ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-১৯
রাহি নিচে নেমে দাড়িয়ে আছে অনেক্ষন। ঘোড়ায় আহরণরত কায়ানকে লাগছে এ রাজ্যের রাজা।
রাহি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে, কি উদ্দ্যেশে তাকে ডেকে আনা হয়েছে সেটা তার জানা নেই। অবশ্যই কোনো ভালো উদ্দেশ্য হবে না।
সম্পুর্ন মাঠ একটা চক্কর দিয়ে কায়ান ঘোড়া নিয়ে রাহির সামনে এলো। কায়ান নীরবতা ভেঙে বললো, “ এই ঘোড়ার নাম কি জানো?--- পঙ্খীরাজ। তুমি চাইলে একটা বিশেষ সুবিধা পেতে পারো। যদিও আমার অন্য বন্দিরা এই সুযোগ পায় না।”
“ কেমন সুবিধা?” রাহি ভ্রু কুচকে বললো।
“ তুমি চাইলে শর্তসাপেক্ষে পঙ্খীরাজের পিঠে চড়তে পারো।”
শর্তসাপেক্ষে শুনেই রাহি আড় চোখে তাকালো। অবশ্যই কায়ান নিজের মতলব ছাড়া কিছু করবে না।
তবুও রাহি জিজ্ঞেস করলো, “ কি শর্ত?”
কায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে বললো, “ শর্ত একটাই। আমার সাথে চড়তে হবে।”
“ জীবনেও না।”, রাহি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিতেই কায়ান বললো, “ তোমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে —-ইঞ্জিনিয়ার নিলয় আশরাফ। —রাইট?”
রাহি থেমে গেলো, তারপর পিছন ফিরে রক্ত চোখে কায়ানের দিকে তাকালো। রাহির বুঝার বাকি নেই, কায়ান তার সম্পুর্ন ব্যাকগ্রাউন্ড ঘাটাঘাটি করে ফেলেছে।
কায়ান ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো, “ আমি আরো অনেক কিছু জানি। তাই আমার মনে হয় তোমার —আমার দেওয়া শর্ত মেনে নেওয়া উচিৎ।”
“ তোমার উদ্দেশ্য কি বলতো?”, রাহি বিরক্তি নিয়ে বললো।
“ তুমি আবার আমাকে প্রশ্ন করছো?”, বলেই কায়ান পাশের দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে ইশারা করতেই সে ঘোড়ার পিঠে উঠার জন্য একটি টুল রাহির সামনে রাখলো।
“ কি ব্যাপার? উঠো।”
রাহি একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ঘোড়ায় উঠতে টুলে পা রাখলো। কায়ান হাত বাড়িয়ে রাহিকে টেনে তুললো। প্রথমে রাহি না করলেও —কায়ান যেনো তার কথা শুনবে? কায়ানের সাথে হঠাৎ এমন ঘনিষ্ঠতায় রাহির অস্বস্তি হচ্ছে।
কায়ান এক হাত রাহির পেটের উপর রাখতে রাখতে বললো, “ সুইটহার্ট —আই নিড টু —হোল্ড ইউ, নয়তো তুমি পড়ে যাবে।”
কায়ানের স্পর্শে রাহি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। অসহ্য। লোকটা এমন ভাবে কথা বলে যেনো সে তার কোনো প্রেমিকা।
কায়ান রাহির রিয়েকশনে নিশ্চুপে হাসলো তারপর অন্য হাতে ঘোড়া চালিয়ে যেতে লাগলো।
রাহি ধীরে ধীরে চোখ খুললো। রাতের ঠান্ডা বাতাস আঁচড়ে পড়ছে তার মুখে। চাঁদের স্নিগ্ধতায় মনে হচ্ছে এ কোনো রূপকথার শহর। রাহির ভারী মনটা হালকা হয়ে এলো ধীরে ধীরে।
রাহির চুল উড়ে গিয়ে কায়ানের মুখে মেখে আছে কিন্তু কায়ান কোনো অভিযোগ করলো না।
রাহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “ হঠাৎ নিলয়ের প্রসঙ্গ তুললে কেনো তুমি?”
“ কারণ আমি ভেবেই পাচ্ছি না, তুমি ঐ গাধাটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো কি করে?”
রাহি কিছু বলার আগেই,কায়ান হঠাৎ ঘোড়া থামিয়ে এক হাতে রাহির সম্পুর্ন পেট জড়িয়ে ধরতেই —সে কেঁপে উঠে সরে যেতে চাইলো।
কায়ান নিজের হাতের বাঁধন দৃঢ় করে পিছন থেকে রাহির কানের কাছে মুখ এনে বললো, “ সসসসসস,, আই উইল স্প্রিড আপ নাও।” বলেই সে ঘোড়ার দৌড়ানোর গতি বাড়িয়ে দিলো।
রাহির গলা দিয়ে চিৎকার যেনো ভেসে আসছে কিন্তু সে কায়ানের কাছে নিজেকে দুর্বল দেখাবে না।তাই প্রথমে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলো।
কিন্তু কায়ান ঘোড়ার গতিবেগ আরো বাড়িয়ে দিতেই রাহি সজোড়ে নিজের পেটের উপর থাকা কায়ানের হাতে খামচি বসিয়ে দিল।
কায়ান সাথে সাথে ঠোঁট কামড়ে তাকালো।
তারপর রাহির কানের পাশে চুল সরিয়ে বললো,
“ উহুম…একদম না। আমি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললে কিন্তু মুশকিল হয়ে যাবে সুইটহার্ট।” তারপর ধীরে ধীরে গতিবেগ কমিয়ে এনে বললো, “ ঐ বলদ নিলয়ের মধ্যে কি পেয়েছো বলোতো?
রাহি ধীরে ধীরে চোখে খুলে বললো, “ একদম আমার পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাতে আসবে না।”
“ যতক্ষণ তুমি আমার কাছে আছো। তোমার পার্সোনাল বলতে কিছু নেই।”, রাহি কায়ানের হাতে নিজের নখের চাপ আরো গাঢ় করতেই কায়ান চোখ বন্ধ করে ফেললো তারপর দাঁতে দাঁত চিপে বললো, “ডোন্ট ডু দ্যাট। আমার ভিতরের জানোয়ারটা জেগে উঠবে —সুইটহার্ট।”
রাহি নাক ফুলিয়ে নিজের হাত সরিয়ে এনে বললো, “ আমার পরিবারের কারোর ক্ষতির কথা ভুলেও চিন্তা করবে না তুমি। ওদের কিছু হলে আমি তোমাকে….”
রাহি বলে শেষ করার আগেই কায়ান অগ্নি কন্ঠে বললো, “ ওই গাধাটা তোমার পরিবার?”
রাহি দাঁতে দাঁত চিপে কায়ানের হাত নিজের পেটের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“ নিজেকে কি মনে করো তুমি? প্রথমত আমার আংটি হারিয়েছো। দ্বিতীয়ত সেটা খুঁজে এনে দিতে পারলে না —আবার নিলয়কে গাধা বলছো?”
কায়ান নিজের হাতের দিকে তাকালো। তার হাতে নখের দাগ স্পষ্ট যেনো কোনো অন্তরঙ্গ মুহূর্তেই চিহ্ন।
“ W*t*f!”
“ আমি কখনো মেয়েদের জোর করি না, সেজন্যে তুমি রক্ষা পেয়ে গেলে নয়তো এতক্ষণে…..।” কায়ান রাহির অগ্নি চোখে দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।
এর পরের কথা উচ্চারণ করলে নির্ঘাত এই মেয়ে এখন সপাটে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিবে। তারপর রাগের মাথায় কায়ান কি করে বসবে সেটা তার জানা আছে।
কায়ান নিশ্বাস ফেলে ঘোড়া থামালো। তারপর নিজের লাফ দিয়ে ঘোড়া থেকে নেমে —রাহির দিকে দুইহাত এগিয়ে দিতেই রাহি কায়ানের হাত সরিয়ে বললো, “ আমি পারবো।”
“ বলেছি না। সব জায়গায় সাহস দেখাবে না।”, বলেই দুই হাতে রাহির কোমড় ধরে তাকে নিচে নামিয়ে আনলো।
কিন্তু হঠাৎ ঘোড়া নিজের শরীর ঝাকা দিতেই রাহি ভয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে কায়ানের উপরে পরে যায়।
সে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ব্যালেন্স হারিয়ে রাহি একদম কায়ানের মুখের উপর পড়েছে। রাহির ঠোঁট গিয়ে স্পর্শ করেছে কায়ানের ওষ্ঠদুটি।
রুবান এক পাশে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার ষোল বছরের অভিজ্ঞতায় এমন দৃশ্যের সাক্ষী সে আজ প্রথম। কায়ানের হাত দুটি রাহির কোমড় জড়িয়ে আছে। দুজনের চোখে বিস্ময়। ওষ্ঠদুটি এখনো একেঅপরকে জড়িয়ে আছে।
ঘটনা কি ঘটেছে সেটা বুঝতে রাহির এক মুহুর্ত সময় লাগলো। কিন্তু যখনই তার হুস ফিরলো সে ছিটকে কায়ান থেকে সরে এসে ভূত দেখার মতন তাকিয়ে রইলো। এটা কি হলো! এ অসম্ভব!
কায়ান চোখ বন্ধ করে নিজের ঠোঁট কামড়ে রইলো। যেনো এক নেশা ঘিরে ধরেছে তাকে। উফফ! এই মেয়েটা তাকে পাগল করে ছাড়বে।
আরহান ও ইশা গাড়ি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত তিনটার বেশি। রুদ্রদের গাড়িতে ততক্ষণে সবাই ঘুমে কাহিল।
ইশা হাই তুলতে তুলতে দরজা দিয়ে নামতে যাবে তখনই তার খেয়াল হলো তার জুতো গাড়ির ভিতরে। ইশা জুতোর জন্য এদিকে ওদিক তাকাতে লাগলো।
আরহান ইশার সামনে এসে বললো, “ কি খুঁজছো?”
“ আমার জুতো।”, বলেই ইশা গাড়ির ভিতরে তাকালো।
ততক্ষণে আরহান তাকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে বের করতেই ইশা গলা নিচু করে বললো, “ আবার শুরু করলেন, আপনি?”
আরহান উত্তরে কিছুই বললো না। ইশাকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে এলো। ইশা ঘুম ঘুম চোখে বললো, “ আপনি যে নির্লজ্জ, সেটা কি আপনি জানেন?”
“ হ্যাঁ, জানি।”, আরহান ইশাকে বিছানায় রাখতে রাখতে বললো।
তারপর জিজ্ঞেস করলো, “ তোমার সব অভিযোগ শেষ?”
ইশা ঘুম চোখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আরহান ইশার কানের কাছে মুখ এনে বললো, “ কিন্তু আমার যে একটা অভিযোগ আছে।”
ইশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো, তার চোখের ঘুম যেনো নাই হয়ে গেলো। ইশা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো, “ কি অভিযোগ?”
আরহান বালিশে মাথা রেখে বললো, “ থাক। অভিযোগ করে লাভ নেই।—- তোমার দ্বারা সেসব হবে না।”
ইশা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
তারপর বললো, “ মানে?”
আরহান ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো, “ কিছু না।”
ইশা রাগ দেখিয়ে বললো, “ দেখেছেন। আপনি আবার আমার থেকে কথা লুকিয়ে যাচ্ছেন।”
আরহান ইশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, “ সত্যি! শুনতে চাও?”
ইশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আরহান ইশার কানে কানে নিজের অভিযোগ জানালো। সে এক নির্লজ্জ অভিযোগ—-মুহূর্তে ইশার কানদুটি রক্ত বর্ন হয়ে গেলো।
0 Comments