জীবনের গল্প: তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| পর্ব-৫
টয়া পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেললো। আবার সেই হিটলারের হাতে পড়তে হলো টয়ার। শাড়িটা এমনিতেই অনেক কষ্টে করে পরেছে সে। এবার যদি কোনো অঘটন ঘটে তখন। টয়া শাড়ির আঁচলটার অগ্রভাগ শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ আস্তে আস্তে আঁচলটা নিজের হাতের মুঠোয় পেচিয়ে নিতেই টয়ার বাধ্য হয়েই কাছে আসতে হচ্ছে।
টয়া বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো," দেখুন আমি অনেক কস্ট করে এই শাড়িটা পড়েছি। ছাড়ুন আঁচলটা। নয়তো আমি এই শাড়ি সামলাতে পারবো না।"
ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা হেচকা টান দিতেই টয়া একদম ইয়াদের কাছে চলে এলো। ইয়াদ হাতে পেঁচিয়ে রাখা আঁচলটা খুলে সেটা দিয়ে টয়াকে জরিয়ে দিয়ে বললো," তোমার শাড়ি আর তোমাকে সামলানোর জন্য আমি তো আছি।"
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসতেই টয়া হকচকিয়ে গেল।
ইয়াদ টয়ার শাড়ির কুচি গুলোর ভাজটা ঠিক করে দিচ্ছে। টয়া সরে যেতে নিলেই ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে দাড় করিয়ে রাখাল। টয়ার অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে। এইদিকে ইয়াদ মনোযোগ দিয়ে টয়ার শাড়ির কুচিগুলো ভাজ করছে।
সাত বছর পর আবার টয়া সেই অপলক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের কোণে যেনো পুরনো সেই অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠেছে। ইয়াদ কুচি ভাজ শেষে টয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল," এইভাবে বুঝি কেউ শাড়ি পড়ে?"
ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদ উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো," ভাবছি শাড়ি কীভাবে পড়ায় সেটা শিখে রাখবো। কি বলো?"
টয়া বিরক্ত সে অন্য দিকে তাকাতে তাকাতে বলল," অনেক ভালো হবে। যখন বউ হবে বউকে পড়াবেন।"
টয়ার মনে যা আসে সে সেটাই বলে ফেলে কিন্তু সে নিজেই যে এখন ইয়াদের বউ, এ কথা কিছুক্ষনের জন্যে সেটা তার মাথায়ই ছিলো না। ইয়াদ ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে পিছাতে গিয়ে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ টয়ার এক পাশের রেলিং এ হাত রেখে বলল," তা বউ যখন নিজেই চাইছে আমি যেনো তাকে শাড়ি পরিয়ে দি তাহলে তো আর দেরি করা যাচ্ছে না। তুমি একদম আমার মনের ইচ্ছাটা বলে দিয়েছো।"
টয়া কিছুক্ষন হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে রইলো ইয়াদের দিকে। তারপর হটাৎ টয়ার মনে পড়লো সে তার নিজেই এখন ইয়াদের বউ। টয়ার মুখ হা হয়ে গেলো।
ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো," এসো শাড়িটা পড়িয়ে দেই।" বলেই ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকালো।
চোখে চোখ পড়তেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। টয়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো তারপর নিচু স্বরে তেজী গলায় বলল,"এগুলো বলতে আপনার লজ্জা করছে না।"
ইয়াদ সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে বললো," না, একদমই না। বউ আমার সেখানে লজ্জার কি আছে?আর নেক্সট টাইম থেকে আমি পড়িয়ে দিবো বুঝেছো?"
ইয়াদের কথায় টয়ার লজ্জায় এখান থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছে । এতো সাবলীলভাবে এসব বলছে যেনো সবটাই পান্তা ভাত আর পিয়াজ।
টয়া লজ্জায় কথাও বলতে পারছেনা তাও মাথা নিচু রেখে শাসিয়ে বললো," কোনদিন না। আমি আর জীবনে কোনোদিন শাড়ি পড়বো না। "
"সে তোমার আর পড়তে হবে না। আমিই পড়িয়ে দিবো।", ইয়াদ ইচ্ছে করেই টয়াকে রাগিয়ে দিচ্ছে।
টয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে যদি সত্যিই ইয়াদ এমন কিছু করে ফেলে। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা দরকার, দিন দিন অধঃপতন হচ্ছে এই ছেলের। এই বিয়েটা করে কি যে বিপদে পড়েছে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা সে। টয়া মনে মনে বির বির করছে আর রাগে ফুলছে।
ইয়াদ উপহাস করে বললো," যা বলার বলে ফেলো। মনে মনে নিজেকে বলে তো কোনো লাভ নেই।"
টয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইল। টয়ার অবস্থা দেখে ইয়াদ হেসে ফেললো।
" আমি নীচে যাবো। সরুন তো। অসহ্য আপনি।", বিরক্তি নিয়ে বললো টয়া।
" আচ্ছা ঠিক আছে।", বলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরলো।
" এতো দেখি মহা জ্বালা, আবার হাত ধরেছেন কেনো?", বলে হাত ছড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে টয়া।
" একসাথে যাবো তাই।",বলে টয়াকে নিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো।
" ছাড়ুন, ছাড়ুন।", বলতে থাকলো টয়া। ইয়াদ সেটা কানে নিচ্ছে না। দরজার সামনে এসে টয়া আরো অস্থির হয়ে গেছে হাত ছাড়ানোর জন্য। ইয়াদ বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিলো বেশি জোর করতে গেলে টয়া ব্যাথা পেতো। টয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পা তুলে খাটের উপর বসে পড়ল। সম্ভব হলে সে নিজেকে এই রুমেই বন্দি করে রাখতো কখনো বের হতো না আর।
বাবা মা আজ চলে গেছে টয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল সকাল সকাল কলিং বেলের আওয়াজে টয়ার ঘুম ভাঙলো। এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গার কারণে তার ভীষণ রাগ লাগছে। এতো সকালে নিশ্চই ইয়াদ বিরক্ত করতে এসে গেছে। আজ ভার্সিটি নেই তাই কোথায় ভেবেছে একটু শান্তিতে ঘুমাবে কিন্তু এই লোকটা সবকিছুতে পানি ঢেলে দিবে। টয়া উঠে যেতে চাইছে না তাই অন্য দিকে ফিরে শুয়ে রইলো। কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজায় টয়া মেজাজ হারিয়ে উঠে বসলো।
অনেক জ্বালিয়েছে এই লোকটা আজ একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। আজ এমন ভয় দেখাবো জীবনে তাকে আর বিরক্ত করার সাহস পাবে না এই ইয়াদ। টয়া রান্না ঘর থেকে ছুরি হাতে নিয়ে দরজা খুলেই বড় ছুরিটা ধরে দাড়ায়।
তবে মজার ব্যাপার হলো টয়ার সামনে রিতু দাড়িয়ে। রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। টয়া ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো," এই বেয়াদব তোর কাছে ফ্ল্যাটের চাবি নেই? সকাল সকাল আমার ঘুম নষ্ট করলি কেন? ইচ্ছে করছে তোকে ... অসভ্য।"
হটাৎ ছুরি হাতে টয়াকে দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে রিতু বললো," কিরে কি হয়েছে? ছুরি বটি নিয়ে কি করছিস এইসব।"
"তা না করে কি তোকে তো মিষ্টি খাইয়ে, ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগতম জানতাম নাকি? নিজেই একটা বাঁদর আবার গেছে বান্দরবন ট্রিপে। এসেছিস কেনো আর ঐখানেই সংসার পেতে ফেলতি।", বলে গম গম করে হেটে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো টয়া।
" বাপরে! তোর মাথা দেখি ভীষণ গরম।", বলে ভিতরে ঢুকলো রিতু তারপর বললো," তুই কি আজকাল বিছানার পাশে ছুরি নিয়ে ঘুমাতে যাস?"
রিতুর প্রশ্নে টয়া কটমট করে তাকাতেই রিতু বললো," আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি আর ডিস্টার্ব করছি না।"
সকাল দশটা টয়া এখনও ঘুমাচ্ছে টয়া।এদিকে রিতু গোসল সেরে বেরিয়ে এসে পাউরুটি টোস্ট করছিলো। এমন সময় আবার কলিং বেল বাজলো। কলিংবেেল বাজার সাথে সাথে রিতু আতকে উঠলো। মানুষ হুট করে এভাবে কলিংবেল বাজায় কেনো? ভাগ্যিস টয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নি। রিতু গিয়ে দরজা খুলে হা করে রইলো রিতুর সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে। ইয়াদকে মেরুন রঙের শার্টটায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
রিতু ভ্রু কুঁচকে বললো," কাকে চাই?"
এই মেয়েটা কে।ইয়াদ বুঝতে পারছেনা।ইয়াদ বুকের কাছে দুই হাত গুজে জিজ্ঞেস করলো," তুমি কে?"
" আরে মশাই আপনি কি চান?", চেঁচিয়ে বললো রিতু।
" টয়া কোথায়?", গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
", আপনি টয়াকে চিনেন কি করে? আপনি কে বলুন তো?", একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো রিতু।
ইয়াদের এতো প্রশ্ন শুনতে বিরক্ত লাগছে তাই সে রিতুকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে এলো। এভাবে ভিতরে চলে আসায় রিতু চমকে উঠলো।
" আরে আরে! যাচ্ছেন কোথায়?"রিতু বলতে বলতে ইয়াদের পিছু পিছু গেলো।
ইয়াদ টয়াকে সোফায় শুইয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রিতুর দিকে তাকালো তারপর রিতুকে বললো," টয়া সোফায় ঘুমাচ্ছে কেনো?"
" ঘুমালে আপনার সমস্যা কি? আপনি ভিতরে চলে এলেন কেনো? এইভাবে কেউ কারোর বাসায় ঢুকে?", রিতু রাগ দেখিয়ে বললো।
ইয়াদ রিতুর কথায় কান না দিয়ে টয়ার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। টয়া হাত একপাশে রেখে পা আরেকপাশে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার অবস্থা দেখে একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। এটা দেখে রিতু আরো হতবাক হয়ে গেলো। বলা নেই কওয়া নেই কই থেকে একটা লোক ঘরে ঢুকে টয়াকে কোলে তুলে নিলো।
" আপনি নিশ্চই নারী পাচারকারি তাই না। দাড়ান আমি এক্ষুনি পুলিশ এ কল দিচ্ছি।", বলেই রিতু চিৎকার করে লাফালাফি করতে লাগলো।
ইয়াদ রিতুর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই রিতু ভয় পেয়ে গেল। এদিকে রিতুর লাফালাফিতে টয়ার ঘুম অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে।
ইয়াদ টয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিতেই টয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে ইয়াদকে দেখতেই টয়া লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই ইয়াদের চেহারা দেখতে হবে এটা কল্পনাও করেনি।
" আ~আপনি এ~ খানে?", কাপা কাপা গলায় বলল টয়া।
" হুম, তুমি সোফায় ঘুমাচ্ছিলে কেনো?", ইয়াদ নরম গলায় বলল।
" আপনি এখানে কেনো?" টয়ার আবার এক প্রশ্ন।
রিতু একপাশে দাড়িয়ে হা করে ওদের দেখছে।
ইয়াদ টয়ার সামনে বসে বললো," আমি ক্লিনিকে যাচ্ছি।"
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো," তো! আমি কি করবো?"
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো," Bye।"
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠেই তার সাথে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু আর টয়া দুজনেই ভুত দেখার মত চমকে আছে।
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো," Bye।"
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠেই তার সাথে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু আর টয়া দুজনেই ভুত দেখার মত চমকে আছে।
টয়া অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেথাকতে ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে উঠে দাড়ালো। চলে যেতেই রিতুর হা হওয়া চেহারা দেখে দাড়িয়ে পড়ল।
" আমি কে তা বুঝতে পেরেছো?", প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
রিতু ঘন ঘন হা সূচক মাথা নাড়ল। কিন্তু সে আসলে কিছুই বুঝতে পারে নি।
" গুড, এর পর থেকে আমার বউয়ের দিকে খেয়াল রাখবে।", ভয় দেখানোর জন্য হুমকস্বরূপ বললো ইয়াদ।
রিতু আবার ঘন ঘন মাথা নাড়তে লাগলো। ইয়াদ একবার পিছনে ঘুরে টয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর পকেটে এক হাত ভরে বের হয়ে গেল। টয়া যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
রিতু এসে টয়ার পাশে বসে বললো," কাহিনী কি কিছুই বুঝলাম না। কি সাংঘাতিক ছেলে। আর তোকে বউ বলে গেলে কেনো?"
টয়া চেঁচিয়ে বললো," আজকের দিনটাই খারাপ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম?" বলতেই টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু মলিন একটা হাসি দিলো।
" তুই... তোর চেহারা দেখছি আজকে। তাই এইসব হচ্ছে।", চোখ রাঙিয়ে বলল টয়া।
" একদম ফালতু বকবি না।", রিতুর কথায় টয়া গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। তারপর উঠে এসে নাস্তা করতে বলে চলে গেলো।
আর এই যন্ত্রণা ভালো লাগছে না। কোথায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ কাছাকাছি আসলেই যেনো টয়া তার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। ইয়াদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
হটাৎ এনজিওর কথা মাথায় এলো তার। আজ কি কোথাও ক্যাম্পিং নেই? থাকার তো কথা, সবসময় তারা তো কাজেই থাকে।টয়া সেখানে কল দিলো। আজ দুপুরের পর একটা বাস চড় এলাকার দিকে যাবে এবং ক্যাম্প শেষে কাল রাতে ফেরত আসবে। এটাই সুযোগ ইয়াদ ক্লিনিকে আছে এখন কেটে পড়লে আটকাতে পারবে না। সাড়ে দশটা বাজে টয়া গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলো। এক রাত এক দিনের জন্য জামা কাপড় তেমন কিছু নিতে হবে না তার শুধূ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একটা ছোট ব্যাগ এ ভরে নিলো টয়া।
রিতু টয়ার ঘরে এসে হা করে থেকে বলল,"কোথায় যাচ্ছিস তুই?"
" এনজিওর একটা কাজে যাচ্ছি।", বলে ফোনের চার্জারটা ব্যাগের সাইড পকেটে রাখলো টয়া।
" তুই কি ওই ছেলের ভয়ে পালাচ্ছিস?", রিতুর প্রশ্নে টয়া আমতা আমতা করে বলল," ভয়! ভয়ের কি আছে। আর ওই ছেলেকে তুই ভুলেও বলবি না আমি কোথায় গেছি। না হলে তোকে অমি বৃন্দাবন পাঠিয়ে ছাড়বো বলে দিয়ে", টয়ার কথা শুনে রিতু হাসতে লাগলো তারপর বললো," আহারে !"
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো," আহারে বলার কি আছে?"
রিতু মাথা না সূচক নাড়িয়ে বললো," গান গাইছিলাম। আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে, যে ছিলো মনের............" গাইতে গাইতে হাত পা ছুড়ে নেচে নেচে কিচেনে চলে গেলো।
টয়া ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। দুপুর তিনটায় বাস ছাড়লো বাস গিয়ে চড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। টয়ার এবার শান্তি লাগছে, বুকের ধুকপুকানি একটু কম হয়েছে। এবারে স্টেশনের পাশে একটা টিনের ঘর থাকার জন্য ব্যাবস্থা করা গেছে। সাথে মাধবী অর তনম্ময় আছে দেখে ভালোই লাগছে। রাতে সবাই আড্ডা দিলো তারপর ঠিক করা হলো কি কি করবে কাল সকালে।
এবার এই এলাকায় খাদ্য বিতরণ করবে তারা কারণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বন্যা এসবে মানুষ বিপাকে পরে যায়।
এদিকে রিতু একা বাসায় রয়েছে রাত এগারোটায় হটাৎ কলিং বেল বাজালো কেউ। রিতু লাফিয়ে ওঠে দরজার দিকে গেলো। ভয়ে সে থর থর করে কাপছে তার মনে হচ্ছে ডাকাত এসেছে। রিতু আগে ফাঁক দিয়ে দেখে নিলো। ইয়াদকে দেখে রিতুর মরি মরি অবস্থা ওরে আল্লাহ এই লোকটা আবার আসছে কেন?
ইয়াদ অনেক্ষন বেল বাজালো কিন্তু রিতু ভয়ে দরজা খুললো না।
ইয়াদ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তারপর ভাবলো সে এসেছে বুঝেই দরজা খুলছে না টয়া। শেষমেশ ইয়াদ নিজের রূমে চলে গেলো। এদিকে রিতু তো দরজা খুলবে না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরাম করে বসে রইল। আজ বেল বাজাতে বাজাতে যদি বেল খুলে পড়ে যায় তাও সে দরজা খুলবে না। তার নাম ও রিতু রজনী।
আজ টয়ার ফিরবার দিন একটু পর সবাই বাসে উঠবে তার প্রস্তুতি চলছে। টয়া চুপ করে এক কোনে বসে আছে হিটলারটা কি করছে কে জানে ভালোই হয়েছে চলে এসেছে সে। এখানে লোকটা তাকে জ্বালাতে পারবে না। সবাই বাসে উঠে গেছে টয়া সেটা খেয়াল করেনি একটু পর মাধবী এসে ওকে ডাকলো।
" কি হলো যাবি না?", মাধবীকে দেখে টয়া উঠে দাড়ালো।
" সবাই উঠে গেছে?", ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল টয়া।
" হ্যা তোকেই খুজতে এসেছি। তাড়াতাড়ি চল বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।"
টয়া আকাশের দিকে একবার তাকালো। মেঘলা হয়ে গেছে আকাশটা। টয়া আর মাধবী বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। হটাৎ টয়া থেমে যায়। মাধবী টয়াকে যাবার জন্য তাড়া দিয়ে বললো," আবার দাড়িয়ে পড়লি যে তাড়াতাড়ি চল।"
টয়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি সামনে সে রেখে একটা ঢোক গিললো। এটা কি সত্যি নাকি সে ভুল দেখছে?কারণ সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। ইয়াদ নিজের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে টয়াকে দেখছে। ইয়াদের চোখে মুখে গম্ভিরতার ছাপ দেখেই টয়া বুঝতে পেরেছে তার কপালে আজ শনি রবি সোম মঙ্গল সব ঘুরছে।
টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে কোনোভাবে বাসে উঠে যাবার চেস্টা করলো কিন্তু ইয়াদ গম্ভীর মুখে টয়ার হাত ধরে মাধবীর উদ্দেশ্যে বললো," ও আমার সাথে যাবে।"
এ কথা শুনেই টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওনার সাথে গেলে কি করে বসবে তার কোনো ঠিক নেই। মাধবী কিছুটা অবাক হল কিন্তু আর কথা না বাড়িয়ে বাসে উঠে পড়ল। টয়া বির বির করে বললো,রিতু বেয়াদপটা সব ফাঁস করেছে ওকে আমি হাতের কাছে পেলেই হয়। টয়া ক্রমাগত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে টেনে কাছে নিয়ে আসে।
টয়া ভয়ে ইয়াদের চোখের দিকেও তাকাচ্ছে না। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে স্থির। ইয়াদ হাত দিয়ে টয়ার চেহারা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো," ফোন ধরছিলে না কেনো? ফোনটা আবার বন্ধ করে রেখোছো তাই না? খুব সাহস বেড়ে গেছে তোমার!"
টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো," এদিকে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে আমি কি করবো। আমাকে শাসাচ্ছেন কেনো?"
," এসব যে করে বেড়াচ্ছো তোমার বাবা মা জানে?",ইয়াদের কোথায় টয়া চমকে উঠলো।টয়ার বাবা মা কিছুই জানে না তাদের জানালে তারা কখনোই তাকে শহরে একা থাকতে দিতো না। এবং এই এনজিওর কথাও তারা জানে না। এই ছেলে যদি গিয়ে সব বলে দেয়। তাহলে যে লঙক্কা কান্ড লেগে যাবে। টয়া চোখ পিট পিট করে ইয়াদের দিকে তাকালো।
ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো," এখন চুপ চাপ গিয়ে গাড়ীতে বসে। তোমাকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।"
টয়া অগ্নিশর্মা হয়ে তাকিয়ে রইল, সে কি নিজের ইচ্ছে মতন একটু ঘুরে বেড়াতে পারবে না?
" কি হলো?", বলে তাড়া দিয়ে হাত ছেড়ে দিল ইয়াদ। টয়া মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে টয়া আর ইয়াদ পাশাপাশি। গাড়ীতে উঠে বসতেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। কি সুন্দর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গাড়ির জানালা দিয়ে এসে টয়ার গাল বেয়ে পড়ছে। টয়ার বেশ ভালো লাগছিলো কিন্তু কিছুক্ষন পরেই ইয়াদ জানালার গ্লাস বন্ধ করে দেয়। টয়ার আনন্দ কি তার সহ্য হয় না?। টয়ার অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে ইয়াদকে কিন্তু সে চুপ হয়ে বসে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। বৃষ্টি দেখতে দেখতে টয়ার চোখ গুলো ঘুমে এলিয়ে এলো। টয়া একপাশে মাথা ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল সারা রাত মশার যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেনি সে।
ইয়াদ টয়া ঘুমিয়ে পড়ায় টয়ার কাছে এসে বসে টয়ার মাথাটা আস্তে করে নিজের কাঁধে সাথে রাখলো। টয়ার গভীর ঘুমে ইয়াদের হাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদ গাড়িতে থাকা একটা পাতলা চাদর টয়ার গায়ে দিয়ে দিলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে নিজের মাথাটাও গাড়ীতে হেলিয়ে দিলো। টয়াকে এই জায়গায় খুঁজে বের করতে গিয়ে অনেক ঘুরতে হয়েছে তাকে, ক্লান্ত লাগছে।
হটাৎ গাড়ির ব্রেক কষতেই ইয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো। টয়া একটু নড়ে চড়ে ইয়াদ কাধ থেকে ঘুম ঘুম চোখে মাথা তুলে চারপাশ দেখে আবার গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে রাখলো। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে গেলো ইয়াদও নেমে এলো।
বৃষ্টির মধ্যের গাড়ী থেকে নামতেই ইয়াদ ভিজে গেলো। ড্রাইভার ছাতাটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো," স্যার, সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আশেপাশে প্রচুর গাছ আছে এই ঝড় বাতাসে যেকোনো সময় গাছ পড়তে পারে। আর এমনিতেও সামনে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।"
" তাহলে?", চিন্তিত গলায় বলল ইয়াদ।
" স্যার আপনি এখানে দাড়ান আমি দেখছি আশেপাশে কোনো থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা।", বলে ছাতাটা ইয়াদকে দিয়ে সে এগিয়ে গেলো।
ইয়াদ ছাতা হাতে গাড়ির সামনে এগিয়ে গিয়ে পড়ে থাকা গাছটা দেখে। গাড়ির কাছে এসে দেখে টয়া গাড়ী থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে। এই মেয়ের কোথা থেকে যে এমন ইচ্ছা জাগ্রত হয় ইয়াদ ভেবে পায় না। ভালো কোনো কাজ এই মেয়ে করবে না। সব আজগুবি কাজ করে বেড়ায়।
ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে টয়াকে টেনে ছাতার নিচে নিয়ে এলো। টয়া নাছর বান্দা সে হাত সরিয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজছে।
আচ্ছা আপনি কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন?", টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো," আমার কি তোমার মতো মাথার জয়েন্ট ছেড়া নাকি ?"
ইয়াদের কথায় টয়া রেগে গিয়ে ইয়াদের হাতে থাকা ছাতা নিয়ে সরিয়ে ফেললো তারপর বৃষ্টির পানি ইয়াদের মুখে ছিটিয়ে দিতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। টয়া নেচে নেচে বললো," হুহ, আপনার জয়েন্ট এ সমস্যা বুঝলেন?"
ইয়াদ হাত দিয়ে মুখের পানি সরিয়ে বললো," you have to pay for this. I'm telling you."টয়া ইয়াদের কথা কানে নিলো না।
বলেছিলাম না এরপর থেকে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। দেখি এদিকে এসো।" বলেই হাসলো ইয়াদ।
টয়া শাড়ি হাতে মূর্তির মতন দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা তার একদম উচিৎ হয় নি। এ আবার কোন বিপদে পড়লো সে। ড্রাইভার অনেক খুজে তারপর রাত কাটানোর জন্য এই বাড়ির মালিককে পেয়েছে। আজ রাত তাদের এই ঘরেই কাটাতে হবে। ভরে তারা রওনা দিবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাড়িটা একজন বয়স্ক মহিলার।জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় টয়াকে তিনি একটা সিল্কের শাড়ি পরতে দিয়েছেন। শাড়ি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ইয়াদকে বের হয়ে যেতে বলবে এই সময়ে পড়েছে আরেক বিপদে। হাতে শাড়ি দেখেই ইয়াদ বললো সে শাড়ি পরিয়ে দিবে। শুনেই যেনো টয়ার পিলে চমকে উঠে।
ইয়াদ পকেটে হাত ভরে টয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। টয়া পিছিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসলো। টয়ার ভিতরে ধুক পুক শুরু হয়ে গেছে। শরীরটা যেনো বরফ হয়ে আছে।
ইয়াদ টয়ার গালের পাশের চুল গুলো সরিয়ে বললো," অনেক জ্বালিয়েছো আমায় এবার তো তোমায় ভুগতে হবে। ইয়াদ আরফিন তো এতো সহজে তোমায় ছাড়বে না।"
ইয়াদের কথায় টয়ার গলা শুকিয়ে এলো। সত্যিই কি এমন কিছু করবে ইয়াদ ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।
টয়া কাপা কাপা গলায় বলল," আমি জামা চেঞ্জ করবো না। দরকার নেই আমার শাড়ির। এভাবেই থাকবো"
ইয়াদ টয়ার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো," তোমার দরকার নেই কিন্তু আমার তো আছে।"
টয়া চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললো," বললাম তো দরকার নেই।" ইয়াদ টয়ার মুখের আঙ্গুল সামনে ধরে বললো," আস্তে!"
ইয়াদ কাছে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। এইভাবে টয়াকে নাস্তানাবুদ করতে ইয়াদের বেশ ভালো লাগছে। সে টয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো," পাঁচ মিনিট দিলাম শাড়িটা পরে ফেলো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর আমি এই রূমে আসবো ততক্ষনে পড়তে না পারলে, আমি তো আছি।"বলেই ইয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যেভাবে এগিয়ে এসেছিলো টয়ার তো মনে হয়েছিলো সত্যি সত্যি বুঝি এমন কিছু করবে সে। টয়া হাপাতে লাগলো। অসহ্য লাগছে এই ঘরে আবার ছিটকিনিটা এতো উপরে যে টয়ার নাগালের বাইরে। টয়া দরজার সামনে আপাদত একটা চেয়ার রেখে বন্ধ করে রাখলো। জলদি এই শাড়ি পড়ে বের হতে হবে কখন আবার হুট করে চলে আসবে কে জানে? লজ্জা তো একেবারেই নেই ছেলেটার।
টয়া ঘরের এক চিপায় গিয়ে জামা বদলে শাড়িটা কোনোভাবে পেঁচিয়ে পড়ে নিলো। সিল্কের শাড়ি পড়া আরেক জ্বালা খালি মনে হয় খুলে যাবে। বুড়িটা নিজের ব্লাউজও দিয়েছে সেটা এতো ঢিলে আর ব্লাউজের গলা তো মাশাল্লাহ। এতো বড় আর পিঠের দিকটা অনেকখানি খোলা তার উপর পিঠের উপরে একটা ফিতে।
সব ঠিক করে নিয়েছে মোটামুটি কিন্তু এই ফিতা কীভাবে লাগাবে সে। ফিতা না লাগলে কখন আবার কাধ থেকে পরে যায়। অসহ্য সব অসহ্য। কোন দুঃখে যে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিল কে জানে। শয়তানে কামড়ে ছিলো আমাকে। বির বির করলো টয়া।
টয়া ফিতাটা লাগানোর চেষ্টা করছে এমন সময় ইয়াদ দরজা খুলতেই ধপাস করে চেয়ার পরে যাওয়ার আওয়াজে ভয় পেয়ে টয়া লাফিয়ে উঠলো। ইয়াদ ভ্রু কুচকে চেয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো," তোমার কি উল্টা পাল্টা কাজ না করলে ভাল্লাগে না?"
ইয়াদকে দেখে টয়া চটজলদি শাড়ির আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। ইয়াদকে দেখেই আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে।
ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো," বলেছিলাম আমি পরিয়ে দেই শুনলে না তো। এইটা কীভাবে শাড়ি পড়েছ হাটতে গেলেই উষ্ঠা খেয়ে পরে হাত পা ভাঙবে।" বলে কাছে আসতেই টয়া শাসিয়ে বললো," থামুন, একদম এদিকে আসবেন না। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।"
" চিৎকার চেঁচামেচি করা তো তোমার একটা প্রতিভা। সে আমি কাছে আসলেও চেঁচামেচি করবে না আসলেও করবে।", বলতে বলতে এগিয়ে এলো।
টয়া পিছাতে লাগলো পিছাতে পিছাতে একসময়ে আয়নার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো। টয়ার পিছে টিনের সাথে ঝোলানো একটা মাঝারি সাইজের আয়না। আয়নার সাথে ধাক্কা লাগতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো এমন সময় টয়ার পিঠের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরে যায়। টয়া সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পিছনে আটিসাটি মেরে দাড়িয়ে রইলো।
ইয়াদের চোখ পিছনের আয়নার দিকে যেতেই ইয়াদ ঘটনাটা বুঝতে পারলো। টয়া ভয়ার্ত গলায় বললো," আপনি এই রুম থেকে যান। প্লীজ"
ইয়াদ টয়ার কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে আয়নার কাছ থেকে সরিয়ে আনতেই টয়া হকচকিয়ে গেল তারপর নিচু স্বরে বললো," আপনি প্লিজ যান।"
ইয়াদ টয়ার পিঠের দিকে হাত বাড়াতেই টয়া ইয়াদের হাত ধরে মাথা নিচু করে রাখে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে। টয়া কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে বললো," আচ্ছা চোখ বন্ধ করে রাখলাম এবার হেল্প করি?"
টয়া ঠোঁট কামড়ে ইয়াদের দিকে তাকালো সত্যি সত্যি লোকটা চোখ বন্ধ করে আছে। টয়া কি করবে বুঝতে পারছে না। ফিতা না লাগাতে পারলে অসস্তিতে থাকতে হবে। উপায় না পেয়ে টয়া ইয়াদকে বিশ্বাস করলো।
ইয়াদ বন্ধ রেখে বলল," কি হলো হেল্প লাগবে না?"
" দেখুন আপনি একদম চোখ খুলবেন না।", শাসিয়ে বললো টয়া।
" তোমার হেল্প লাগবে কি লাগবে না সেটা বলো?", ইয়াদ তাড়া দিয়ে বললো।
"আচ্ছা দাড়ান",বলে টয়া ইয়াদের হাতে ফিতা দুটো দিলো।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফিতা বাধার সময় টয়ার পিঠে একটু হাতের ছোঁয়া লাগতেই টয়া কেপে উঠলো। সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদের ঠোঁটের কোণে হাসি নিলো বললো," কী হলো কাপাকাপি করছো কেনো?"
টয়ার ইয়াদের হাসি দেখে মনে মনে বললো আবার হাসছে। ইচ্ছে করে এসব করছে আমি বুঝিনা ভেবেছে। ইয়াদ ফিতা বেধে দিতেই টয়া ইয়াদ থেকে দশ হাত দূরে সরে গেল। ইয়াদ কিছু বলার আগেই টয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিবে বুড়ি মহিলাটা ঘরে ঢুকে পড়লো। টয়া আর রুম থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো না। মহিলাটা টয়াকে দেখে বললো," আয় হায় কইরচ্ছে কি মাইয়াডায়। আরে মাইয়্যা শাড়ি কি এমনে ফিন্দ্দে?"
ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো," বাবাজি তুমি আখণ রুম থেইকা যাও তোমার বউরে শাড়িখান ফিন্দাই দি।"ইয়াদ হা সূচক মাথা নেড়ে অপ্রস্তুত হয়ে চলে গেলো।
বুড়িকে দেখে টয়ার এবার মনে হচ্ছে ফিতা চাইলে এনার কাছে গিয়ে বেধে নেওয়া যেতো। কি যে বোকামি করে বসলো সে। মাঝখান দিয়ে লোকটার সুবিধা হয়ে গেছে।
বুড়ি টয়ার হাত ধরে ঘরের মাঝে এনে দার করিয়ে টয়ার শাড়ির কুচি করতে করতে বললেন," এইডা তোমার দাদার আমারে দেওইন্না প্রথম শাড়ি, শাড়িখানা আইন্না আমারে নিজের হাতে ফিন্দ্দাইয়া দিসিলো। বড়ো রসিক আসিল সে।"
বুড়ির কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। বুড়ি কুচি করা শেষে সেগুলো টয়ার হাতে ধরে রাখতে দিয়ে আঁচলের মাপ নিয়ে বললো," এমনে শাড়ি ফিন্দবা কোমড়ের দিক খোলা রাইখ্যা। তারপর দেখব বেডা মানুষ কেমনে লাড্ডু হয়।", বুড়ির কথা কানে যাওয়ার সাথে সাথে টয়ার গলা শুকিয়ে গেলো।
এই রকম ভয়ানক কথা তাকে এ জীবনে শুনতে হবে সে কল্পনাও করে নি। বুড়ি যেতে যেতে বলল," কিছু লাগলে আমারে কইবা কেমন ?" টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল।
বুড়ি চলে যাবার কিছুক্ষন পরই ঘরে ইয়াদ ঢুকলো। ইয়াদকে দেখে টয়া অবাক হয়ে বললো "আপনি আবার এ ঘরে এসেছেন কেন?" টয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে যাবে এমন সময় ইয়াদের চোখ টয়ার দিকে পড়লো। ইয়াদ টয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। টয়া একটু ঘাবড়ে গিয়ে নিজের কোমরের কাপড়টা ঠিক আছে কিনা দেখে নিলো। না ঠিক আছে বুড়ি চলে যাবার সাথে সাথে সে ঠিক করে ফেলেছিলো।
টয়া চেঁচিয়ে বলল," কি বললাম শুনতে পান নি? এ ঘরে এসেছে কেনো আমি এখন ঘুমাবো।"খাওয়া দাওয়া আগেই সেরে নিয়েছিলো তারা বৃষ্টির টিপ টিপ ফোঁটা টিনের চাল বেয়ে পড়ছে সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ। টয়ার ঘুমে চোখ জরিয়ে এসেছে।
এখন আবার ইয়াদ কেনো তাকে জ্বালাতে চলে এলো।
ইয়াদ খাটে বসে বললো," ঘুম তো আমারও পেয়েছে।"
" তো গিয়ে ঘুমান এখানে এসেছেন কেনো?", রাগে কটমট করে বললো টয়া।
" তোমার মনে হচ্ছে না যে তুমি কিছু একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি তোমার হাজব্যান্ড তাই আমিও আজ এখানেই ঘুমাবো।" বলে বিছানার মাঝে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল।
" এখানে ঘুমাবেন মানে!!!!! উঠুন এক্ষুনি, অসম্ভব আমি আপনার সাথে এক ঘরে থাকবো না।" বলে ইয়াদের পাশে এসে হাত ধরে টেনে তাকে উঠানোর চেষ্টা করছে।
" আমি বিয়ের আগে শর্ত দিয়েছিলাম যে আমি আপনার সাথে থাকবো না আর এক ঘরে থাকা তো অসম্ভব ব্যাপার।", ইয়াদ টয়ার কোনো কথায় কান না দিয়ে শুয়ে আছে। টয়া তাকে টেনেও তুলতে পারছেনা।
টয়া হাল ছেড়ে দিয়ে বললো," ঠিক আছে আপনি উঠবেন না তাই তো। তাহলে ঘুমান এ রুমে আমি গিয়ে দাদীর কাছে ঘুমাচ্ছি।"
টয়া চলে যেতে পা বাড়াবে এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় নিজের পাশে শুইয়ে দিতেই টয়া ব্যালেন্স হারিয়ে ইয়াদের উপর পরে যায়।
টয়া রাগে ফেটে যাচ্ছে। সে রেগে বলল," আপনার সমস্যা কি? আমি আপনার সাথে থাকবো না বলেছি না।"
ইয়াদ টয়ার হাত বিছানার সাথে শক্ত করে ধরে বললো," তুমি থাকবেনা তোমার ঘাড় ও থাকবে। অনেক জ্বালিয়েছি আজ আমায়। এতো সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো ভেবেছো? চুপ চাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো নইলে ।" ইয়াদ কথা শেষ করবে তার আগেই টয়া চেঁচিয়ে বলল," নইলে কি করবেন? আপনি..... আপনি আমাকে মারবেন? আপনি এটা করতে পারবেন? এই ছিলো আপনার মনে।"
টয়ার বক বক শুনে ইয়াদের মেজাজ বিগড়ে গেলো ইয়াদ টয়ার ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিলো তারপর বললো," আমার মনে কি আছে দেখতে চাও?" ইয়াদের স্পর্শে টয়ার শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেল। টয়া হা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। আত্মাটা মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে তার। টয়া চোখ মুখ বন্ধ করে আছে অনেক্ষন হলো কিন্তু কিছু হলো না। টয়া আস্তে করে চোখ খুলে দেখলো ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া পিট পিট করে কয়েকবার তাকালো।
ইয়াদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলল," কিছু হয়নি? তাই না। এইটা তো শুধূ ট্রেইলার ছিলো যদি পুরো মুভিটা দেখতে না চাও চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো।"
ইয়াদের কাজে টয়া প্রচুর ঘাবড়ে গেছে। বুকের ভিতরটা কেমন যে করছে তা বলে বোঝানো যাবে না। ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে মাথার নীচে হাত রেখে টয়ার কাছাকাছি শুয়ে রইলো। টয়া কয়েকবার ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলো। কিন্তু ইয়াদ ঠিক কাত হয়ে শুয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
" আপনি শার্ট খুলছেন কেনো?",হটাৎ টয়ার চিৎকার কানে আসতেই ইয়াদ বিছানার দিকে তাকালো।
টয়ার চোখ মুখের অবস্থা ভয়াবহ। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো," তুমি ঘুমাও নি?"
" ভাগ্যিস ঘুমাই নি!শার্ট খুলছেন কেনো? ছি!আপনি এতটা..।"বলেই একবার থামলো তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বললো," আপনাকে আমি এমনটা ভাবিনি..." বাকিটা শেষ করার আগেই জোরে ইয়াদ ধমক দিয়ে বলল," shut up।"
টয়া ভয়ে কেপে উঠতেই ইয়াদ নিজের মাথা ঠাণ্ডা করে বললো,"একদম আজেবাজে কথা বলবে না। সবসময় মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।"
টয়া ইয়াদের ধমকে চুপ করে মাথা নিচু করে বির বির করতে লাগলো।
আমাকে বলছে যে আমি উল্টা পাল্টা চিন্তা করি নিজে যে উল্টা পাল্টা কাজ করে বেড়ায় তার বেলায়। এখন তো নিজে সাধু।
ইয়াদ শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারে না তার অসস্তি লাগে। কিন্তু আজ টয়া তার পাশে আছে বলে সে শার্ট গায়ে রেখেই ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তাতে লাভ হলো না। সাড়া গায়ে লাল লাল হয়ে গেছে।
টয়া ঘুমিয়ে গেছে ভেবেই শার্টটা খুলতে গিয়েছিলো সে। টয়া জেগে থাকলে যে আজে বাজে চিন্তা করবে সেটা সে জানতো। কিন্তু টয়া যে ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলো সেটা তার জানা ছিলো না।
ইয়াদ বুঝতে পারলো ধমক দেওয়া ঠিক হয়নি। তাই আবার শান্ত গলায় বললো," শার্ট গায়ে ঘুমাতে পারি না তাই খুলছিলাম।",বলে শার্টের বাকি বোতাম গুলো খুলতে শুরু করলো।
টয়া নিজে নিজে বির বির করে বললো," হুঃ সব নাটক বুঝি না ভেবেছে। আমি কি এতটাই বাচ্চা নাকি?"
ইয়াদ শার্ট খোলার পর ইয়াদের পিঠের দিকে তাকিয়ে টয়া হতবাক। তার ধারণা একদম ভুল প্রমাণিত হওয়ায় টয়ার অনুতপ্ত। ইয়াদের সাদা পিঠের লালচে হয়ে গেছে। টয়ার গা শিউরে উঠলো। লোকটা কষ্ট পাচ্ছিলো আর সে কিসব উল্টা পাল্টা ভেবেছে।
ইয়াদের এমন অবস্থা দেখে টয়ার খারাপ লাগছে। ইয়াদ শার্টটা টেবিলের ওপর রেখে ঘরের টর্চ লাইট দুটো বন্ধ করে দিয়ে বিছনায় এসে শুয়ে পড়লো। টয়ার কেমন জানি লাগছে ইয়াদের গায়ে এখন শার্ট নেই। টয়ার হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। টয়া হটাৎ করে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ইয়াদ টয়াকে এভাবে বসে পড়তে দেখে বললো," ভূতে ধরেছে নাকি? এভাবে বসে আছো কেনো।"
ভূত পেত্নীর নাম শুনলেই টয়া ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে। ছোটবেলা থেকেই তার এই সমস্যা। নামটাই সে শুনে সহ্য করতে পারে না।টয়া লাফ দিয়ে ইয়াদের কাছে ঘেঁষে বসে বললো," আপনি এসবের নাম নিচ্ছেন কেনো?"
ইয়াদ উঠে টয়ার কাছ ঘেঁষে বসে বললো," আমি আছি। ভয়ের কিছু নেই। রিলাক্স।"
" আপনি আছেন মানে আপনি কি ওঝা নাকি?", টয়ার কথায় ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো," ইডিয়টের মতোন কথা বলো না। চুপ চাপ শুয়ে পড়ো।"
টয়া ইয়াদ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আটিসাটি হয়ে শুয়ে পড়লো শরীর ক্লান্ত থাকায় সাথে সাথেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় টয়া।
সকালে টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো দেরিতে উঠে সে ইয়াদকে পাশে না দেখে একটু স্বস্তি পেলো। সকাল সকাল ওনার চেহারা না দেখাই ভালো। টয়া উঠে শাড়ি বদলে জামা পরে নিয়ে শাড়িটা ভাজ করে টেবিলে রাখলো এমন সময় ইয়াদ ঘরে ঢুকে বিরক্তি নিয়ে বললো," বাহ্ ভালোই, আমার ঘুম নষ্ট করে নিজে ভালোই ঘুম ঘুমিয়ে নিয়েছো।"
টয়ার মনটা কি ভালো ছিলো সকাল সকাল। লোকটা আজেবাজে কথা বলে মেজাজটাই নষ্ট না করতে হলো। টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বলল," আমি আপনার ঘুম নষ্ট করেছি? তা কীভাবে শুনি?"
ইয়াদ হাতে থাকা নাস্তার প্লেট দুটো টেবিলে রেখে বলল," কিভাবে আর? ঘুমের মাঝে হাত পা ছোড়া ছুরি করে, কীভাবে পারো এগুলো করতে? শেষমেশ তোমায় বাধ্য হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তারপর গিয়ে একটু ঘুমাতে পারলাম।"
ইয়াদের কথায় টয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো টয়ার রেগে বলল," আপনি আমাকে জরিয়ে ধরেছিলেন! এইজন্য বলেছিলাম আপনার সাথে থাকবো না। ঘুমের মধ্যে আপনাকে ঠেলে বিছানা থেকে ফেলে দেওয়া উচিৎ ছিলো তাহলে আপনি বুঝতেন।"
" সেটা করতে হলে যে আমার সাথে থাকতে হবে। তুমি কি থাকতে ইচ্ছুক?", ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো," কক্ষনো না।" তারপর শাড়ি হাতে বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
ইয়াদ টয়াকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে ক্লিনিকে গেলো। টয়া সাড়া রাস্তা মুখ ফুলিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসে রিতুকে দেখে টয়ার আরো মেজাজ বিগড়ে গেলো। টয়া দম দম করে হেঁটে সোফায় বসে পড়লো। রিতু টয়াকে দেখে পালাই পালাই করছে।
" তোর পেটে কথা থাকে না? তাই না? শেষমেশ বলেই দিলি। তোর জন্যে আমাকে কি কি সহ্য করতে হয়েছে তুই জানিস? বেয়াদব। ইচ্ছে করছে তোকে....।", রেগে গজ গজ করে বললো টয়া।
রিতু কটাক্ষ করে বললো," হ তোমার লাইগ্গা আমি মইরা যাই। কি সংগতিক লোক তোর কোনো ধারণা আছে? আমার প্রেজেন্টেশন ছিল ওইদিন বাসা থেকে বের হয়ে দেখি লোকটা সামনে দাড়িয়ে আছে। তারপর যেই চলে যাবো ধরম করে অমর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে.....।"
" হ্যা বুঝছি। তারপর তোকে ভয় দেখাইছে তুই ভয় পাইয়া সব গর গর কইরা বলে ফেলসস।", মলিন চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
" হ ! যে ভয় পাইসিলাম।", বলে রিতু পানি খেলো।
টয়া সোফায় গা হেলিয়ে দিলো। এমন সময়ে টয়ার ফোন বেজে উঠলো ফোনটা সে ইয়াদের গাড়ীতে চার্জ দিয়েছিলো। মা কল করেছে, এখন আবার বকা খেতে হবে। টয়া নিরাশ মুখে কল রিসিভ করল এবং আশানুরূপ একগাদা বকাও খেলো। তবে শেষের কথা শুনে টয়া খুশিতে আত্মহারা।
দাদাভাই আর ভাইয়া এ সাপ্তাহে দেশে ফিরছে। যাক দিন শেষে একটা ভালো খবর তো শুনা গেলো।
টয়া খুব খুশি হয়ে গেলো। তারপর নাচতে নাচতে কিচেনে এলো। টয়াকে এতো খুশি দেখে রিতু একটা ভ্রু তুলে বললো," কাহিনী কি? একটু আগে মুখ কালা ছিলো এখন আবার এতো খুশি?"
টয়া কিচেন অ্যাপ্রণ পড়তে পড়তে বললো," দাদাভাইরা আসবে এ সপ্তাহে। কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার। চল আজকে ফাটিয়ে কিছু রান্না করি।"
" কি করবি? চল! বিরিয়ানি করি।", বলতেই যেনো রিতুর মুখে জল চলে এলো।
" আচ্ছা।", বলে দুজনেই নাচতে লাগলো।
রিতু পিয়াজ কুচি কুচি করে কাটতে কাটতে টয়াকে জিজ্ঞেস করলো," তোর জামাই তোকে অনেক ভালোবাসে তাই না? কীভাবে ছুটে গেলো তোর জন্যে।"
" জামাই? কে জামাই? লোকটাকে যদি আর আমার জামাই দেখেছিস মেরেই ফেলব তোকে।", টয়া শাসিয়ে বললো।
" আরে আমাকে বলেছে বলতে আমি কি করবো?", হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রিতু।
" তুই ডাকবি না শেষ কথা। আসছে জামাই বলতে ঢং। যত্তসব। আমার জামাই হওয়া এতো সহজ না।", মুখ বাকিয়ে বললো টয়া।
" তোদের মধ্যের কাহিনীটাকি কিছুই বুঝি না। আমাকে একটু বলবি?", মুখ কালো করে বললো রিতু।
আমি নিজেও জানি না। আচ্ছা তুই আমাকে বল সাত বছর আগে যে আমাকে বলেছিলো ছেলে ফাঁসানোই আমার কাজ আজ এতো বছর পর হটাৎ তার আমার প্রতি এতো ভালোলাগা কীভাবে সম্ভব?", আনমনে প্রশ্ন করে বসলো টয়া।
" মানে?", অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিতু।
না কিছু না।", একটা ঢোক গিলে বললো টয়া।
" না তুই আমাকে বল।", রিতু ভীষণভাবে জোর করতে লাগলো টয়াকে। টয়া উপায় না পেয়ে সবটা বললো।
সবটা শুনে রিতু বললো,"আচ্ছা তুই তাকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস হটাৎ তোর প্রতি তার এমন আচরনের কারণ কি? আর সেদিনের ভিত্তিহিন কথা গুলোর পর আজ এতো ভালবাসার কি কোনো মানে হয়?"
টয়া একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বললো," আমি জানি না। সে বলেছে তার বাবা মার কথা রাখতে আমাকে সে বিয়ে করেছে।"
" এই ছেলের মনে কি চলছে? আচ্ছা তুই কি ইয়াদকে এখন....?", রিতু শেষ না করতেই টয়া বলে উঠলো " জানি না। আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। অনেক কষ্টে সবটা ভুলতে পেরেছি আবার আমার পক্ষে সম্ভব না।" বলেই টয়া উঠে গিয়ে বাকি কাজগুলো করতে ব্যাস্ত হয়ে গেল। টয়ার কষ্ট দেখে রিতুর ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদকে গিয়ে প্রশ্ন করে।
টয়া রাতের দিকে বারান্দায় বসে ছিল। এখানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে। হটাৎ টয়ার নজর নিচের দিকে গেলো, ইয়াদের গাড়ির মতো লাগছে এতো উপর থেকে তেমন বোঝাও যাচ্ছে না। টয়া চেয়ারের পাশে থাকা চশমাটা পরে ভালো করে দেখার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে ইয়াদের সাথে একটা মেয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো।
এতো রাতে কে আসবে? তাও একটা মেয়ে! এই মেয়ে আবার ইয়াদের সেই পছন্দের মেয়ে নাতো? মেয়েটাকে দেখতে হচ্ছে তো। টয়া তাড়াতাড়ি করে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি মেরে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখতে হবে মেয়েটা ইয়াদের ফ্লাটে যায় কিনা? অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছে কই কেউ আসছে না এইদিকে। নাকি আবার লিফটে একবার উপরে একবার নিচে করছে। একবার হাতেনাতে ধরি তারপর বুঝাবো টয়া কি জিনিস। শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। ঐতো হিটলারটাকেও দেখা যাচ্ছে। কথা বলছে দুজনে। এতো রাতে মেয়েটার সাথে ফ্ল্যাটে ঢুকছে ইয়াদ। টয়ার মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো।
টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি দরজা খুলে গিয়ে হাতে নাতে ধরে ফেলে। রিতুর টয়াকে দেখে বিস্ময়ের শেষ রইলো না। মেয়েটার কি হয়েছে তখন থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে।
রিতু হাত দিয়ে টয়াকে ডেকে বললো," কি করছিস তুই?"
টয়া বিরক্তি চোখে তাকিয়ে বলল,"আস্তে কথা বল। আমাকে দেখতে দে।" টয়া কি করছে দেখতে রিতু নিজেও উকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো কিন্ত সে কিছুই বুঝলো না।
টয়া রিতুকে বললো,"আজ হাতে নাতে ধরবো বুঝেছিস।"
"কি ধরবি?", রিতু প্রশ্ন করে বসলো।
"মেয়েটা ওনার রূমে ঢুকেছে।", রাগে গজগজ করে বললো টয়া। অনেক্ষন বাহিরে অপেক্ষা করলো টয়া কিন্তু মেয়েটাকে বের হতে দেখলো না। টয়া গিয়ে কি নক করে দেখবে তারা কি করছে? টয়া কিছুই বুঝতে পারছেন না। টয়া চিন্তিত গলায় রিতুকে বললো," যাবো?"
রিতু সাহস জোগিয়ে বললো," অবশ্যই যাবি তোর জামাই এতো রাতে অন্য মেয়ের সাথে আছে। কাহিনী কি দেখতে হইবো না। "
টয়া মাথা নেড়ে বললো," ঠিক বলেছিস। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।"
বলেই টয়া বেরিয়ে পড়লো তারপর টয়া কোনো রকম সাহস জুগিয়ে কলিং বেল বাজলো। রিতু দরজার একটু ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে। টয়া আবার দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতেই ইয়াদ দরজা খুললো। ইয়াদ দরজা খুলে টয়াকে দেখে অবাক। হটাৎ টয়া এইখানে?টয়া তো কখনো তার ফ্ল্যাটে আসে না।
ইয়াদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো," তুমি?"
" হ্যা কেনো আমাকে দেখে অবাক হচ্ছেন? আমি কি আসতে পারি না?", টয়া ঝাঁঝালো গলায় বলল। তারপর ইয়াদকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। টয়ার এমন আচরণে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
টয়া ভিতরে ঢুকতেই সেই মেয়েটাকে দেখলো সোফায় বসে আছে টয়ার ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে মেয়েটাকে বের করে দেয়। রাগটা সামলে নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ এমন ভাব করছে যেনো সে কোনো দোষ করেনি। মেয়েটা সোফা থেকে উঠে হাসি মুখে টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে," হেলো! আমি প্রভা।"
টয়া অনিচ্ছাকৃত হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো," টয়া।"
ইয়াদ বুকের কাছে হাত গুজে ভাবছে হটাৎ টয়া কি জন্য এখানে আসতে পারে। মেয়েটা ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে," ইয়াদ তাহলে আমি যাই। আমার সমস্যা বুঝতেই পারছো নিশ্চয়। প্লীজ একটু সময় করে বাসায় এসে সবার সাথে কথা বলো নিও।"
ইয়াদ মাথা নেড়ে বললো," হুম, আমি চেষ্টা করব। তোমাকে কি এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে?" টয়া মনে মনে ব্যাঙ্গ করে বললো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো। ঢং!
প্রভা না সূচক মাথা নেড়ে বললো প্রয়োজন নেই নিচে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই টয়া দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে রুমের সবটা দেখছে। ইয়াদ দরজা বন্ধ করে টয়ার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ভ্রু তুলে বললো," তুমি হটাৎ আমার ফ্ল্যাটে?"
" কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?", গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।
" কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?", গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া
" আচ্ছা তারমানে এটা জানতে এখানে এসেছো?", এক হাত পকেটে ভরে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি তো এটাই জানতে সে এসেছিলো এখানে এসেছিলো কিন্তু এটা বললে তো গন্ডগোল হয়ে যাবে।
টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো কি বলবে? ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বললো " এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?"
" আপনি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। কি করছিলেন আপনারা?", আবার প্রশ্ন করে বসলো টয়া।
ইয়াদের কেনো জানি মনে হচ্ছে টয়া জেলাস। নাহলে এতো রাতে তার ঘরেই বা কেনো আসবে?
ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবে বললো," কিন্তু তার আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমার এতো রাতে এইখানে আসার কারণ কি শুধু এটাই? যে আমরা কি করছিলাম?"
টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো,"প্রশ্নটা আগে আমি করেছিলাম তাই উত্তরটা আপনি আগে দিবেন।"
ইয়াদ এবার ভালোভাবেই বুঝতে পারছে টয়া জেলাস সুতরাং টয়াকে একটু রাগিয়ে দিলে মন্দ হয় না।
" তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে কি আমি বাধ্য?", ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো। ইয়াদের এমন কথা শুনে টয়ার রাগ বেড়ে গেলো।
বাধ্য না মানে? এইগুলো কি কথা!টয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে।
ইয়াদ এতটুকু বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। সে ভালো করেই জানে যে টয়া নাছরবান্দা। কি হয়েছে সেটা না জানতে পারলে টয়ার রাতের ঘুমই হবে না। তাই টয়া যে তার পিছু পিছু তার রূমে আসবে সেটা সে নিশ্চিত।
টয়া ইয়াদের পিছু পিছু তার রূমে এসে বললো," বাধ্য না মানে অবশ্যই আপনি বাধ্য। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন।"
ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলতে যাবে কিন্তু এ কথা শুনে সে টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো," আমি তখনই বাধ্য যখন তুমি আমাকে মানতে বাধ্য হবে। তুমি কি আমাকে হাসব্যান্ড হিসাবে মানো?"
টয়া কটাক্ষ করে বললো," অবশ্যই না।"
" তাহলে আমি তোমায় বলতেও বাধ্য নই।", হাসি মুখে কথাটা বললেই আবার নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল ইয়াদ।
টয়ার আর সহ্য হচ্ছে না। তার আসল কথা জানতেই হবে কে মেয়ে? কি এমন করেছে যে লোকটার পেট থেকে কথাই বের হচ্ছে না। টয়া আমতা আমতা করে বলল," আমি না মানলে কি হবে আইনত তো আমরা ...... হাজব্যান্ড.... ওয়াইফ।"
বলতে বলতে থেমে গেলো। এইসব কি বলছে সে? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি তার?
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে তাকালো। টয়া কথাটা বলে ভীষণ অসস্থির মধ্যে পড়েছে। ইয়াদ আড় চোখে তাকিয়ে বললো," মেয়েটা কে সেটা দিয়ে তুমি কি করবে?"
টয়া এবার ভীষণ রেগে গিয়ে গর গর বলল," আমার জানা লাগবে। আপনি বলুন। আপনাকে আমি সহজ একটা প্রশ্ন করেছি সহজ ভাবে সেটার উত্তর দিতে পারছেন না?তখন থেকে জিলেপির মতন পেচিয়ে যাচ্ছেন। বলতে কি খুব অসুবিধা নাকি?একটা প্রশ্নের উত্তরই তো জানতে চেয়েছি।",
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এতো কথা কি করে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর না জানতে পারলে মনে হয় আজকে টয়া ইয়াদের মাথা খেয়ে ফেলবে।
ইয়াদ টয়াকে থামিয়ে বললো," আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। কি জানতে চাও মেয়েটা কেনো এসেছে? মেয়েটা আমার একজন সিনিয়র ডক্টর এর মেয়ে। তার বাবা একটু অসুস্থ সে বিষয়ে কোথা বলতে এসেছিলো।"
টয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল," তাই? শেষে যে কত কি বলে গেলো?"
ইয়াদ বির বির করে বললো," কি কান রে বাবা!"
" কি বির বির করেছেন? যা বলার জোড়ে বলুন।", ইয়াদকে বির বির করতে দেখে চেঁচিয়ে বললো টয়া।
" আস্তে!", বলে ইয়াদ দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের ভ্রুয়ের উপরের অংশ ঘষে বলল," এমন করছো কেনো? শান্ত হও।আমি ওনাকে স্যার বলি। অনেক শ্রদ্ধাও করি লোকটাকে। ওনার অবস্থা যতটুকু শুনলাম ভালো না। দেশের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন ট্রিমেন্টের জন্য। কিন্তু তিনি বিদেশে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে চাইছেন না। বাড়ির কারো কথায় তিনি রাজি হচ্ছেন না তাই আমাকে যেহেতু তিনি স্নেহ করেন তাই আমাকে একবার চেষ্টা করে দেখতে অনুরোধ করে গেলো।",কথাগুলো বলে ইয়াদ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
টয়া সব কথা শুনে ও আচ্ছা বলে মাথা নাড়ল।
ইয়াদ নিজের গায়ের শার্টটা খুলে রাখতে যাবে। হটাৎ টয়া বলে উঠলো," আপনি সবসময় এমন শার্ট খুলে ফেলেন কেনো? আজব!" ইয়াদ শার্টটা একপাশে রেখে টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ পকেটে থেকে ফোন, ওয়ালেট সব বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,"আমি বাহির থেকে এসে ফ্রেশ হবো তাই না? তোমার যদি এতো সমস্যা হয় তাহলে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকো।"
আজব! সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে সেটা মাথায় নেই। এই ছেলের আবার বলছে তাকেই উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকতে। তারই ভুল হয়েছে এখানে আসাটা।
টয়া রেগে বললো," উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে আমি চলে যাচ্ছি।" বলেই বেরিয়ে যাবে তখন আবার থেমে গিয়ে বললো," দাড়ান একটা প্রশ্ন।"
ইয়াদ দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে বললো," আবার প্রশ্ন! হুম বলো মনের সব প্রশ্ন বলো। আজকে সারারাত তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই আমি।"
টয়া বুঝতে পারছে সে বেশি কথা বলছে কিন্তু কিছু করার নেই এই প্রশ্নগুলো তাকে করতেই হবে। টয়া একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো," আচ্ছা মেয়েটা কি বিবাহিত না অবিবাহিত?"
এ প্রশ্ন শুনে ইয়াদ হটাৎ করে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া পিছাতে পিছাতে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় টয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে।
ইয়াদ দেওয়ালের এক পাশে হাত রেখে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো," কি জানি জানতে চাচ্ছো? মেয়েটা বিবাহিত না অবিবাহিত? কেনো তুমি কি মহিলা ঘটক হওয়ার উদ্বেগ নিয়েছো? এটা জেনে করবেটা কি? মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে তোমার? তখন থেকে আজে বাজে বলেই চলেছো।"
ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় টয়া অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলো টয়া কিন্তু ইয়াদ আরেক পাশে হাত দিয়ে টয়াকে আটকে দিলো।
টয়া কোনরকম টিপ টিপ চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো," রাগ করেছেন কেনো? আমি তো এমনেই.... ", বাকিটা শেষে করবার আগেই ইয়াদ টয়ার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো," এসব প্রশ্ন করতে এখানে এসেছো?"
টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো," কই না তো।আমি তো আন্টির কথা মত দেখতে এলাম আপনি কেমন আছেন। ব্যাস এইটুকুই ",বলে একটা ঢোক গিললো।
ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া ইয়াদকে আবারও আশ্বস্ত করে বললো," সত্যি বলছি। এবার আমি যাই।" বলে ইয়াদের হাতের নিচে দিয়ে বের হবে।
ঠিক এমন সময় ইয়াদ টয়ার হাত ধরে ফেললো তারপর বললো," এখানে এসেছো কার ইচ্ছায়? নিজের ইচ্ছায় তাই না কিন্তু যেতে তো আমার ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে যেহেতু ঘর আমার। তুমি আমার খেয়াল রাখতে এসেছিলে না?" বলেই টয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসতেই টয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো।
ইয়াদ একটু হেসে বললো," আমার জন্য রান্না করতে হবে তবেই যেতে পারবে।"
এ কথা শুনে টয়া বিস্ময় নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো," রান্না করবো মানে? আপনারা খেয়ে আসেন নি?"
ইয়াদ ভ্রু কুচকে বললো," আপনারা ! মানে ?"
" মানে ঐযে প্রভা আপনারা ডিনার করে আসেন নি?", টয়ার এমন কথা বার্তা আর প্রশ্ন শুনে শুনে ইয়াদের মাথা ধরে গেলো।
ইয়াদ আচমকা টয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো," যেটা করতে বলেছি সেটা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। আর তোমার এই ইউজলেস কোয়েশ্চন এর আনসার আমি দিচ্ছি না।"বলে ইয়াদ ওয়াশরুম এ ঢুকলো।
টয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো," ইস কতো শখ আমাকে দিয়ে রান্না করাবে? আমি এখানে থাকলেই না!এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো।"
টয়া অনেকক্ষণ হলো ইয়াদের দরজার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইয়াদের দরজায় পাসওয়ার্ড লক দেওয়া। টয়া হাবি জাবি কত কিছু বলে দরজা খুলার চেষ্টা করছে কিছুতেই খুলছে না। এই বাসায় কি এমন আছে যে এমন পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতে হবে? কি একটা ঝামেলা হলো।
যে যেমন হয় তার আশেপাশের সব কিছু তার মতন হয়। হিটলারটার দরজাও হিটলারের মতোন। ইয়াদ ইচ্ছে করে এসব করছে। অসহ্য লাগছে। কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবে এইভাবে?
ঐ মেয়েকে সাথে করে নিয়ে এলো তো ঐ মেয়েকেই বলে রান্না করিয়ে নিতো তাকে কেনো বলছে?। লোকটার জন্য রান্না না করলে হয়তো আজ রাতে এইখানেই থাকতে হবে তাকে। অসম্ভব। ভেবেই টয়ার গলা শুকিয়ে গেছে। টয়া চট জলদি কিচেনে গেলো। ফ্রিজ খুলে সে কিছুই পেলো না। আরো জায়গা খুঁজলো কথাও রান্না করবার মতন কিছুই পেলো না। শেষে কিচেনের উপরের ড্রয়ার খুলতেই একগাদা নুডুলস এর প্যাকেট তার মাথায় টপ টপ করে পরতে লাগলো। টয়া এতো নুডুলস দেখে থ মেরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। পুরো নুডুলসের ফ্যাক্টরি তুলে রেখেছে।
তখনই ইয়াদের মায়ের একটা কথা মনে পড়লো টয়ার। তিনি একবার বলেছিলেন ইয়াদ হাসপাতাল থেকে ফিরে টায়ার্ড হয়ে যায় তাই নাকি সে শুধু নুডুলস খেয়েই কাজ সারে।
টয়ার আরো রাগ হলো! সব সময় এইগুলো খেয়ে থাকলে কিভবে হবে? শরীরের ক্ষতি হবে জনাব ডক্টর কি সেটা জানে না? ধুরো এই নুডুলস আমি রান্না করবো না। টয়া আরো কিছুক্ষন খুঁজতে লাগলো কিছু পাস্তা আর সুপের প্যাকেট পাওয়া গেছে আপাদত এইগুলোই করতে হবে।
টয়া নিজের মতো সবটা করছিলো। ইয়াদ শাওয়ার শেষে মাথা মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে টয়াকে কিচেনে দেখে। টয়াকে এভাবে দেখে কেনো জানি এমনিতেই মুখে একটা হাসি চলে এলো ইয়াদের। ইয়াদ একপাশে দাড়িয়ে আনমনে টয়াকে দেখছে।
টয়া চুলগুলোর জন্যে একটু বিপাকে পড়েছে কিছুক্ষণ পর পর মুখের সামনে চুলগুলো চলে আসছে। সাথে রাবারব্যান্ড নেই যে বেধে রাখবে আর খোঁপা করলেও খুলে যাচ্ছে।
টয়ার তাকিয়ে থাকতে গিয়ে একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়লো। অনেক আগে টয়া একবার তাকে তার চুল বেঁধে দিতে বলেছিলো। ঘটনাটা মনে পড়ায় ইয়াদ নিজের রূমে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে এলো তারপর কিচেনে টয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। টয়ার চুলে হাত দিতেই টয়া লাফিয়ে ওঠে চামচ হাতে পিছে ফিরলো। ইয়াদের হটাৎ এভাবে পিছনে এসে দাঁড়ানোয় টয়া ভয় পেয়ে যায়।
" তোমাকে দেখছি একটু ছোঁয়াওর যায় না কাপাকাপি, লাফালাফি শুরু করে দাও।", বিরক্তি নিয়ে বললো ইয়াদ।
" আপনি ভুতের মতো পিছনে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি বুঝবো কিভাবে? আমার কি মাথার পিছে চোখ আছে যে আমি দেখতে পাবো আপনি দাড়িয়ে আছেন?", হাতে থাকা চামটা ইয়াদের সামনে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো টয়া।
চামচ যেনো ইয়াদের গায়ে না লাগে তাই সে সরে এসে বললো," হয়েছে বুঝেছি, এবার সামনে ঘুরো।"
" কেনো?", আবার প্রশ্ন করলো টয়া।
" এতো কথা বলো কেনো?" বলেই ইয়াদ টয়াকে ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে দিলো তারপর নিজের হাতে টয়ার চুল গুলো বেধে দিতে লাগলো। টয়া হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। যখনই কেউ টয়ার চুল বেধে দেয় তার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু ইয়াদ বেধে দেওয়ায় যে ভালো লাগা কাজ করছে সেটা অন্যরকম একদম আলাদা।
হটাৎ টয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো ইয়াদ রাবার ব্যান্ড কথায় পাবে কোথায়? ইয়াদ নিশ্চয় ঘরে রাবার ব্যান্ড রাখবে না এইটা তার কোনো কাজের নয়। তাহলে কি অন্য কোনো মেয়ের? মনে প্রশ্ন জাগতেই টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে একবার ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ টয়ার এমন আচরনের কারণ বুঝতে পারছে না। মেয়েটা কখন কি ভাবে কে জানে?
টয়া খাবার গুলো টেবিলে ইয়াদের সামনে রাখলো। তারপর ঝাঁঝালো গলায় বললো," এবার পাসওয়ার্ড টা বলুন।"
ইয়াদ প্লেট নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো," বসো বলছি।"
" আবার বসা লাগবে কেনো? আমি আর বসতে পারবো না।আপনি বলুন তারাতারি।", টয়া অস্থির হয়ে বললো।
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বললো," তুমি এখানেই বসবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার খাওয়া শেষ হচ্ছে। খাবার সময় কেউ পাশে বসে থাকলে আমার ভালো লাগে।"
মানে!", তেজী গলায় বললো টয়া। বাকিটা বলার আগেই ইয়াদ টয়ার গালে পাস্তা দিয়ে দিলো। হটাৎ করে ইয়াদের এই কাজে টয়া হতবাক হয়ে গেলো।
আরও পড়ুন: তোমার খোঁজে এই শহরে| নবনী নীলা| পর্ব-৬
0 Comments