এসে নিরব টয়ার হাত ছাড়িয়ে শাসিয়ে বললো," থামালি কেন আমায়? অপমান কাকে বলে আমিও দেখিয়ে দিতাম। এই ছেলের সাথে তুই পাশাপাশি ফ্ল্যাট  আছিস। তুই এইখানে আছিস কিভাবে? সবটা জেনে তোর কি উচিৎ ছিল না আমাকে জানানো।"

টয়া হাত উঠিয়ে নিরবকে  থামিয়ে বললো," তুই খুব ভালো করেই জানিস যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি সেইসব নিয়ে ভাবতেও চাই না। সেটা আমার জীবনের অন্ধকার একটা অধ্যায়, সে অধ্যায়ের পাতা উল্টে আমাকে কষ্ট দিস না।"

" এই লোকটাকে আমি ছেড়ে দিবো তুই এইটাই বলতে চাইছিস?", দাতে দাত চেপে বললো নিরব।

"যাকে আমি ধরে রাখিনি। তাকে তুই ছাড়তে পারবি না কেনো?। আমি নিজের দুর্বলতাটা আর অন্য কাউকে দেখাতে চাই না।", শুকনো গলায় বলল টয়া। বাকিটা বলার আগেই কলিং  বেল বেজে উঠলো হটাৎ। 

টয়া নিরবকে ঠাণ্ডা হতে বললো। এই বিষয়টা সে নিজেই সামলে নিতে চায়। পালিয়ে সে আর কয়দিন বাঁচবে? একদিন না একদিন মুখোমুখি হওয়ারই ছিলো। তারপর নি রবকে রুমে বসিয়ে বাহিরে এলো। 

দরজা খুলে ইয়াদকে দেখে ভয়টা বেড়ে গেলো টয়ার। টয়া উপায় না পেয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে নিলো তখনি ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে কাধে তুলে নিলো। টয়া চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলো। চিৎকার করলেই নিরব ভিতর থেকে এসে পড়বে তারপর যা হবে সেটা টয়া ভাবতেও পারছে না। টয়া ইয়াদের পিঠে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলো।

ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে কাধে তুলে নিলো। টয়া চিৎকার করতে নিলো কিন্তু করতে গিয়েও থেমে গেলো। চিৎকার করলেই নিরব ভিতর থেকে এসে পড়বে তারপর যা হবে সেটা টয়া ভাবতেও পারছে না। টয়া ইয়াদের পিঠে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলো।

 ইয়াদ নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা আটকে দিতেই টয়া জোড়ে জোড়ে চেঁচাতে লাগলো," ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন। কি শুরু করেছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে?"

ইয়াদ টয়াকে নিজের রুমে নিয়ে গেল তারপর নামলো। ইয়াদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে টয়া কিছু বলার আগেই ইয়াদের চোখে চোখ পড়লো তার। কি হয়েছে টয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। 

প্রথমে টয়া  নিজেকে শান্ত করে নিলো তারপর বললো," আপনার কি মাথা খারাপ হয়েগেছে? সরুন।আমাকে যেতে দিন। আমি চাই না আবার কোনো ঝামেলা হোক।" শুকনো গলায় বলল টয়া।

ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো," কে ঝামেলা করবে? ঐ ছেলে? করুক ঝামেলা। আমিও দেখি ঐ রাস্কেলটা কি ঝামেলা করে।"

" দেখুন সমস্যা বাড়াবেন না। আমাকে যেতে দিন।", বলেই টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে একদম দেওয়ালের সাথে দাড় করালো।

তারপর দেওয়ালের দুপাশে হাত রেখে বললো," আমি সমস্যা বাড়াচ্ছি? আর তুমি যে আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো। তুমি যে সবটা ভুলে আছো? কিভাবে পারছো টয়া?"

টয়া এতক্ষন মাথা নিচু করে তাকিয়ে ছিলো ইয়াদের শেষের কথায় টয়া মাথা তুলে তাকালো। ইয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো," না ভুলে থাকা ছাড়া কোনো উপায় আছে কি? এইসব করতে আপনিই আমাকে বাধ্য করেছেন। আর এখন এতো বছর পরে কেনো এসব করছেন? কেনো ফিরে এসেছেন আপনি। কেনো?", তিক্ততার সাথে বললো টয়া তারপর মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।

কেনো ফিরেছি তুমি এতদিনেও বুঝলে না?তোমার খোঁজে ফিরে এসেছি।", টয়ার খুব কাছে গিয়ে জোর গলায় বললো ইয়াদ।

টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো, তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলে ইয়াদের দিকে তাকালো। টয়ার চোখের কোনে অশ্রু জমেছে। সে ছল ছল চোখে তাকিয়ে থেকে বললো," সব কি আপনার ইচ্ছে মতন হবে? আজ আমার জন্য এসেছেন আর সেদিন তো আমার চেহারাও দেখতে চান নি। কি জানি বলেছিলেন আমি কাজ ছেলে ফাঁসানো তা আজ কেনো নিজেই এই মেয়ের কাছে এসে হাজির হলেন? আজ হটাৎ কি এমন হয়েছে যে এই মেয়েটিকে আপনার দরকার।" এতটুকু বলতেই টয়া টয়ার চোখ বেয়ে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো।

ইয়াদ অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে। তার ভিতরটা কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে। টয়া অন্য দিকে তাঁকিয়ে চোখ মুছে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো," জানেন সেই ষোলো বছরের মেয়েটা কখনো বুঝতেই পারেনি সে কতটা জঘন্য। আপনার কয়েকটা কথায় সেদিন আমি সুন্দর পৃথিবীটা অন্ধকারে ভরে গেছে। সেই মেয়েটা  বদলাতে শিখেছে, অন্ধকারে ঘুমাতে শিখেছে, নিজের চুল নিজে বাঁধতে শিখেছে। আপনি কি জানেন আপনি ছিলেন সেই মেয়েটির ছোটো ছোটো খুশির উপলক্ষ। সেই আপনি নিজেই আমাকে আমার অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছেন। অথচ আজ আপনার আমাকে দরকার কিন্তু কেনো? ইয়াদ আর টয়ার গল্পটা যেখানে শুরু হয়েছিল আপনি ঠিক সেই জায়গায় গল্পটা শেষ করে দিয়েছেন। আজ আমি অর্নীহা সেই টয়া আর নেই যে কিনা একসময় আপনার পড়ার টেবিলের দিকে তাকিয়েই সময় কাটাতো, যে কিনা আপনার পিছু পিছু যেতো।" বলতেই টয়া থেমে গেলো আর কথা বলতে পারছে না সে। তার খুব কষ্ট হচ্ছে।

ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো," আমি এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ভাবতে পারিনি।"

" নাহ্ আপনার কোনো দোষ নেই আপনি সেটাই করেছেন যেটা আপনার মন বলেছে। যা আপনি বিশ্বাস করেন। আমি খারাপ মেয়ে কথাটা তো সত্যি। আমি তো ছেলে ফাসাই আপনাকেও দেখুন কিভাবে ফাঁসিয়েছি। আপনি নিজেও বুঝলেন না। হটাৎ করে ইয়াদ আফরান এতো বোকা হয়ে গেলো যে সেই মেয়েটিকে চায়।" বলেই টয়া থামলো। তারপর আবার বললো,"আমি জানি আমরা এমন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়। ", বলতে গিয়ে টয়ার কণ্ঠ কেপে উঠলো।

ইয়াদ অনেক কষ্টে কথা গুলো শুনছে সে ভুল করেছে আর টয়ার এইসব বলার অধিকার রয়েছে কিন্তু তার সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। টয়া আর সময় নষ্ট করলো না সে বেরিয়ে যেতে নিলো কিন্তু কোনো কিছু না বলেই ইয়াদ টয়াকে জরিয়ে ধরলো। টয়া আর কোনো কথা বলতে পারলো না। 

নিশ্চুপে ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়াকে নিজের দুই বাহুতে জরিয়ে রাখলো। ইয়াদ যে সেই ছোট্ট মেয়েটিকেই ভালোবাসে এই কথা কি টয়া কোনোদিন বুঝবে না। ইয়াদের ভিতরে টয়াকে আবার হারানোর ভয়টা জেগে উঠলো। টয়ার এই ঘৃনা ইয়াদ মেনে নিতে পারছে না। 

নিরব অনেক্ষন ধরে বসে আছে টয়া যে কোথায় গেলো ফিরে আসার নাম নেই। বিরক্ত হয়ে নিরব ঘরে হাটাহাটি করতে লাগলো। এদিকে রিতু শাওয়ারে ছিলো এতক্ষন। গোসল সেরে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুড়িয়ে সে বের হয়ে এলো।গোসলের পর কি যে আনন্দ লাগে তার।

রিতু আয়নার সামনে গিয়ে চুল খুলে গাইতে লাগলো," dy-na-na-na, na-na , na-na-ayy light it up like dynamite." গান গাইতে গাইতে খাটে উঠে নাচতে লাগলো রিতু। এমন নাচানাচি সে সবসময়ই করে থাকে। 

হটাৎ গানের আওয়াজে নিরব চমকে উঠলো। গান গাইছে কে এ বাসায়, নিরব গান আওয়াজ শুনে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলো। রিতুর রুমে এসে রিতুকে দেখে নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। কেনো জানি মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকতেই বুঝলো এই মেয়েটি সেই মেয়ে। সেদিন এই মেয়ে তাকে বলেছিলো জামা ধুয়ে দিতে। নিরবের বিস্ময়ের সীমা রইলো না।বাহ্ এতো সহজে একে পেয়ে যাবে এইটা তো সে ভাবে নি। রিতু নিজের মতো নাচানাচি করছিলো হটাৎ দরজার দিকে নজর পড়তেই নিরবকে দেখে রিতু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল। চিৎকার করে জিনিস পত্র ছুড়তে লাগল নিরবের দিকে।

" ডাকাত ডাকাত, বাঁচাও আমাকে। কে কোথায় আছো?"

রিতুর চিৎকারে নিরবের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা নিরব জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বললো," চুপ। একদম চুপ।"

নিরবের ধমকে রিতু চুপ করে গেল তবে ভয় কমে নি তার।

নিরব কান থেকে হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো," আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে তোমার ডাকাত মনে হয়?  Like seriously!"

" কিসের হ্যান্ডসাম ? চেহারা দেখেই বুঝা যায় আপনি আগে মুরগি চুরি করতেন। আমাদের গ্রামে আপনার মতো কতো মুরগি চোর দেখেছি?বুঝি না ভেবেছেন?", ঠাস ঠাস করে বললো রিতু।

নিরবের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।" What the hell? আমি..... আমাকে তোমার মুরগি চোর মনে হচ্ছে? How dare you? Stupid girl।"

রিতুর মাত্র মনে পড়েছে এই সেই বাইকওয়ালা এতক্ষন ঠিক খেয়াল করেনি সে। রিতু ভ্রু কুচকে বিছানা থেকে নেমে এসে শাসিয়ে বললো," আমি স্টুপিড আর নিজে কি? বদমাইশ পোলা। ঘরে হান্দ্দাইসোস কেমনে? তোর সাহস তো দেখি কম না।" রাগের সময় রিতু আর শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে না।

শেষের কথা নিরব কিছুই বুঝলো না। কথাটা যেনো নিরবের মাথার উপর দিয়ে গেলো," what! যা বলছো ভালো করে বলো। What is this হন্দ্দা ?"

" ওরে আমার ঘেটুপুত্র কমলা কিচ্ছু বুঝে না। আপনি এই ঘরে ঢুকলেন কিভাবে? আপনার নিশ্চয়ই বদ মতলব আছে তাই না?", কড়া গলায় বললো রিতু।

" এই তুমি একদম চুপ করো। আমি কোনো ঘেটু কমলা নই। What is this language?", শাসিয়ে বললো নিরব।

" নিশ্চই টয়া খুলে চলে গেছে তাই না। এই সুযোগে ভিতরে ঢুকছেন? সাহস তো কম না এই সন্ধ্যা বেলায় চুরি করতে আসছেন। আমাকে কম ভাববেন না আমি একাই একশো। আপনার মতন কতো চোররে ধোলাই করছি।" বলে শেষ করতেই নিরব চেঁচিয়ে বলল," shut up। আমি মোটেও চোর না।"

ওহ তাই নাকি। বললেই হলো? চুরি করতে আসেন নাই তো কি জামাটা ধুইয়া দিতে আসছেন। আসেন তাইলে, যদিও আমি  ধুয়ে রাখাসি আপনি আরেকবার ধুয়ে দেন।", বলে হাতের ঈশারায় দেখিয়ে দিলো।

নিরবের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। এই মেয়ে এত অদ্ভুত কেনো? নিরব হা করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর কিছু বলার আগে মলিন চোখে বাসায় আসলো টয়া। 

নিরব টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো," এই মেয়ে আমাকে কি বলেছে জানিস আমি নাকি মুরগি চোর।"

রিতু তেজী গলায় বলে উঠলো," জ্বি না আপনার চেহারা মুরগি চোরের মতন।"

টয়া কোনো কথাই শুনলো না। ইয়াদের বলা শেষ কথাটি তার কানে বাজছে। টয়া যখন চলে আসছিলো ইয়াদ পিছন থেকে বলেছিলো" তোমায় আর আমি ছাড়ছি না। তোমার কাছে আমি অসহ্য হলেও তোমায় আমার কাছেই থাকতে হবে। আমি আবার তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দিবো না।

তোমায় আমি ছাড়ছি না। তোমার কাছে আমি অসহ্য হলেও তোমায় আমার কাছেই থাকতে হবে। আবার তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দিবো না।" ভাবতে ভাবতে টয়া একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। কেনো জানি ইয়াদের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইয়াদ কি তাকে সত্যিই ভালোবাসে? 

আজ আর সে আগের মতন নেই যে মেয়ে তার পিছু পিছু ঘুরতো। ইয়াদের তো তাকে পছন্দ ছিলো না। সোফায় বসে একমনে টয়া এইসব ভাবছিল তখনই নিরব টয়ার সামনে এসে গলা ফাটিয়ে বলল," এই মেয়েটাকে চুপ করা।"

টয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিজেই আছে এক বিপদে তার উপর এই দুইটা কি শুরু করেছে।

এইদিকে রিতু চেঁচিয়ে বললো," আমি চুপ করবো না। ", 

টয়া রিতুকে থামিয়ে বলল," কি সমস্যা তোদের? এমন করছিস কেনো?"

নিরব তীক্ষ্ণ গলায় বললো," এটাই সে মেয়েটা। যার কথা আজ তোকে বললাম।"

টয়া অবাক হয়ে বললো," রিতু! " বলেই রিতুর দিকে তাকালো। এই কথায় টয়া মোটেও অবাক হয়নি কারণ রিতু এইসব পারে। টয়া হেসে বললো," ঠিক আছে। এমন কাজ ওকে দিয়েই সম্ভব।খুব ভালো করেছিস রিতু। আমার এই ভাইটাকে একটু শিক্ষা দে।" বলেই রিতুকে বাহবা দিলো।

নিরব কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেন, টয়া কেনো এই মেয়ের পক্ষে চলে গেলো। রিতু হাহাহাহা করে জোড়ে হেসে বললো," আজ এমন শিক্ষা দিবো, জীবনেও ভুলতে পারবে না।"

নিরব টয়াকে শাসিয়ে বললো," তুই কিন্তু এটা ঠিক করছিস না। তুই এই মেয়েটার সাইড নিয়ে কেনো কথা বলছিস?"

মেয়ে হয়ে আমি একটা মেয়েকে সাপোর্ট করবো এটা স্বাভাবিক না? তোদের ব্যাপার তোরা বুঝে নে।", বলে টয়া নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নিরব হা করে তাকিয়ে রইলো। রিতু এগিয়ে আসে বললো," আসেন আসেন জামাটা ভিজিয়ে দিচ্ছি ধুয়ে দিয়ে তারপর যান।"

নিরব রাগে কটমট করে রিতুর দিকে এগিয়ে এসে বললো," তোমাকে আমি দেখে নিবো। বলে রাখলাম।" বলেই গড়গড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

রিতু নিরবকে রাগিয়ে দিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে। রিতু আবার গান ধরলো "  dy-na-na-na  na-na  na-na-ayy"

টয়া নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে চুপ করে বসে আছে। তার কিছুই ভাল্লাগছে না অন্যদিকে ইয়াদ টয়ার ঘড়িটা হাতে নিয়ে বসে আছে। দুজনেই কষ্টে আছে কিন্তু কেউ সেটা স্বীকার করবে না।

আজ রাতে একটা অপারেশন অ্যাটেন্ট করে ফিরেছে ইয়াদ। বাসায় ফিরেই ইয়াদের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিলো। কিছুক্ষন শুয়ে ছিলো তাও মাথা ব্যাথা ছাড়ছে না। ইয়াদ কফি নিয়ে বসেছে যদি মাথা ব্যাথাটা কোনো ভাবে কমে। এমন সময় মিলি আক্তার মানে ইয়াদের মায়ের কল আসে। ইয়াদ কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো।

" কি হয়েছে তোর আজ সারাদিনে যে একবারও মায়ের খোঁজ নিলি না।"

" মা, আজ একটু ব্যাস্ত ছিলাম। কেমন আছো তুমি?"

" হ্যা ভালো আছি।"

"আর বাবা?"

" হ্যা ভালো আছে। আচ্ছা কি করছিস এখন?"

" কিছু না কফি খাচ্ছি।"

" শরীর ঠিক আছে তোর?"

" হ্যা,মা ঠিক আছি।"

" টয়া কোথায়? ওকে একটু ফোনটা দে তো। কথা বলিনা কতদিন। ওর নাম্বারটা হারিয়ে গেছে।"

" টয়াকে দিবো মানে ও কি আমার বাসায়?"

" উঠে গিয়ে দরজা খুল। তারপর টয়ার বাসার কলিংবেল বাজা। তারপর টয়া দরজা খুললে, ফোন এগিয়ে দিয়ে বলবি মা কথা বলবে। বুঝেছিস?"

" মা এতো রাতে? এতো রাতে কি কথা তোমার?"

" যা করতে বলেছি কর।"

আর কোনো উপায় না পেয়ে ইয়াদ উঠে দাড়ালো।ইয়াদ এমনিতেই মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এবার নাকি টয়ার কাছে গিয়ে ফোন দিতে হবে। টয়া এতো এতো প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে না ফেলে। এতো রাতে মেয়েটা দরজা খুলবে কিনা তার ও সন্দেহ আছে। টয়া আর তার মা দুজনই নাছোড় বান্দা।

ইয়াদ কিছুক্ষণ মাথা ধরে বসে থাকলো, মাথা ব্যথার ওষুধ থাকলে ভালো হতো সেটাও নেই। কল রিসিভে থাকা অবস্থায় ইয়াদ  টয়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজালো।

কিছুক্ষণ পর টয়া দরজা খুলে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সে ভিতর থেকে না দেখেই ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলেছ। ইয়াদকে দেখে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ হাতে থাকা ফোনটা টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ তাকে নিজের ফোন দিচ্ছে কেনো? সে তার ফোন নিয়ে কি করবে? 

ইয়াদ টয়ার হাত ধরে তার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে চলে গেলো। মাথার যন্ত্রণাটা বেশ বেড়েছে। টয়া ফোন হাতে হতবুদ্ধির দাড়িয়ে আছে। এভাবে ফোন ধরিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার মানে কি? ডাক্তার সাহেবের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

হটাৎ ফোনের থেকে আওয়াজ আসতেই টয়া স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলো মা নাম। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কানে নিলো। আজব মানুষ! মা তোমার সাথে কথা বলবে এইটা বলতে তার কি সমস্যা ছিলো। ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। টয়া রুমে গিয়ে অনেক্ষন কথা বললো। ইয়াদের মায়ের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা। টয়া কথা শেষে ফোনটার দিকে তাকালো। এবার এই ফোন সে কি করবে? যার ফোন তার কি কোনো চিন্তা নেই। টয়া ভাবলো থাক, ফোনটা সে দিতে যাবে না। যার দরকার সে নিজে এসে নিয়ে যাবে। তখনি একটা কল এলো টয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। ফোনের স্ক্রিনে নাম উঠেছে  প্রতিভা। দেখেই টয়ার গা জ্বলে উঠলো একবার প্রভা আরেকবার প্রতিভা এই ছেলের জীবনে দেখছি সব প এর ছোড়াছুড়ি। এখন আবার এই ফোনটা দিয়ে আসতে হবে নিশ্চই বিশেষ কেউ ফোন করেছে।

টয়া ইয়াদের দরজার সামনে দাড়ালো দেখে তো মনে হচ্ছে দরজা খোলা। এই ছেলের কোনো কান্ড জ্ঞান নেই এভাবে কেউ দরজা খুলে রাখে? টয়া ভিতরে ঢুকে একটু ঘাবড়ে গেলো। ঘরের মাঝে শুধু একটা হালকা বাতির আলো জ্বলছে। কি ভয়ানক অবস্থা। টয়া ইয়াদকে খুঁজতে ইয়াদের রুমে গেলো পুরো রুম অন্ধকার করে ইয়াদ শুয়ে আছে। আলোতে চোখ খুলতে অসহ্য লাগছে তার। টয়া এসে রুমে বাতি জ্বালাতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে চোঁখের সামনে হাত রাখলো। ইয়াদ বুঝতে পেরেছে টয়া এসেছে।" টয়া লাইটটা অফ করে রাখো।"

ইয়াদের কথায় টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো," আপনি এভাবে অন্ধকারে শুয়ে আছেন কেনো?"

" মাথা ব্যাথা করছে, লাইট অফ করো।", ইয়াদ চোখ খুলতে পারছেন তাই বিচলিত হয়ে টয়া লাইট অফ করে দিলো, এবার এই অন্ধকারে সে কি করবে? টয়া বেশ জোড়ে জোড়ে বললো," আমি কিছু দেখতে পারছি না আপনি কোথায়? আমি যাবো কিভাবে?"

" ইডিয়েট।ফোনের টর্চ অন করলেই তো পারো।", ইয়াদ চোখ খুলে বললো।

টয়া বোকা হয়ে গেলো সত্যিই মাঝে মাঝে নিজের উপরই তার রাগ হয়। টয়া ফোনের টর্চটা জ্বালিয়ে ইয়াদকে খুজে পেলো। সে মাথার নিচে দুহাত রেখে শুয়ে আছে। টয়া সামনের দিকে আলো রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু নীচে কি আছে সে তা খেয়াল করলো না। ছোটো একটা টুলের সাথে হোচট খেয়ে সামলাতে না পেরে ইয়াদের বুকের উপর পড়ে যায়। টয়ার চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো। হটাৎ এমন ঘটনায় ইয়াদ নিজেও অবাক হলো। তাও ভালো অন্য কোথাও পরে ব্যাথা পায় নি। 

ইয়াদ টয়ার মুখের সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বললো," দেখে তো হাঁটতে পারো নাকি? তোমার বর ডাক্তার তাই বলে এতো কেয়ারলেস হতে হবে?"

টয়া রেগে উঠে চলে যেতেই ইয়াদ টয়াকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো। টয়া ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে পারছেনা। টয়া  কঠিন গলায় বলল," ছাড়ুন বলছি না হলে কিন্তু।"

" চিৎকার করবে? করো। তুমি তো সেটাই পারো। এক্সপার্ট ইন সাউন্ড পলিউশন", টয়াকে জড়িয়ে কাত হয়ে গিয়ে বললো।

" আপনার না খুব মাথা ব্যাথা করছে? এখন কি হয়েছে ? মাথা ব্যাথা উড়ে গেছে।", রাগ করে বললো টয়া।

" মাথা ব্যথার ওষুধ তো এখন আমার কাছেই আছে।", বলেই টয়াকে আরো কাছে নিয়ে এলো।

" ওষুধ থাকলে ওষুধ খাচ্ছেন না কেনো? আর আমাকে ছাড়ুন।", নিষ্পাপ মনে প্রশ্ন করলো টয়া।

টয়ার কথায় ইয়াদ শব্দ করে হেসে বললো," সত্যি বলছো তো?"

টয়া কিছু বলার আগেই আবার ইয়াদের ফোন বেজে উঠলো। ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে বললো," আরে ধরুন ধরুন আপনার প্রভাতী ফোন করেছে।"

প্রভাতী নামে কাউকে ইয়াদ চিনে না তাই টয়ার কথায় তার ভ্রু কুচকে গেলো।

ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো। স্ক্রিনে প্রতিভা নাম উঠে আছে ইয়াদের কলিগ তাহলে প্রভাতী কে?

" কে প্রভাতী? স্ক্রিনে ত প্রতিভা লেখা।", ইয়াদ আড় চোখে প্রশ্ন করলো।

টয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো," ওই একই কথা প্রতিভা প্রভাতী সব তো প দিয়েই শুরু তাই না। কেনো আপনার কি খুব গায়ে লেগেছে প্রভাতী বলায়।"

" তুমি বড্ড হিংসুটে।", ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো ইয়াদ।

" কি আমি হিংসুটে? আমি কেনো হিংসে করতে যাবো? একদম আজেবাজে কথা বলেবেন না।" ইয়াদকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিতে লাগলো নিজের উপর থেকে আরো বললো," আপনি সরুন তো। আমি যাবো।" ইয়াদ ছাড়লো না টয়ার হাত ধরে বিছানার সাথে মিশিয়ে রাখলো!


" তুমি বড্ড হিংসুটে।", ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো ইয়াদ।

" কি আমি হিংসুটে? আমি কেনো হিংসে করতে যাবো?" বলেই টয়া ইয়াদকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিতে লাগলো নিজের উপর থেকে," আপনি সরুন তো। আমি যাবো।"

ইয়াদ টয়ার হাত ধরে বিছানার সাথে মিশিয়ে রাখলো। টয়া চোখ ছানাবড়া করে ফেললো। কি চাইছে কি ইয়াদ? ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদের চাহিনিতে টয়া অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইয়াদ এগিয়ে আসতেই আবার ফোন বেজে উঠলো। ইয়াদ তোয়াক্কা না করেই  টয়ার কাছে আসছিলো। টয়া ফোনের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে একটু সাহস জুগিয়ে  ইয়াদকে আরো ঠেলতে লাগলো।  

"আপনি গিয়ে আপনার ফোন ধরুন। আর সরুন আমার উপর থেকে।", শাসিয়ে বললো টয়া।

ইয়াদ ভ্রু কুচকে তাকালো। তাহলে ফোন রিসিভ করা নিয়ে যখন এতো কথা ঠিক আছে। এখন ফোনটা রিসিভ করেই টয়াকে মজা দেখাচ্ছি, ভেবেই ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো তারপর টয়াকে গম্ভীর গলায় বললো," ঠিক আছে তাহলে আমি প্রতিভার সাথে কথা বলছি কিন্তু তুমি একটা আওয়াজও করবে না।" 

" একটাও আওয়াজ করবে না", বির বির করে ব্যাঙ্গ করেই টয়া মুখ বাঁকিয়ে ফেললো। তারপর আরো বললো," আপনি কথা বলবেন কি গান গেয়ে শুনবেন আপনার ইচ্ছা। আমি এখানে থাকবো না আমাকে যেতে দিন।" বলেই হাত ছাড়ানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ল টয়া।

" আগে আমি কথা বলা শেষ করি, তারপর।", বোলেই ইয়াদ টয়ার হাত শক্ত করে ধরে ফোনটা রিসিভ করে বললো," হুম, প্রভাতী বলো। I mean প্রতিভা।" 

এই মেয়েটা দেখছি আমার মাথাও খারাপ করে দিচ্ছে মনে মনে বললো ইয়াদ। টয়ার সাথে থেকে থেকে প্রতিভা প্রভাতী  গন্ডগোল লেগে গেছে তার। মনে মনে ভেবে ইয়াদ আড় চোখে তাকালো টয়ার দিকে। টয়া মুচকি মুচকি হাসছে। বেশ হয়েছে!

ফোনের ওপাশে প্রতিভা নিজেও একটু বিব্রত হয়ে যায়। ইয়াদ টয়ার এক হাত শক্ত করে ধরে ফোনে কথা বলছে। প্রয়োজনেই কল করেছে মেয়েটা, তারা সে বিষয়েই আলোচনা করছে। টয়ার রাগে গজগজ করছে সারাদিন তো ক্লিনিকেই থাকে তারপর আবার এদের বাসায় এসেও কথা বলা লাগবে। 

ইয়াদ অন্য দিকে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে সমস্যাটা কি নিয়ে হয়েছে। এদিকে টয়া এক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আজব! ছেলেটা একবারও টয়ার দিকে তাকাচ্ছেও না। টয়ার রাগ বাড়তেই ধরে থাকা হাত দিয়েই টয়া ইয়াদের হাতে খামচি বসিয়ে দিলো। হটাৎ এমন ব্যাথায় ইয়াদ  ভ্রু কুঁচকে হালকা উফ শব্দ করলো। ওপাশ থেকে প্রতিভা বললো," ইয়াদ কোনো সমস্যা হয়েছে?"

ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো," নাহ্ একটা হিংসুটে মশা কামড়েছে। তোমাকে আমি পরে ফোন করছি।"

ইয়াদ ফোন কাটতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো," আমি হিংসুটে মশা?"

ইয়াদ ফোনটা সুইচ অফ করে একপাশে ফেলে দিয়ে বললো," যা দেখছি সেটাই তো বলবো তাই না।"

আচ্ছা আমি হিংসুটে মশা আমি আপনাকে কামরেছি?  কখন কামড়ালাম আপনাকে? ইচ্ছে করছে সত্যি সত্যি একটা কামড় বসিয়ে দেই।" রাগে ফুলে বললো টয়া।

টয়ার এমন রূপ ইয়াদ এর আগে দেখেনি। ইয়াদের কাছে বেশ মজাই লাগছে। ইয়াদ মুখে হাসি রেখে এগিয়ে আসতেই টয়া হুমকি দিয়ে বললো,"একদম কাছে আসবে না! আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি কি অবলা নারী নাকি?"

ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসছে এতে টয়ার বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে। হুমকি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইয়াদ মুখটা কাছাকাছি আনতেই টয়া চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠলো," থামুন থামুন। আমি একটা কথা বলবো।"

ইয়াদ থেমে গিয়ে অবাক হয়ে বললো," কি কথা?"

" মানে আমি ..  কানে কানে বলব।", চোখ পিট পিট করে বললো টয়া।

টয়া আবার ইয়াদকে কানে কানে কি বলবে ? আবার চিৎকার মারবে নাতো কানের সামনে। 

ইয়াদ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল," একদম কানের সামনে চিৎকার করার চেষ্টাও  করবে না বলে রাখলাম।"

" ছি আমি মোটেও এসব করিনা। এগুলো আপনার ভুল ধারণা ", খুবই হাসি মাখা মুখে বললো টয়া।

" সেটা তো একটু পরই বোঝা  যাবে।", বলেই ইয়াদ টয়ার দিকে কান এগিয়ে আনতেই টয়া ইয়াদের গলায় এক জোড়ে কামড় বসিয়ে দিল। ইয়াদ ব্যাথায়  চোখ বন্ধ করে ফেললো। টয়া এমন কিছু করবে  ভাবতেই ইয়াদ অবাক হচ্ছে। টয়া নিজের রাগ ঝেড়ে সরে এসে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।

" আপনি বলেছিলেন না হিংসুটে মশা কামড়েছে। কামড়ালে ঠিক কেমন লাগতো সেটাও তো অনুভব করা দরকার তাই না। শুধু মুখে বললেই হবে? আর হ্যা গলায় কামড়েছি বলে  আজে বাজে কিছু ভাববেন না। আপনি আমার হাত আটকে রেখেছেন নইলে  হাতেই কামড়ে দিতাম।", দাতে দাঁত চিপে বললো টয়া।

" তাই বুঝি।", ইয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল। রাগের মাথায় কাজটা করা যে ঠিক হয়নি। টয়া ঠিকই এবার বুঝতে পারছে।টয়া এবার তোকে পালাতেই হবে। এখানে থাকলে কপালে বিপদ। টয়া উঠে যাবার জন্যে হুড়োহুড়ি করতে লাগলো।

দেখুন অনেক হয়েছে। এবার আমি বাসায় যাবো।", টয়া ইয়াদের দিকে তাকালো। সে টয়ার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 

দেখেই টয়া একটা ঢোক গিলে বললো," অনেক্ষন তো হাতটা এবার ছাড়ুন। ব্যাথা করছে।" বলেই টয়া চোখ নামিয়ে ফেললো। এতক্ষনে ইয়াদের মাথায় এলো কথাটা।টয়ার হাতের দিকে তাকালো আসলেই বেশী হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার হাত ধরো ওকে টেনে তুলে বসলো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে বসালো। টয়া লজ্জায় আবার উঠে যেতেই ইয়াদ আবার জরিয়ে ধরলো। ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। টয়ার হাতে লাল দাগ বসে গেছে। এবার ইয়াদের আফসোস হচ্ছে। 

ইয়াদ টয়ার দুই হাত দিয়ে নিজের মুষ্টির মাঝে ধরে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো," তুমি যে কাজটা করলে। এবার  যদি কেউ জিজ্ঞেস করে গলায় কি হয়েছে অমি কি বলবো?"

টয়া চোখ ছানাবড়া করে ইয়াদের গলার দিকে তাকালো। রক্ত জমাট বেঁধে লাল লাল হয়ে গেছে। এমন কিছু করার ইচ্ছা টয়ার ছিলো না।

টয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো," আমি জানি না।"

জানি না বললে তো আর হলো না। সমস্যা তুমি করেছো সমাধান তো তোমাকেই করতে হবে। হুম বলো কিভাবে সমাধান করবে?", ইয়াদ টয়ার মুখ তুলে প্রশ্ন করলো।

টয়া ইয়াদের কথা শুনে ঘাবড়ে গেল।

টয়া পালানোর জন্য বললো," ক্রিম নিয়ে আসবো?"

ক্রিম আনা লাগবে না আপাদত তুমি আমার সাথে থাকবে।", বলে টয়াকে কোলে তুলে নিলো।

টয়া চোখ মুখ খিচে ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে নিজের পাশে শুইয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদের নিশ্বাস টয়ার কাধে এসে পড়তেই টয়া কেপে উঠলো বুকের ভিতরটা তোলপাড় শুরু করেছে। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে এসে বললো," এটাই তোমার শাস্তি।"

সকালে ঘুম ভেঙে টয়া  বিশাল বড় একটা শক খেলো। ইয়াদের বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সে। কিন্তু রাতে ইয়াদ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে তো সরে গিয়েছিলো তাহলে এদিকে এলো কি করে। ঘুমের মাঝে কি নিজেই! টয়া খুব আস্তে আস্তে সরে এলো উঠে যাবে এমন সময় ইয়াদের গলার দাগটা দেখে নিজের উপর নিজের রাগ লাগছে। মাঝে মাঝে যেনো শয়তানে মাথায় এসে বসে তার।

টয়া আর রিতু হসপিটালে এসেছে। নিরবের নাকি হটাৎ একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। হসপিটালে এসে টয়া আর রিতু অবাক। নিরবের হাত ব্যান্ডেজ করা কনুই পর্যন্ত । টয়া নিরবের মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে বললো," চোখ কি হাতে খুলে গাড়ী চালাস?"

রিতু নিরবের বেডের পাশে বসে বললো," নিশ্চই আবার মুরগি চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে তারপর লোকে দিয়েছে রামধোলাই এখন  হাত ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।"

টয়া ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো। 

নিরব পাশে থাকা একটা তুলোর প্যাকেট রিতুর দিকে ছুঁড়ে মারলো তারপর বললো," এই মেয়েটিকে এনেছিস কেনো? ও বার বার আমায় মুরগি চোর বলে কেনো? কেউ শুনলে আমার মান সম্মান থাকবে কিছু?"

ও বাবা! তাহলে কি মুরগি বেশি ছোটো প্রাণী হয়ে গেছে? আচ্ছা তাহলে গরু চোর। এবার তাহলে প্রেস্টিজে লাগবে না তো।", বোলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো রিতু।

তোমাকে আমি।......", নিরব বলে শেষ করার আগেই একজন কড়া গলায় বলল," আপনারা আস্তে কথা বলুন। পাশের বেডের রোগীর অসুবিধা হচ্ছে।" টয়া পিছন ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।

তোমাকে আমি।......", বলে শেষ করার আগেই একজন কড়া গলায় বলল," পাশের বেডের রোগীর অসুবিধা হচ্ছে। সবাই পিছনে তাকিয়ে ইয়াদকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো। ইয়াদ নিজেও ওদের এইখানে দেখবে আশা করেনি। সাদা এপ্রনে ইয়াদকে অনেক সুন্দর লাগছে। টয়া ইয়াদের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদের গলার সেই দাগের ব্যান্ডেজটার দিকে নজর পড়লো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো।

ইয়াদ নিরবকে দেখতেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো," এই স্টুপিডের আবার কি হয়েছে?"

নিরবকে স্টুপিড ডাকায় রিতু খিল করে হেসে ফেললো। নিরব রাগী চোখে রিতুর দিকে তাকিয়ে ইয়াদকে বললো," এখানকার ডক্টরদের ব্যাবহার দেখছি খুবই খারাপ। এই আপনাদের ব্যাবহার রোগীর সাথে?" 

শুধু টয়ার কথায় ভেবে নিরব এই ছেলেকে কিছু বলে না। নিরবের  মাঝে মাঝে ইচ্ছে করছে রিতু আর ইয়াদকে আফ্রিকার জঙ্গলে নিয়ে রেখে আসে। এরা কখনোই মানুষের সমাজে বসবাসের যোগ্য নয়।

এমন সময় প্রতিভা রুমে এসে বলে," ইয়াদ তোমার পেশেন্ট অপেক্ষায় আছে চল।" ইয়াদের হাতের বাহু ধরে বললো।সবার কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক লাগলো টয়ার যেনো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। 

ইয়াদ নিরবের দিকে তাকিয়ে নার্সকে বললো," এই বেডের রোগীর দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখবেন। বেশি উৎপাত যেনো না করে।"

নিরব তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো তারপর বলে উঠলো," বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? নিজের সীমা ছড়িয়ে যাবেন না। শুধু মাত্র একজনের জন্য নয়তো আপনার সব কথার উচিৎ জবাব আমার কাছে আছে।", বলে নিরব টয়ার দিকে তাকালো। টয়া চোখ বড় বড় করে নিরবের দিকে তাকিয়ে চুপ করতে বললো। 

বহু বছর আগের সেই দিনটায় বাড়ি ফিরবার সময় টয়ার একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়। তারপর থেকে টয়ার নাচটা বন্ধ হয়ে যায়, পায়ের গোড়ালিতে মারাত্মক ব্যাথা পায় সে। কয়েক বছর এমন ছিলো যে বেশি হাটাহাটি করতে পারতো না টয়া। সেই থেকে নাচটা ছেড়ে দিয়েছে  টয়া। যদিও সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তবে নাচটা আর করা হয় নি। নিরব এইসব কথা ইয়াদকে না আবার বলে দেয় সেই ভয়ে টয়া নিরবের পাশে বসে ওর হাত চেপে ধরলো।

ইয়াদের মনে হচ্ছে টয়া নিরবকে কিছু একটা বলা থেকে আটকাচ্ছে। কি এমন কথা? যা লুকিয়ে রাখতে এতো কিছু!  আরো রাগ লাগছে টয়া নিরবের পাশে বসে হাত ধরে আছে দেখে। 

ইয়াদ স্থির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময়ে রিতুর ইয়াদের গলার বান্ডেজটার দিকে চোখ পড়লো রিতু  হাসি মিশ্রিত গলায় বললো," ডাক্তার সাহেবের গলায় দেখি ব্যান্ডেজ।"

নার্স, প্রতিভা, নিরব সবাই  হটাৎ ইয়াদের গলার ব্যান্ডেজের দিকে তাকালো। টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো সঙ্গে সঙ্গে সে চোখ নামিয়ে ফেললো। কেমন যেনো অস্থির লাগছে নিজেকে।

প্রতিভা ইয়াদের গলার ব্যান্ডেজে হাত দিয়ে রসিকতা করে বললো," হিংসুটে মশা তাহলে এই জায়গায় কামড়েছে!"

টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলেও রাগ তার মাথায় উঠে গেছে। এই প্রভাতী দেখছি ইয়াদের গলায় হাত পর্যন্তও দিয়ে ফেলেছে। এ কেমন বেহায়া মেয়ে! আর ইয়াদ! ইয়াদ কিছু বললো না কেনো? 

এমন সময় একটা নার্স রুমে ঢুকলো তারপর হাতে থাকা জুসের গ্লাসটা পাশের সেটা টেবিলে রেখে বললো," এটা পেশেন্ট কে খাওয়ানোর পর আপনারা ডাক্তার আপার সাথে কথা বলে নিবেন।"

টয়া জুসটা দেখে ইয়াদকে জ্বালানোর একটা প্ল্যান করে জুসটা নিজের হাতেই নিরবে খাইয়ে দিল। ইয়াদ রাগে মুষ্টি বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ পারছে না এক্ষুনি নিরবকে কাচা গিলে ফেলে। 

প্রতিভা আবার ইয়াদের হাত ধরে টেনে বললো," চলো। আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবে। রোগীরা অপেক্ষা করছে ইয়াদ।"

টয়া ইয়াদের চোখে একবার তাকালো তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইয়াদও রেগে বেরিয়ে গেলো। 

কিন্তু নিরবের তো একটা ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন। এই ছেলে এইখানে থাকা মানেই বিপদ। ইয়াদকে যে কিছু বলবে না তার গ্যারান্টি নেই। এমনিতেই বিয়ের খবর নিরবের কানে আসেনি আসলে কি যে করবে কে জান! কাল রাতে আবার দাদাভাইরা আসবে তখন এমনিতেই সব জানতে পারবে নিরব। আগে ভাগে বলে রাখবে! পরে জানলে আবার কি করবে কে জানে? কিন্তু রিতুর সামনে এতো কিছু বলা যাবে না। টয়া বুদ্ধি খাটিয়ে বললো," রিতু একটু জেনে আসবি ডাক্তার কোন রুমটায় আছে?", 

রিতু নিরবকে মুখ বাঁকিয়ে উঠে গেলো। নীরবের ইচ্ছে করছে এই রিতুকে কাচা গিলে ফেলে।

রিতু বেরিয়ে যাওয়ায় টয়া নিরবকে বললো," শুন তুই ইয়াদের সাথে কোনো ঝামেলায় যাবি না।"

" আমি কোথায় ঝামেলা করি!দেখলি না সেধে এসে ঝামেলা করতে চাইলো।", টয়া মাথা নাড়িয়ে বললো," আচ্ছা বুঝেছি। কিন্তু আমার কথা শুন। ঠাণ্ডা মাথায় শুনবি ঠিক আছে?"

" হুম বল।", নিরব মাথা নাড়িয়ে বললো।

" বাবা মা ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।", বলেই চুপ করে গেলো টয়া। বিয়ে হয়ে গেছে বললে এতো কাহিনি বলতে হলে কখন  হয়েছে? কিভাবে হলো এসব?  বাবা মা কি করে রাজি হয়েছে? নিরবকে কেনো জানানো হয় নি?এতো কিছু বলার থেকে এটা বলাই ভালো।

" মজা করছিস?", গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো নিরব।

টয়া না সূচক মাথা নাড়লো। " কিভাবে ঠিক হলো? তুই রাজি হলি কিভাবে? তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করবি? যার জন্যে তুই এতো কষ্ট পেয়েছিস?" রেগে বলল নিরব।

" নাহ্ আমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা একটা অ্যাকসিডেন্ট। তার সাথে ইয়াদের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু শুধু তাকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই। সেদিন তো তুই আর আমি একসাথেই ছিলাম। পুরোটাই একটা দুর্ঘটনা।", বলতে বলতেই এর মাঝে রিতু এসে হাজির।

টয়া উঠে দাড়ালো প্রথমে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসা ভালো আগে নিরব মাথা ঠান্ডা করুক।

আমি এসে তোর সাথে কথা বলছি।", টয়া উঠে দাড়ালো তারপর রিতুর সাথে বেরিয়ে এলো। 

নিরবের মায়ের কান্সারের চিকিৎসা চলছে। তাই তার বাবা তার মাকে নিয়ে বিদেশে আছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে যা করার তা টয়াকেই করতে হবে।

টয়ার সাথে ইয়াদের বিয়ে হবে? নিরব সেটা কিছুতেই মানতে পারছে না। টয়াকে সে নিজেও ভালোবেসে ফেলেছে আর সেটা আজ নয় অনেক আগ থেকেই। টয়া যে নিরবকে  ভালোবাসে  না সেটা নিরব ভালো করেই জানে। তবে ইয়াদ! যার জন্য টয়াকে এতো কষ্ট পেতে হয়েছে, সে কখনোই টয়াকে ডিজার্ভ করে না। 

ইয়াদ রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো। টয়া ভিতরে আছে কিনা জানার জন্যে দ্বিতীয়বারের মতো রুমের ভিতরে এলো। ইয়াদকে সামনে দেখে নিরবের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।

আসুন আসুন। ডাক্তার সাহেব আপনাকেই তো খুঁজছিলাম। ভালো করেছেন এসে পড়েছেন নইলে আমিই যেতাম আপনার কাছে।", প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে বললো নিরব। চোখ দুটো রাগে লাল হয়ে আছে নিরবের।

আমি তোমায় না টয়াকে খুঁজতে এসেছি।", ধারালো গলায় বললো ইয়াদ।

নিরব কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ইয়াদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো," কিন্তু আমি তো আপনাকেই খুঁজছি। শুনলাম আপনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও নাকি টয়ার সাথে।"

হুম, তোমার দাওয়াত রইলো। আসবে কিন্তু।", একটা ভ্রু তুলে বললো ইয়াদ। 

হটাৎ নিরব এমন কথা বলছে কেনো ইয়াদ বুঝতে পারছে না। বিয়ে ঠিক হয়েছে মানেই বা কি! সে কি জানে না ওদের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। খবরটা কি তাহলে আজ পেয়েছে?

ইয়াদের কথায় নিরব সজোড়ে হেসে উঠলো তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো," সবে তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখনও তো হয়নি, আর হবেও না। এতো বছর পর হুট করে এসে টয়াকে বিয়ে করে ফেলবেন! সবটা কি এতো সহজ?"

ইয়াদ হাত বুকের কাছে গুঁজে বলল," সেটা বিয়ে হলেই বুঝতে পারবে।", চোয়াল শক্ত করে বললো ইয়াদ।

"এতো ভালোবাসা! কিন্তু সেদিন কি হয়েছিলো? সেদিন তো অনেক কথা শুনিয়েছিলেন। মনে পড়ে! সেই লজ্জা কি আছে আপনার। আপনার কোনো ধারণা আছে আপনার জন্যে  টয়া কি কি কষ্ট সহ্য করছে? এইটা জানেন? ও যে আর...", বলতে গিয়ে নিরব চুপ করে গেলো।

কি বলতে চাইছে এই ছেলেটা! শেষ করছে না কেনো? টয়া কি লুকাতে চায় তার কাছ থেকে। আজকে তার জানতেই হবে সবটা।

ইয়াদ রেগে গিয়ে এগিয়ে এসে বললো," কি হলো থামলে কেন? বলো। নাকি সাহস নেই বলার। স্পিক উপ।"

" আপনার শোনার সাহস আছে তো? কিন্তু শুনেই বা কি করবেন? যা হারিয়েছে তা ফিরিয়ে দিতে পারবেন?পারবেন ওর জীবনে নাচ ফিরিয়ে দিতে?", দাতে দাঁত চিপে বললো নিরব।

" কি বলতে চাইছো কি তুমি? কি হয়েছিলো টয়ার?", রাগে গজগজ করে বললো ইয়াদ।

" সেদিন ওকে কোথায় খুঁজে পেয়েছি জানেন? রাস্তায়! গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে অচেতন অবস্থায় পেয়েছিলাম ওকে। কয় মাস হুইল চেয়ারে কাটিয়েছে জানেন আপনি?", কথাটা ইয়াদের কানে পৌঁছাবার সাথে ইয়াদ বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খায়। নিজেকে সে কি করে ক্ষমা করবে? ইয়াদের সবকিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। নিজের ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে এমন সময় নিরব বলে উঠলো," টয়াকে আপনি কোনদিন পাবেন না। কারণ আমি সেটা কোনদিন হতেই দিবো না।" কথাটা শোনার সাথে সাথে ইয়াদ রাগের মাত্রা হারিয়ে নিরিবের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো উঠলো," you bustard।" আর কিছু বলার আগেই টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,"কি করছেন! থামুন।" টয়া ছুটে ভিতরে এলো।

ইয়াদ যেই মুহুর্তে নিরবের কলার চেপে ধরেছে তখনই টয়া ভিতরে এসেছে। তাই টয়া ভেবেছে ইয়াদ ইচ্ছে করে নিরবকে রাগিয়ে দিচ্ছে। টয়া ইয়াদকে ভুল বুঝে রেগে গেলো।

ইয়াদ টয়াকে দেখে নিরবের কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো। টয়া ছুটে এসে নিরবকে ধরে রেগে বললো," আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি করছেন এসব? ওর হাতে ব্যাথা জেনেও এমন ব্যাবহার করছেন কি করে?"

ইয়াদ টয়ার সব কথা অগ্রাহ্য করে অনেক শান্ত গলায় বললো," টয়া আমার তোমার সাথে কথা আছে।"

" কিন্তু আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।", চেঁচিয়ে বললো টয়া।

" টয়া আমি বলছি আমার সাথে এসো।", ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়ার হাত ধরতেই টয়া টান দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বললো," আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি প্লীজ চলে যান।", রেগে বললো টয়া।

ইয়াদ আরেকবার এগিয়ে এসে টয়ার হাত ধরে গম্ভীর গলায় বললো ," আমি তোমাকে আমার সাথে আসতে বলেছি।"

" আমি বলছি তো বললাম আপনার সাথে যাবো না। আপনি আমার হাত ছাড়ুন।", বলার সাথে সাথে ইয়াদ টয়া হাত ছেড়ে দেয়।

ইয়াদ রাগের মাথায় পিছিয়ে গিয়ে বললো," ok stay there।"বলার সাথে সাথে পাশে থাকা খালি টেস্টিটিউব গুলোর সাথে জোড়ে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে আঘাত করতেই বিকট টেস্টিটিউবের কাঁচ গুলো চারিদিকে ছিটকে চলে গেলো।বিকট আওয়াজে টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতেই চোঁখ পড়ল ইয়াদের হাতের দিকে হাতে কাঁচ ঢুকে বিচ্ছিরি ভাবে রক্ত বের হচ্ছে। টয়া ভয় পেয়ে গেলো। ইয়াদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসতেই ইয়াদ অন্য হাত টয়াকে দেখিয়ে বললো," stay there।"

আরও পড়ুন: তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| শেষ পর্ব!

Post a Comment

0 Comments