জীবনের গল্প: তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| শেষ পর্ব!
টয়া ভয় পেয়ে গেলো ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে, সে এগিয়ে আসতেই ইয়াদ অন্য হাত দেখিয়ে থামতে দেখিয়ে বললো," stay there "
বলেই ইয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। টয়া কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিরব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কি?
রিতু রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় ইয়াদ বেরিয়ে গেলো। ইয়াদের হাতের এই অবস্থা দেখে রিতু ভয়ে মুখ চেপে ধরলো। রিতু চটজলদি ভিতরে এসে বললো," ওনার হাতের এ অবস্থা হলো কিভাবে?"
টয়া ভয়ে এতক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে ছিলো। টয়ার মনে হচ্ছিল কেউ যেনো তার বুকে ছুরি মেরেছে। ইয়াদ এমন করছে কেন? সে তার সাথে যাবে না বলেছে তাই? রাগ দেখিয়ে এমন করলো ইয়াদ? টয়ার রাগে চোখ লাল হয়ে গেল।
" কোনদিকে গেছে সে?", রাগ মিশ্রিত গলায় বললো টয়া।
রিতু হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতেই টয়া সেদিকে হাটা ধরলো। কি ভেবেছে কি এই লোক যা ইচ্ছে করবে? আমাকে রাগ দেখানো হচ্ছে?
টয়া খুঁজতে খুঁজতে ইয়াদের কেবিন খুজে পেলো। ভিতর থেকে একটা নার্স ট্রে করে তুলা, ব্যান্ডেজ, জীবাণুনাশক নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টয়া একটু যেনো শান্তি পেলো। যাক হাতে ব্যান্ডেজটা তো করেছে। টয়া নার্সকে থামিয়ে বললো," ডক্টর আফরানের হাতের কি অবস্থা এখন?"
" কি অবস্থা? ব্যান্ডেজই করতেই তো দিচ্ছেন না। ধমক দিয়ে বের করে দিলেন?", নিরূপায় হয়ে তাকিয়ে বললো নার্স।
নিজে হাতের এ অবস্থা করে আবার নাকি ব্যান্ডেজ করবে না। খুব রাগ দেখানো হচ্ছে। আজ তো এই হিটলারের কপালে দুঃখ আছে।" তুমি আমার সাথে এসো।", নার্সকে বললো টয়া।
" না স্যার ভীষণ রেগে আছে বকবে?"
" কি করবে সেটা আমিও দেখবো। তুমি এসো আমার সাথে।", বলে টয়া নার্সকে নিয়ে রুমে এলো। টয়া ভেবেছিলো ইয়াদকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বলবে তবে কেবিনে প্রতিভাকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। ইয়াদ নিজের চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, রক্তাক্ত হাতটায় রুমালে বেধে এক পাশে রাখা।
" এতো ইম্যাচুর বিহেভ তো তুমি আগে করোনি ইয়াদ। হাতটার এ অবস্থা! তাও নার্সে বের হয়ে যেতে বললে।", ইয়াদ প্রতিভার কথায় কান দিচ্ছে না।
প্রতিভার কথায় ব্যাঘাত ঘটলো যখন টয়া রুমে এলো। নার্স টয়ার পিছু পিছু এসে দাঁড়িয়ে রইলো।
" তুমি কে?", অবাক হয়ে বললো প্রতিভা। প্রতিভার প্রশ্নে ইয়াদ চোখ খুলে তাকালো। সামনে টয়াকে দেখে ইয়াদ মাথা তুললো।
প্রতিভার প্রশ্নে টয়া কোনো জবাব দিলো না। টয়া নার্সকে ইয়াদের টেবিলটা দেখিয়ে বললো," এগুলো ওখানে রেখে তুমি যাও।"
টয়ার কথা মতো নার্স ট্রে টা ইয়াদের টেবিলের সামনে রেখে বেরিয়ে গেলো। প্রতিভা টয়াকে বললো," নার্সকে চলে যেতে বললে কেনো? ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজ করবে কে?"
ইয়াদ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টয়ার দিকে। টয়া ইয়াদের দিকে রাগী চেহারার তাকিয়ে তারপর প্রতিভাকে উদ্দেশ্য করে বলল," সেটা আমি বুঝে নেবো। আপনার নিশ্চই অনেক কাজ আছে। আপনি তাহলে আসুন আমি দেখছি।"
প্রতিভা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো কিন্তু আর কথা না বাড়িয়ে সে বেরিয়ে গেলো। প্রতিভা বেরিয়ে যেতেই টয়া দরজা আটকে দিলো। তারপর ট্রে টা হাতে নিয়ে ইয়াদের পাশের রাখলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এই লোকটাকে কাচা গিলে ফেলে সে। তাও নিজেকে শান্ত রেখেছে কোনো ভাবে।
টয়া একটা চেয়ার টেনে ইয়াদের পাশে বসলো তারপর ইয়াদের হাত ধরতেই ইয়াদ হাত সরিয়ে নিতে চাইলো। টয়া শাসিয়ে বললো," দেখুন আমার সাথে রাগ দেখতে আসবেন না। নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। একটু আগে যে কাজটা করলেন না এরপর তো আর কোন কথাই বলবেন না।"
ইয়াদ টয়ার শাসনে আর কিছু বললো না। টয়া ইয়াদের হাতের রুমালটা সরিয়ে কাটা অংশ গুলোর দিকে তাকাতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। ফাস্ট এইড করাটা টয়া শিখেছে এনজিওর কাজে তবে ইয়াদের হাতের অবস্থা দেখে টয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। টয়া অনেক সময় ধরে মনোযোগ সহকারে ইয়াদের হাতের ড্রেসিং করলো। এইসব করতে গিয়ে টয়া নিজেই কয়েকবার কেপে উঠছে, টয়াকে দেখে মনে হচ্ছে হাতটা ইয়াদের না তার।
ইয়াদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টয়ার কষ্ট দেখে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো," তুমি পারবেনা। আমাকে দেও।"
টয়া আরো জোড়ে চেঁচিয়ে বললো," বেশি কথা বলবে না। দেখি হাতটা এইদিকে দিন।"
ইয়াদ একটু চমকে উঠে হাতটা এগিয়ে দিলো। মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে আর রাগিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
" আপনাকে আমি ছাড়বো না। আপনার কতো বড় সাহস আপনি আমাকে রাগ দেখান। নিজে দোষ করবে আবার রাগ ও আমাকে দেখাবে।", ইয়াদকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে টয়া।
ইয়াদ সব কথাই বাধ্য ছেলের মতোন শুনছে তবে একটা জায়গায় বললো," কে বলেছে আমি তোমার উপর রাগ দেখিয়ে এমন করেছি? রাগটা আমার নিজের উপরই ছিলো।"
" আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে আমাকে তখন stay there বললেন কেনো?", রাগে কটমট করে বললো টয়া।
" তুমি আসবেনা বলায় রাগটা বেড়ে গেছিলো।"
" আপনাকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে? মনটা চাইছে আপনাকে একটা কামড় বসিয়ে দেই। নাহ্ কামড় না আপনাকে .....আপনাকে যে আমার কি করতে ইচ্ছে করছে।", চুপ করে রাগ সামলাচ্ছে টয়া।
" আচ্ছা বাবা যা ইচ্ছে তাই করো। এবার শান্ত হও।", ইয়াদ নরম গলায় বললো।
" হবো না শান্ত কি করবেন? হুঁ বলুন কি করবেন?", টয়া আঙ্গুল দেখিয়ে শাসিয়ে বললো।
ইয়াদ বুঝতে পেরেছে টয়া ভীষণ ক্ষেপে আছে, এই মুহুর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়। টয়া এখন পেত্নী থেকে রাক্ষসী হয়ে গেছে।ইয়াদ কিছু করবেনা বোঝাতে না সূচক মাথা নাড়লো।
" আমার কাজ শেষ হওয়া না পর্যন্ত একটাও কথা বলবেন না। একদম চুপ করে বসে থাকুন।", রাগে কটমট করে বললো টয়া।
ইয়াদ আর কিছু বলার সাহস করলো না। টয়াকে ক্ষেপিয়ে কোন লাভ নেই।
টয়া রীতিমত এক ঘন্টা সময় নিয়ে ইয়াদের হাতের বান্ডেজটা করলো। অবশেষে কাজটা ঠিক ঠাকমতো করতে পারায় শান্তি লাগছে।। টয়া এবার উঠে দাড়ালো তাকে যেতে হবে যাওয়ার আগে আবার শাসিয়ে বললো," এটা যদি হাত থেকে খুলেছেন আপনার একদিন কি আমার একদিন। কথাটা যেনো মাথায় থাকে।" বলে টয়া উঠে বেরিয়ে এলো। ইয়াদ নিজের ব্যান্ডেজ করা হতের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।
রিতু বেরিয়ে ভার্সিটিতে গেছে টয়ার ফোনে ম্যাসেজ এসেছে। টয়ার আজ আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে করছে না। অফিসে গিয়ে ডিজাইনগুলো জমা দিয়ে সোজা বাসায় যাবে। আজ এইটাই তার প্ল্যান। আজ ইয়াদ পুরো দিনটাই অগোছালো করে দিলো।
রাতে বাসায় এসে টয়া ঘুমিয়ে পড়েছিল ঘুম ভেঙেছে রাত সাড়ে বারোটায়। টয়া ঘুম ঘুম চোখে উঠে বেরিয়ে এলো। রিতু জেগে ছিল সে মুভি দেখা নিয়ে ব্যাস্ত।
টয়াকে উঠতে দেখে রিতু বললো," তোর খাবার আমি ফ্রিজে রেখেছি গরম করে খেয়ে নে।"
টয়া ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গিয়ে খাবার নামিয়ে ওভেনে দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে টয়া খাচ্ছিল তবে বার বার মনে হচ্ছিলো সে কি জানি ভুলে গেছে।
রিতু উঠে এসে টয়ার পাশে বসে বললো," আচ্ছা ডাক্তারের হাতের কি অবস্থা?"
টয়া না বুঝতে পেরে একবার রিতুর দিকে তাকালো, তারপর তার হুশ হলো। আসলেই ইয়াদের কথা তো জানাই হলো না। টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এতো রাতে কিভাবে জানবে সে? টয়া খাবার রেখে জলদি উঠে পড়লো।
" কিরে কি হলো?", রিতু প্রশ্ন করলো।
" আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবার জানবো কি করে? না জানা অব্দি তো আমার শান্তি হচ্ছে না।"
" গিয়ে কলিংবেল বাজা। তারপর জিজ্ঞেস করে নে।"
" যদি ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে যাবে না!"
টয়া পায়চারী করছে। এমনিতেই লোকটা ডান হাত কেটে বসে আছে খেয়েছে কিনা কে জানে? না খেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। কি করে এবার সে? আচ্ছা ইয়াদের দরজার পাসওয়ার্ড তো সে জানে তাহলে কি তাই করবে?
যেই ভাবা সেই কাজ টয়া ইয়াদের বাসায় হানা দিয়েছে। ভাগ্যিস ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করা ছিলো না। টয়া অন্ধকারে হাত বুলিয়ে হাঁটছে। এভাবে আসাটা কি তার ঠিক হলো? নিজেকে সেই সাত বছর আগের টয়া লাগছে। নিজের ফোনটাও আনেনি সে, ফোন থাকলে ফোনের টর্চ জ্বেলে তাও কিছু করা যেত।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে নিজের রুমে শুয়ে ছিলো। ঘুম আসছে না তার বার বার শুধু আফসোস হচ্ছে, সেদিনের জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। টয়ার সেই ঘড়িটা হাতে নিয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে শুয়ে আছে ইয়াদ। সবটা আগের মতো যদি হয়ে যেতো।
হটাৎ ইয়াদ কেমন একটা আওয়াজ পেলো কিছু একটা হয়তো পরে গেছে। হটাৎ এমন জোড়ে কি পড়লো ভাবতেই ইয়াদ উঠে বসলো পুরো ঘর অন্ধকার কিছু বুঝাও যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আওয়াজটা স্টাডি রুম থেকে এসেছে। ইয়াদ একে একে বাতি জ্বালিয়ে স্টাডি রুমে এসে রুমের বাতি জ্বালালো।
বাতি জ্বালিয়ে ইয়াদ হতভম্ব হয়ে গেলো। টয়া ইয়াদের স্টাডি রুমে কি করছে। টয়া কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে বসে আছে। সে নীচে বসে মাথা ডলছিল এমন সময়ে আলো জ্বলে উঠায় টয়া সামনে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো। ভয়ে যেনো তার আত্মাটা বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। টয়ার সামনে একটা কঙ্কাল। টয়া উঠে দৌড়ে পিছিয়ে যেতেই ইয়াদের বুকে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
ধাক্কা খেয়ে টয়া তাকিয়ে ইয়াদকে দেখে আরো চমকে উঠলো। পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সে। বাসার মধ্যে কিনা এসব রেখেছে সে। ভয় ডর বলে কিছু নেই নাকি লোকটার!
" ঠিক আছো?", টয়ার গালে আলতো করে হাত দিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। টয়া ভয় ভয় চোখে পিছে কঙ্কাল টার দিকে তাকালো। ইয়াদ জিনিসটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল মনে হয় টয়ার সাথে ধাক্কা লাগার কারণে সেটা নীচে পড়ে আছে।
টয়া বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে প্রশ্ন করলো," তুমি এই রুমে? কি করছিলে? এই ফ্ল্যাটেই বা এলে কি করে?"
টয়া এবার কি বলবে? কি অজুহাত দেওয়া যায় এমন পরিস্থতিতে? ভালই ফাসা ফেঁসে গেছে।
কিছুক্ষণ ভেবে টয়া বলল," ঘুমের মধ্যে কখন যে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে আমার।"
টয়া যে কথা বলল সেটা যে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয় সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে। টয়া খালি এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ বিশ্বাসযোগ্য মুখভঙ্গি করে বললো," ও আচ্ছা। তা তুমি এতো ট্যালেন্টেড সেটা জানা ছিলো না ঘুমের মাঝে দরজার লক পর্যন্ত খুলতে পেরেছো। That's rare!"
পুরোটাই যে উপহাস ছিলো সেটা টয়া ঠিকই বুঝতে পেরেছে। যার জন্যে চুরি করি সেই বলে কিনা চোর। এই জন্যে মানুষের ভালো করতে নেই। মনে মনে বিড়বিরালো টয়া।
ইয়াদ একটু হেসে বলল," মাঝে মাঝে এমন হাটাহাটি করা ভালো। নেক্সট টাইম থেকে হেঁটে হেঁটে আমার রুমে এসো কেমন?"
টয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো। ধুরো থাকবোই না এখানে, মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ফেললো। টয়া ইয়াদের বুকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগলো। ইয়াদের রুম পার হবার আগেই ইয়াদ এক হাতে টয়ার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এলো।
" ছাড়ুন ছাড়ুন। থাকবো না এখানে, নেহাত ভুল করে চলে এসেছি নইলে কে আসে এইখানে।", রাগ দেখিয়ে বললো টয়া।
" দিন দিন দেখছি angry bird হয়ে যাচ্ছো। রাগ করলে তোমার চোখ লাল হয়ে যায় সেটা জানো?।", আদুরে গলায় বললো ইয়াদ।
টয়া আড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো তারপর তার চোখ গেলো ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজের দিকে।ব্যান্ডেজটা বদলানো দরকার একটু একটু রক্ত বের হয়ে আছে।
" আপনি ব্যান্ডেজটা বদলান নি কেনো?", থমথমে গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।
" পাগল নাকি একজন আমাকে থ্রেট দিয়ে গেছে। এই ব্যান্ডেজ খুলে ফেললে সে আমায় ছাড়বে না।", ইয়াদের কথায় টয়া চোঁখ পিট পিট করে তাকালো।
এই একজনটা আবার কে? ঢং দেখলে গা জ্বলে ওঠে।
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো," কে সেই বেয়াদ.. বাকীটা বলতে যাবে ইয়াদ টয়ার ঠোটে তর্জনী দিয়ে বললো," হুস, চুপ। নিজেকে নিজে এসব বলতে হয় না।"
টয়ার কুচকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেলো। টয়া নিজে এমনটা বলেছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার! তার নিজেরই মনে ছিলো না। কিন্তু ইয়াদের সামনে সেটা স্বীকার করা যাবে না। তাই টয়া ভুলে যাবার ভান করে ইয়াদের হাত সরিয়ে বললো," আমি.. আমি কখন বললাম? আমি মোটেও এসব বলিনি।"
ইয়াদ অবাক হয়ে বললো," তুমি বলোনি?"
হ্যা আমি কেনো এইসব বলতে যাবো?", বলে টয়া ইয়াদের রুমের ভিতরে গিয়ে ব্যান্ডেজ আর তুলা খুঁজতে লাগলো। ইয়াদ টয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। " কি পল্টিবাজ!", ইয়াদ আড় চোঁখে তাকিয়ে বললো।
টয়া রাগী চোখে তাকিয়ে বলল," কি বললেন আপনি? আমি পলটিবাজ হলে আপনি রংবাজ।"
রংবাজ? সেটা আবার কি?", ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া ড্রয়ারে ব্যান্ডেজ খুজে পেয়ে বললো," এহ! পল্টিবাজ বুঝে কিন্তু রংবাজ বুঝে না।" ইয়াদ নিজের দৌড় জানে টয়ার সাথে সে পারবে না সেটা সে খুব ভালো করেই জানে। তাই সে চুপ করে আড় চোখে তাকিয়ে রইল। কখনো কখনো চুপ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
টয়া খাটের উপর সব কিছু ইয়াদের পাশে রাখলো। টয়া ইয়াদের হাতটা এগিয়ে আনতেই ইয়াদ প্রশ্ন করে বসলো," তুমি আমার জন্য এতো করছো কেনো?" ইয়াদের প্রশ্নে টয়া চুপ করে গেলো। সত্যিই তো সে কেনো এতো অস্থির হচ্ছে।
টয়া চুপ করে থেকে বলল,"একবার আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আপনি আমার খেয়াল রেখেছেন তাই।"
ইয়াদ হেসে ফেললো, সত্যিটা টয়া বলবেনা সে সেটা জানতো। টয়া মনোযোগ দিয়ে ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে আছে। সব শেষে টয়া উঠতে যাবে টয়ার চোখ পড়লো বিছানায় পরে থাকা ঘড়িটার দিকে। কেনো জানি খুব চেনা চেনা লাগছে তার।
টয়া ঘড়িটা হাতে নিয়ে বলল," এটা কি?"
নিমেষেই ইয়াদের চোখ গেলো টয়ার হাতের দিকে। ইয়াদ হরবরিয়ে উঠে ঘড়িটা নিয়ে নিতে চাইলো। টয়া ঘড়িটা বুকের কাছে শক্ত করে ধরে বললো," কোথায় পেয়েছেন আপনি এই ঘড়িটা? আমি তো সেই কবে এটা হারিয়ে ফেলেছি। এটা আপনার কাছে এলো কি করে? এটা আপনার কাছে কেনো?"
টয়ার চোখে মূখে বিস্ময় আর হাজার প্রশ্ন। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো তারপর বললো,"এতো কিছুর পরেও তোমায় বলে জানতে হবে এই ঘড়িটা আমার কাছে কেনো?"
টয়া কয়েকপা পিছিয়ে গেলো। এই ঘড়িটা সে কোনদিন হারাতে চায় নি। টয়া মেঘাচ্ছন্ন চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো," এতো বছর এটা আপনার কাছে ছিলো!"
হুম, এবার এটা আমাকে ফেরত দেও।", ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ঘড়িটা চাইলো। টয়া ঘড়িটা মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললো," না, এটা আমার আপনাকে কেনো দিবো। আপনি এটা রেখে দিয়েছেন কেনো?"
একটা মেয়েকে ভালোবেসে।", টয়ার চোখে চোখ রেখে বললো ইয়াদ। তাহলে কি টয়া ভুল বুঝেছে? টয়া অভিমানী গলায় বলল," তাহলে যে আমাকে এতো কিছু বললেন? কেনো বললেন তাহলে?"
ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো," তোমায় অন্য কারোর সাথে দেখে হিংসে হয়েছিলো। Immature ছিলাম যে তাই ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু দেখো সেই ভুলের মাশুল এখনও দিতে হচ্ছে। "
টয়া ইয়াদের বুকে হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। চোখ দিয়ে তার অভিমানী জল পড়ছে।" আপনি খুব খারাপ।"
ইয়াদ দুই হাত দিয়ে টয়ার হাত ধরে বললো," হুম,"
ইয়াদ টয়াকে কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো। টয়া নিঃশব্দে কাদঁছে। ইয়াদের শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। ইয়াদ টয়ার চোঁখের জল মুছে দিয়ে হাত ধরে বিছনায় এনে বসালো।
তারপর পাশে বসে বললো," তুমি কান্না করছো কেনো? থামো আর কাদবে না।" টয়ার চুপ করে কিছুক্ষন বসে ছিলো। ইয়াদকে না বুঝে কতো কিছু বলেছে সে তার জন্যে আফসোস হচ্ছে।এই ঘড়িটা আগে দিয়ে দিলে কি হতো তার? এতো সমস্যা মিটে যেতো। টয়াও ভুল বুঝতো না।
টয়ার খুব রাগ হচ্ছে ইয়াদের উপর টয়া মুখ ভার করে বললো," আপনি ঘড়িটা আমাকে আগে দেন নি কেনো?"
দিয়ে কি বলতাম? টয়া তোমার ঘড়ি ফেরত দিতে এসেছি?", ইয়াদ উপহাস করলো টয়ার মন ভালো করতে কিন্তু এই মেয়ে উল্টে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ একটু কাছে এসে বললো," রাগ হচ্ছে বুঝি?"
" হ্যা অনেক।", বড় বড় চোখ করে বললো টয়া।
এক্ষুনি রাগ কমিয়ে দিচ্ছি", বলে ইয়াদ টয়ার ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে ঠোটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। হটাৎ ইয়াদের এমন কাজে টয়ার শরীর শিউরে উঠলো। বুকে ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর ছাড়া পেলো। টয়া জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। ইয়াদ টয়ার কানে কানে এসে বললো," রাগ কমেছে?"
ইয়াদ টয়ার কানে কানে এসে বললো," রাগ কমেছে?" টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। লোকটার দেখছি লজ্জা বলতে কিছু নেই। এভাবে নাকি রাগ কমায়? হাতুড়ে ডাক্তার হলে যা হয় আরকি! লজ্জায় টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার থেকে একটুও দূরে সরে নি। অপলকে তাকিয়ে আছে, একটা মোহ তাকে ধরে রাখছে।
টয়ার নড়াচড়া করাও বন্ধ, তার বুকের ভিতরটায় ভূমিকম্প হচ্ছে। ইয়াদ মুচকি হেসে টয়ার মুখের সামনে পড়ে থাকা চুল কানে গুঁজে দিয়ে বললো," রাগ কমেছে বুঝি! না কমে থাকলে আরেকবার চেষ্টা করি রাগ কমানোর। I promise I'll try my level best.", ইয়াদের কথায় টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকালো। কি বলছে! Level best মানে? দম বন্ধ হয়ে মরে না যাই। মাথা কি পুরো খারাপ হয়ে গেছে। টয়া একটা ঢোক গিলতেই ইয়াদ এগিয়ে আসতে নিলো সঙ্গে সঙ্গে টয়া এক হাত দিয়ে মুখ চেপে বললো," না, একদম না।"
ইয়াদ আরেকটু জ্বালানোর জন্যে বললো," রাগ কমাতে পেরেছি তাহলে?"
টয়া চোখ নামিয়ে নিয়ে হাতের ঘড়িটা শক্ত করে ধরে বসে আছে। নড়াচড়া করতে পারছে না কারণ ইয়াদ তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে ইয়াদ বললো," দাও আমার ঘড়িটা আমায় ফেরত দেও।"
" আপনার ঘড়ি মানে?", হাত দুটো পিছনে নিয়ে বললো টয়া।
" আমারই তো ঘড়ি। এতো বছর আমি আগলে রেখেছি। তুমি তো আগলে রাখতে পারোনি।", গভীরতায় বললো ইয়াদ।
টয়া অপলকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ তাকে কখনো এতো ভালোবাসবে সেটা সে কল্পনা করতে পারিনি। টয়া চোখ সরিয়ে বললো," হারিয়ে ফেলেছি তো কি হয়েছে যেটা আমার ছিলো সেটা আমারই আছে।"
" হুম, তোমারই থাকবে।", হাত দিয়ে টয়ার গাল স্পর্শ করে বললো ইয়াদ। টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। অন্যরকম লাগছে সবটা টয়ার কাছে। ইয়াদ হাতের আঙ্গুল টয়ার ঠোঁটের কোণে ছোঁয়াতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে টয়ার হেচকি উঠলো।
টয়া এতক্ষন ইয়াদের চোখের মাঝে হারিয়ে গেছিলো কিন্তু হিচকি উঠায় সে নড়ে চড়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। ইয়াদও নিজের হাত সরিয়ে নিলো। টয়া আস্তে করে একটু পিছে সরে গেল। ভাগ্যিস হিচকিটা উঠেছিলো। এ যাত্রায় সে বেচেঁ গেছে। কিন্তু টয়ার হিচকি আর থামার নাম নিচ্ছে না। হিচকি দিতে দিতে টয়া ইয়াদের দিকে তাকালো ইয়াদ উঠে কিচেনের দিকে গেলো।
আজব ! দেখেছে যে হিচকি উঠেছে আর আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে। মায়া দয়া নেই মনে। কোথায় গেলো আবার? টয়া হিচকি দিতে দিতে উঠে দাড়ালো তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো ইয়াদ জগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢালছে। নাহ ভুল ভেবেছি। ধুরো আমি যেটাই ভাবি সেটাই দেখি ভুল প্রমাণিত হচ্ছে আর কিছুই ভাববো না। এবার থেকে ভাবাভাবি বন্ধ।
ইয়াদ পানির গ্লাস হাতে এগিয়ে এসে টয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো," তুমি উঠে এসেছো কেনো?"
টয়া ইয়াদের কথা না শুনার ভান করতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এর মাঝে আরেকটা হিচকি উঠলো। ইয়াদ কাছে এসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো," পানি খাও ঠিক হয়ে যাবে।"
টয়া গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক শেষ করলো। যা হয়েছে গলা তার এমনেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। টয়া গ্লাসটা এগিয়ে দিলো সাথে সাথে আবার হিচকি উঠলো। হটাৎ এমন শুরু হয়েছে কেনো? এক যন্ত্রণা কি কম ছিলো এ আবার কোন নতুন যন্ত্রণা! ইয়াদ হিচকি কিভাবে বন্ধ করা যায় ভাবছে। টয়া হিচকি দিতে দিতে সোফায় গিয়ে চুপ করে বসলো। কি অসহ্য এক জিনিস! ইয়াদ আরেক গ্লাস পানি টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া এই গ্লাসও শেষ করলো।
" হিচকি গেছে?", টয়ার উত্তরের অপেক্ষায় ইয়াদ তাকিয়ে আছে। টয়া বোঝার চেষ্টা করছে হিচকি আছে না গেছে। এখণ তো আসছে না তার মানে নিশ্চই চলে গেছে টয়া না বলতে যাবে এমন সময়ে আবার হিচকি উঠলো। টয়ার রাগ উঠে গেলো। টয়া রেগে বললো," আপনার জন্যে এটা শুরু হয়েছে। "
ইয়াদ খালি গ্লাসটা হাতে নিয়ে টয়ার পাশে বসে বললো," আমি কি করেছি?"
"আমি কি করেছি!", মনে মনে বেঙ্গ করে বললো টয়া। এমন ভাব করছে যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। খুব সাধু সাজা হচ্ছে। টয়া আড় চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবার হিচকি উঠলো। টয়া মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
ইয়াদ গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে কাত হয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো," আমি কিছু করেছি বুঝি?" মূখে তার দুষ্টুমির হাসি।
টয়া মুখ ফুলিয়ে বসলো। শান্তিতে বসতেও পারছেনা হিচকিটা থামার নাম নিচ্ছে না। হিচকিটাও ঘাড়তেড়া। ইয়াদ টয়ার মুখ নিজের দিকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে বললো," আবার রাগ করলে নাকি?"
টয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো। কোন ভুতে এসে একে ধরেছে? টয়া একটা ঢোক গিলে হাত দিয়ে ঠেলে ইয়াদের হাত সরিয়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলো।
টয়া ভয়ে চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে। হার্ট এমনভাবে বিট করছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। ইয়াদ এগিয়ে আসতেই টয়া একটা কুশন ইয়াদের দিকে ছুঁড়ে মারে ইয়াদ সেটা মুখে পরার আগেই হাত দিয়ে ধরে ফেললো।
কুশন সরিয়ে টয়ার দিকে তাকাতেই টয়া চোখ বড় বড় করে বললো," জ্বালাচ্ছেন কেনো আমায়? আপনার জন্যেই এই হিচকি আমার পিছু নিয়েছে।"
" হ্যা, তো আমার উচিৎ না? সেটা ঠিক করা। নাকি আমার কাজও এটা।", বলে ইয়াদ এগিয়ে এলো। টয়া পিছাতে পিছাতে একদম সোফার শেষ মাথায় এসে গেলো। টয়া শাসিয়ে বললো," এতো উপকার করতে হবে না আপনার।"
" না না আমাকেই করতে হবে।", টয়ার একদম কাছে চলে এলো ইয়াদ।
" বলছি তো করতে হবে না।", বলেই টয়া একটা কুশন নিজের মুখের সামনে ধরে মুখ আড়াল করে ফেললো।
ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সরে এসে বললো," তোমার হিচকি চলে গেছে।"
ইয়াদের কথা শুনে টয়া কুশন নামিয়ে আড় চোখে তাকালো। তারপর খেয়াল করলো আসলেই তার হিচকি চলে গেছে। কিন্তু কখন গেছে? ভারী অদ্ভুত ব্যাপার সে টের পেলো না কেনো। টয়া কুশন নামিয়ে সেটাকে জড়িয়ে ধরে বসলো।
" আমাকে থ্যাঙ্কস দেও।", টয়ার কাছ ঘেঁষে বসে বললো ইয়াদ।
" কিসের জন্যে?", আড় চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
" এই যে তোমার হিচকি বন্ধ করে দিলাম।", টয়ার হাত থেকে কুশনটা টান মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া শুকনো গলায় তেজ দেখিয়ে বললো," কীসের ধন্যবাদ? উল্টে আপনি সরি বলুন, একটু দুঃখিত হন। আপনার জন্য এসব হয়েছে।"
" আচ্ছা, কাছে আসো তারপর দুঃখিত হচ্ছি।", টয়ার চমকে উঠলো ইয়াদের কথা শুনে।
বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকলে তোর কপালে দুঃখ আছে টয়া। ভেবেই ইয়াদকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো ইয়াদ সরছে না। টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
টয়া প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললো," আপনার ঘরে খাবার মতো কিছু নেই?"
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো," হটাৎ এমন প্রশ্ন? খাবার কিছু থাকবে না কেনো?"
ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো," সরুণ আমার খিদে পেয়েছে।"
ইয়াদ ভদ্র ছেলের মত আড় চোখে তাকিয়ে সরে বসলো। টয়া ছাড়া পেয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো। টয়া কিচেন ড্রয়ার খুলে আবার সেই নুডুলস দেখতে পেলো। এই লোক কি নুডুলস ছাড়া কিছু খায় না। অসহ্য! টয়া উপায় না পেয়ে নুডুলস রান্না করতে ব্যাস্ত হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একবার ভেবেছিলো কিচেনে গিয়ে একটু জ্বালাতন করবে কিন্তু আবার কোনো দুর্ঘটনা না হয়ে যায়। হরবরিয়ে হয়তো কিছু গন্ডগোল লেগে যাবে। থাক এখন বিরক্ত না করাই ভালো।
টয়া নুডুলসের বাটি নিয়ে এসে বসলো টিভির সামনে। ইয়াদ টিভি ছেড়ে খবর শুনছে। টয়া চামচ মুখে তুলতেই ইয়াদের দিকে তাকালো। লোকটার কি খিদে পায় না? ইয়াদের দিকে তাকাতেই ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো। টয়া একটু কেশে নিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললো," আপনি খাবেন?"
ইয়াদ টিভির হেডলাইনের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো," হুম।"
টয়া বাটিটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে দিতেই ইয়াদ বাটিটার দিকে তাকিয়ে নিজের ডান হাতের দিকে ইশারা করে বললো," তোমার কি মনে হয়? আমি এই হাতে খাবো?" তারপর জোর দিয়ে বলল," খাইয়ে দেও।"
টয়া রসগোল্লার মতো চোখ বড় করে বললো," কি করবো?"
" নিজের বরকে খাইয়ে দিবে। অথবা তুমি চাইলে আমাকে সারারাত না খাইয়ে রাখতেই পারো।", টয়ার চোখে চোখ রাখে বললো ইয়াদ।
" আপনি......!", বলে টয়া থেমে গেলো। এবার নাকি খাইয়ে দিতে হবে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালেই টয়া কেমন একটা হয়ে যায়। কিভাবে খাইয়ে দিবে?
" আপনি চোখ বন্ধ করুন তো।", টয়ার কথায় ইয়াদ আড় চোখে তাকিয়ে বলল," কেনো?"
" চোখ বন্ধ করতে বলেছি করুন। এতো প্রশ্ন করবেন না।", ইয়াদ আর চোখে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করতেই টয়া ইয়দের মূখে এক গাল নুডুলস দিয়ে দিলো।
ইয়াদ চোখ খুলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এটা কি ছিলো?
টয়া নিজে এক গাল নিয়ে বললো," আপনি শুধু তাকিয়ে থাকেন। তাই এই পদ্ধতি।
" পৃথিবীতে মানুষ কি চোখ বন্ধ করে খায়।", ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ
"পৃথিবীতে মানুষ কি চোখ বন্ধ করে খায়।", ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ। টয়া উত্তর দিতে যাবে এমন সময়ে কলিংবেল বেজে উঠলো। এ সময়ে কে আসতে পারে? টয়া হাতের বাটিটা সোফার সামনের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়াবে এমন সময় ইয়াদ বাম হাত দিয়ে টয়ার হাত ফেললো। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে বললো," তোমার গুণধর ফ্রেন্ড হবে। ডিস্টার্ব করতে চলে এসেছে। যাওয়ার প্রয়োজন নেই।"
টয়া অন্যহাত দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো," আরে আজব! তাই বলে দরজা খুলবো না।"
আরো কয়েকবার কলিংবেল বেজে উঠলো। টয়া এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললে দেখলো রিতু দাড়িয়ে আছে ভীতু ভঙ্গিমায়। টয়াকে দেখে দৌড়ে এসে টয়ার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে কাপা কাপা গলায় বললো," টয়া টয়া! আমার না খুব ভয় করছে। মনে হয় ঘরে কিছু আছে। ঘরের ভিতরে আমি বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি।" চোখে মুখে ভয়ের ছাপ রিতুর।
ইয়াদ বসে থাকতে পারলো না উঠে এসে প্রশ্ন করলো "কি হয়ছে?"
টয়া আর রিতু একে অপরের সঙ্গে আটিসাটি মেরে দাড়িয়ে আছে। টয়া কাপা কাপা গলায় বললো," রুমের ভিতর থেকে নাকি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।"
ইয়াদ কথাটা শুনে হেসে ফেললো। তারপর বললো," আচ্ছা তাই বুঝি? বাচ্চাটা কার?"
"আপনি মজা করছেন? আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়া দেইখ্যা আসেন।", টয়াকে শক্ত করে ধরে বললো রিতু।
" ঠিক আছে চলো। বেশ ভালো, ভৌতিক একটা ব্যাপার হলে দারুন হবে।", বলে ইয়াদ আগ্রহ দেখিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। টয়া পিছিয়ে গিয়ে বললো," আমি.. আমি যাবো না। আমার ভয় করছে।" ভুতের নাম শুনলেই তার ঘাম ছুটে যায়।
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে বলে," আমি আছি তো। ভূত বলতে কিছু নেই। আর তোমার বান্ধুবির কানে সমস্যা হয়তো।"
কানে সমস্যার কথা শুনে রিতু চেঁচিয়ে বললো," আমার নাম রিতু রজনী। এতো সহজে ভয় পাই না। আমি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনেছি। একবার নয় বার বার।"
" তুমি থামো।", বলে ইয়াদ টয়াকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাথাটা কানের কাছে নিয়ে এসে বললো," আমি আছি তো তোমার সাথে। চলো দেখে আসি রিতু রজনীর কথা সত্য না মিথ্যা।"
টয়া যাবে না মানে যাবে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এদের কি আমি রোমান্স করতে ডেকেছি না ভূত তাড়াতে? ভূত তাড়াতে যাবে এখানেও এদের রোমান্স শেষ হয় না। এবার আমি কার পিছে লুকাবো। ভেবে ভেবে আস্তে আস্তে ওদের পিছু পিছু পা বাড়ালো রিতু।
ইয়াদ বাসায় গিয়ে নিজে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলো। মনে হচ্ছে সাত আট মাসের কোনো বাচ্চা কান্না করছে। টয়া এই আওয়াজে আরো বেশী ভয় পেলো। ইয়াদ পিছন থেকে জড়িয়ে রাখলেও টয়া মুখ ঘুরিয়ে ইয়াদের বুকে মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে রাখলো। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো মেয়েটা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। ইয়াদ একহাতে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
রিতু আওয়াজ শুনে সাথে সাথে চিৎকার করে বললো," বলে ছিলাম না। বিশ্বাস হয়েছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাইছেন? এবার বলেন।"
ইয়াদ রেগে বলল," চিৎকার করবে না। তো কি হয়েছে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসছে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের হতে পারে না। রাতের বেলায় এমনিতেই বাচ্চাদের অসুবিধা হয়। এতে ভূত টেনে আনার মানে কি?"
" পাশের ফ্ল্যাটে বুড়ো দাদা দাদীর বাচ্চা হয়েছে তাই না!", রিত ভয় ভয় গলায় বললো। রিতুর মূখে যদি কোনো কিছু দিয়ে আটকে রাখা যেতো ভালো হতো।
টয়া এদিকে চোখ কান বন্ধ করে আছে।
ইয়াদ আসে পাশে তাকাতে লাগলো,কিচেনের পাশের জানালাটার দিকে চোখ গেল। জানালার বাহিরে সামনের খালি অংশটায় একটা বিড়াল বসে আছে। দেখেই ইয়াদের বোঝার বাকি নেই বিড়ালের আওয়াজটাকেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ মনে হচ্ছিল।
কিছু কিছু বিড়াল এমন আওয়াজ করে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভয় পাওয়ার মতো কিছু না। টয়া এদিকে ইয়াদকে ভয়াথ গলায় বললো," আমি এখনে থাকবো না।চলুন বেরিয়ে যাই।"
ইয়াদ টয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো," আরে বোকা। ওটা বিড়াল, এমন আওয়াজ ও করছিলো।"
ইয়াদের কথা শুনে টয়া চমকে উঠে ইয়াদের দিকে তাকালো। এটা কেমন কথা? টয়ার চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। বিড়াল এমন আওয়াজ করছিলো মানে। কিভাবে সম্ভব।
" তোমরা কি এখানে রোমান্স করতে এসেছো। আজকাল মানুষের দেখি ভয় ডর কিছু নাই।", ভয়ার্ত গলায় কটাক্ষ করে বললো রিতু।
রিতুর কথায় লজ্জা পেয়ে টয়া ইয়াদ থেকে একটু সরে আসতে গেলে ইয়াদ টয়াকে জড়িয়ে ধরে রিতুর উদ্দেশ্যে বললো," তুমি নাকি ভয় পাও না। একটা বিড়াল কি সুন্দর বোকা বানালো তোমায়।" টয়া আর ইয়াদ দুজনেই রিতুর দিকে তাকালো।
রিতু হতভম্ব হয়ে বললো," বিলাই! কই বিলাই?"
বিলাই শব্দটা ইয়াদের মাথার উপর দিয়ে গেলো।
ইয়াদ জানালার দিকে তাকিয়ে বললো," ঐ বিড়ালটার আওয়াজটা এমন বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজের মতন লাগছে।"
টয়া আর রিতু দুজনেই বিশ্বাস করতে পারলো না কথাটা।টয়া ইয়াদ থেকে একটু সরে এসে দাড়ালো। টয়ার ভয় কমেনি, তবুও সে জোর পূর্বক ইয়াদ থেকে দূরে এলো যদিও ইয়াদ এখনও টয়ার হাত ধরে আছে।
রিতু ইয়াদের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ভয়ে ভয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো রিতুর। ছি ছি সে কিনা একটা বিড়ালের আওয়াজে ভয় পাইসে। কি লজ্জা কি লজ্জা!
" বেয়াদব বিলাই। যা এইখান থেইক্কা।", কড়া গলায় বিড়ালটাকে ঝাড়ি মারলো। বিড়ালটা লাফ মেরে উঠে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লাফ দিয়ে আরেকটা জায়গায় চলে গেলো।
টয়া খেয়াল করলো বিড়ালটা চলে যাওয়ার পর কান্নার আওয়াজটা আর নাই। এদিকে টয়া নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে ইয়াদ হাত ধরেই আছে, ঠোঁটের এক কোনে তার হাসি।
" হয়েছে এবার শান্তি?", ইয়াদের প্রশ্নে রিতু না সূচক মাথা নাড়ল। ইয়াদ বিরক্তির চোখে তাকালো। এই মেয়েটা দেখছি জ্বালিয়ে ছাড়বে।
রিতু বড়ো বড়ো পা ফেলে টয়ার কাছে এসে বলে," আমার তো মনে হচ্ছে বিড়ালটার সাথে খারাপ কিছু ছিলো।"
টয়ার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। সে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে বললো," মানে।"
" আরেহ বুঝিস না...", বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ রিতুকে থামিয়ে বললো," অনেক হয়েছে, টয়া চলো।" বলে টয়াকে নিয়ে যেতেই রিতু আরেক হাত ধরে ফেললো টয়ার। তারপর তেজী গলায় বললো," টয়া চলো মানে। আমি কি একা থাকবো? টয়া যাবে না।"
" মানে?", ভ্রূ কুচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
মানে টয়া আমার সাথে এখানে থাকবে। আমি আজ একা থাকলে ঘুমের মধ্যে হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাবো।," টয়ার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের ভান করে বললো রিতু।
টয়া নিজেও ইয়াদের সাথে না গেলে বেচেঁ যায়। কখন আবার কি উল্টা পাল্টা করে বসে। মাথায় ভূত চেপে আছে। টয়া ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে," আপনি যান। আমি আপনার সাথে যাবো না।"
রিতু ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো। ইয়াদ টয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে গা হেলিয়ে বলল," তা হলে আমি এখানেই থাকছি।"
টয়া আর রিতু একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। হায় আল্লাহ যাবে না মানে। টয়া চোখ পিট পিট করে বললো," এখানে কোথায় থাকবেন?"
" তোমার সাথে।", ইয়াদের উত্তরে বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো টয়ার। টয়া একটা ঢোক গিললো। রিতু টয়াকে পিছনে নিয়ে বললো," ঠিক আছে আমি তাহলে আপনাদের মাঝখানে শুয়ে পরবো।"
ইয়াদ হতভম্ব হয়ে তাকালো। ইয়াদ কয়েক সেকেন্ডে বুঝেই উঠলো না ঠিক কি বলবে। টয়া ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
ইয়াদ " আচ্ছা " বলে উঠে টয়ার হাত ধরলো তারপর কোমড় জরিয়ে বাম কাধে তুলে নিলো সোজা টয়ার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রিতু হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর একটু হেসে ফেললো। মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো ওদের দরজার সামনে এসে জোড়ে বললো," দুনিয়া থেকে লজ্জা সরম সব বিদায় নিসে।"
ইয়াদ টয়াকে নামতেই টয়া ছিটকে দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে রিতুর কথা কানে আসতেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়াকে বিছানায় বসালো। টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতে পারছে না। অন্য দিকে তাকিয়ে বললো," আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?"
ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে বললো," হুম। তোমার জন্য খারাপ হয়েছে।"
টয়া ব্যাস্ত হয়ে বললো," আমার ঘুম পাচ্ছে।" তারপর তারাতারি বিছানার এক কোণে গিয়ে গুটি সুটি মেরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাতটা শেষ হলে সে যেনো বেচে যায়।ইস রিতুর বাচ্চাটা উল্টা পাল্টা কিসব চিন্তা করে বসে আছে কে জানে। ইয়াদ টয়ার পাশে শুয়ে টয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই টয়া কেপে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়াদের দিকে ফিরতেই ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো।
ইয়াদ কাছে আসতেই টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো," I can't stay without you. You're my only wishing Star that I wished for."
হটাৎ মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে টয়ার। টয়া মাথা নুইয়ে রাখলো। মূখে তার এক ঝিলিক হাসি। দুটো কথা যে এমন অনুভুতির জাগরণ করাতে পারে, এটা টয়া আজ অনুভব করলো। মুখটায় লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে সেটা ঢাকতে ইয়াদের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে।
" এই বিয়েতে তোর মত না থাকলে তোকে কেউ জোর করবে না। আমি সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিচ্ছি। বাবা মার সিদ্ধান্ত তোর উপর চাপিয়ে দিবে আমি থাকতে সেটা হবে না।", দাদাভাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে সবাইকে গম্ভীর গলায় একসাথে বসিয়ে এই আলোচনা করছে।
আসার পর থেকেই দাদাভাইয়ের মুখ ভার। ইয়াদ দেখা করতে এসেছিলো। ভাবি, ভাইয়া সবাই ইয়াদের সাথে কথায় মজে ছিলো। দাদাভাই শুধু মুখভার করে কয়েকটা প্রশ্ন করে নিজের রুমে চলে গেল। এখন সবাইকে ডেকে এসব বলছে।
বিয়ে কাগজে কলমে হয়ে গেছে দাদাভাই তো সেটা জানে না। টয়া লজ্জায় বলতেও পারছে না।
ইয়াদকে কি দাদাভাইয়ের পছন্দ হয় নি? টয়া এক কোণে বসে এলোমেলো দৃষ্টিতে নিচে তাকিয়ে আছে।
ছোট ভাইয়া চিন্তিত হয়ে বলল," কেনো দাভাই? ছেলে তো যথেষ্ট ভালো। একজন ডক্টর, চেহারায় ভালো, লম্বা। তোমার আপত্তিটা কোথায়?"
বড় ভাবি ইভাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসে কথোপকথন শুনে। ভাবি সায় দিয়ে বললেন," একদিনে তো আর মানুষ চেনা যায় না। আর ছেলেটার মধ্যে খারাপ কিছু তো লক্ষ্য করলাম না। বাবা মা ভালো বুঝেছেন তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
ছোটো ভাবি দাদাভাইয়ের সামনে কোনো কথা বলছে না। তিনি বেশ ভয় পায় দাদাভাইকে।
" তাই বলে টয়া মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কেনো বিয়ে করবে? আমি থাকতে সেটা হবে না।", গম্ভীর গলায় কথা শেষ করে দাদা ভাই উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
" তাই বলে টয়া মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কেনো বিয়ে করবে? আমি থাকতে সেটা হবে না।", গম্ভীর গলায় কথা শেষ করে দাদা ভাই উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোটো ভাবি বললো," ভাইয়া কথাটা তো ঠিকই বলেছে। টয়ার জীবনের ব্যাপার টয়া যদি রাজি না থাকে তাহলে জোর করার কোনো প্রয়োজন নেই।" ছোটো ভাইয়াও মাথা নাড়িয়ে সম্মমতি জানালো।
এসব কি! যখন না বলেছিলো তখন জোড় করে বিয়ের পেপার এ সাইন করিয়ে নিয়েছে। আর এখন এসেছে মতামত নিতে।
বড়ো ভাবি কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো," হুম টয়ার খুসিটাই তো সব।"
সবাই খুব টায়ার্ড ছিলো সবাই ঘুমাতে গেলো টয়ার ঘুম হারাম করে দিয়ে।
ড্রয়িং রুমে নীচে ফ্লোরে বিছানা করে টয়া আর রিতু শুয়ে আছে। কথপকথনের সময়ে রিতু কিচেনে ছিলো কিন্তু সে সবই শুনেছে। টয়ার কিছুতেই ঘুম আসছে না সে এপাশ ওপাশ করছে। মনের ভিতরটা অস্থির লাগছে। রিতু একটু কেশে উঠে বললো," বলে ফেললেই তো পারিস যে তোর ইয়াদকে চাই।"
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে রিতুর দিকে ফিরলো। তারপর অগোছালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল," মানে?"
" তুই বলে দে এই বিয়েতে তুই রাজী তাহলে আর শুধু শুধু রাতের ঘুম হারাম করতে হবে না।", খোঁচা মেরে বললো রিতু।
টয়া অগোছালো কন্ঠে বললো," থাম...।তোকে পাকনামি করতে হবে না।"
" আচ্ছা তুই কি ইয়াদকে ভালোবাসিস?", স্পষ্ট গলায় প্রশ্ন করলো রিতু। টয়ার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশ ফিরে চুপ করে রইল। রিতু কাথা গায়ে জরিয়ে ঘুম ঘুম সরে বললো," প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেল, তোর জন্যই ভালো।"
টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার ঘুম দেখছি আজ সবাই মিলে হারাম করবে।
অনেক দেরিতে ঘুম থেকে জাগার কারণে টয়ার মাথা ধরে আছে। ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ব্যাগ গুছাতে দেখে টয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে বললো," কি করছো তোমরা?"
টয়া আশে পাশে তাকালো দাদাভাই আর ছোট ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। টয়া চোখ ডলতে ডলতে বড় ভাবিকে বলল," কোথায় যাচ্ছো তোমরা?"
উত্তরে বড় ভাবি বললেন," আগের বাড়ী।"
" আগের বাড়ি মানে?", মলিন চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
" আরে তোমাদের বাড়ি। যেটায় আগে ছিলে?", ছোটো ভাবি ব্যাগের চেইন লাগাতে গিয়ে বললো।
টয়া হা হয়ে আছে। এখন আবার সেই আগের জায়গায় যাবার কি দরকার? নিশ্চই দাদাভাইয়ের সিদ্ধান্ত।
ভাবতেই বিরক্ত লাগছে। এখানে একসাথে থাকতে কি অসুবিধা? টয়া মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে পড়লো। বড়ো ভাবি তাড়া দিয়ে বললো," আরে আরে! বসে পড়লে যে? যাও রেডি হও। তোমায় ও যেতে হবে। তোমার দাদাভাই বলেছে তোমায় সাথে করে নিয়ে যেতে।"
" কি! আমি। আমি কেনো যাবো? তোমাদের যেতে ইচ্ছে করলে তোমরা যাও আমি যাবো না।", মুখ ভার করে বললো টয়া।
" কেনো এখানে থেকে বরের সাথে প্রেম করবে বুঝি?সেটা হচ্ছে না। চলো চলো উঠো। নিচে ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে।", ছোটো ভাবির কথায় টয়া লজ্জায় পড়ে গেলো। আড় চোখে তাকিয়ে রইলো। এমন সময়ে রিতু একটা ব্যাগ হাতে রুম থেকে বের হলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো," তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস? আবার কোনো ট্রিপ?"
" না না, তোদের সাথে যাচ্ছি।", হেসে হেসে বললো রিতু।
" বাহ বাহ। আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কেনো?", বড়ো ভাবির দিকে উদ্দেশ্য করে বললো টয়া।
" নীরব গেছে বাবা মাকে নিয়ে আসতে। এখানে তো এতোজন থাকা সম্ভব নয়। তোমার ভাইয়েরা তাই সকাল সকাল সেই বাড়িতে চলে গেছে। আর কথা নয় টয়া এবার উঠো।", বড় ভাবির কথায় টয়া মুখ ফুলিয়ে উঠে গেলো।
টয়া রেডি হয়ে বের হতেই দেখলো বড় ভাবি ইয়াদের সাথে কথা বলছে। টয়া নিজের ব্যাগটা রেখে একপাশে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে থমকে আছে।
ভাবি একটু কেশে ইয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো," তা কোথায় যাচ্ছো?"
" একটা কাজে বের হচ্ছিলাম।", ইয়াদের দৃষ্টি গেলো টয়ার হাতের ব্যাগের দিকে। ব্যাগ নিয়ে এরা কোথায় যাচ্ছে? ইয়াদ প্রশ্ন করবে কি করবে না বুঝতে পরছে না শেষে বললো," আপনারা কি কোথাও যাচ্ছেন?"
" হ্যা বাবা মা আসছেন তো তাই আমরা আগের বাড়িতে যাচ্ছি। তোমার সাথে পরে কথা হচ্ছে কেমন?", কথাটা শুনেই ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
টয়া দেখেও না দেখার ভান করলো। সবাই একে একে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো। সবার পিছনে টয়া, ইয়াদ নিজের জায়গায় স্থির থাকলো। টয়া যেতেই টয়ার হাত ধরে একপাশে নিয়ে এলো। রিতু পিছনে ফিরতেই সবটা দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো তার। ছোটো ভাবি টয়াকে দেখতে না পেয়ে রিতুকে বললো," টয়া কোথায়?"
রিতুর মরি মরি অবস্থা কি বলে এবার সে? প্রেম করবে এরা আর বিপদে পড়বে সে। এ কেমন বিচার!
" কিছু একটা ফেলে এসেছে? সেটাই নিতে গেছে, চলে আসবে। চলেন গিয়ে নীচে অপেক্ষা করবো।"বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলো রিতু।
" মাথা ঠিক আছে আপনার? হাত ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেলবে।", টয়া আশে পাশে কেউ আছে কিনা দেখতে দেখতে বললো।
" দেখুক I don't Care. তুমি যে যাচ্ছো আমাকে বলোনি কেনো?", গম্ভীর গলায় বললো ইয়াদ।
টয়া অন্য হাত দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেওয়া চেষ্টা করছে। না পেরে দাতে দাঁত চিপে বললো," ছাড়ুন হাত।"
ইয়াদ এক টানে টয়াকে আরো কাছে এনে বললো," আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও। আমাকে জানাওনি কেনো?"
" আরেহ আমি নিজেই তো সকালে জানলাম। আর আপনাকে জানালে আপনি কি করতেন?", চটে গিয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকলো তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো," কোথায় যাচ্ছো?"
" আগের বাসায়?", হাত পিছনে লুকিয়ে রেখে বললো টয়া।
" তা কবে ফিরবে?", সোজাসুজি প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
" বলবো না", বলেই টয়া পালাতে যাবে ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো," বলবে নাকি আমি...", বলেই কাছে আসতেই টয়া দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে বললো," সত্যিই জানি না। আমাকে কিছু বলেনি।"
ইয়াদের বিশ্বাস হলো না। আরো এগিয়ে আসতেই টয়া ইয়াদের মুখে হাত দিয়ে রেখে থামিয়ে বললো," বিশ্বাস করুন সত্যি বলছি। বাবা মা আসবে তাই ওই বাসায় যেতে হচ্ছে।"
টয়া গর গর করে কথা গুলো বলতে লাগলো। না বলতে পারলে ইয়াদের মাথায় ভূত চাপলে আবার কি করে বসে।
কিন্তু ইয়াদের মাথায় তো টয়া নামক পেত্নী চেপে বসে আছে, অপলকে ইয়াদ তাকিয়ে আছে। তারপর টয়ার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই ঝড়ের বেগে টয়া হাত সরিয়ে নিয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে রইল। এটা কি হলো?
ইয়াদ টয়াকে কাছে এনে বললো," ঠিক আছে মাফ করলাম। কিন্তু এটার জন্য pay করতে হবে পরে। এখন ছেড়ে দিচ্ছি যাও।", বলে টয়াকে নিজের থেকে আলাদা করলো। টয়া ছাড়া পেয়ে দিলো দৌড়, পিছে যেনো ডাকাত পরেছে তার। লিফটে উঠে বুকে হাত রেখে হাপাতে লাগলো সে। কোনো সুযোগ ছাড়ে না এই লোক।
আগের বাসায় এসে যেনো পুরোনো দিনগুলো তাজা হয়ে গেলো। নিজের ঘরে ঢুকতেই মনের ভিতরটা নড়ে উঠলো। এই রুমের সাথে সব দুঃখ, হাসি, কান্না আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে আছে। রুমে আসতেই চোখ গেলো সেই জানালার দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো টয়া। দৃষ্টি আটকে গেলো আগের সেই ফ্ল্যাটে, যেখানে ইয়াদ থাকতো। যদিও এখন হয়তো ফ্ল্যাটটায় হয়তো অন্য কেউ আছে। তাও তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।আগের সেই অনুভতিটা যেনো বাতাসে ছড়িয়ে আছে।
রাতে বাবা মা সবাই এসেছে। ড্রয়িং রুমে গন্ডগোল চলছে আনন্দ হচ্ছে কিন্তু টয়ার ফাকা ফাকা লাগছে মনে হচ্ছে কেউ যেনো নেই। টয়া এসে নিজের রুমে বসে আছে।
রিতু এতক্ষন ছাদে ছিলো ভাবীদের সাথে তার বেশ ভালোই ভাব হয়েছে। ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে তারা এক সাথে। টয়া ভিজেছিলো কিন্তু সে আগেই চলে এসেছে। ঐ যে তার ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
রিতু এতক্ষণে নামলো নিচে, মেয়েটা পুরো ভিজে গেছে। চুল থেকে ঝর ঝর করে পানি ঝরছে। চুল ঝরাতেই চুলের পানি গিয়ে নিরবের গায়ে পড়লো। নিরব পিছন থেকে বললো," চুল সামলে রাখো নাকি কাউকে লাগবে সামলে দিতে।"কিছুটা ভঙ্গিমা করে বললো নিরব।
রিতু ভ্রূ কুচকে তাকালো। রিতুকে দেখে নিরব হতভম্ব হয়ে গেলো। নিরব অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো,মেয়েটা রিতু হবে সেটা সে ভাবে নি।
রিতু নীরবের কথা গুলো শুনে অট্টহাসি দিয়ে বললো," আরেহ গরু চোর।"
নিরব রেগে বললো," shut up। আমাকে এসব নামে ডাকবে না। নইলে...."
রিতু পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল," আমার নাম রিতু রজনী। আমি যারে তারে ডরাই না।"
এমন মেয়ে নিরব বাপের জন্মে দেখেনি। একে পেটে রেখে কি যে খেয়েছে এর মা, এতো ঝাঁজ এই মেয়ের।
সবাই রাতের খাবার শেষ করে ফেললো অনেক আগেই। কারণ সবাই টায়ার্ড ছিলো। তারপর ঘুমাতে গেলো। রিতুর হালকা মাথা ব্যাথা করছে তাই সে শুয়ে পড়লো। বৃষ্টিতে ভেজার শখ মিটেছে এবার।
রাত বারোটা। টয়ার ঘুম আসছে না উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দায় দাড়াতেই হটাৎ কেউ তার মুখ চেপে ধরলো। বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো টয়ার। চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু করতে পারছে না। মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই টয়ার চোখে পানি চলে এলো। ইয়াদ দাড়িয়ে আছে।
ভয়ে আরেকটু হলেই অজ্ঞান হয়ে যেতো টয়া। টয়া ইয়াকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চোখ মুছলো। ভয়ে এখনো কাপছে সে। টয়াকে কাপতে দেখে ইয়াদ এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তারপর নরম গলায় বললো," আই অ্যাম সরি!বেশী ভয় পেয়েছো?" টয়া কিছু বললো না ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো। ভয়ে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব ছিলো তারপর নিরবতা ভেঙ্গে ইয়াদ বললো," চলো তোমার মন ভালো করে দেই। একটা জায়গায় নিয়ে যাবো চলো"
টয়া মাথা তুলে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো," কিভাবে যাবো? আপনিই বা কিভাবে এলেন? কখন এলেন?" চোখে মুখে শুধু প্রশ্ন টয়ার।
" এই তো এই মাত্র। কিভাবে এলাম সেটা তো এক্ষুনি দেখতে পাবে। চলো আমার সাথে", টয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল," না। যাবো না। আপনি আমাকে জ্বালাবেন।"
" না গেলে আরো বেশী জ্বালাবো।", দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো ইয়াদ। টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু হাসি হাসি চেহারা নিয়ে বসে আছে। নিশ্চই এই মেয়েটা এই ষড়যন্ত্র করছে এর সাথে মিলে। ওর না মাথা ব্যাথা ছিলো? ইয়াদ রিতুকে দেখে হেসে ফেললো। বাসায় দুইটা দরজা আছে একটা দরজা বন্ধই থাকে। রিতু সেটা খুলে দিয়েছে ইয়াদের জন্যে।
ইয়াদ দ্রুত টয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। নিজের বাসা থেকে এভাবে কোনোদিন চোরের মতো বের হতে হবে কল্পনাও করেনি টয়া। কেউ দেখলে কি ভাববে? বাসায় কেউ জেনে ফেললে কি হবে? টয়ার মাথায় শত চিন্তা। ইয়াদ এর মাঝে টয়ার চোখে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিলো। টয়া সেটা খুলে ফেলতে নিতেই ইয়াদ হাত ধরে ফেললো।
আবার কি করছেন?", কিছু বুঝতে না পেরে বললো টয়া।
একটা সারপ্রাইজ আছে।", কানের কাছে মুখ এনে বললো ইয়াদ।
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে নিয়ে এলো। চোখ বন্ধ তাই টয়া ভয়ে ভয়ে হাঁটছে, বিরক্ত হয়ে বলল টয়া," আর কতক্ষণ এভাবে থাকতে হবে অসহ্য লাগছে।"
" আর একটু।", টয়ার হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বললো।
" না না আমি এক্ষুণি খুলে ফেললাম।", বলে খুলতে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার হাত দুটো ধরে ফেললো। তারপর হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল," এতো অধৈর্য কেনো তুমি?"
" ভালো হয়েছে আমি অধৈর্য্য। আপনি তাড়াতাড়ি করুন।", টয়া তাড়া দিয়ে বললো।
হটাৎ ইয়াদ টয়াকে থামিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো," এবার তুমি চোখ খুলতে পারো।"
টয়া ফট করে চোখের বাঁধনটা হাত দিয়ে নামিয়ে ফেললো। কিন্তু কোথায় সারপ্রাইজ চারিদিক তো অন্ধকার। টয়া এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলো অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এ আবার কেমন surprise!
হটাৎ চারিদিক আলোয় ভরে গেলো। হটাৎ এতো আলোতে চোখ মেলতে অসুবিধা হলো টয়ার। তারপর আশে পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো সে। কি সুন্দর করে সাজানো বাসাটা! টয়া যে রুমে দাড়িয়ে আছে সেটা অসম্ভব সুন্দর। বেডের মাথা বরাবর একটা জানালা। জানালার হালকা রঙের পর্দা রুমটায় স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে। পর্দার সামনে কি সুন্দর একের পর এক ছোটো ছোটো লাইট ঝোলানো। রুমের একপাশে বিশাল টিভি, সারা দেওয়ালে অসম্ভব সুন্দর কিছু পেইন্টিং। টয়ার চোখ আটকে গেলো বারান্দার দিকটায়। বাহিরের দিকটা তার খুব চেনা। টয়া তাকিয়ে আছে। ইয়াদের মুখে হাসি, সে এগিয়ে এসে টয়ার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে এলো। টয়ার বিস্ময়ের সীমা রইলো না। এটা সেই বাসাটা, না হলে এখান থেকে টয়ার রুম কিভাবে দেখা যাচ্ছে। টয়ার মুখ হা হয়ে রইলো।
ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো," মুখে মাছি ঢুকবে তো।"
টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল," এটা আপনি ..... মানে কিভাবে? কিভাবে সম্ভব? Same জায়গায়।"
ইয়াদ টয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো," সম্ভব তো করতেই হতো। এই দুটো জায়গা তোমার আর আমার। এটা অন্য কারোর দখলে থাকবে সেটা তো আমি হতে দিতে পারি না। তাই যারা এখানে ছিলো তাদের বিদেয় করে দিয়েছি।"
" হ্য! বিদেয় করে দিয়েছেন মানে?", হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো টয়া।" ও কিছু না। তোমার কি পছন্দ হয়েছে?", টয়ার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া ইয়াদকে সরিয়ে দিয়ে বললো," মানুষ দেখবে তো। কি করছেন?"
" দেখুক,who cares?", বলেই দুজনেই সেই আগের দিনগুলোয় হারিয়ে গেছে। টয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলল," জানেন আপনি যে সারারাত জেগে পড়তেন। আপনার রূমের আলোটা ঠিক আমার বারান্দায় গিয়ে পড়তো আমার অন্ধকার রুমটা আবছা আলোয় ভরে যেতো। সেই আলোর দিকে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। তখন আমার আর একা ঘুমাতে ভয় করতো না।"
" হ্যা আর আমি আগে ঘুমিয়ে পড়লে যে তুমি আবার রুমে লেজার লাইট মারতে। এই জন্য কি মারতে?", নরম গলায় বললো ইয়াদ।
" তো আমি কি অন্ধকারে ঘুমাবো? এ জন্য আপনার ঘুম নষ্ট করতাম যাতে আমি ঘুমাতে পারি।", ফিক করে হেসে উঠল টয়া। এভাবে হাসতে যেনো টয়াকে ইয়াদ অনেক দিন পর দেখছে। হাসতে হাসতে টয়া খেয়াল করলো নিরবকে। নিরব টয়ার পাশের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। দেখে ফেলেনি তো। টয়ার বুকটা ধক করে উঠলো। টয়া জলদি ইয়াদকে টেনে রূমের ভীতরে নিয়ে এলো।
" কি হলো এভাবে চলে এলে কেনো?", ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
" নিরব ছিলো। দেখে ফেলেছে হয়তো। কি হবে এবার?", বিচলিত হয়ে বলল টয়া।
" কিছুই হবে না। দেখে ফেলেছে তো কি হয়েছে।", তারপর বারান্দায় যেতে নিলো ইয়াদ। টয়া ইয়াদের শার্ট খামচে ধরে চিন্তিত হয়ে বললো," কি করছেন? ও দেখে ফেলবে। আপনি ওদিকে যাবেন না।"
ইয়াদ টয়ার হাতের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো," আচ্ছা যাবো না if I get a kiss।" বলেই টয়ার দিকে তাকালো।
এই কথা কর্ণপাত হতেই টয়া ছিটকে দূরে সরে গেল। বলেছিলাম না জ্বালাবে! এইতো শুরু করেছে। ইয়াদ এগিয়ে আসতে লাগলো," কি হলো বোলো যাবো কি যাবো না।"
" আপনি এতো নিলজ্জ কেনো?", মাথা নুইয়ে চিকন গলায় বললো টয়া। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে বললো," কি বললে? শুনতে পেলাম না।" ইয়াদ ঠিকই শুনেছে তবে টয়াকে এভাবে জ্বালাতে তার ভালোই লাগে।টয়ার ইচ্ছে করছে ঐ নীরবকে গিয়ে ইচ্ছে মতন কয়েকটা মাইর দেয়। ওর জন্য এখন এই বিপদে পরতে হলো তাকে।
ইয়াদ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়ার বুকের ভিতরটা অস্থির হয়ে আছে। সে চোখ বন্ধ করে মাথা নুইয়ে রাখলো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে টয়ার দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো। টয়া চোখ খুলতেই ইয়াদের চোখে চোখ পড়তেই সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ টয়ার দুই গালে হাত দিয়ে টয়ার মুখটা উপরে তুললো তারপর আদুরে গলায় বললো," তোমায় লজ্জা পেলে দেখতে দারুন লাগে।"
টয়া লজ্জায় পারেনা কোথাও মুখ লুকিয়ে রাখে, টয়া নিচের ঠোঁট কামড়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।
ইয়াদ টয়াকে বুকে জরিয়ে ধরলো। যাক টয়া মুখ লুকানোর একটা জায়গা পেলো। ইয়াদ এভাবে জড়িয়ে ধরে বললো," আমাদের যখন একটা বেবী হবে তখন তাকে কোলে নিয়ে তোমার রুম দেখিয়ে বলবো তুমি কিভাবে আমাকে জালাতে।"
টয়া ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে বললো," কি! আপনিই এসব বলবেন?"
" অবশ্যই বলবো।", সিরিয়াস হয়ে বললো ইয়াদ।
" একদম না।", ইয়াদকে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো টয়া।
তারপর আরো বললো," আপনি যদি এসব বলেছেন আপনাকে আমি...." বাকি টা বলার আগে ইয়াদ টয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো," আগে বেবী আসুক। তারপর ডিসাইড করবো কেমন?"
আজব এর কথায় টয়া এভাবে গলে যাচ্ছে কেনো টয়া সে নিজেই জানে না। অদ্ভুত সেই অনুভূতিটা। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে পুরো বাসাটা দেখলো। সে নিজে সবটা সাজিয়েছে।
ইয়াদ এতো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে যে টয়ার অনেক পছন্দ হয়েছে। টয়া নিজের অনুভূতি বলে প্রকাশ করতে পারবে না। টয়া মুখে এক ঝিলিক হাসি নিয়ে সবটা দেখছে।" ভালো লেগেছে?", পকেটে দুই হাত রেখে বলল ইয়াদ।
" হুম, খুব। ", বলে টয়া ইয়াদের সামনে এসে তার বুকে হেলান দিয়ে দাড়ালো। ইয়াদ ব্যাস্ত হয়ে পকেট থেকে হাত বের করে টয়াকে কে ধরে বললো," এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো পরে যাবা তো।"
টয়া ইয়াদের বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারায় নিজের দিকে ডাকলো। ইয়াদ কিছু বুঝতে না পেরে মুখ এগিয়ে নিয়ে এলো। টয়া ইয়াদের অপর পাশের গালে হাত রেখে ইয়াদের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো," পড়বো না। আপনি তো আছেন।" তারপর চোখ নামিয়ে মাথা নুইয়ে রাখলো
টয়ার কাজে ইয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তারপর আরো অস্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলো। অবশেষে টয়ার মন গলেছে। সব ঠিক ঠাক হলেও ইয়াদের মনের কোনে একটা অনুতাপ ররেই গেছে। টয়াকে sorry না বলা পর্যন্ত ইয়াদের মন শান্ত হবে না। তাই ইয়াদ নিচু স্বরে অনুতপ্ত হয়ে বলল," sorry।" বলে ইয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
টয়া মাথা ঘুরিয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো," মানে?" আবার sorry কেনো বলছে ইয়াদ টয়া বুঝলো না।
ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো," আমার জন্য সেদিন তোমার এতো বড় ক্ষতি হলো। তোমার অ্যাকসিডেন্ট।", বাকিটা শেষ করার আগে টয়া চটে গিয়ে বললো," কে বলেছে এগুলো আপনাকে? নিরব! ও বলেছে না? "
" কিন্তু কথাগুলো তো সত্যি।", ইয়াদের কথায় টয়া ক্ষেপে গেলো। কেনো তার ভুলের দায় ইয়াদ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে? এই নীরবকে তো...!
" আচ্ছা তাই বুঝি? তাহলে যেই গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেটা আপনি ড্রাইভ করছিলেন? নাকি আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির সামনে ফেলেছেন? যখন সেখানে আপনি উপস্থিত ছিলেনই না দোষটা আপনার হলো কি করে? আমি দেখে হাটি নি দোষ আমার। আপনি কেনো নিজের ঘাড়ে দোষ নিচ্ছেন।", গম গম করে বললো টয়া। টয়া রেগে যাওয়ায় ইয়াদ টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো," থামো থামো বুঝেছি।"
" আপনি এই কথাটা আর কোনো দিন বলবেন না। মনে থাকে যেন।", শাসিয়ে বললো টয়া। ইয়াদ ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়ল মহা রানী ক্ষেপে গেছে আর রাগানোর কোনো মানে নেই।
" আচ্ছা চলো বের হই।", ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে বললো।
" বের হবো মানে? আবার কই যাবো?", সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
" গেলেই দেখতে পাবে।", বলেই টয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলো।
"এতো রাতে আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।", ইয়াদকে প্রশ্ন করতে টয়া ব্যাস্ত।
ইয়াদ টয়াকে আগের সেই কাশফুলের মাঠটায় নিয়ে আসলো। সেদিনের পর টয়া কোনোদিন আর এই মাঠে আসেনি। আজ এতো বছর পর আবার এলো সে। কিছু যে পরিবর্তন হয় নি এমনটা নয়। অনেক কিছু বদলে গেছে তবে আজও চারিপাশ কাশফুলে ভরে আছে।
টয়া আর ইয়াদ পাশাপাশি হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আগে জায়গাটা অন্ধকার থাকতো রাতের বেলায়। এখন চারপাশটা কি সুন্দর আলোয় ভরা। টয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। বাতাস বইছে, হালকা হিমশীতল বাতাস। বাতাসে টয়ার খোলা চুলগুলো উড়ছে। অপরূপা লাগছে তাকে ইয়াদ চোখ সরাতে পারছে না।
হিমশীতল বাতাসে টয়ার হালকা শীত করছে কিন্তু তাও বাতাসটা তার অনেক ভালো লাগছে। সে দুই বাহু জড়িয়ে ধরে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা উপভোগ করছে।
ইয়াদ পিছন থেকে এসে জরিয়ে ধরলো। টয়া ছড়ানোর চেষ্টা করলো না।ইয়াদ টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো," আমাদের জীবন থেকে কতগুলো সময় চলে গেছে।" তারপর টয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাড়করিয়ে বললো," আমি আর কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে দিতে চাই না।" বলতে বলতে ইয়াদ পকেটে হাত ভরে একটু একটু পিছিয়ে গেলো।
পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ইয়াদ। টয়া অবাক হয়ে দেখছে। এর মাঝে ইয়াদ হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই অজস্র গোলাপের পাঁপড়ি টয়ার গা বেয়ে পড়লো। সেগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে চারিপাশে। একপাশে সাদা কাশফুল অন্য পাশে ছোট্ট সেই লেক আর সবুজ ঘাসের উপর পরে আছে লাল গোলাপের পাঁপড়ি। টয়া সেই সৌন্দর্যে যেনো হারিয়ে গেলো।
বুকের ভিতরটা অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে গেলো। ইয়াদ টয়ার সেই হাসির মাঝে হারিয়ে গিয়ে বললো," I'm not a sweet talker। আমি তেমন কিছুই পারি না তবে I promise আমি তোমার এলোমেলো চুল বেঁধে দিবো। আর হ্যাঁ রাতে অন্ধকারে ভয় পেলে তোমায় জরিয়ে রাখবো নিজের সাথে। আমি তোমায় আগলে বেচেঁ থাকতে চাই।" ইয়াদ এভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে না। তবে আজ খুব জানাতে ইচ্ছে করছে তার। কথাগুলো বলতে বলতে ইয়াদ পকেট থেকে ডান হাতটা বের করলো। হাতটায় একটা আংটি।
যা হচ্ছে, টয়ার তা বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো সুন্দর মুহূর্ত যে তার জীবনে আসবে সে কখনো ভাবতেই পারে নি। ইয়াদ হাতে ধরে থাকা আংটিটার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর একটু হেসে বললো," তুমি কি আমার হবে?"
সাধারণত ইয়াদ এসব বলতে অভ্যস্ত না।
টয়ার এমন অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি। এ এক অন্যরকম ভালোলাগা যা বলে বোঝানো যায় না। বিস্ময়ে টয়ার চোখ ছল ছল করে উঠলো। মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে সেই চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু এতটাই সুন্দর যে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। চোখের সামনে পুরনো দিনগুলো ভেসে উঠেছে। ইয়াদ অন্য হাতে টয়াকে এগিয়ে আসতে ইশারা করলো। টয়া আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে এগুতে লাগলো। ইয়াদের যতো কাছাকাছি যাচ্ছে তত সবটা স্বপ্নের মত লাগছে। চোখ মেললেই যদি স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। বুকের ভেতর অজানা ভয় কাজ করছে।
সেই ভয়ে টয়া দৌড়ে গিয়ে ইয়াদকে জরিয়ে ধরলো। চোখ মেলে ইয়াদের দিকে তাকাতেই সবটা সত্যি মনে হলো টয়ার। ইয়াদ টয়াকে অন্য হাতে জরিয়ে রেখে আংটিটা দেখিয়ে বললো," will you?"। টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। ইয়াদ আংটিটা টয়ার হাতে পরিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
" তোমরা সারারাত একসাথে বাইরে ছিলে?", থমথমে গলায় বললো টয়ার দাদাভাই। চোখ মুখ তার শক্ত দেখেই বুঝা যাচ্ছে রেগে আছে সে। ইয়াদ আর টয়া তার সামনে দাড়িয়ে আছে। সূর্য ওঠার অনেক আগেই ইয়াদ টয়াকে পৌঁছে দিয়েছিলো কিন্তু গেট দিয়ে ঢুকতেই টয়ার দাদাভাইকে পায়চারী করতে দেখে আর তিনিও ওদের দেখে ফেলে।
টয়ার দাদাভাইকে সবটা নিরব জানিয়েছে। নিরব বারান্দা দিয়ে আবছা টয়ার মতো কাউকে দেখে কিন্তু সে সিউর ছিলো না। সত্যিটা জানতেই টয়ার রুমে যায়। এদিকে রিতু দরজা না লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তারপর আর কি নিরব সবটা বুঝে ফেলে।
আর টয়ার দাদাভাই এমনিতেই ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে যায়। তিনি উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করেন তারপর চা খেয়ে পত্রিকা পড়েন। দাদাভাই উঠার সাথে সাথে নিরব সবটা তাকে জানায়। ইয়াদ আর টয়ার অপেক্ষায় তিনি নীচে পায়চারী করছিলেন। ওদের দেখে থমথমে গলায় নিজের সাথে আসতে বললেন। টয়া বেশ ভয়েই আছে , ঘটনাটা কতদূর যাবে তা ভেবে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। টয়ার ভয় দেখে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে আছে। বাসায় সবাই ঘুমাচ্ছে তাই দাদাভাই ছাদের সাথের রূমে নিয়ে এলেন কথা বলার জন্য। একটা হলুদ বাতির আলো জ্বলছে।
নিরব পিছু পিছু এসে বাহিরে দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছে। নীরবের পিছু পিছু রিতু চলে এলো। তার জন্যই তো টয়া আর ইয়াদকে বিপদে পড়তে হলো। নিরব বাহিরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আর রিতু দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে থমথমে পরিবেশ।
ইয়াদ কিছু বলতে যাবে তখনি টয়ার দাদাভাই বললো," কিছু কথা বলার দরকার ছিল আমার তোমাকে। ভালোই হয়েছে আজ সেই সুযোগটা পেলাম।"
টয়া বুঝতে পারছে কি নিয়ে কথা বলবে দাদাভাই হয়তো বলবে যে বিয়েতে তার মত নেই তাই বিয়েটা হবে না। ইয়াদ এটা শুনে কি রিয়েক্ট করবে টয়া বুঝতে পারছে না। উফফ আজ কি যে হবে?
" জ্বি বলুন।", শান্ত গলায় দাদাভাইকে বললো ইয়াদ। টয়া বার বার ঢোক গিলছে।
" আমার এই বিয়েতে মত নেই। আর আমি চাই না তোমার সাথে টয়ার বিয়েটা হোক।", পরিষ্কার করে বললেন তিনি।
টয়ার ঘাম ছুটতে লাগলো।
ইয়াদ কিছুটা অবাক হলো কিন্তু বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো। " হটাৎ সিদ্ধান্তের এমন পরিবর্তন?", মাথা ঠাণ্ডা কোরে বললো ইয়াদ। ব্যাপারটা ইয়াদ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না কারন টয়া লিগ্যাল ভাবে তার ওয়াইফ তাই ওনার ইচ্ছে না থাকলেও কিছু করার নেই। তবুও না করার কারণ তো জানতে হবে।
ইয়াদের এমন প্রশ্নে রাগী চোখে তিনি বললেন," তোমায় কেনো আমি কৈফিয়ত দিতে যাবো? এটাই আমার শেষ কথা, এই বিয়েটা হবে না।"
ইয়াদ রেগে গেলো। লোকটা কারন না বলে এভাবে বাধা দিচ্ছে কেনো। তাও সে নিজের রাগ সামলে বলল," কিন্তু বিয়েটা তো হয়ে গেছে।"
তৌহিদ সাহেব মানে টয়ার দাদাভাই তিনি বেশ অবাক হলেন। বাহিরে দাড়িয়ে নিরব চমকে গেলো। যদি বিয়ে হয়েগেছে জানত তাহলে হয়তো এই কাজগুলো সে করতো না। নীরবের কিছুটা অনুতপ্ বোধ করছে।
" মানে।", গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো তৌহিদ সাহেব।
" হ্যা আগেই বিয়ের পেপারে সাইন করা হয়েছে আমাদের।", শক্ত করে টয়ার হাত ধরে বললো ইয়াদ।
টয়া মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। পরিবেশ আবার থমথমে হয়ে গেছে। তৌহিদ সাহেব কিছুতেই বিয়েটা মেনে নিতে পরছে না ইয়াদকে দেখে তো মনেও হচ্ছে না যে সে মিথ্যে বলছে।
" তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই জানি না? সবটা আমার জানা। সাত বছর আগে রাগের মাথায় কি কি বলেছো সবটাই আমার জানা।", তৌহিদ সাহেব রাগে গজগজ করে বললো।
টয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো। দাদাভাই কি করে এসব জানলো এগুলো শুধু নিরব জানতো তাহলে কি নিরব? ভাবতে থাকতেই তৌহিদ সাহেব বলে উঠলো," তোমার হাতে কি হয়েছে? ভেবেছো জানি না।রাগের মাথায় নিজেকে এভাবে ক্ষত বিক্ষত করেছ। তোমার মতো বদমেজাজি ছেলের কাছে কি করে নিজের বোনের হাত তুলে দেই। ভবিষ্যতে যে আবার এই ঘটনা গুলো রিপিট হবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?"
ইয়াদ চুপ করে আছে কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারছেনা। সে ভুল করেছে এটা তো সত্যি।
" তুমি ছেলে ভালো না আমি সেটা বলছিনা তবে তোমার এই বদমেজাজ ইন ফিউচার আমার বোনকে সহ্য করতে হবে। রাগের মাথায় আবার বড়ো কিছু করলে ভাবতে পারছো কি হবে? এতো বড় হয়ে নিজের রাগ সামলাতে পারলে না। ভবিষ্যতে যে সামলে নিবে তা ভেবে নেই কি করে।", ইয়াদ ভালো করেই জানে তৌহিদ সাহেবের জায়গায় তিনি ঠিক কিন্তু তাই বলে টয়াকে সে হারাতে রাজি না।
ইয়াদ কিছু বলার আগেই টয়া মাথা নিচু রেখে বললো," দাদাভাই, আমি সামলে নিবো এই বদমেজাজী ছেলেটাকে।"
ইয়াদ আর তৌহিদ সাহেব দুজনেই একসাথে টয়ার দিকে তাকালো। তৌহিদ সাহেবের আর বলার জায়গা রইলো না। কারন বোনের ইচ্ছাটাই তার কাছে সব। টয়া যে এখনও ইয়াদকে চায় সেটা তার জানা ছিলো না। আর এতক্ষন তার এতগুলো কথা ঠাণ্ডা মাথায় যে ইয়াদ শুনেছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে সে বদলাচ্ছে।
নিরব টয়ার কথা শুনে আর দাড়ালো না সেথায়। মেঘাচ্ছন্ন চোখে এগিয়ে যেতেই রিতু নীরবকে দেখে দৌড় দিতে গেলো কিন্তু মুখ উল্টে পরে গেলো। নীরবের মেঘাচ্ছন্ন মুখটার থেকে মেঘ কেটে গেলো। রিতুকে দেখলে নিরব কেনো জানি মুখ ভার করে রাখতে পারে না। নীরব আজ আর রিতুকে জ্বালালো না। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে রিতুকে টেনে তুললো। নীরবের কাজে রিতু অবাক হয়ে গেলো। এতো ভালো আচরণ রিতুর হজম হলো না। নীরবের হাত ধরে উঠে দাড়ালো রিতু। তারপর রিতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সামনের এগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। এখনো সূর্য উঠেনি তবে একটু পরই উঠবে বোঝা যাচ্ছে।
বাহ্ এতো দেখি ভদ্রতার চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে। রিতু এগিয়ে গেলো নীরবের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তাও নিরব কিছু বললো না। রিতু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল," ভূল করে কি সুপার গ্লু খেয়ে নিয়েছেন? মুখ দেখি বন্ধ হয়ে আছে।" নিরব ভ্রু কুঁচকে রিতুর দিকে তাকালো। হয়েছে এবার বিরক্ত করে মারবে। নিরব একটা নিশ্বাস ছাড়ল।
রিতুর ভদ্র নীরবকে ঠিক পছন্দ হলো না। নীরবের বাহুতে ঘুষি দিতে বললো," আরে আজব কথা বলেন না কেনো? ঠিক আছে কথা বলবেন না তো থাকুন একা। আপনার জন্যে এমনেই অনেক বিপদে পড়েছি।"বলে চলে যেতেই নিরব রিতুর হাত ধরে ফেললো। তারপর বললো," সামনে দেখো।" রিতু ভ্রূ কুচকে সামনে তাকালো অসম্ভব সুন্দর লাগছে আকাশটা। পূর্বের আকাশটা আস্তে আস্তে আলোয় ভরে যাচ্ছে। মনোমুগ্ধকর সে দৃশ্য।
ইয়াদ টয়ার হাত আরো শক্ত করে ধরলো। টয়া এখনো মাথা নুইয়ে আছে। দাদাভাই কি রাগ করেছে তার কথায়। বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে,কিছু বলছে না যে দাদাভাই। তৌহিদ সাহেব কিছুক্ষণ রাগ দেখিয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর একটু কেশে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললো," হুম,তোমরা দুজনে জলদি নীচে আসো একসাথে চা খাবো।"
ভোরের আলোয় সবটা যেনো আরো সুন্দর হয়ে গেলো। টয়া আর ইয়াদ দুজনই চমকে গেলো।
মনে মনে সব মেনে নিয়েও থমথমে মুখ করে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলেন তিনি। টয়ার চোখে মুখে প্রফুল্ল ফুটে উঠেছে। ইয়াদ অবাক হয়ে বললো," মেনে নিলো। এতো সহজে।"
টয়া হেসে ফেললো। দাদাভাই ইয়াদের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে। ভেবেই মজা পাচ্ছে সে। তারপর হা সূচক মাথা নেড়ে ইয়াদের হাত ধরে ছাদের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
এতো সুন্দর দৃশ্য রেখেও নিরব রিতুর দিকে তাকিয়ে আছে নিজের অজান্তেই। রিতুর নীরবের দিকে চোখে পড়তেই চোখ আটকে গেলো। দুজনেই মুগ্ধতায় মজে গেছে। টয়া আর ইয়াদ বের হতেই চোখ গেলো নিরব আর রিতুর দিকে। এভাবে ওরা দুজন দুজনকে দেখছে কেনো? ইয়াদ আর টয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
টয়া আস্তে আস্তে বললো," নতুন এই ভোরে আবার কোন গল্পের সূচনা হচ্ছে?"
টয়ার কথায় ইয়াদ হেসে ফেললো তারপর হালকা কেশে উঠে ওদের দৃষ্টি আকর্ষন করল। নিরব আর টয়া দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
_______________[ সমাপ্ত ]________________
গল্পটার শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।সবটাই সম্ভব হয়েছে আপনাদের জন্য!
0 Comments