ভালবাসার গল্প: আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-৩
শাহরিয়ার ম্যানশনের বিশাল রান্না ঘরে রান্না করছে মায়া। রান্না ঘরটাও ভীষণ সুন্দর। রান্নার কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম রাখা। মায়া কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দেখলো। তারপর লেগে গেলো কাজে। রুবি কোথায় কি আছে সব কিছু দেখিয়ে দিলো। মায়া এই ত্রিশ মিনিটে কি রান্না করবে ভেবে পেলো না যদিও ও রান্নাটা ভালোই করে। তাই ফ্রিজ থেকে সবজি বের করে ডালে চালে করার সিদ্ধান্ত নিলো। মনে মনে একবার ভাবলো, ওই বড়োলোকের রাজপুত্র আবার খিচুড়ি খাইতো? তারপর ভাবলো খেলে খাক না খেলে না খাক। ওর তাতে কি? দিয়েছে তো আদ ঘন্টা সময়। এক মাত্র এটাই রান্না করা সহজ হবে ওর জন্য। আর মায়া খিচুড়ি খেতে খুব ভালোবাসে তাতে শীতকালই হোক বা গ্রীষ্ম বা বর্ষা। এটা ওর ফেভারিট খাবার তাই প্রথমে এই খিচুড়ি রান্না করার কথাই ওর মাথায় এসেছে।
মায় মাথা থেকে ওরনা খুলে তা কোমড় পেঁচিয়ে নিলো একদম কাজের বুয়াদের মতো। তারপর একমনে লেগে গেলো রান্নার কাজে। এদিকে বাড়ির বাকি সার্ভেন্টরা তো অবাক হয়ে দেখছে মায়াকে। ভাবছে এতো সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ওদের রান্না ঘরে কোথা থেকে টপকালো?
রুবিও অবাক হয়ে দেখছে মায়াকে। ভাবছে, গোলগাল পুতুলের মতো মেয়েটার এই কাজের দরকার পড়লো কেন? মেয়েটার কি বাবা মা নেই। নাকি ওই মেয়েটাও কোনো অসহায় পরিবারে? কি তার পরিচয়? আর স্যার তো ওকে রান্না করতে দেয়না। রান্না করার জন্য তো শেফ আছে বাড়িতে। আর স্যার তো বলল, ওর জায়গায় আজ থেকে কাজ করবে, তাহলে ওকে কেন রান্না করতে দিলো? স্যার তো সবার হাতের রান্না খেতে পারে না। তাহলে?
ত্রিশ মিনিটের জায়গায় 35 মিনিট লেগে গেলো সব কিছু রেডি করতে। রুবি আরমানকে কল করে জানালো রান্না হয়ে গেছে। খাবার কি ঘরে নিয়ে যাবে? নাকি ডাইনিং এ খাবে? আরমান জানালো সে নীচে আসছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আরমান নীচে এসে ডাইনিংএ বসলো। মায়া এসে খাবার সার্ভ করতে শুরু করলো। আরমান তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “পাঁচ মিনিট লেট। এই লেট করা মানুষদের আমি একদম পছন্দ করিনা।”
মায়া মুখ ছোটো করে বলল, “সরি স্যার এরপর থেকে আর হবে না।”
আরমান প্রথমেই খিচুড়ির গন্ধ পেয়ে ভাবলো ভালো কিছুই রান্না করেছো হয় তো। দারুন সুন্দর গন্ধ উঠছে। কিন্তু সার্ভ করা শেষ হতেই আরমানের চক্ষু চড়কগাছ।
আরমান:- “হোয়াট ননসেন্স!! কি এটা? খিচুড়ি?? আমি তো এসব খাই না। কিসব রান্না করেছো তুমি??”
মায়া:- “কিন্তু আপনি তো আমায় কি খাবেন বলেননি। আপনি শুধু আমায় ত্রিশ মিনিট সময় দিয়েছিলেন আর তার মধ্যে রান্না করে আনতে বলেছিলেন। আমি তো আর জানি না আপনি কি খান আর কি না খান। তাই আমি আমার মতো রান্না করেছি।”
আরমান প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে বলল, “রুবি!! তুমি কোথায় ছিলে? তুমি জানো না আমি এসব খাই না??”
রুবি মাথা নিচু করে বলল, “সরি স্যার। আপনি শুধু আমাকে ওনাকে রান্না ঘরটা দেখিয়ে দিতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন ওনি রান্না করবেন।
আমি যেন বার্তি কথা না বলে আপনার অর্ডার ফলো করি।”
আরমান এবার রাগে কি করবে নিজেই ভেবে পেলো না। নিজেই নিজের মাথা চেপে ধরলো। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে সবকিছু। মায়া তখনও চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ও নিজেও ভেবে পাচ্ছে না ও এখন কি করবে।
ঠিক তখনি শাহরিয়ার ম্যানশনের কলিং বেল বেজে উঠলো। এটাই সুযোগ রুবির এখান থেকে কেটে পড়ার। ও গিয়ে দরজা খুলে দিলো। রুবি কে এক পলক দেখে নিয়ে দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো আবির। তারপর সোজা ডাইনিং এর দিকে আসতে আসতে রুবিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “রুবি! আমাকে এক কাপ কফি দিও প্লিজ। I am so tired.”
এরপর সোজা গিয়ে ডাইনিং টেবিলে আরমানের মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। তারপর কোনো দিকে না তাকিয়েই জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে শুরু করলো। পানি খেতে ওর মনে হলো আরমানের থেকে কিছুটা দূরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তাই পানি খেতে খেতেই চোখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো। আর তাকাতেই ও ভুত দেখার মতো চমকে লাফিয়ে উঠলো চেয়ার থেকে। আর সাথে সাথে ওর মুখের সব পানি ফুস করে বেরিয়ে গেলো। হাতে থাকা গ্লাস গিয়ে পড়লো কিছুটা পায়ে আর কিছুটা মেঝেতে। তাই গ্লাস ভেঙে পা টাও কিছুটা কেটে গেলো। কিন্তু তবুও ব্যাথা লাগার কোনো অনুভূতি আবিরের মুখে দেখা গেলো না। তার বদলে ওর মুখে আছে অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর ছাপ। হাঁ করে তাকিয়ে আছে ও মায়ার মুখের দিকে।
এদিকে মায়াও প্রথম থেকে আবিরের কর্ম কান্ড দেখছিল। হঠাৎ ওর দিকে তাকাতেই এভাবে চমকে ওঠা আর গ্লাস পড়ে যাওয়ার আওয়াজে নিজেও চমকে উঠলো।
এদিকে রুবি রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিল আবিরের জন্য কফি বানাতে। কিন্তু গ্লাস ভাঙার শব্দ শুনে ছুটে বেরিয়ে এলো রান্না ঘর থেকে। এভাবে আবিরকে অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও নিজেও বুঝলো না ঘটনা কি। কিন্তু যখনি আবিরের পায়ের দিকে নজর গেলো তখন আঁতকে উঠলো রুবি।
রুবি:- “স্যাররর!! আপনার পা।”
বলেই ছুটে গিয়ে আবিরের পায়ের কাছে বসে পায়ের কাছ থেকে কাঁচ সরিয়ে নিজের গায়ে থাকা ওরনা দিয়ে চেপে ধরলো রুবি। সাথে সাথে ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো আবির।
আবির:- “আহ!!”
ওর পায়ের কাছে কেউ আছে বুঝতে পেরে নিচের দিকে তাকালো। দেখলো রুবি ওর পায়ের কাছে বসে আছে। তাই রুবির দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা গলায় প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে?”
রুবি:- “স্যার আপনার পা কেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে।”
আবিরের মুখ থেকে তখনও অবাকের রেশ কাটেনি। ও যেন এই দুনিয়ায় নেই। আবারও বোকা বোকা গলায় প্রশ্ন করলো।
আবির:- “কেটে গেছে? কিন্তু কি করে কাটলো?”
রুবি আবিরের এমন বোকা বোকা ভাব দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ করে কি হলো কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মায়া আবিরের পা কেটে গেছে শুনে ও নিজেও এসে আবিরের পাশে দাঁড়ালো পায়ের অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আবির ওর পাশে কেউ দাঁড়িয়েছে বুঝতে পেরে পাশে তাকালো। আর সাথে সাথে আবারো চমকে উঠলো।
আবির:- “ভূ..ভূ..ভূত, নাহহ!! ভা..ভা..ভাবিমনি!!”
আবিরের চিৎকারে মায়া আবারো ভয়ে দু-পা পিছিয়ে গেলো। রুবিও অবাক হলো মায়াকে দেখে আবিরকে এমন করতে দেখে। আবিরের ভাবিমনি ডাকটা ওর মাথায় ঢুকলো না। কিন্তু এতো সবকিছুর মধ্যে ও আর এটা নিয়ে মাথা ঘামালো না।
আরমান প্রথমে থেকেই আবিরের কাজ কর্ম দেখছিলো। এমনিতেই ও রেগে ছিল। আবিরের এই অতিরিক্ত অবাক হওয়া দেখে আরো রেগে বোম হয়ে গেলো। টেবিলে চাপড় দিয়ে চিৎকার করে উঠলো, “ Enough is enough. বন্ধ কর তোর ড্রামা আবির। রুবি আমি রুমে গেলাম। তুমি আমার জন্য স্যুপ বানিয়ে আনো।”
এই বলে আরমান চলে গেলো উপরে। আর রুবি আগে ছুটে গেলো নিজের রুমে। আবির তখনও অবাক। ও কি বলবে, কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মায়াকে এই বাড়িতে দেখে ওর কি বলা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না। তখনি রুবি আবারও ছুটে এলো ওদের কাছে। তারপর মায়ার হাতে একটা ফ্যাস্ট এইড বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল, “প্লিজ মায়া তুমি ওনার পা টা একটু ড্রেসিং করিয়ে দাও। আমি স্যারের জন্য স্যুপ বানিয়ে আনি। না হলে স্যার ভীষণ রেগে যাবে।”
মায়া:- “ঠিক আছে আপু।
তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “আসুন ভাইয়া, বসুন আমি ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছি। পা থেকে অনেক রক্ত ঝরছে।”
আবির নিজেকে সামলিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। মায়াও গেলো আবিরের পিছনে। তারপর আবিরের পায়ের কাছে বসে ড্রেসিং করতে শুরু করলো।
আবির সিরিয়াস ভঙ্গিতে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি এখানে কি করছো ভাবিমনি??”
মায়া ভাবলেশহীন ভাবে বলল, “ওই ডাকটা আর আমার সাথে যাই না ভাইয়া। তাই আমার নাম ধরে ডাকলেই ভালো হবে।”
আবির:- “এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। আচ্ছা ঠিক আছে নাম ধরেই ডাকবো তোমার বড়ো ভাই হিসাবে। আগে বলো তুমি এখানে কি করছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মায়া:- “বাড়ির সার্ভেন্ট এর কাজের জন্য এসেছি এখানে। আমার একটা কাজের দরকার ছিল। আপনার স্যার আমায় কাজ দিয়েছে। তাই এখানে আসা।”
আবির অবাক হয়ে বলল, “হোয়াট?? তোমার কাজের দরকার ঠিক আছে কিন্তু এই বাড়ির সার্ভেন্ট এর কাজ করার কি দরকার? তুমি তো অনেক দূর পড়াশোনা করেছো। আর তুমি না একটা কম্পানিতে জব করতে??”
মায়:- “হ্যাঁ ভাইয়া জব করতাম কিন্তু এখন করি না। আর আপনার স্যার অনেক মোটা টাকা মাইনে দেবে তাই এই কাজ করা।”
আবির:- “না মায়া, তুমি আমায় পুরো কথা বলছো না। কিছু তো একটা ব্যাপার নিশ্চয় আছে, যেটা তুমি আমার থেকে লুকিয়ে যাচ্ছো। তোমার মতো মেয়ে তার এক্স হাসবেন্ডের কাছে আসবে কাজ করতে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।”
আবির মায়া একে অপরকে আগে থেকেই চিনে। কারণ ওদের বিয়ের পর এই বাড়ি থেকে আরমানের দাদা আর আবির যেতো মায়াদের বাড়ি মায়ার খোঁজ নিতে। তারপর আরমানের দাদা মারা গেলে আবির একাই যেতো মায়ার খোঁজ নিতে। খোঁজ নিতে বললে ভুল হবে। মায়ার ভরোন পষোনের টাকা দিতে যেতো। মায়া জানতো ওই টাকা আরমান পাঠায়। তাই ও হাত পেতে নিয়েও নিত। কারণ ও যে আরমানকে একেবারে মন থেকে স্বামী বলে মেনে নিয়েছিল। মায়া টাকা নিত ঠিকই কিন্তু সেই টাকা কোনোদিনও খরচ করেনি। পুরো টাকাটা জমিয়ে রেখে ছিল। ডিভোর্স এর কাগজ পাঠানোর সময় তার সাথেও কিছু টাকাও পাঠিয়েছিল আরমান। কিন্তু সেই টাকার সাথে আগের দেওয়া টাকা গুলোও ফেরত পাঠিয়ে ছিল মায়া। শেষ বার ডিভোর্স এর কাগজ নিয়ে আবিরই গিয়েছিল মায়াদের বাড়ি।
এরই মধ্যে রুবি আরমানকে স্যুপ দিয়ে এসে জানায় আরমান মায়ার থাকার ব্যবস্থা করতে বলেছে। আর যেহেতু মায়ার কোনো জামা কাপড় সাথে নিয়ে আসেনি তাই রুবির জামা দিয়েই এখন কাজ চালাতে বলেছে। কাল ওর জামা কাপড়ের ব্যাবস্থা করে দেবে।
মায়া এগুলো শুনে অবাক হয়ে যাই। এখন ওকে এই বাড়িতেও থাকতে হবে? কিন্তু ও এই বাড়িতে কিভাবে থাকবে? না ও এই বাড়িতে কিছুতেই থাকতে পারবে না। মায়া আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ভাইয়া প্লিজ আপনি আপনার স্যারকে বোঝান। আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবো না।”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলল, “কিন্তু তুমি তো বললে তুমি এই বাড়িতে কাজ করতে এসেছো। আর এই বাড়ির সব সার্ভেন্টরাই এই বাড়িতেই থাকে। না মানে বাড়িতে না ওদের সবার জন্য বাড়ির বাইরে সার্ভেন্ট কোয়াটার আছে। শুধু মাত্র রুবি এই বাড়িতে থাকে। তাই তুমি যদি এই বাড়ির সার্ভেন্ট হয়ে কাজ করো তাহলে তোমাকেও এই বাড়িতে থাকতে হবে।”
মায়া ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল, “না ভাইয়া এটা হয় না। আপনিই বলুন, আমাকে এখানে দেখে আপনার কি অবস্থা হয়েছিল তাহলে এই বাড়ির লোকেরা যদি আমায় এখানে দেখে তাহলে তাদের অবস্থা টা কি হবে? এমনিতেই আমি চিন্তাই আছি এই বাড়ির সবাই আমাকে এখানে কাজ করতে দেখলে কি রিয়্যাকশন দেবে। তার উপরে এখানে থেকে কাজ করাটা অনেক বড়ো ব্যাপার।”
এদিকে রুবি ওদের দুজনকে এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে অবাক হয়ে গেলো। এই তো কিছুক্ষন আগে আবির স্যার মায়াকে দেখে আকাশ থেকে পড়ার রিয়াকশন দিচ্ছিল। আর এখন কি সাবলীল ভাবে কথা বলছে। রুবি আমতা আমতা করে বলেই ফেললো।
রুবি:- “যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি? আপনারা একে অপরকে আগে থেকেই চিনেন? আর বাড়ির সবাই ওনাকে দেখে কি বলবে…. মানে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর বাড়ির সবাই তো কাল সকালেই ফিরে আসবে। বড়ো ম্যাম কল করেছিলেন আমায়।”
হয়ে গেলো। মায়া যতোটা সাহস সঞ্চয় করে এই বাড়িতে ঢুকেছিল। তা হাওয়ায় ভেসে উড়ে গেলো। এই পরিবারের সবাই একটা ফ্যামিলি ট্যুরে গেছে। আর যেহেতু বিখ্যাত বিজনেস ম্যানের পরিবার তাই নিউজে বড়ো বড়ো করে দেখানো হয়েছিল। আর সেই নিউজ দেখেই মায়া এই বাড়িতে আসার সাহস পেয়েছিল। মায়া ভেবে এসেছিল এক আর হয়ে গেলো আর এক।
মায়া আর কিছু ভাবতে পারছে না। কি হবে এখন? এই বাড়ির লোকেরা ওকে দেখলে কেমন রিয়্যাকশন দেবে? ও তো আরমানের সাথে রাত কাটানোর জন্য এসেছিল। ভেবেছিল সকালে চলে যাবে। কিন্তু আরমান যে ওকে এখন এই একমাস পার্মানেন্ট কাজের লোক বানিয়ে নিলো। যদিও ওই কাজের থেকে এই কাজটা যথেষ্ট ভালো তবুও এই বাড়ির সাথে যে ওর সম্পর্ক অন্য রকম। কিভাবে কাজ করবে ও এই বাড়িতে??
আবির:- “আচ্ছা রুবি বাড়িতে কি আজ কোনো স্পেশাল রান্না হয়েছে?? খুব সুন্দর গন্ধ আসছে।”
রুবি:- “হ্যাঁ মানে উনি রান্না করেছিলেন স্যারের জন্য। কিন্তু স্যার খাইনি।”
আবির:- “ওর কথা বাদ দাও। চলো তো আমাকে খেতে দাও আর মায়া তুমিও এসো খেয়ে নাও।”
রুবি:- “কিন্তু স্যার, আপনি এই মাত্র বাইরে থেকে ফিরলেন। ফ্রেশ হবেন না??
আবির বোকা বোকা হেসে বলল, “ হ্যাঁ হবো তো। খাওয়ার পর। ভীষণ খিদে পেয়েছে, আগে খেতে দাও প্লিজ।
এটা শুনে রুবি চলে গেলো আবিরের জন্য খাবার বাড়তে। আর মায়া অসহায় চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবির ওর হাতটা মায়ার মাথায় রেখে বলো, “চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি তোমার কাজের ব্যাবস্থা করবো কম্পানিতে। এখানে এই মেডের কাজ করতে হবে না তোমায়।”
মায়া:- “না ভাইয়া এখন কম্পানিতে কাজ করতে পারবো না। আমি আপনার স্যারের থেকে একমাসের মাইনে অ্যাডভান্স নিয়ে নিয়েছি। তাই আমাকে এই এক মাস এখানেই কাজ করতে হবে।”
এদিকে রুবি ডাইনিং থেকে বলল খাবার বাড়া হয়ে গেছে। আবির মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, “ঠিক আছে চলো, বেশি চিন্তা করো না যা হবে দেখা যাবে। খাবে চলো।”
এই বলে আবির মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। আর এই দৃশ্য উপরের বারান্দা থেকে একজন জলন্ত চোখে দেখছিল। তারপর ওদেরকে চলে যেতে দেখে রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে বারান্দার গ্রিলে বারি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
এদিকে আবির বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে এসে চেয়ারে বসে বলে, “ওয়াও খিচুড়ি!! অনেক দিন খাইনি। গন্ধ শুকেই মনে হচ্ছে দারুন টেস্টি হয়েছে।”
তারপর রুবি ও মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো?? বসো খেয়ে নাও।”
রুবি:- “আমি অনেক আগেই ডিনার করে নিয়েছি স্যার। আপনি খেয়ে নিন।”
আবির বিরবির করে বলল, “হ্যাঁ তা তো খাবেই। আমার জন্য ওয়েট করলে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো??”
রুবি:- “কিছু বললেন স্যার??
আবির:- “হ্য.. হ্যাঁ না মানে হ্যাঁ। মায়ার জন্য খাবার বাড়ো। ওটাই বললাম।”
রুবি ঠিক আছে বলে খাবার বাড়তে শুরু করলে, মায়া তাড়াতাড়ি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “না না আমি খাবো না। খিদে নেই আমার। আপনি খেয়ে নিন ভাইয়া।”
আবির:- “একদম চুপ মায়া। আমি খেতে বলেছি মানে খাবে। রুবি তুমি খাবার বাড়ো।”
মায়া:- “না ভাইয়া এটা হয় না। আমি এই বাড়ির মেড হয়ে এসেছি। তাই এখানে বসে আমার খাওয়া মানাই না।”
আবির:- “এখন বাড়িতে কেউ নেই। আর আমার একা একা খেতে ভালো লাগে না। তাই বেশি কথা না বলে বসো। কাল থেকে যেখানে ইচ্ছা খেয়ো।”
মায়া:- “কিন্তু ভাইয়া….”
মায়াকে আর কিছু বলতে না দিয়েই আবির মায়ার হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। এরপর রুবি খাবার বেড়ে দিলে দুজনে খেতে শুরু করে। আবিরের আর মায়ার প্রতি এতোটা যত্ন দেখে কেন জানি রুবির মনটা একটু খারাপ হলো। কোই ওকে তো আর একবার খাওয়ার জন্য বলল না। না কিসব ভাবছে ও। কোথায় আবির স্যার আর কোথায় ও। ওর এসব ভাবা একদম ঠিক না।
খাওয়া হয়ে গেলে আবির মায়ার রান্নার অনেক প্রশংসা করলো। এরপর আবির রুবিকে বললো আজকের রাতটা যেন ওর রুমেই মায়ার থাকার ব্যবস্থা করে। এতে রুবিও রাজি হলো। এরপর ওরা চলে গেলে আবিরও চলে গেলো নিজের রুমে। তারপর ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে, বেরিয়ে গেলো আরমানের রুমের উদ্দেশ্যে।
আরমানের রুমের দরজা লক করা ছিল না তাই হালকা ঠেলতেই খুলে গেলো। আবির রুমে ঢুকে দেখলো পুরো রুম অন্ধকার। আবির এগিয়ে গেলো বেলকনির দিকে। ও দেখলো আরমান এক হাত পকেটে ভরে আর এক হাত দিয়ে সিগারেট ফুঁকছে।
আরমান খুব একটা সিগারেট খাই না। যখন খুব টেনশনের মধ্যে থাকে শুধু তখনি খাই।
আবির:- “মায়াকে এই বাড়িতে কেন এনেছিস আরমান??
আরমান পিছনে না ঘুরেই একই ভাবে থেকে উত্তর দিলো, “জানি না।”
আবির:- “জানিস না মানে কি? তুই তো ওকে নিয়ে এসেছিস আর তুই জানিস না?? যেই বিয়ে মানিস না বলে ছয় মাস আগে ডিভোর্স দিলি, সেই মেয়েকে তোর বাড়ির কাজের লোক বানানোর কারণ কি আরমান??”
আরমান:- “ওর কাজের দরকার ছিল। তাই কাজ দিয়েছি।”
আবির:- “তাই বলে বাড়ির কাজের লোকের কাজ? তোর অফিসেও তো কিছু পোস্ট খালি ছিল তাহলে ওখানেই কাজ দিতে পারতিস। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। মায়ার মতো মেয়ে তোর কাছে কাজের জন্য আসবে সেটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তোরা দুজনেই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।”
আরমান:- “ফালতু বকিস না আবির। যদি কোনো কাজের কথা থাকে তো বল।”
আবির এবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল, “আমার কথা তোর কাছে ফালতু মনে হচ্ছে? হ্যাঁ? কাল আন্টিরা ফিরে আসবে। কি উত্তর দিবি তাদের?”
আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “আমি কি বলবো সেটা তোকে ভাবতে হবে না। মাইশার কোনো খবর পেয়েছিস কি সেটা বল??”
আবির প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল, “মাইশা!! মাইশা!! মাইশা!! আর মাইশা!! ওই তুই মাইশা ছাড়া আর কিছু বুঝিস না। শুধু কি নাম দিয়ে কোনো গোটা একটা মেয়েকে এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাই?? না তো মেয়েটার কোনো ছবি আছে আর না তো মেয়েটার বাবার নাম জানিস আর না মেয়েটার কোনো অ্যাড্রেস জানিস।”
আরমান এবার সিগারেট ফেলে পিছনে ঘুরে জেদি গলায় বলল, “তবুও আমার মাইশাকেই চাই। আমি ঠিক একদিন আমার মাইশাকে খুঁজে বের করবো দেখে নিস তুই।”
আবির:- “আর তোর মাইশার যদি বিয়ে হয়ে যাই? কি করবি তখন? ভাব তোর মাইশা স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করেছে। তখন কি করবি??
আরমান এই কথার কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। তখন আবির আবারও বলল, “কি হলো উত্তর দে?? এখন চুপ কেন?? ওই মাইশা, মাইশা করে তুই মায়ার মতো একটা ভালো মেয়ের জীবন নষ্ট করলি।”
আবিরের শেষের কথাটা শুনে আরমান তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “ ভালো মেয়ে?? তোর মায়া কতটা ভালো মেয়ে তা আমার জানা হয়ে গেছে।”
আবির:- “কি করেছে মায়া? কেনো এতো ঘৃণা করিস তুই ওকে??”
আরমান আবারো তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “আমার কথা তোর বিশ্বাস হবে না। যেদিন নিজের চোখে দেখবি তখন তুইও ঘৃণা করবি ওকে।”
আবির:- “যেটা দেখে মায়াকে ঘৃণা করবো সেটা কোনোদিনও দেখতে চাই না আমি। থাক তুই তোর ঘৃণা নিয়ে।”
এই বলে আবির চলে গেলো আরমানের রুম থেকে। আরমানও একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বেলকনি থেকে রুমে এলো। এসির টেম্পারেচার ঠিক করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। তারপর ভাবতে লাগলো মাইশাই কথা।
অতীত…..
আজ থেকে দশ বছর আগে আরমান বিদেশে যাওয়ার আগে বন্ধুদের সাথে দার্জিলিং গেছিলো ট্যুরে। তখন ওর বয়স ছিল 18। ফিরে আসার দিন অনেকটা সকালে ওর বন্ধুরা যখন ঘুমে ব্যাস্ত তখন আরমান রিসোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছিল একাই। সেদিন চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা ছিল। হঠাৎ ও দেখতে পাই মাঝরাস্তায় একটা স্কুল ড্রেস পড়া মেয়ে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে খেলা করছে। মেয়েটি ওর গাড়ির সামনেই আছে। আর একটু হলেই মেয়েটি গাড়ীর নীচে পিশে যাবে তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরালো। আর সামলাতে না পেরে গাড়ি গিয়ে ধাক্কা লাগলো রাস্তার ধারে থাকা কারেন্টের পুলে। আরমানের মাথা গিয়ে বারি খাই স্টিয়ারিংয়ে। সাথে সাথে কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো। অনেক জায়গায় ব্যাথা পেলো আরমান। সারা শরীর ব্যাথায় বিষিয়ে উঠলো। ওর মনে হলো ও যেন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়তো ওর প্রাণ পাখি বেরিয়ে যাবে।
ঠিক তখনি শুনতে পেলো কেউ যেন ওকে ডাকছে। জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। সেই দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো একটি নয় থেকে দশ বছরের মেয়ের মুখ। যে ওর গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করছে। গোলগাল সুন্দর মুখের অধিকারী। টানা টানা দুই চোখে মায়ায় ভর্তি। আর সেই সাথে দুই চোখে অশ্রুতে টইটুম্বুর। ছোট্টো মেয়েটির চুল কোমর ছাড়িয়ে গেছে। পরনে তার স্কুল ড্রেস। তাতে বুকের কাছে পকেটে একটা প্লেট লাগানো। নাম মাইশা তালুকদার। ক্লাস ফোর। রোল নাম্বার সহ স্কুলের নাম। কিন্তু আরামান নামটা ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারলো না। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলো। ঠিক তখনি ওর কানে ভেসে এলো কান্না মাখা গলার আওয়াজ।
বাচ্চা মেয়েটি বলছে, “গাড়ির দরজা খুলো। বেরিয়ে আসো তুমি। গাড়ির পিছন দিকে আগুন লেগেছে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো। পুরো গাড়িতে আগুন লাগলে তুমি মরে যাবে। বেরিয়ে আসো।”
মেয়েটি কাঁদছে আর কথা গুলো বলছে। আরমান কোনো মতে গাড়ির দরজার লকটা খুলে দিলো। আর মেয়েটি গায়ের বলে দরজা টেনে খুলে দিলো। কিন্তু আরমানের শরীরে আর এক ফোঁটাও শক্তি নেই যে নিজের পায়ে বেরিয়ে যাবে। মেয়েটি ওর হাতের বাহু ধরে টানছে। তাই আরমানও শরীরে খানিকটা আলগা দিলো আর তখনি মেয়েটা ওর বাহু ধরে গায়ের বলে টান দিলো, সাথে সাথেই আরমান গাড়ি থেকে নীচে পড়ে গেলো। এরই মধ্যে পুরো গাড়িতে আগুন ধরে গেছে। আগুনের তাপে মনে হচ্ছে ঝলসে যাবে দুজন। তখন মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল, “চলো। এখান থেকে পালিয়ে চলো। গাড়িতে আগুন লেগেছে। গাড়িটা ফেটে যাবে তো। এখান থেকে পালিয়ে চলো।”
আরমানের শরীরে অনেক জায়গায় ক্ষত হয়েছে। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে ওর। একটুও শক্তি অবশিষ্ট নেই যে ও এখান থেকে হেঁটে সরে যাবে। কিন্তু গাড়িটা যদি ব্লাস্ট হয়ে তাহলে এই বাচ্চা মেয়েটিও যে ওর সাথে মারা যাবে। বাচ্চা মেয়েটির কথা ভাবতেই কোথা থেকে যেন আরমান শরীরে বল পেলো। ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। সাথে সাথে বাচ্চা মেয়েটিও ওর কোমর আঁকড়ে ধরে ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি কি আর একটা 18 বছর বয়সী ছেলের ভার নিতে পারে? দুজনেই উল্টো পড়লো। আরমান পড়লো কিছুটা মেয়েটার ছোট্ট শরীরের উপর। তাতে মেয়েটিও কিছুটা ব্যাথা পেলো।
তারপর আবারো আরমান উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। মেয়েটিও ওকে জড়িয়ে ধরে সাহায্য করার চেষ্টা করলো। এরপর আরমান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনো মতে গাড়িটা থেকে কিছুটা দূরে গেলো। আরমানের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। ওর আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা ছিল না। তাই আরমান আবারো মেঝেতে ধপাস করে পড়ে গেলো। আরমান মেয়েটিকে ধরে রেখেছিল তাই পড়ে যাওয়ার সময় মেয়েটির স্কুল ড্রেসের সেই নেম প্লেটটি ওর হাতে ছিঁড়ে চলে এলো। নীচে পড়ে থেকেই গাড়িটির দিকে তাকালো, আর দেখতে পেলো পুরো গাড়িটাতেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তারপর একটা বিকট শব্দে গাড়িটা ব্লাস্ট হলো। তার উত্তাপও কিছুটা অনুভব করতে পারলো আরমান। এর পর তাকালো ওর পাশে বসা থাকা বাচ্চা মেয়েটির দিকে। যার দুই চোখে আছে অফুরন্ত মায়া আর অশ্রুতে টইটুম্বুর। এতো কষ্টের মাঝেও আরমানের মুখে ফুটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি। ও পেরেছি মেয়েটিকে বাঁচাতে। ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল ও গাড়ি থেকে বেরিয়ে না আসলে মেয়েটিও ওখান থেকে সরে আসবে না। তাই ওর এতো কষ্ট করা। আরমান হাতে থাকা নেম প্লেটটি শক্ত করে চেপে ধরলো। তারপর জ্ঞান হারালো আরমান।
এরপর আর কিছু মনে নেই। ওর যখন ওর জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে হসপিটালে দেখতে পেলো। ওর বাড়ির লোকজনও খবর পেয়ে চলে এসেছিল দার্জিলিং। শুনেছিল ওই মেয়েটাই নাকি লোক জড়ো করেছিল। হসপিটালেও এসেছিল। তারপর ওদের স্কুলের টিচার নাকি এসে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়েছিল। আর ওই মেয়েটিই হলো মাইশা। যার নাম ছাড়া আর কিচ্ছু মনে নেই ওর।
সুস্থ হওয়ার পর আবারো দার্জিলিং গিয়ে অনেক খুঁজেছিল মেয়েটাকে। কিন্তু আর খুঁজে পাইনি ওই পিচ্চি মেয়েটাকে। কিভাবে পাবে? ও যে মেয়েটার নাম ছাড়া আর কিচ্ছু জানতো না। তারপরই আরমান পাড়ি দেয় লন্ডনে। পড়াশোনা জন্য। কিন্তু এখনো সেই বাচ্চা মেয়েটির আবছা মুখ ভুলতে পারেনি আরমান। লন্ডন থেকে ফিরেও মেয়েটিকে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু কোনো খবর পাইনি। এখনো আরমান খুঁজে চলেছে মেয়েটিকে।
0 Comments