ইচ্ছের প্রণয়|পৃথী আক্তার| শেষ পর্ব

ভালবাসার গল্প: ইচ্ছের প্রণয়! পৃথী আক্তার! শেষ পর্ব

নিস্তব্ধ রাত, চারপাশে শুনশান নীরবতা,সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন তখন দুপান্তে  দু’জন মানুষ জেগে আছে।

একজনের হৃদয়ে চলছে প্রবল যন্ত্রণা, অন্যজনের মনে জাগছে নতুন অজানা এক অনুভূতি।

আহাদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।  কতগুলো তাঁরা আকাশ মাঝে জ্বলজ্বল করছে। আহাদের মনে চলছে নিঃসঙ্গতা একাকীত্বের বেদনা। অন্তরটা পুড়ে খাঁ খাঁ করছে।

আর এদিকে ইচ্ছের চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু পড়ছে

কানে বাজছে তখনকার আহাদের বলা কষ্টগুলোর

কথা। কোমল পাতলা ঠোঁট গুলো কান্নার কারণে

লাল টকটকে হয়ে গেল। দন্ত দ্বারা নিচের ঠোঁটটি

কামড়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় বিরবির করে বলছে,

আপনার এত কষ্ট আহাদ স্যার! আপনাকে দেখে

আমি কখনো বুঝিনি আপনার ভেতরে এত কষ্ট লুকিয়ে থাকতে পারে। এত যন্ত্রণা নিয়ে আপনি কিভাবে আছেন আহাদ স্যার?! আ..... আমি শুধু ভাবতাম আমার কষ্ট আছে । নিজেকে হারানো ভয় ,

পরিবারকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণায় আমি কতরাত   কাঁদতাম অথচ আপনি আগেই আপনার পরিবারকে হারিয়েছে। আচ্ছা আপনিও কি আমার মতো কান্না করতেন? আপনি তো আমার থেকে বেশি কান্না করেছেন তাই না?আমার পরিবার আছে। আর আপনার কেউ নেই। ইচ্ছে নাক টানছে আর গুনগুন করে বলছে।

আপ.... আপনার জন্য আমার মন এত কাঁদে কেন বলতে পারবেন? কেন আপনার দুঃখ গুলো শুনে আমার বুকের ভেতর কষ্ট হচ্ছে?  লোকে বলে

যার দুঃখে আমাদের বুক ফাটে তার প্রতি নাকি আমাদের অনুভূতি আছে। আবার যার সাথে থাকলে আমাদের মন ভালো লাগে তাকে নাকি আমরা ভালোবাসি । আচ্ছা আহাদ স্যার আপনার কথা আমার

মাথা থেকে একদম বেরোয় না।  আপনাকে না দেখলে আমার মনটা কেমন আনচান করে। তবে কি আপনার জন্য আমার এই ছোট্ট মনে অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে?!

ইচ্ছে আবার কিছুক্ষণ ভেবে বলল, হু আমি আপনাকে খুব ভালোবাসে ফেলেছি আহাদ স্যার আপনার  নিঃসঙ্গতা কাটাতে আমি থাকবো আপনার পাশে। কিন্তু আপনি কি আমাকে জায়গা দেবেন আপনার কুটিরে।

আরো একসপ্তাহ বেশি চলে গেছে, ইচ্ছে এখন একটু সুস্থ। আজ ইচ্ছের রিলিজ ডেট কিছুক্ষণ পর ইচ্ছে চলে যাবে নিজের বাড়িতে। এই কটা দিনে ইচ্ছের আহাদের প্রতি অনুভূতি আরো গভীর হয়েছে। ও বুঝে গিয়েছে ওর অনূভুতি সম্পর্কে। এই কদিনে ও না না ভাবে  জ্বালিয়েছে আহাদকে। কখনো ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না করেছে আবার কখনো আহাদকে সরাসরি বলেছে, হ্নদয়হীন ডাক্তার আপনি খুব সুদর্শন। আপনি কাকে বিয়ে করবেন? নিশ্চয়ই,

কোনো বুড়ি মহিলাকে। তার থেকে কিন্তু আমি যুবতী সাথে সুন্দরী মেয়ে।চাইলে আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারেন। লোকে আপনাকে বলবে না কোনো বুড়ি মহিলার জামাই বলে ইচ্ছে খিলখিল করে হেসে দিল।আহাদ তখন হতভম্ব । ইচ্ছেও সাথে সাথে একটা ধমক খেয়েছিলো আহাদের থেকে। আহাদ মনে মনে ইচ্ছের কথায় বেশ হাসি পেলেও সে মজা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলো । বেচারা ইচ্ছের মুখটা একেবারে চুপসে গেলেও  আহাদের পিছু ছাড়েনি বরং আরো বেশি দুষ্টুমি করেছে।

কিরে ইচ্ছে এভাবে বসে আছিস কেন? বাড়ি যাবি না

নাকি এখানেই সারা জীবন থাকার প্ল্যান করেছিস।

মনে হচ্ছে তো এখানেই ঘাটি গেড়ে বসবি?

আকস্মাৎ মায়ের ডাকে ইচ্ছে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। এক ঝটকায় ঘুরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

ও আম্মু তুমি!

হুম আমি। কেন কোন ভাবনায় ডুবে ছিলি তুই ?সেই কখন থেকে বলছি চল। মায়ের কথায় ইচ্ছে একটু থতমত খেয়ে গেল। মুখে একটু হাসি একে বললো,

সব কিছু গোছানো শেষ?

হুম ,চল এবার।

হুম চলো বলে ,এগিয়ে যেতে ইচ্ছের হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো যা এখন বলা দরকার নয়তো সময় শেষ হয়ে যাবে।

আম্মু তুমি যাও । আমি একটু পর আসছি বলে ইচ্ছে দৌড়ে ছুটে চলে গেল। আর এদিকে ওর মা হতভম্ব।

এই , হ্নদয়হীন ডাক্তার আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন? 

অকস্মাৎ ইচ্ছে কথায় আহাদ ফাইল থেকে মুখ উঠিয়ে ইচ্ছের দিকে তাকালো। ইচ্ছের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ইচ্ছের কথা বোঝার জন্য।

ইচ্ছে একটি চেয়ার নিয়ে এসে বসলো আহাদের মুখোমুখি। এরপর মুখটাকে একটু সিরিয়াস করে বললো,

আমার মনে হয় কি জানেন আপনার সত্যি হ্নদয় নেই।

হয় আপনি আমার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতেন

নয়তো আপনি আমার অনুভূতি বুঝেও না বুঝে আছেন। এখন আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার অনুভূতি সম্পর্কে সব জানেন।

আহাদ থমকে গেল ইচ্ছের কথায়। ও জানে ইচ্ছে অনুভূতি সম্পর্কে। প্রথমে ইচ্ছের কথায় পাত্তা না দিলেও পরে ইচ্ছের কথাবার্তা আচরণে আহাদ ঠিকই

টের পেয়েছে। তখন থেকেই ইচ্ছেকে এড়িয়ে চলছে।

এই হ্নদয়হীন ডাক্তার আপনি একটিবার আমাকে জায়গা দেবেন আপনার ঐ ভাঙা হ্নদয়ে ? কথা দিচ্ছি সারা জীবন থেকে যাবো আপনার বক্ষ মাঝে।

আপনি কি আমাকে থাকতে দিবেন আপনার নীড়ে?

আমি কিন্তু রাজি আছি থাকতে আপনার একাকীত্ব জীবনের সঙ্গী হতে। আপনি কি হবেন আমার পরিবারের সদস্য? ইচ্ছে কাতর কন্ঠে বলে একটু থামে

আবার বলতে শুরু করে,

আমি আপনাকে স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই আমি আপনাকে ভালোবাসি আহাদ স্যার। আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি হ্নদয়হীন ডাক্তার। আমার  ছোট্ট মনটাকে যে আপনার নামে সঁপে দিয়েছে।

আহাদ নির্বাক । চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে চেয়ারে। ইচ্ছের কথাগুলো এতক্ষণ শুনছিল

ইচ্ছের শেষ কথা শোনা মাত্র মাথা উঁচু করে তাকালো

ইচ্ছের দিকে।

ইচ্ছে তুমি কি জানো তুমি কি বলছো? তুমি যেই কথাগুলো বলছো এগুলো তুমি মোহে পড়ে বলছো।

তোমার  সময়টা  রঙিন । তুমি চারপাশে রঙিন দেখবে

আর এগুলো মাঝে নিজেকে কল্পনায় ভাসাবে।

নাহ.... আমি মোহে পড়িনি। আমি... আমি ভালোবাসি আপনাকে।

আহাদ এবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার

পাশে যায়। ও ওখান থেকে ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠে,

তুমি মোহে পড়েছো ইচ্ছে।এটা কোনো ভালোবাসা না। এটা  হয়তো তোমার সাময়িক ভালোলাগার অনুভূতি। আমি চাই না তুমি এই অনুভূতিকে ভালোবাসা ভেবে নিজের জীবন নষ্ট করো। তাছাড়া তোমার আর আমার বয়সের ব্যবধান দেখেছ আমি তোমার থেকে প্রায় চৌদ্দ বছরের বড়। তোমার সাথে আমার যায় না ইচ্ছে।

ইচ্ছে ও উঠে আহাদের দিকে এগিয়ে যায়।ওর মনে চলছে ভয়। ঠোঁট গুলো কেমন কাঁপছে। তবুও নিজেকে 

স্বাভাবিক করে বলে,

ভালোবাসা তো আর বয়স সময় দেখে হয় না আহাদ স্যার। হুট করে প্রনয় এসে ধরা দেয় আমাদের জীবনে। আমি আপনার বয়স , সৌন্দর্য দেখে  ভালোবাসিনি

আমি আপনার ব্যক্তিত্ব দেখে ভালোবেসেছি।

আপনি দয়া আমার ভালোবাসা গ্ৰহন করুন  আহাদ স্যার। কথা দিচ্ছি সারা জীবন আপনাকে ভালোবাসে যাবো।

আমি দুঃখিত ইচ্ছে তোমার অনুভূতিকে আমি সম্মান করি কিন্তু তোমাকে এখন গ্ৰহন করতে পারবোনা। বলে আহাদ ইচ্ছের চোখের দিকে তাকালো।

আহাদ কথাটা শ্রবণেন্দ্রিয় হতে ইচ্ছের বুকটা ধক করে উঠলো। বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি হলো। চোখ থেকে আপনা আপনি অশ্রু গড়িয়ে কপোল বেয়ে পড়লো। আমি কি এতোই ছোট?! আমাকে কি বিয়ে করা যায় না?! আমি হয়তো তার যোগ্য নই!সত্যি তো আমি তো তার ধারের কাছেও যেতে পারিনা। তার উপর আবার আমার হার্টে সমস্যা আছে। কতদিনই

বা বাঁচবি তুই ইচ্ছে । তুই এতো বোকা কিভাবে হলি । একবারও এই কথাগুলো ভাবা উচিত ছিল কথা গুলো ইচ্ছে বিরবির করে বলে আহাদের দিকে তাকিয়ে,

নিজের চোখের পানি দুহাত দিয়ে মুছে, মুচকি হেসে বললো,

আমি দুঃখিত আহাদ স্যার । এভাবে আপনাকে বিরক্ত করে আপনার মূল্যবান সময় হয়তো নষ্ট করেছি।

আ... আমি খুবই দুঃখিত। আ.... আপনি ভালো থাকবেন। ইচ্ছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল । কথা গুলো বলতে যেন গলায় আটকে যাচ্ছে । ইচ্ছে নিজেকে শক্ত

করে একবার আহাদের দিকে তাকিয়ে ঘুরে দরজার দিকে যেতে ধরলো।

হঠাৎ হাতে টান পড়ায় ইচ্ছে থেমে গেল । ইচ্ছের শরীর

শিরশির করে উঠলো। হাতের দিকে তাকাতে ইচ্ছা থমকে গেল। আহাদ ইচ্ছের হাত শক্ত করে ধরে আছে।

আহাদ এক ঝটকায় ইচ্ছের হাত টেনে ওর কাছে নিয়ে আসলো। ইচ্ছে থমকে গেল।ভ্রু কুঁচকে আহাদের দিকে তাকাতে,

এভাবে নিজেকে হেয় করে চলে যাচ্ছ কেন ইচ্ছে?

তুমি কি ভেবেছ আমি তোমার কথা শুনতে পারবোনা?

আমি তোমার বির বির করে বলা প্রতিটি কথা শুনতে

পেরেছি। কি  যেন বলেছিলে তুমি, তুমি আমার  যোগ্য নও?তুমি আর কতদিন ই বা বাঁচবে?! আহাদ রেগে হিসহিসিয়ে খানিকটা ব্যঙ্গ করে বলে। 

সিরিয়াসলি ইচ্ছে  তুমি এগুলো বলছিলে? বলে এবার আহাদ হালকা হাসলো। কিন্তু এই হাসির মানে ইচ্ছে বুঝলো না ।ইচ্ছে হা করে তাকিয়ে আছে আহাদের দিকে। কান্নার কারণে চোখ গুলো লাল লাল হয়ে ফুলে উঠেছে ।

আহাদ ইচ্ছে দিকে তাকিয়ে হুট করে ইচ্ছের কোমড়ে হাত রেখে আরো কাছে টেনে আনে  ।ইচ্ছে শরীরটা সাথে সাথে কেঁপে উঠল। আহাদ তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।

এরপর ইচ্ছের চোখের দিকে তাকিয়ে, তুমি জানো ইচ্ছে তুমি আমার কাছে কি? আহাদ একটু থেমে লো

ভয়েসে বলে,

ইচ্ছে তুমি আমার কাছে একটি ছোট পৃথিবী। আমার 

মনে গহিনে লুকিয়ে থাকা একটুকরো ভালোবাসা ।

তুমি আমার ভালো থাকার কারণ ইচ্ছে।

আহাদের কথাগুলো শ্রবণেন্দ্রিয় হতে ইচ্ছে তৎক্ষণাৎ আহাদের চোখের দিকে তাকালো ফলস্বরূপ দুজনের 

নয়নের মিলন ঘটলো। ইচ্ছে থমকে গেছে। আহাদের

কথা গুলো বোঝার প্রয়াস করছে।

ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকাতে, ইচ্ছে তুমি কি আমার 

নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হবে? তুমি কি থাকবে আমার 

পাশে সারাজীবন? আমার একাকীত্ব  জীবনটাকে 

কাটিয়ে একটি সুন্দর জীবন দিতে? তুমি যদি থাকো

পাশে কথা দিচ্ছি সারা জীবন আগলে রাখবো বক্ষ

মাঝে। আহাদ ইচ্ছের বলা কথাগুলোকে রিপিট করে

বললো।

ইচ্ছে স্তব্ধ ,থমকে গেছে। আহাদের কথা গুলো শুনে ওর মনে হচ্ছে ও এতক্ষণ ভুল শুনলো। ইচ্ছে কাঁপা কাঁপা গলায় আহাদ কে‌ বললো,

আপ.... আপনি এসব কি বলছেন আহাদ স্যার?

কেন তুমি এই মাত্র যা শুনলে আমি তাই বলেছি?

ওয়ান সেকেন্ড তুমি আবার আমার কথা না শুনে অন্য জগতে ছিলে নাকি? তাহলে তো সর্বনাশ ! আমাকে আবার কথাগুলো রিপিট করতে হবে। আহাদ  হেঁয়ালি 

করে হেসে বললো।

কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন , আপনি আমাকে গ্ৰহন

করতে পারবেন না। আপনি আমাকে ভালবাসবেন না।

কে বলেছে আমি তোমাকে গ্ৰহন করতে পারবোনা?

কেন আপনি তো বলেছিলেন?

ইচ্ছে তুমি মনে হয় আমার কথা ভালোভাবে শুনতে পারোনি। আমি বললাম  আমি তোমাকে এখন গ্ৰহন করতে পারবোনা। তার মানে এই নয় যে আমি তোমাকে  কখনই গ্ৰহন করবো না।

মানে?! ইচ্ছে আহাদের কথায় অবাক হয়ে জানতে চাইলো।

আহাদ মুচকি হেসে, ইচ্ছে  আমি  আগে থেকে জানতাম তুমি আমাকে নিয়ে কিছু অনুভব করো ।

সত্যি বলতে আমি তোমাকে তোমার আগে থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।  তোমার বয়সের কথা ভেবে আমি নিজেকে বারবার বুঝিয়েছি। কিন্তু এই দুষ্টু মন কখনো মানতে চায় নি। বার বার তোমার কাছে ছুটে এসেছে। ইচ্ছে তুমি কি জানো?! আমি প্রতিদিন তোমাকে দেখতে এসেছি। তুমি যখন ঘুমিয়ে থাকতে 

আমি তখন আড়ালে লুকিয়ে থেকে তোমাকে দেখতাম। তুমি কখনো ভেবে দেখেছ ,কেন আমি বারবার তোমার আশেপাশে থাকতাম? তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম? কারণ আমার ভালো লাগতো তোমার পাশে থাকতে , তোমার বলা প্রতিটি কথা আমার হ্নদয়কে স্পর্শ করেছে। তোমার কন্দনরত মুখ আমার মনে অশান্তি সৃষ্টি করেছে , তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা কোমল হাসি 

আমার হ্নদয়ে প্রশান্তির প্রতিচ্ছবি।

আমি বারবার তোমার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি

কিন্তু  পরমুহূর্তে আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি ।  আমি যখন জানলাম যে তোমার মনে আমার জন্য অনূভুতি আছে জানো তখন আমার মনে কত আনন্দ হয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন তোমাকে আমার বক্ষ মাঝে লুটে নেই। তোমাকে আমি ভালোবাসি!!!!

তোমার প্রতিটি শব্দকে আমি ভালোবাসি!!! হ্যাঁ ইচ্ছে, আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেক বেশিই ভালোবাসি  

যা তোমার ধারনার বাইরে।

ইচ্ছে বিস্মিত!! আহাদের বলা প্রতিটি কথা মনে হলো 

ওর মনে গেঁথে গেছে। আবার হ্নদয়ে ভালোলাগার দোলা দিলো। হুট করে চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু 

গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ইচ্ছে হাও মাও করে কাঁদতে শুরু করলো।

আচমকা ইচ্ছের এমন কান্নায় আহাদ হকচকিয়ে গেল 

ইচ্ছের দু বাহু জড়িয়ে ধরে ইচ্ছের মুখটা আলতো করে উপরে দিয়ে উঠিয়ে লো ভয়েসে জিগ্যেস করলো,

ইচ্ছে কান্না করছো কেন? তুমি কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে? তাহলে আমি সরি।

ইচ্ছে এবার আহাদকে দূরে ধাক্কা দিয়ে রেগে বললো,

নাহ!!!কষ্ট কেন পাবো? আমার কি কষ্ট বলতে কিছু আছে নাকি?। আপনি আ... আমার অনুভূতিকে মোহ বলেছেন। সাময়িক ভালোলাগা বলেছেন। আপনি আমাকে রিজেক্ট করেছেন। এই প্রথম কাউকে ভালোবাসার কথা বললাম সে আমাকে রিজেক্ট করলো

তাতে আমার কষ্টটা আপনি কি বুঝবেন। আপনি তো হ্নদয়হীন ডাক্তার। ইচ্ছে কন্দনরত অবস্থায় আহাদকে বললো,

আহাদ এগিয়ে এসে ইচ্ছেকে আবার জরিয়ে ধরে আগলে নিল। আমি দুঃখিত ইচ্ছে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু তোমার মনোভাব বুঝতে আমি তোমাকে 

ঐ কথাগুলো বলেছি । কারণ তোমার বয়সটা অল্প।

পরে তোমার যদি মনে হয় তুমি ভুল করেছো তখন আমার নিজেকে দোষী মনে হবে। আমি চাইনি তুমি 

ভুল করো।

ইচ্ছে এবার একটু শিথিল হলো । আহাদের কথার মানে বুঝতে পারল । ও আহাদকে জরিয়ে ধরা অবস্থায় বললো,আমি কোনো ভুল করেনি আপনাকে বেছে। আর না ভবিষ্যতে আপনাকে ছাড়বো।  আপনি আমার 

হ্নদয়টাকে টুকরো টুকরো করেছেন। আপনি অপরাধী।

তাই আপনার অপরাধের শাস্তি হলো আমাকে আপনার 

হ্নদয়ে জায়গা দিতে হবে।

আহাদের মনের ভেতর প্রশান্তি অনুভব করলো। ইচ্ছেকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।এরপর কিছুক্ষণ নিরব থেকে হুট করে কাউকে ফোন দিয়ে,

হ্যালো আব্বু , মেয়ে  কিন্তু স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এবার দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করুন আর বৌটাকে আমার হাতে তুলে দিন । আমি কিন্তু এখন আর দেরি করবো না বলে আহাদ ফোনটা রেখে দিল।

ইচ্ছে হা করে তাকিয়ে আছে আহাদের দিকে। 

কা....কাকে ফোন দিলেন?

কেন তোমার সামনেই তো সম্বোধন করলাম।

কিন্তু আপনার তো.......

কিছুক্ষণ আগে  কে যেন আমাকে বলেছিল তার পরিবারের সদস্য হতে সে হয়তো ভুলে গেছে ? আহাদ ইচ্ছের কথাকে শেষ না করতে দিয়ে  বললো।

ইচ্ছে হকচকিয়ে গেল। আহাদ কথার মানে বোঝার চেষ্টা করতেই চোখ বড়বড় করে তাকালো আহাদের দিকে।

মানে আব্বু!!!!! আপনি আ.. আব্বুকে ফোন দিয়েছেন

ইচ্ছে আবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

আহাদ ঠোঁট কামড়ে হাসছে।

আহাদের হাসি দেখে ইচ্ছের চোখে মুখে ভয় দেখা দিলো। ঠোঁট গুলো কেমন কাঁপছে। 

আহাদ ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হেসে বলল,

ইচ্ছে তুমি তো দেখি ভয় পাচ্ছ। আমাকে ভালোবাসি

বলতে তোমার ভয় লাগেনি অথচ বাপের নাম নিতে ভয় পেতে শুরু করলে । একেই বলে মেয়ে জাতি।

বলে আহাদ এবার জোরে জোরে হেসে দিল।

ইচ্ছে এবার রাগী দৃষ্টিতে আহাদের দিকে তাকিয়ে,

আপ....

হুস , ইচ্ছের  কথাকে শেষ করতে না দিয়ে ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে এরপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

তোমাকে একটা সিক্রেট বলি, তোমার বাবা মাকে আমি তোমার ব্যাপারে আগেই কথা বলেছি। তারা প্রথমে রাজী না হলেও পরে আমার দিক বিবেচনা করে বলেছে যে যদি তুমি কখনো রাজি হও তবেই তোমাকে 

আমার কাছে তুলে দিবে। তারা তো আর জানে না 

তাদের মেয়ে আমাকে মন দিয়ে বসে আছে। আর আমি এদিকে  প্ল্যান করি যেন তুমি নিজে এসে বলো। তাই তোমাকে ইগনোর করেছি। প্ল্যান টা যে এভাবে এত দ্রুত সাকসেস হবে আমি কল্পনাও করিনি।

ইচ্ছে স্তব্ধ। আহাদের কথায় বিরাট শক খেয়েছে। আহাদ যে এত বড় খেলোয়াড় ইচ্ছে কল্পনাও করে নি। ইচ্ছে আহাদের দিকে তাকাতে দেখতে পেল আহাদ মুচকি মুচকি হাসছে । হুট করে এক চোখ টিপ দিয়ে,

কি শক খেয়েছে? শক খেতে হবে না। তুমি শুধু আমার।

জানো ইচ্ছে, জীবনে অনেক আপন প্রিয় মানুষ হারিয়েছি, কিন্তু তোমাকে হারাতে চাই না।

আমার নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হিসেবে তোমাকে চাই।অনেক তো একা থেকেছি। এবার না হয় তুমি আমার ছোট্ট কুটিরে জায়গা নিলে। পূর্ণ করলে আমার ঘর।

কি থাকবে না আমার পাশে সারাজীবন?

ইচ্ছের এবার কেমন যেন লজ্জা লাগছে। আহাদের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে  হালকা হেসে করে উত্তর দিলো, এই হ্নদয়হীন ডাক্তার আমি থাকবো সারাজীবন যদি আপনি আমাকে রাখেন আপনার হৃদয়ের গভীরে ,আপনার বুকের মাঝে যত্ন করে।

তাহলে রেখে দিবে তোমার হ্নদয়হীন ডাক্তার তোমায় তার বুকের গহীনে যত্ন করে বলে আহাদ ইচ্ছের কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। এরপর ইচ্ছে করে আলতো করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে জড়িয়ে ধরল। ইচ্ছেও হালকা হেসে পরম আবেশে চোখ বুজলো। ইচ্ছে আনন্দ লাগছে শান্তি লাগছে ওর হ্নদয়হীন ডাক্তার ওকে ভালোবাসি বলেছে।ওকে হ্নদয়ের মাঝে জায়গা দিয়েছে এর থেকে প্রশান্তি আর কিছু আছে। ইচ্ছের প্রনয়ের পরিনয় হতে চলেছে যে।

Congratulation........  🎉👏🎊

অকস্মাৎ কতগুলো  কন্ঠে ইচ্ছে ও আহাদ  ছিটকে সরে গেল। দরজার দিকে তাকাতে দেখতে পেল 

রাফাত, ডঃ মেহরিন,ডঃ শরিফ আহমেদ ,ডঃআনোয়ার হোসেন , আরো অনেক ডাক্তার,নার্স । সাথে 

ইচ্ছের বাবা মা ও আছে। ইচ্ছে সবার সামনে একটু লজ্জা পেল। সবাই এগিয়ে এসে আহাদ ও ইচ্ছেকে 

নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা জানালো।

ইচ্ছের প্রনয় টা হুট করে এসে ধরা দিয়েছিলো এই হসপিটালের প্রাঙ্গণে। শত দুঃখ বেদনা আর একচিলতে হাসির মধ্যে দিয়ে পরিনয় হলো ইচ্ছের প্রনয়ের ।


                               ~সমাপ্ত~


কেমন লাগলো? জানি গল্পটা ছোট হয়েছে । আসলে এখানে গল্পের শেষ নয়,আপনারা যদি কখনো চানআ হাদ- ইচ্ছেকে আমি অবশ্যই ওদের নিয়ে আসবো।

এখন আমি নতুন গল্প শুরু করতে চাইছি।

আপনারা পাশে থাকলে আমি কলম ধরবো,ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের অনুভূতি কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু!

Post a Comment

0 Comments