জীবনের গল্প: চির সখা| ইফা| প্রথম পর্ব
ডির্ভোসের আজ দশ দিন হলোর কেয়ার। কেয়ার মা-বাবা কেউ নেই একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মা’রা যায়। সেই থেকেই চাচা চাচীর কাছে মানুষ। অবহেলায়-অনাদরে বেড়ে ওঠা আর কি! যেমন বেড়ে ওঠা বাড়ির প্রাঙ্গনে নীম গাছ। ও ও তেমন। এতিম মেয়ে ভেবে তারউপর বোঝা মনে করে কেয়ার দ্রুত বিয়ে দিয়ে, ছেলের বিষয়ে কোন খোঁজ খবর না নিয়ে।
বিয়ের কিছুদিন ভালোই যাচ্ছিল কিন্তু বিপত্তি ঘটে মাঝখানে হঠাৎ কেয়ার প্রাক্তন স্বামী বদলে যেতে শুরু করে। রোজ রাত করে বাড়ি ফেরা, মার ধর করা, মাদকাসক্ত হওয়া এবংকি পরকীয়ার মতো ঘৃণ্যতম কাজের সাথেও জড়িতো ছিলো, তবুও চাইছিলো মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
একদিন বাড়ি কেউ ছিলো, ঘোর সন্ধাবেলা কেয়ার শরীর বেশ খারাপ তাই সে শুয়েছিলো ঠিক তখনই ওর প্রাক্তন স্বামী এসে মারধর করে ওর কাছ থেকে ডির্ভোস প্যাপার এর সই নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তার কাছে টাকা ও ছিলো না যে বাড়ি ফিরবে, ওই জখম আর রক্তাক্ত শরীর নিয়ে হেঁটে বাড়ি আসে। বাড়ি এসেও শান্তি পায়নি। চাচা-চাচী নানান রকমে কথায় শুনায়।
কেয়াদের যৌথ পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার ওরা। একটা কাপড়ের ব্যবসা আছে ওটাই ওদের রুজি-রোজগারের মাধ্যম। এখন চাচা-চাচীরা ওকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে। ওনাদের কথা বাড়িতে আরো বড় বড় বিবাহ যোগ্য কন্যা রয়েছে ওর মতো ডির্ভোসী অপয়া মেয়ে এই বাড়ি থাকলে না কি ওদের বিয়ে হবে না।
তপ্ত শ্বাঃস ফেলে আকাশের পানে তাকিয়ে জীবন নিয়ে ভাবতে লাগলো কেয়া। কোথায় যাবে থাকবে কি? খাবে কি? পড়বেই বা কি? অনেক কষ্টে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
মাথার উপর এতো টেনশন ঘূর্নিমান হয়ে ঘুরচ্ছে কিন্তু কোন কূল-কিনারা পাচ্ছে না। উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট দিয়ে নিশ্চয়ই কোন ভালো জব পাওয়া যাবে না। টেনশনে টেনশনে মাথা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। এক কাপ চা এর দরকার কিন্তু এই সময় চা একটা বিলাসিতা মাত্র, চাচী যদি দেখে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
যার মা-বাবা নেই সেই বুঝে জীবনটা কতো কষ্টের। এই দু'দিনের দুনিয়াতে মা-বাবা ছাড়া আর কেউ আপন না। যারা আপন দেখায় তারা স্বার্থের জন্য স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে, আসসালামু আলাইকুম কে আপনি? এই রকম হয়ে যায় সম্পর্ক।
হঠাৎ ওর রুমে হুড়মুড়িয়ে ওর চাচী ঢুকে কোন কথা ছাড়াই চুলের মুঠি ধরে গালিগালাজ করতে করতে বললো, বলি নবাবের বেটি আমার ঘরে যে মেলা কাজ পরি আছে সেই খেয়াল আছিনি। যাও দুপুরের এঁটো থালাগুলো জড়ো হয়ে পড়ে আছে ওই গুলো মেজে ফেল দেখিনি বাপু। তারপর রান্না বসাবি। যদি কাজগুলো ঠিক মতো না হয় তাহলে আজ রাতে তোর খাওয়া বন্ধ।
ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো কেয়া। ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো,
আহ্! চাচী ছাড়ো বড্ড লাগছে।
লাগবে না লাগার জন্যই ধরেছি, শয়তান ছেড়ি যা রান্না কর সব কাজ কর গিয়ে। কথাটা বলে তিনি চুলের মুঠিটা ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে টানতে রুম থেকে কিচনে নিয়ে এসে এক প্রকার ছুঁড়ে মারলো।
কেয়া পড়তে পড়তে ও নিজেকে সামলে নিলো। চাচীর দিকে তাকাতেই চাচী বললো, ওমন করে তাকিয়ে লাভ নেই সোনা, যতদিননা তুমি এই বাড়িতে আছো গতর-খাটিয়ে তারপর খেতে হবে কথাটা মনে থাকে যেনো বলে চলে গেলেন তিনি।
আর কেয়া সে রান্না ঘরে কাজে মনযোগ দিলো। এক এক করে হাঁড়ি পাতিল মাজতে শুরু করলো। এতিমদের আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নেই।
হাঁড়ি পাতিল মাজা শেষ হলে সে রাতের খাবারের জন্য রান্না বসায়। আজ খিচুড়ি আর মাংস হবে। এর এক টুকরো ও কেয়ার কপালে জুটবে না, কেয়ার কপালে জুটবে দুপুরে বেঁচে যাওয়া এক মুঠো ভাত আর তরকারি, এইটুকুতে তার পেট ভরবে না কেবল পেটের এক কোনায় পরে রইবে।
দীর্ঘ শ্বাঃস ফেলে কেয়া রান্নাতে মনোযোগ দিলো।
ঘণ্টা-খানেক পর রান্না হয়ে গেলে সব গুঁছিয়ে রেখে চাচীর কাছে গিয়ে বললো,
— চাচী আমার রান্না শেষ আমি খেয়ে নেই।
— যাহ্ যাহ্! ঠিক আছে ঠিক আছে।
তপ্ত শ্বাঃস ফেলে রান্না ঘরে পা রাখে আবার তারপর প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে, রান্না-ঘরের মেজেতে বসে পড়ে।
তারপর ছোট ছোট লোকমা করে মুখে তুলে নিয়ে খাবার খেতে লাগলো। এইভাবে খাওয়া শেষ হয়ে গেলে সে তার প্লেটটা ধুয়ে পানিটুকু পান করে রুমের দিকে চলে গেলো।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কাল সকালে ভার্সিটিতে যেতে হবে খুবই ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস আছে মিস করা যাবে না।
নানান কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো কেয়া।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে যথারীতি আবার কাজে লেগে পড়লো। সবার জন্য হরেকরকমের নাস্তা তৈরি করে, নিজে এক একমোট নাকে মুখে গুঁজে নিলো।
তারপর রুমে এসে শাওয়াে টা নিয়ে কাঁধে ব্যাগ চেপে বাড়ি থেকে বের হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
হাতে যা টাকা আছে তাতে ওর যেই কোন এক বেলার গাড়ি ভাড়া হবে। তাই সে হেঁটেই ভার্সিটির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
কেয়া খুবই বেখেয়ালি ভাবে দ্রুত হাটছিলো যে সামনে ইটের ছোট্ট টুকরো টা খেয়ালও করেনি ফলে ইটের সাথে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলে এক শক্তপোক্ত হাতটা কেয়ার কোমর ধরে পড়া থেকে বাঁচিয়ে নিলো।
কেয়া ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে লোকটির শার্টের কলারটা ধরে নিলো।
হঠাৎ কানে আসে একটা পুরুষালী ভারী কন্ঠ, এইযে মিস ঠিক আছেন?
পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো তারপর চোখাচোখি হলো লোকটার সাথে, লোকটি বেশ লম্বা চওড়া হাইট ছয় ফুট তিন ইনঞ্চির মতো হবে, গা এর রং শ্যামবর্ণ, বাম সাইডে ভ্রুতে কাটা দাগ আছে, কেমন যেনো চোখ না ধূসর না বাদামী, তবে চোখ দুটো ভয়ংকর।
দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললো কেয়া হঠাৎই খেয়াল হলো লোকটি ওর কোমড় ধরে আছে তাই সে আস্তে করে বললো,
ছাড়ুন আমায়, আমি ঠিক আছি।
এতক্ষণ ঘুরের মধ্যে ছিলো সে, মেয়েটির কন্ঠ পেতে মেয়েটিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
সরি, আপনার কোথায়ও লাগিনি তো?
উঁহুম!
আসুন আপনাকে ড্রভ করে দেই দেখেতো মনে হচ্ছে তাড়ায় ছিলেন।
না লাগবে না ধন্যবাদ বলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
ওর যাওয়ার পানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আসফান জাহরান চৌধুরী। আর মনে মনে বললো, কিছু তো একটা আছে তোমার মাঝে যা আমাদের আবার দেখা করাবে।
তপ্ত রোদ মাথা নিয়ে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছালো কেয়া।
শরীর থেকে দরদর করে ঘাম পড়ছে।
পড়িহিত ওড়ানার আচল দিয়ে ঘামটুকু মুছে ফেললে ক্লান্তির একটা শ্বাঃস ফেলে এগিয়ে গেলো ক্লাসরুমের দিকে।
ক্লাস রুমে ঢুকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কেয়া,তারপর ফ্যানের নিচে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলো।
ঠিক সেই সময় ওর সামনে এক বোতল পানি, আর একটা টিফিন বক্স রাখলো কেউ।
কেয়া একটু হেসে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে দেখলো ওর প্রান-প্রিয় দুই বান্ধবী ইফা আর রিপু।
রিপু আর ইফা বেঞ্চে বসতে বসতে বললো, খেয়ে নে। গরম গরম পরোটা আর আলু ভাজি এনেছি নিশ্চয়ই তোর ক্ষিধে পেয়েছে, ওই টুকু পান্তা ভাতে কি আর পেট ভরে খেয়ে নে।
কেয়ার চোখ চিকচিক করে উঠলো। বাবা-মা’র পর এই দুইজন বান্ধবীই তার অনেক কাছের একদম আত্মার-আত্মীয়।
ইফা টিফিনবক্স টা খুলে পরোটা ছিঁড়ে তাতে ভাজি নিয়ে কেয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
রিপু বললো,দোস তোর জন্য একটা গুড নিউজ আছে।
কেয়া মুখের খাবারটা গিলে নিয়ে রিপুর দিকে তাকিয়ে বললো,কি নিউজ?
রিপু হাসি মুখে বললো, তোর থাকার একটা ব্যবস্থতা করেছি। আমাদের ছাঁদের উপরে একটা চিলেঘর আছে তাতে একটা ফ্লোর বিছানা, কাঠের পুরনো আলমারি আর একটা পড়ার টেবিল আর পাশে ওয়াশরুম আছে। তোর একার জন্য পারফেক্ট, তুই এখন থেকে আমাদের বাসায়ই থাকবি।
কেয়া সংকুচিত হয়ে বললো,
না না! এ সম্ভব না, আন্টি-আঙ্কেল কিভাবেন? আর শুধু তো থাকা না, খাবো টা কি?
রিপু কেয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বললো, তোকে এতো কে বুঝতে বলেছে, উপরের এই চিলেঘর টা একদম খালি কেউ ব্যবহার করে না। আর আমার মা-বাবা, ভাই ওনারা জানে তোর ব্যাপারে আমি ওনাদেরকে বলেছি, ওনারা চায় তুই কাল থেকেই শিফট হয়ে যায়।
এমনিতেই খালি পরে আছে, এখন খালি থাকার চেয়ে যদি তোর উপকারে লাগে তাতে ক্ষতি কি? আর রইলো খাবার খরচ, তোর জন্য আমরা একটা কোচিং সেন্টারে খবর নিয়েছি ক্লাস ১০ এর একটা ব্যাচের জন্য ইমিডিয়েটলি লোক লাগবে আমি আর ইফা তোর নাম টা বলেছি।
আমাদের বাড়ি থেকে বেশি না ২০ মিনিট লাগবে।
ইফা কেয়ার মুখে পরোটার লাস্ট টুকরোটা মুখে খাবার গুঁজে দিতে দিতে বললো,ওই নড়ক থেকে যত দ্রুত বের হবি ততই মঙ্গল, আমরা তো আছি বাকিটা ঠিক সামলে নিবো। বিশ্বাস রাখ আমাদের উপর।
কেয়ার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। তারপর মুখে একটু হাসি টেনে বললো,করি তো বিশ্বাস, তোরা যে আমার ছায়ার সঙ্গী আর ছায়া সঙ্গীদের কি আর কখনো অবিশ্বাস করা যায় নিজের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করি।
তাহলে আর কি চোখ বন্ধ করে হেঁটে যায় আমাদের হাত ধরে, আর আল্লাহ্ তো আছেনই।
তিন বন্ধু একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো।
পর্টি রুমে বসে আছেন আসফান জাহরান চৌধুরী।
ঠিক তারই সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই লোক যে ওর কথায় উঠে আর বসে।
আসফান শফিক এর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি যেই খবরটা আনতে বলেছিলাম এনেছো?
লোকটি মাথা নিচু করে বললো,জ্বী ভাই! মেয়েটির নাম কেয়া সরকার, মা-বাবা কেউ নেই, রিসেন্টলি ডির্ভোস হয়েছে, চাচা-চাচীর কাছেই থাকে, অর্নাস এ পড়ে সে।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো আসফান এর তার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,নজরে নজরে রেখো।
ভাই আমার একটা প্রশ্ন আছে আপনি মেয়েটিকে কেনো নজরে নজরে রাখতে বলচ্ছেন কোন সমস্যা?
আসফান বাঁকা হেসে বললো, সময় হলে জানবে। এখন এসো।
জ্বী ভাই! কথটা বলে শফিক চলে গেলো।
শফিক চলে যেতে চেয়ারে গা টা সম্পূর্ণ এলিয়ে দিয়ে রহস্যময় একটা হাসি দিলো সে। তারপর কিছু একটা বির বির করে বলতে লাগলো।
ভার্সিটির একটা ক্লাস করে কেয়া বাসায় ফিরে এলো শরীরটা ভালো লাগছে না মাথাটা কেমন ঘুরাচ্ছে।
বাড়ির ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতে কেয়ার সামনে তার চাচী রাবেয়া খাতুন এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
নবাব জাদীর আসার সময় হইছে। তারাতাড়ি জামা-কাপড় বদলে সব কাজ সেরে নে।
কেয়া নিচু কন্ঠে বললো,চাচী আমার ভালো লাগছে না। একটু পরে করে দেই।
কেয়ার চাচাতো বোন তামান্না এসে বললো,
কাজ না করার বাহানা খালি।
যা গিয়ে সব কাজ কর, আজ ঢাকা থেকে মেজো চাচীরা আসবেন যদি কাজ গুলো না হয়েছে তাহলে আজ দুপুরে তোর খাওয়া বন্ধ।
কেয়ার খুব করে বলতে ইচ্ছে এলো, এই বাড়িটা তো তোমাদের একা না আমার ও।
আমি একা কেনো করবো তোমরা কেন করবে না কিন্তু আর সাহস হলো না কথাটা বলার সে কেবল মাথাটা নাড়িয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
প্রচুর গরম শরীরটা মাত্রাধিক খারাপ লাগছে দরদর করে ঘেমে উঠছে তার শরীর একটু ফ্যানের বাতাস যে খাবে তার ও উপায় নেই, তার চাচী তার রুমে ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দিয়েছে বিল হবে তাই।
আহ্ কি জীবন আমার? নিজেই নিজের মনে প্রশ্ন করে উঠলো তারপর সে গোসলে ঢুকলো।
ঠান্ডা পানি শরীরে পড়তেই শরীরটা জুড়িয়ে গেলো। এতে বেশ আরাম-বোধ করলো কেয়া। স্বতি একটা শ্বাঃস তার বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো।
দ্রুত গোসল শেষ করে সে আবার রান্না ঘরে ঢুকে পড়লো দুপুরের রান্না সরঞ্জাম করতে লাগলো।
তামান্না রান্না ঘরে ঢুকলো নিঃশব্দে তারপর কেয়ার চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে বললো,
মা**** আমার রুমটা সকালে ক্লিন করিসনি কেনো, ভার্সিটি যাওয়ার জন্য এতো তাড়া কিসের তোর যে আমার রুমটা না ক্লিন করে চলে গেছিস। কোন লাং এর কাছে গিয়েছিলি।
বাইএনি চান্স তোর শরীরের ক্ষিধে মেটাতে যাসনি তো, যেতেই পারিস এতো দিন বিবাহিত ছিলি এখন সিঙ্গেল, চাহিদা বলে ও তো একটা ব্যাপার আছে।
নিজের আপন চাচাতো বোনের মুখ থেকে এমন কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে ঘৃনায় রিরি করে উঠলো কেয়ার শরীর। ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে আছে,চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝড়তে লাগলো।
কেয়ার চুলের মুঠিটা ছেড়ে দিয়ে কেয়ার চোয়ালটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
দ্রুত আমার রুম ক্লিন করবি, গো ফাস্ট।
কেয়ার ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে তামান্নার ঘরে গেলো। মাথাটা চক্কর কাটছে। কেমন গা গুলিয়ে উঠছে মনে হয় প্রেশারটা লো হয়ে গেছে।
ঘরটা ঝাড়ু দিতে দিতে ভাবলো কালই চলে যাবে এইখানে আর থাকবে না সে। কার জন্য থাকবে এইখানে তো আপন বলতে কেউ নেই। শুধু পদে পদে অপমান আর খোঁটা।
ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে, আলমারিটা খুলে জামাকাপড় গুঁছিয়ে দিলো, তারপর রুমের মধ্যে রুম স্প্রে করে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আবার রান্না ঘরে এসে রান্নার কাজে হাত লাগালো।
জীবনটা হচ্ছে একটা পরীক্ষা মঞ্চ সেইখানে প্রতিনিয়ত সুখ, দুঃখের পরীক্ষা দিতে হয়ে।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো কেয়া।
ঠিক তখনই তার রুমে কেউ একজন ঢুকে, তাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করে।
আকস্মিক এমন স্পর্শ পেয়ে কেয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় অন্ধকারে কাউকে দেখা যাচ্ছিলো না কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছিলো কেয়া তাহলে কে নিভালো বাতিটা।
অন্ধকার থাকার কারনে লোকটি বুঝতে পারেনি কেয়া জেগে আছে লোকটি ফের কেয়ার গা এ হাত দিতে নিলে, কেয়া আর সাত পাঁচ না ভেবে তার সাথে রাখা ছু'ড়ি টা দিয়ে আঘাত করে।
তারপর কেয়া চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, কেয়ার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়ির সবাই কেয়ার রুমে চলে আসে।কেয়ার চাচা ঘরের লাইটটা অন করতে দেখেন তার মেজো ভাই এর ছেলে এই রুমে আহত অবস্থায় পড়ে আছে, তার হাত থেকে র’ক্ত ঝড়ছে।
আর কেয়া ভয়ে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে।
কেয়ার ছোট চাচী মত্রই রুমে এসে কেয়ার কাছে গিয়ে রূঢ় কণ্ঠে বললো,সমস্যা কি তোর হে? এই রাত-বিরেতে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেনো?
তারপর তিনি খেয়াল করলেন রাহাতকে সে মেঝেতে বসে আছে ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরে আছে। হাত থেকে রক্ত চুঁইচুঁই করে পড়ছে।
ততক্ষণে কেয়ার মেজো চাচী ও রুমে এসে দেখেন ওনার ছেলের অবস্থা তিনি দৌঁড়ে ছেলের কাছে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো, এই কি! কি হয়েছে তোর, আর এইখানেই বা কি করিস?
কেয়া একে একে সবার দিকে তাকালো, সবাই তার দিকে কৌতূহলি চোখে তাকিয়ে আছে।
কেয়া কিছু বলতে নিবে ঠিক তার আগেই রাহাত বললো, ওকি কি বলবে? যা বলার আমি বলছি, ও একটা নষ্টা মেয়ে, আমাকে ওর রুমে ডেকে পাঠিয়েছিলো তাই এসেছিলাম।
আসার পর তখন আমাকে বললো যে রাহাত ভাই আমি ক্ষুধার্ত আমার চাহিদা নিবারন করো। তারপরই আমি যখন মানা করি তখন শুরু করে নাটক।
ওকে এখনি বের করো।
কেয়া সাথে সাথে বলে উঠলো, বিশ্বাস করো তোমরা, ওনি মিত্যে বলছেন আমি ডাকিনী ওনাকে।
ওনি নিজ থেকেই এই রুমে এসে আমার সাথে অসভ্যতা করছিলো।
কেয়া মেজো চাচী ক্ষিপ্ত হয়ে কেয়ার দিকে এগিয়ে এসে কেয়ার চুলের মুঠি ধরে, ঠাস্ ঠাস্ করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো কেয়ার গালে।
এতে কেয়ার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেলো।
তামান্না বললো, এতো কথার তো দরকার নেই এই ব্যা** মা*** কে এখনি বাড়ি থেকে বের করে দেও, ও কোথায় যাবে সেইটা তো আমাদের দেখার দরকার নেই।
ওর জন্য আমাদের বাড়ির বদনাম হবে, আজ রাহাত ভাই, কাল যে অন্য কোন না*গ*র ঢুকাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে তার থেকে ভালো ওরে বের করো।
কেয়া কিছু বলতে নিলে কেয়ার ছোট চাচীও কেয়াকে মারধোর করে বললো, তোকে ১০ মিনিট টাইম দিলাম, তোর জামা-কাপড় নিয়ে এখনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
কেয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো, চাচী আমার শরীরটা ভালো না ভীষণ খারাপ, এতো রাতে আমি কোথায় যাবো? একটু দয়া করুন।
তামান্না দাঁতে দাঁত চেপে বললো, কেনো? মা*** পাড়ায়। ওটাই তোর জন্য পারফেক্ট জায়গা রোজ রোজ নতুন খুদের পাবি।
কেয়ার শরীরটা ঘৃণায় গুলিয়ে উঠলো। সেই ছোটবেলা থেকে তাকে দেখছে তাও তাকে নিয়ে এমন কুৎসিত মন্তব্য কি করে করতে পারেন? ভেবেই দীর্ঘ শ্বাঃস ফেললো কেয়া।
তারপর সে নত কন্ঠে বললো,ঠিক আছে, তোমরা যাও আমি চলে যাবো আমার সব জিনিস পত্র নিয়ে।
একে একে সবাই চলে গেল৷ কেয়া কিছুক্ষণ বসে রইলো।
তারপর সে বিছানা থেকে নেমে আলমারিটা খুলে একে একে জামাকাপড় সব নামিয়ে বিছানার উপর রেখে তারপর ব্যাগটা নিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে সব কিছু ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে নিচ্ছে।
ঢুকানো শেষে বই পত্র গুলো আলাদা একটা ব্যাগে ভরে নিলো।
তপ্ত একটা শ্বাঃস ফেলে ভাবতে লাগলো দুটো ব্যাগ নিয়ে যাবে কি করে? ফোনে ব্যালেন্স নাই যে রিপুকে বা ইফাকে কল করবে।
রাত তো আর কম না ১২ টা বাজে। দুটো ভারি ব্যাগ এক মেয়ে মানুষ কিভাবে যাবে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে উঠলো কেয়া।
ঠিক তখনই নিচ থেকে ডাক উঠলো কেয়া, এই কেয়া দ্রুত বের হয় বলছি আর কত সময় নিবি? না কি এই খানেই সারা-রাত কাটানোর ধান্দা।
কেয়া উপরে দিকে তাকিয়ে বললো, ইয়া আল্লাহ্ তোমার ভরসাতে আমি একা একটি মেয়ে রাতে বের হচ্ছি, আমার সাহায্য করো।
অতঃপর কেয়া আর দেরি না করে ব্যাগ দুটো নিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
নিচে নামতেই কেয়ার চাচা - চাচী সবাই বলতে লাগলো, আপদ বিদে হচ্ছে।
যা যা তারাতাড়ি যা বাপু তোর মতো এমন দুশ্চরিত্র মেয়েকে আমার চোখের সামনে সহ্য হচ্ছে নে বাপু।
দ্রুত বিদায় হ দেখিনি।
কেয়া শেষবারের মতো বাড়িটি কে দেখে বের হয়ে গেলো।
চোখ দিয়ে তখনো অশ্রু নির্গত হচ্ছিলো। মাথাটাও অসম্ভব ঘুরছিলো।
হুট করেই কেয়া গড়গড় করে বমি করে দিলো।
রাস্তার টিউবওয়েল থেকে একটু পানি খেয়ে কুলকুচি করে, হাত মুখে পানি দিয়ে ব্যাগ দুটো নিয়ে আবার হাঁটা দিলো।
রাতে কিছু খায়নি, কিছু খায়নি বলতে ভুল ওরে কিছুই খেতে দেয়নি শুধু মাত্র ভাতটা একটু পুড়ে ফেলেছিলো বলে।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিলো আফসান জাহরান চৌধুরী।
বার বার চোখের সামনর ভেসে উঠছিলো কেয়ার মুখশ্রী।
কি সুন্দর দেখতে টানা টানা চোখ, লম্বা চুল, গোলগাল মুখ, সরু নাক, গোলাপের ন্যায় কোমল ঠোঁট জোড়া বড্ড মায়াবিনী এমন একটা মায়াবিনীকে যে কেউ এক দেখাতে ঘায়েল হবে যেমনটা হয়েছে আফসান।
তপ্ত শ্বাঃস ফেলে কফির মগে চুমুক দিতেই সশব্দে ওর ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনটা পকেট থেকে বের করে নাম্বারটা দেখে নিয়েই তারপর ভ্রু জোড়া কুঁচকে তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই, ওপাশ থেকে বলে উঠলো, ভাই, আপনি যার বাড়িতে নজর রাখতে বলেছিলেন না, ওনাকে দেখলাম ব্যাগ পত্র হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে।
কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। এখন কি করবো?
আফসান বললো,ফলো করো, দেখো কোথায় যাচ্ছে?
এভরি ডিটেইলস আমার চাই একটাও যেনো মিস না হয়, যদি মিস হয় তাহলে বুঝতে পারছো তো।
ছেলেটি ভয়ে একটা ঢোঁক গিলে বললো,জ্বী! ভাই মনে থাকবে।
আফসান ফোনটা কেটে দিয়ে নিজের পকেট ঢুকিয়ে নিয়ে নিজের মনে কিছুক্ষণ বিরবির করে তারপর রেডি হয়ে সেও বাহিরে বের হয়ে গেলো।
আফসান জাহরান চৌধুরী সে একজন রাজনৈতিকবিধ। তার শিরায় উপশিরায় রয়েছে জেদ।
প্রচন্ড রাগী আর গম্ভীর লোক।
সে তার বাবা-মা’র সাথে থাকে না একাই থাকে।
যার প্রতিটা পদক্ষেপে রয়েছে রহস্য আর অন্ধকার ঘেরা, লোকজন ওর নাম শুনলেই ওকে সবার আগে পাপিষ্ঠ বলতে ভুলে না।
কেউ তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস দেখায় না, তার আদেশই শেষ আদেশ।
সে যেইটা বলে সেইটাই করে।
থাকে থামায় এমন কোন মানুষ এই পৃথীবির বুকে এখনো পয়দা হয়নি নেই।
কেয়া অনেক কষ্ট করে দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে অবশেষে এসে পৌঁছালো রিপুর বাড়ি।
শরীরে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।
মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে।
অনেক কষ্টে রিপুদের মেইন ডোরে নক করলো কেয়া।
তিন থেকে চার বার অনেক জোড়ে জোড়ে নক করে তারপর মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
অনেক বার দরজা নক হওয়াতে রিপুর বাবা আসলাম সরকার দরজাটা খট করে খুলে দিলো।
দরজা খুলতেই তিনি দেখতে পেলেন, একটা অল্প বয়সী মেয়ে সিঁড়িতে অচেতন হয়ে পরে আছে। চুল দিয়ে মুখটা ডাকা।
তিনি কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না, তারপর তিনি একটু জোড়েই ওনার বিবিকে ডাকতে লাগলেন, ওগো শুনছো একটু আসতো দেখে যাওনা।
তিনি স্বামীর গলা শুনে ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে, রুম থেকে বের হয়ে লিভিং রুমে আসেন।
ওনার স্বামীকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলেন।
দরজার কাছে আসতেই দেখতে পেলেন অচেতন অবস্থায় পরে থাকা মেয়েটির দিকে যার চুল দিয়ে মুখটা ডাকা।
তিনি আর বিলম্ব না করে দ্রুত বসে পড়লেন দরজার সামনে সাত পাঁচ না ভেবে চুল মেয়েটির চুল গুলো মুখ সড়াতেই দেখতে পেলো কেয়াকে।
এতো রাতে কেয়া এমন ভাবে দেখে আতঙ্কে উঠলেন। কেয়াকে তিনি আগে থেকেই চিনতে, রিপুর সাথে বেশ আসা যাওয়া ছিলো।
তিনি ওনার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,ওতো কেয়া, রিপুর বন্ধু।
যার কথা রিপু আমাদের বলেছে।
ওকে তাড়াতাড়ি ধরো রুমে নিয়ে যেতে হবে দেরি করো না আমি রিপুকে ডাকছি।
রিপুর মা বাবা কেয়াকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। তারপর রিপুর মা রিপুকে ডাকতে থাকে।
মাঝরাতে মা-বাবার ডাক শুনে দ্রুত ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে পা চালিয়ে মা-বাবার রুমের দিকে ছুটে যায়।
রিপু তার মা-বাবার রুমে আসতেই দেখতে পেলো কেয়াকে।
গালে থাপ্পড়ে দাগ, ঠোঁট কাটা কি একটা অবস্থা যে যা বলার বাহিরে।
রিপু দৌড়ে কেয়ার কাছে যায় তারপর তার মা-বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
মা কি হয়েছে ওর ও এমন করে বিধস্ত অবস্থায় কেনো?
রিপুর মা রিপুর মাথায় হাত রেখে বললো, আমি নিজেও জানিনা। তবে হঠাৎ করেই দরজার নক করতে তোর আব্বা গিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখতে পেলো।
তারপর আমরা রুমে নিয়ে আসি, এখন তোর বাপ ডাক্তার আনতে গেছে। আচ্ছা মা তুমি একটু ওর পাশে থাকো আমি এখনি ইফাকে কল করে আসছি কথাটা বলে রিপু রুম ছেড়ে চলে গেলো নিজের রুমে৷
রুমে এসেই ফোনটা হাতে নিয়ে ইফার নাম্বার ডায়েল করে ইফাকে সবটা খুলে বললো৷
সবটা শুনে ইফা বললো,আমি এখনি আসছি তোরা থাক।
ডাক্তার এসে কেয়াকে চ্যাকআপ করছে।
ইফা আর রিপু এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবেশ বেশ থমথমে হয়ে আছে। ডাক্তারের কপালে ও চিন্তার রেখা দেখা দিলো।
ডাক্তার রিপুর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,ওনার হাসবেন্ডকে ডেকে আনুন, ওনি “প্রেগন্যান্ট”।
আকস্মিক ডাক্তারের এই কথাটা শুনে সকলে যেনো অবাকের চরম শীর্ষে চলে গেলো।
সকলের কানে বার বার বাজতে লাগলো ওনি “প্রেগন্যান্ট”।
ইফা আর রিপু একের অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেয়া কি বলবে ওরা আর এইটা শুনার পরে কেয়া ও বা কি রিয়েক্ট করবে?
ভেবেই কোন কূলকিনারা পাচ্ছে না। ওর সামনের দিন গুলো আরো কঠিন।
রিপু আর কেয়া তপ্ত শ্বাঃস ফেললো।
ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে রিপুর বাবার হাতে দিয়ে বললো এইখানে একটা টেস্ট আছে টেস্টটা করাবেন।
আর হ্যাঁ! মেয়েটি বেশ দুর্বল ওনার যত্ন নিবেন। এই সময় ওনার খেয়াল রাখাটা বেশি দরকার।
আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছি একটু পর জ্ঞান ফিরে আসবে।
তারপর ডাক্তার ওনার ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে নিয়ে ওটা রেডি করি কেয়ার গা এ পুশ করলো।
ডাক্তার একটু শ্বাঃস নিয়ে বললো, তাহলে আমি এখন আসছি যদি কোন প্রয়েজন পরে অবশ্যই ডেকে আনবেন।
ডাক্তার তার ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো।
ইফা বললো, এই রিপু এক কাজ করি ওকে আমরা চেঞ্জ করিয়ে দেই আর কতক্ষণই বা এই ময়লা জামাটা পড়ে থাকবে।
জামাতে অনেক ধুলোবালি লেগে আছে তুই এক কাজ কর গামছা ভিজিয়ে আন ততক্ষণে আমি ওর ব্যাগ থেকে জামা বের করে রাখি।
রিপু মাথা নাড়িয়ে গামছাটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আর ইফা ব্যাগ থেকে এক সেট জামা বের করে নিলো।
এরই মধ্যে রিপুর মা চলে গেছেন রান্না ঘরে কেয়ার জন্য দুধ গরম করতে
ইফা দরজাটা টেনে দিয়ে কেয়ার পাশে এসে বসে ততক্ষণে রিপু চলে আসে ভেজা গামছা নিয়ে।
দুই বান্ধবী মিলে ওর ড্রেসটা চেঞ্জ করিয়ে দিতে লাগলো।
বন্ধু হলে এমন বন্ধুই হতে যে বিপদে ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়াবে।
কেয়া, রিপু, ইফা ওরা সত্যিই ভালো বন্ধু যারা একে অন্যের বিপদে নিজেদের জান কোরবান করতেও পিছুপা হবে না।
বেশ কিছুক্ষণ হলো কেয়ার জ্ঞান ফিরেছে।
কেয়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখে সবাই যেনো একটু স্বস্তি পেলে ও আবার ভয় ও পাচ্ছে কারন সবটা শুনার পর কেয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে খাটের সাথে হেলান দিয়ে।
রিপুর মা এক গ্লাস গরম দুধ কেয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,খাও মা! এই গরম দুধটুকু খেয়ে নেও মা।
দেখবে তোমার শরীলটা ভালো লাগবে।
কেয়া একবার রিপুর মা'র দিকে তাকালো তারপর গ্লাসটা নিয়ে দুধের গ্লাসটা নিয়ে একটু একটু করে খেতে লাগলো।
রিপু ইফাকে বললো,কেয়া কোন রিয়েক্ট করচ্ছে না কেনো?
ইফা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো তারপর রূঢ় কন্ঠে বললো,তুই কি পাগল হয়ে গেছিস রিপু! এই খবরটা ওর যতনা আনন্দের ততই না ভয়ের কারন ও এখন একা নয় সাথে একটা প্রান বেড়ে উঠছে দেহের ভিতরে। এখন সে সিঙ্গেল মাদার বুঝতে পারছিস ওর জন্য পুরো বিষয় টা কত টাফ।
আমরা হয়তো ওকে সার্পোট দিবো কিন্তু আন্টিম্যাটালি পুরোটা ওকে লড়তে হবে।
রিপু দীর্ঘ শ্বাঃস ফেলে কেয়ার দিকে তাকায়।
গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট, রক্ত জমাট বেঁধে আছে ইশ্ মানুষ কত নিষ্ঠুর হলে এমন করতে পারে।
কেয়ার দুধটা খাওয়া হলে রিপুর মা রিপুর দিকে তাকিয়ে বললো,কেয়ার দুধ খাওয়া শেষ, ওকে তোর রুমে নিয়ে যা ওর এখন রেস্ট এরই দরকার আর ওকে চিলেঘরে থাকতে হবে না।
এইসময় মেয়েদের খুব সাবধানে থাকতে হয় এখন থেকে ওকে তোর রুমে রাখবি।
রিপু নিঃশব্দে মাথা নাড়ায়।
রিপুর মা কেয়ার মাথায় হাত দিতেই কেয়া ভয় পেয়ে যায়, সে একটু দূরে সরে যায়।
রিপুর মা তখন একটু হেসে নরম গলায় বললোভয় পেয়ো না মা! তোমার চুল গুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে তাই ভাবলাম একটু গুঁছিয়ে দেই।
কেয়ার আর দোষ কি? ও ভেবেছিলো ওর চুলের মুঠি ধরবে কারন কেউ তো আর ভালোবেসে যত্ন নিয়ে ওর চুল ধরে নি সবাই ধরে মারার জন্য তাই ও ভেবেছিলো ওনি হয়তো মারবেন।
ভয় পায় না মা।
রিপু যেমন আমার মেয়ে ঠিক তেমনি তুমি আর ইফাও আমার মেয়ে।
নতুন পরিবেশ তো বুঝি মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে, কিন্তু দেখবে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর রিপুর মা রিপুকে ইশারা করতেই রিপু এগিয়ে এসে কেয়া ধরে নিয়ে যেতে লাগল তার রুমে।
রিপুর পিছু পিছু ইফাও গেল।
রিপুর মার খুব খারাপ লাগলো কেয়াকে দেখে,এই অল্প বয়সে কত কিছুই না সহ্য করতে হচ্ছে মেয়েটাকে আল্লাহ্ ওর সহায় হোন।
আমিন।
রিপু কেয়াকে তার রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দিলো।
তারপর ইফার দিকে তাকিয়ে বললো, নে শুয়ে পড়ো এতো রাতে আর তোকে তোর বাড়িতে যেতে হবে না আমাদের সাথেই থেকে যা।
তুই বললেও থাকবো না বললেও থাকব।
ওই রাক্ষসী মহিলাটা আমাকে ঢুকতে দিবে না বলেছে।
তাই আর এই রাত দুপুরে ঝামেলা করতে চাইছিনা এইখানেই ঘুমাবো আর বাকিটা কাল দেখে নিবো।
— ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড় যা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি– কথাটা বলে রিপু ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুম এ।
ইফাও কেয়ার পাশে শুয়ে পড়লো।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিপু আসল লাইটটা নিভিয়ে, ড্রিম লাইটটা ও ও কেয়ার অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
শরীর ক্লান্ত থাকায় কেয়া অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
তিন বান্ধবী এক সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আফসান গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।
তেমন কিছু ভাবছে না, আবার ভাবছেও।
সিগারেটের ধোঁয়াটা ধীরে ধীরে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ওর চোখ আটকে আছে একটা জায়গায় রিপুদের বাড়ির ওপরতলার জানালায়।
জানালাটা খোলা।
ভেতরে কেয়া।
মেয়েটাকে দেখে মনে হলো অনেক দিন ঘুমায়নি।
চুল এলোমেলো, চোখদুটো ফোলা। মুখে কেমন একটা হারা-হারা ভাব।
আফসানের বুকের ভেতরে হালকা একটা কাঁপুনি খেলো।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বললো,খোঁজ নিয়ে দেখ তো, কী হয়েছে?
ছেলেটার নাম রিফাত।
রিফাত মাথা নিচু করে বললো,জ্বী ভাই, খবর তো নেবো, কিন্তু ঘরের ভিতরের খবরটা কেমনে নিবো?
আফসান একরকম হুঁশিয়ারি দেওয়া ভঙ্গিতে হেঁচকি দিয়ে বললো,পরের লোকই ঘরের খবর বেশি জানে। ঘটের বুদ্ধিটা একটু খাটা রে ভাই।
রিফাত একটু হেসে নরম গলায় বললো,
ভাই, এসব কথা আপনাকে মানায় না।
আপনার সামনেই তো নির্বাচন আপনার নাম আলোচনার শীর্ষে।
আপনি আমাদের ভবিষ্যতের এমপি।
আফসান হালকা একটা হাসি দিলো।
চোখদুটো তখনো জানালার দিকেই আটকে, কিছু বললো না আর শুধু একটা লম্বা শ্বাস ফেললো।
মনের ভিতরে জমে থাকা কষ্ট অনেক সময় ভাষা খুঁজে পায় না, শব্দে বলে হয়ে উঠে না কিছুই।
আফসানের অবস্থাটাও ঠিক তেমন।
ভাই, বাড়ি যাবেন না? অনেক রাত হয়েছে।
আফসান মাথা নাড়লো ধীরে।ন, যাবো না।
আজকের রাতটা এখানেই থাকবো।
যদি ওর দরকার পড়ে।
রিফাত একটু চিন্তিত মুখে আকাশের দিকে তাকালো।
মেঘ করে এসেছে, হাওয়া ভারী।
বললো,কিন্তু ভাই, আকাশ ভালো না।
বৃষ্টি এলে ভিজে যাবেন তো।
আফসান এবার তাকালো না।
শুধু গলায় একটুখানি ক্লান্তি মিশিয়ে বললো,গাড়ি আছে তো।
গাড়ির ভেতরেই থাকবো।
তুই বরং চলে যা।
রিফাত নিচু গলায় বললো,না ভাই, আমি যাবো না।
আপনাকে একা রেখে কোথাও যাওয়া যায়?
আফসান হালকা একটা হাসি দিলো।
কিছু বলতে চাইল, কিন্তু মুখ থেকে শব্দ বের হলো না।
গাড়ির দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে ভেতরে উঠে বসলো।
আকাশের গায়ে হঠাৎ একটা বিদ্যুৎ আঁচড় দিলো।
এক ফোঁটা, দু’ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।
গাড়ির ভিতরে বসে থাকা মানুষদুটো আর কথা বললো না কেবল চুপ করে আছে,একজন গভীর ভাবনা মগ্ন আর একজন কেবল তাকিয়ে হাবভাব বুঝার চেষ্টা করচ্ছে।
সকাল হতে না হতেই রিফাত জোর করে আফসানকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
আর নিজে থেকে গেলো, নীরব এক বডিগার্ডের মতো।
রোদের আলো জানালা গলে ঘরে এসে পড়েছে।
আলোর স্পর্শে ধীরে ধীরে ইফার ঘুম ভাঙলো।
চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাল সাতটা বাজে।
বাড়ি ফিরতে হবে না হলে মামী আবার শুরু করবে,
মনেই মনেই বললো সে।
এইসব দিন-দুনিয়ার টানাপোড়েনে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে ইফা।
মা মারা যাওয়ার পর বাবার আরেকটা বিয়ে
আর সেখান থেকেই শুরু ইফার জীবনের সরে যাওয়া।
সৎ মা তাকে মেনে নিতে পারেনি কোনোদিন।
একটা অদৃশ্য অস্বীকার যেন ইফার চারপাশে খাঁচা হয়ে জড়িয়ে আছে।
তাই তাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মাস শেষে কিছু খরচ পাঠিয়ে দায়িত্বটুকু সারা হয়ে যায়।
কিন্তু!
শুধু খরচাপাতিই কি সন্তানের জীবনের প্রয়োজন?
না, প্রয়োজন বাবার স্পর্শ, একটা ভালোবাসার ছায়া,
প্রয়োজন এমন কেউ, যে বলবে, থাক, আমি আছি।
ইফার এসব কিছুই ছিল না।
না ছিলো আগলে রাখা হাত, না ছিলো আদরে জড়িয়ে রাখার মানুষ।
স্মৃতি কিংবা বর্তমান সবটাই ফাঁকা, নির্জন।
এইসব ভাবতে ভাবতেই একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাঃস ফেললো সে।
তারপর চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে ইফা ধীরে ধীরে রিপুকে ডাকতে লাগলো।
আওয়াজটা খুব নিচু স্বরে, যাতে কেয়ার ঘুম না ভাঙে
ওর ঘুমের এখন খুব দরকার।
রিপু চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলো।
ঘুমজড়ানো গলায় বললো,কী রে, ডাকছিস কেন?
আমি বাড়ি যাচ্ছি।
তুই একটু মেইন ডোরটা লক করে দে।
আর কেয়ার খেয়াল রাখিস।
রিপু একটু বিরক্ত গলায় বললো,
এত সকালে চলে যাচ্ছিস?
অন্তত নাস্তাটা করে যা।
ইফা মাথা নাড়িয়ে বললো, না, যেতে হবে।
তুই জানিসই তো, দেরি করলে ঝামেলা হবে।
রিপু ছোট করে একটা 'হুম' বললো।
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, পৌঁছে একটা কল দিস, কেমন?
আচ্ছা।
এরপর আর কিছু না বলে ইফা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
পেছন পেছন রিপুও বের হলো।
মেইন ডোরটা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো ইফা।
আর রিপু দরজাটা বন্ধ করে, চুপচাপ আবার ঘরে ফিরে গেলো।
এত সকালে ইফাকে একা রাস্তায় বের হতে দেখে রিফাতের কপালের ভাঁজ আরও গভীর হলো।
ভ্রু কুঁচকে একবার রিপুদের বাড়ির দিকে তাকালো,
আবার তাকালো ইফার দিকে।
মনেই বললো,এইটাই সুযোগ ওর পেট থেকে কিছু একটা বের করতেই হবে।
যেই ভাবনা, সেই কাজ, রিফাত ছুটে ইফার পেছনে লাগলো।
একদম পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
হঠাৎ পাশ ঘেঁষে কারো ছায়া টের পেয়ে ইফা থেমে দাঁড়ালো।
ঘাড় কাত করে তাকাতেই দেখলো, লম্বা-চওড়া, গায়ের রঙ উজ্জ্বল একজন অপরিচিত ছেলেকে।
ইফার চোখ সরু হয়ে এলো।
এই ছেলেটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
ধান্দাটা কী? কোনো বদমতলব তো নয়? মনে মনে সন্দেহ জমতেই মুখে কপট নির্লিপ্তি।
সে আবার হাঁটতে শুরু করলো দ্রুত।
কিন্তু ছেলেটাও পিছু ছাড়লো না।
রিফাত আবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, আচ্ছা, বাজারটা কোন দিকে বলতে পারবেন, মিস?
আমি আসলে এই এলাকায় নতুন, তাই কিছু চিনে উঠতে পারছি না।
আপনি যদি কাইন্ডলি বলে দিতেন, খুবই উপকৃত হতাম।
ইফা থেমে দাঁড়ালো।
চোখ তুলে রিফাতের দিকে তাকালো।
তীক্ষ্ণ, খুঁটিয়ে দেখা এক দৃষ্টি।
তারপর কোমরে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বললো, এত সকালে বাজার খুলবে না।
বাজার বসে সকাল ১০টায়।
ওহ্! আমি জানতাম না।
এখন জানলেন তো।
তাহলে সরুন, এইখান থেকে।
রিফাত মনে মনে বললো,জল্লাদ! একেবারে জল্লাদ মেয়ে!
তবুও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললো,আরে মিস, এত চটছেন কেন?
আমি তো শুধু জানতে চাইছি।
ইফা এবার ঠাণ্ডা গলায় বললো,বাজারের ব্যাগ ছাড়া মানুষ বাজারে যায়?
আমাকে বাচ্চা পেয়েছেন নাকি যে এই ভুজুংভাজুং দিবেন, আর আমি বুঝবো, ধান্দাটা কী আপনার?
না না, কোনো ধান্দা নেই।
আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে।
ইফা ভ্রু কুঁচকে বললো,তাহলে ঠিকটাই বুঝিয়ে বলুন, আমিও বুঝি।
এত সকালে রাস্তায় একটা মেয়ে দেখেই শুরু হয়ে গেলো জাউরামি।
শুনুন, এমন কেলান কেলাবো যে, ল্যাম্পপোস্টের ল্যাম্প বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবো!
রিফাত এবার সত্যি সত্যি চুপ করে গেলো।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে, একদৃষ্টিতে তাকালো ইফার দিকে।
তারপর ঠান্ডা গলায় বললো,আপনি আমার কাছে অতিনগণ্য একটা পিঁপড়ে।
একটিপে পটল তুলবেন।
আর আপনি আমাকে মারবেন?
হাহ্, হাউ ফানি!
শেষ কথাটা বলে বেশ লম্বা একটা হাসি দিলো।
সেই হাসিতে ছিল একপ্রকার ব্যঙ্গ
ইফার ভেতরটা রাগে কাঁপতে লাগলো।
মুখটা লাল হয়ে উঠলো।
জিভে ছুরি উঠে এসেছে, কিন্তু সময়ের কথা মনে পড়লো।
বেলা বাড়ছে, বাড়ি ফিরতে হবে।
এই ছেলেটার সঙ্গে একঘন্টা কথা কাটাকাটি করেও লাভ নেই।
সে আর কিছু না বলে চোখ সরিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলো।
রিফাত আর পিছু গেল না কারন এইটুকু সময়তে বুঝে গেছে এই মেয়ে সহজ নয়।
তাকে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে
0 Comments