জীবনের গল্প: নির্বিচার|মারিয়া হাজান মারুফা| প্রথম পর্ব
পরপর দুটি বিদ্যুৎ ঝলকানি থাপ্পড়ে মেঝেতে জ্ঞান-হীন অবস্থায় পড়ে আছে মেঘ! তার সামনে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে একজন সুদর্শন পুরুষ! যার শিরায় শিরায় আভিজাত্যের দম্ভ লুকিয়ে আছে, লুকিয়ে আছে হিংস্র পশুর-ন্যায় মানসিকতা! তার ইশারায় একজন গার্ড এসে এক-জগ পানি মেঘ-এর চোঁখে-মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়! মেঘের জ্ঞান ফিরেছে বিধায় তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় ছেলে-টি!
মেঘ চারদিকে চোঁখ বুলিয়েই মৃদু-স্বরে বলে' —আব্বু আম্মু তোমরা এভাবে?
ছেলে-টি বিরক্তিকর কন্ঠে জবাব দেয়' —আমি ওদের এভাবে বেঁধে রেখেছি! এখন ইচ্ছা তোমার?
মেঘ দেখে তার বাবা-মা চেয়ারে বিধস্ত অবস্থায় জ্ঞান-হীন পরে আছে! তাদের কপালে কন্দুক। মেঘ কি করবে বুঝতে পারে না! ভাবুক হয়ে নিবির পানে চেয়ে আছে সুদর্শন পুরুষের দিকে! কে সে? কেন'ই বা তার আর তার পরিবারের এমন ক্ষতি করছে? কি চায় সে?
মেঘের ভাবনার মাঝেই পুরুষটি বলে' -এই যে মেঘবতী! আপনি যদি এই কাগজে সাইন না করেন তাহলে আপনা'র বাবা-মা'সহ পরিবারের সবাইকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে!' বলেই ইশারা করে ড্রয়িং রুমের দিকে!
মেঘ দৃষ্টি দিয়ে আৎকে উঠে। ড্রয়িং রুমে তার আপা-দুলাভাই'কে বেঁধে রেখেছে। মাথা থেকে রক্ত পড়ছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাদের আঘাত করা হয়েছে! পাশে চোখে ফেরাতেই মেঘ দেখে তার ছোট্ট কলিজার টুকরা জ্ঞান-হীন অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে! মেঘের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে থাকে। অস্ফুট-স্বরে বলে' —কিসের কাগজ এটা?
এখানে আপনাকে আমার মেঘবতী হয়েই বাকি-জীবন পার করতে হবে, সেই টারই কাগজ। এটা আপনার এবং আমার বিয়ের প্রমাণ। যদি সাইন না করেন তাহলে' একটা গার্ড'কে দৃষ্টি দিতেই সে মেঘের কলিজার টুকরা ভাগিনাকে কোলে তুলে নেয়, পরপর দুটি চড় বসিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়।
মেঘ চট করে বলে- 'আমি রাজি! আমি সাইন করবো!
—এই তো আমার মেঘবতী!
গাড়ি চলছে পাশেই বসে আছে মেঘ! বাড়িতে তার বাবা-মা, আপা-দুলাভাই আর ভাগিনা যেমন ছিলো অজ্ঞান তেমন'ই আছে! সে ভাবছে কিভাবে কি হলো! কি কারণ এসবের? কি হচ্ছে তার সাথে? কোথায় যাচ্ছে সে? কেন'ই বা যাচ্ছে? কি শত্রুতা তার সাথে? গাড়ি ব্রেক হওয়ার সাথে সাথে'ই মেঘের ভাবনার ইতি-টানে! একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়ায় গাড়ি!
বাড়ির গেইটে বড় বড় অক্ষরে লেখা "দেওয়ান মঞ্জিল" ! সুদর্শন পুরুষ'টি তাকে একা রেখেই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে! গাড়িতে থাকা গার্ড'টি ফিসফিসিয়ে বলে' —ভাবি ভুলেও বাড়ির ভেতরে কোনো কথা বলবেন না!
মেঘ এক-পলক গার্ড'কে দেখেনেয়! মেঘ বুঝতে পারে গার্ড-টি খুব ভয়ের মাঝে আছে। মেঘ ও মাথা দুলিয়ে বলে' —আচ্ছা!
বাড়িতে প্রবেশ করেই সোফায় গা এলিয়ে দেয় সুদর্শন পুরুষটি! বাড়ির ছেলে আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেছে দেখে আমেনা বেগম তড়ি-ঘড়ি করে ছেলে কাছে আসে!
ভাবান্তর দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে- 'অভি কিছু কি হয়েছে?
হ্যাঁ সেই সুদর্শন পুরুষ'টির নাম অভি! অভি কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে' —মাম্মাম সবাইকে একটু ডেকে দিবে!
আমেনা বেগম দেরি করলো না! সবাইকে ডাকতে লাগলেন! আমেনা বেগমের এমন ডাকা-ডাকিতে সবাই বেশ চিন্তিত হয়েই নীচে আসেন! সবাই অভি'কে দেখেই অবাক। ফিরোজা বেগম কিছু'টা রেগেই প্রশ্ন করেন' —তুই অসময়ে বাড়িতে! তোকে যে মেয়ে দেখতে যেতে বলেছিলাম?
বিরক্ত-কর কন্ঠে অভি বলে' —দিদুন পাত্রী খুঁজতে খুঁজতে আমি-ই বুড়ো হবো! তখন আবার তুমি আমার গলায় ঝুলে পড়ো না যেনো?
নাতির এমন কথায় ফিরোজা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন' —বয়সের তো কিছু'ই নেই নিজের দিকে দেখেছিস, তাই নাকি আমি তোর গলায় ঝুলবো হুহ!
দাদির কথায় অভি মুচকি হেঁসে বলে' —দিদুন তুমি তো জানোই তোমার অভি সোনা এত কিউট বলেই পাত্রী পাওয়া যায় না!
ফিরোজা বেগম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নাতিকে প্রশ্ন করে' —কই আজকে যে পাত্রী দেখতে যেতে চাইলি! কি হবে সেটা'ই সন্ধ্যা তো হয়ে গেছে! তোকে নিয়ে আমি আর পারি না!
কিছুটা শান্ত-স্বরে জবার দেয় অভি' —দিদুন আমি বিয়ে করেছি!
অভির এমন কথায় সবাই সড়ক-গাছে উঠেছে! যে ছেলে'কে বিয়ে দিতে ৩১টা পাত্রী দেখতে হয়েছে তবুও পছন্দ হয়নি! সেই ছেলে নাকি বিয়ে'ই করেছে!
ফিরোজা বেগম বলে' —তুমি কি হেঁয়ালি করছো আমার সাথে!
অভি গম্ভীর কন্ঠে বলে' —তুমি আমার বউও না, বেয়ানও না! হেঁয়ালি কেনো করবো তোমার সাথে!
ফিরোজা বেগম বুঝতে পারে! তার নাতি সিরিয়াস মোডে'ই সব কিছু বলছে! কিন্তু কে সে'ই মেয়ে যাকে দেখে পরিবার'কে না জানিয়েই বিয়ে করেছে অভি! তিনি বলেন- 'কই আমার নাত-বউ কই!
অভি সোফা ছেড়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায় তার পিছু পিছু তার মাম্মামসহ বাড়ির সকলেই যেতে প্রস্তুত কিন্তু তার দিদুন নেই! গাড়ির সামনে এসে দেখে, মেঘ কাঁদতে কাঁদতে চোঁখ-মুখ লাল করেছে! অভি গাড়ির দরজা খুলে মেঘ-কে বলে' —কই এসো!
অভির কথায় মেঘ কান্না থাকায়, বলা তো যায় না, এই কাঁদবার জন্য তাকে না-জানি কি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে! গুটি-গুটি পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করার আগে অভি মেঘের হাত'টা ধরে। মেঘ সামনে তাকিয়ে দেখে ফিরোজা বেগম গহনার বাক্সটা নিয়ে এগিয়ে আসছে! বাড়ির মেঝো বউ, রীতি-রেওয়াজ মতো বরণ করে ঘরে তুলবেন ফিরোজা বেগম! জিনিস-পত্র দেখতে দেখতে কাছে আসেন তিনি!
মেঘ'কে দেখেই ফিরোজা বেগম বলেন' —মেঘ!'
মেঘের দৃষ্টি যায় ফিরোজা বেগমের দিকে, তাৎক্ষনিক তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়! দড়াম করে কিছু পড়ার শব্দে সবাই অবাক হয়ে যায়! আমেনা বেগম দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরেন!
—টাসসসসসস, টাসসসসসসসস!
সবাই পিছন ফিরে তাকায়! মেঘ জ্ঞান-হীন অবস্থায় দরজার সামনে পড়ে আছে! সবাই অভির দিকে নজর দেয়! কই কিছু বুঝা যাচ্ছে নাতো? তাহলে মেঘ জ্ঞান-হীন অবস্থায় পড়ল'ই বা কি করে! আর অভি তাকে ধরল'ই না বা' কেন? পাশে গার্ডকে দেখে কিছু'টা অবাক হোন আমেনা বেগম' গার্ড'টা ভয়ে কাঁপছে!
আরও পড়ুন: নির্বিচার|মারিয়া হাজান মারুফা| পর্ব-২
0 Comments