সন্তানের সুখ| মরিয়ম জাহান উর্মি| প্রথম পর্ব

জীবনের গল্প: সন্তানের সুখ| মরিয়ম জাহান উর্মি| প্রথম পর্ব

একটা বাচ্চা না হওয়ায় আজ আমায় ডিভোর্সের শিকার হতে হচ্ছে। তিন বছরের তিলে তিলে গড়া এই সংসার এখন অন্য কেউ নিজের বলবে।


তিন বছরে যেই মানুষটার সাথে সংসার করলাম সেই মানুষটাও এখন অন্যের হবে।নিজের চোখের সামনে  কি করে এই সংসার এই স্বামী নামক মানুষকে অন্যের হতে দেখব? 

হায়!

আজ যদি একটা সন্তান থাকতো।

মেহরুল দেওয়ান আমার স্বামী এই লোকটার সাথে আমার শুধু তিন বছরের সংসারই নয় দুবছরের প্রেম ছিলো কতই না ভালে ছিলো সেই দিন গুলি মনে হয় 

একটু আগেই সেই দিন গুলা কেঁটে গেলো  

কিন্তু সেই সান্ত্বনামূলক ভাবনা ভেবে নিজে কে সান্ত্বনা না দেওয়াই শ্রেয়।

মানুষটার প্রতি বড্ড অভিমান জমে গেছে আমার হৃদয়ে। একটি সন্তান চাওয়া মেহরুলের কোনো অপরাধ নয় কিন্তু আল্লাহ যদি এখন না দেন আমার কি করার আছে? এই টাতে তো আমার কোনো হাত নেই আল্লাহ যখন দিবেন তখনই হবে একটু কি ধৈর্য ধরা যায় না? কি করে প্রিয় মানুষটার সাথে অন্য কাউকে সয্য করব?

আমার শ্বাশুড়ি হলেন এই সবের মিন তিনি আমায় প্রথম থেকেই সয্য করতে পারতেন না কিন্তু আমি মানিয়ে এই সংসারটাকে একটু একটু করে গুছিয়েছিলাম কত কথাই না শুনতে হতো শাশুড়ীর থেকে। আমার শ্বাশুড়ি আমেনা বেগম তিনি শরীরে আঘাত না করলেও কথার মাধ্যমে শত শত আঘাত করেছেন।  আমি এই সব আমার স্বামী কে বলতাম না শুনেছি সংসারে সবকিছু নিজেকেই সালাম দিতে হয় কিছু হলে কারো কাছে না জানাতে নিজে চেপে রাখতে জানতে হয় তাই আমিও সেটাই করেছি।

এই তিন বছরের সংসারে একটি বাচ্চা চেয়েছিলো আমার স্বামী শুধু আমার স্বামী নয় আমিও চেয়েছিলাম সংসারের বয়স যখন দুবছর তখন থেকেই বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা কিন্তু ফলাফল শূন্য। আমরা আশা ছারিনি তবুও একটা ''কিন্তু'' থেকেই যায় আস্তে আস্তে মেহরুলের আমার প্রতি সন্দেহ তৈরি হতে থাকলো।একদিন সে আমায় বলেছিলো

--অনু আমার থেকে কি কিছু লুকাচ্ছ?

আমি সেদিন নির্বদ্ধে মতো অসহায় হয়ে বলেছিলাম

--আমি বুঝেছি তুমি কি যানতে চাচ্ছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার থেকে কিছু লুকাচ্ছি না

--তাহলে একটা সন্তান দিতে পারছো না কেনো?

--সন্তান দেওয়ার মালিক আল্লাহ মেহেরুল আমি নই

সেই দিন আর কিছু বলেনি আমার স্বামী।  আমার শাশুড়ী আমেনা বেগম উঠতে বসতে খোটা দিতেন বলতে

--খোজা,বন্ধা মেয়ে একটা সন্তান আমার ছেলেকে দিতে পারলে না সে আবার নারী হয় কি করে

সেই দিন আমি কিছু বলতে পারি নাই নিরবে অশ্রু ফেলছিলাম শুধু।পাড়া-প্রতিবেশীদের কটু কথা শুনতে শুনতে অবভ্যস্ত হয়ে যাই সাথে সেই স্বামীর পরিবর্তনে। হঠাৎ কেরেই যেনো আমি তার কাছে বিরক্তকর হয়ে উঠলাম শাশুড়ী মা যখন তার ছেলেকে বলতেন 

--বাবা বলি কি আর একটা বিয়ে কর মনে হয়না এই মেয়ে তোকে সন্তানের সুখ দিতে পারবে,

এই কথা শুনে মেহেরুল কিছুই বলেনি  সেদিন আমি বুঝেছিলাম আমার দিন ফুরিয়ে আসছে। তবুও হাল ছারিনি রোজ রাতে নামাজে আল্লাহর কাছে একটি সন্তান চাইতাম। এমনকি মেহেরুলের হাত জর করে বলছিলাম 

--একটু দয়া করো আমার উপর আমার থেকে মুখ তুলে নিবেন না প্লিজ আল্লাহ  যখন দিবেন তখন সন্তান আসবে একটু ধৈর্য ধরুন। 

কিন্তু মেহেরুল প্রতিউওরে কিছুই বলেনি। একদিন মেহেরুল আমায় ডেকে পাশে বসিয়ে বলেছিলো 

-- অনু তোমায় কিছু বলতে চাই  মন দিয়ে শুনবে

আমি মাথা নেরে সায় দি। তিনি বলেন

--দেখো অনু এই ভাবে একটি জীবন চলে না। জীবনে সবকিছুর প্রয়োজন একটি সন্তান তার অন্যতম। যখন আমার বন্ধুরা আফিসের কলিগরা তাদের বাচ্চা নিয়ে আসে তখন আমার চেয়ে ব্যর্থ পুরুষ মনে হয় পৃথিবীতে নেই এমন মনে হয় অনু। 

আমি অসহায় চেয়ে রইরাম শুধু মানুষটার পানে তিনি আরো বললেন

-- অনু আমারো তো বাবা হতে মন চায়। তোমায় একটা অনুরোধ করব

আমি শান্ত চোখে চেয়ে বললাম

--হুম করো

তিনি সেদিন আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলেন

--অনু তুমি কি আমায় দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিবে

এই বাক্য যেনো আমার হৃদয় অব্দি পৌছালো শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো , কথা বলার শক্তি হারিয়ে ছিলাম শরীরে কাঁপন ধরে যায় আমি সোজা মেহেরুলের পায় পরে যাই কাঁদতে কাঁদতে বলি

--দয়া করে এমন কথা মুখেও আনবে না মেহেরুল।  একটু ধৈর্য ধর আল্লাহ নিশ্চিয় আমাদের কোল ভরে দিবেন। আমি তোমার পাশে অন্য কাউকে সয্য করতে পারেব না তার আগে যেনো আমার মৃত্যু হয়

--আর কত ধৈর্য ধরব অনু? মানুষের কথা শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি

--মানুষ কি বলে বলুক আপনি আমি ঠিক থাকলে সব ঠিক

--এই ভাবে জীবন চলে না অনু  আমারো বাবা হওয়ার অধিকার আছে

--আমারো তো মা হতে ইচ্ছে করে মেহরুল 

-- তুমি তা কখনই হতে পারবে না অনু তুৃমি আমায় কখনই সন্তানেরসুখ দিতে পারবে না,

এই কথা সুনে আমি সাথে সাথে পা ছেরে দিয়ে বলল

-- সেটা তোমায় কে বলল?

--এই সব বলা লাগে না বুঝা যায় যদি তুমি মা হতে পারতে তাহলে অনেক আগেই সন্তান দিতে আমায়

আমি প্রতিউত্তরে কিছু না বলে বললাম

--একটা কথা বলব

--হুম

--চলুন না হসপিটালে পরিক্ষা করায় দেখি সমস্যাটা কথায় বাচ্চা না হওয়ার কারন কি

সেই দিন এই কথা শুনে মেহরুল প্রচন্ড রেগে গেছিলো চিৎকার করে বলেছিলে

--তুমি কি আমায় দোষারোপ করছো অনু? 

তুৃমি কি বলতে চাচ্ছ সমস্যাটা আমার? আমি পিতা হতে পারব না? তুমি এটাই বলতে চাচ্ছো

--না আমি সেটা কখন বললাম? আমি তো শুধু...

আমার মুখের কথা কেরে নিয়ে বলেছিলো

-- তুমি তোমার দোষ আমার উপর দেওয়া বন্ধ করো আসলেই মা ঠিকই বলে তুমি কখনই আমায় সন্তানের সুখ দিতে পারবে না তাই আমি অনেক ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,

কথা গুলো বলেই মেহরুল রুম থেকে চলেগেছিলো কিন্তু এই আমি হয়ে গেছিলাম একটি পাথর নরাচরা  করার জো ছিলো না আমার। চোখ দিয়ে টলটম করে পানি পরিলো বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো হঠাৎ করেই চিৎকার করে কান্না করে দেই কিন্তু শোনার মতো কেউ নেই।  তবুও আল্লাহ কাছে রোজ রাতে নামাজে একটি সন্তান চাইতাম।  যেমন আজ চাচ্ছি মনে হয়না আল্লাহ মুখ তুলে তাকাবেন তবুও ভর্সা দেই নিজেকে। 

আজ আমার শাশুড়ী আর তার বোন মিলে মেহেরুলের জন্য মেয়ে দেখতে গেছেন আমি সব দেখেও না দেখার ভান করেছি।  

রাত দশটার ওই দিক আমার শ্বাশুড়ি আর তার বোন রোকেয়া বাসায় ফিরলেন হাসি মুখে হাতে মিষ্টির বক্স। আমি জা বুঝার বুঝে গেলাম।  কষ্টে দুঃখে রুমে এসে বসে রইলাম আর মেহেরুলের আসার প্রহন গুনতে লাগলাম শেস বারের মতো চেষ্টা করে দেখব যদি মানুষটার মন একটু গলে।অবশেষে মানুষটা এলো আমি মেহেরুনকে জরিয়ে বললাম

--আমার চোখের দিকে তাকান 

মানুষটা সত্যি আমার চোখে চোখ রাখলো শান্ত ভাবে আমার মুখে হাসির রেখা ফুটলে আমি চোখে চোখ রেখে বললাম

--আমায় কি আর ভালোবাসো না মেহরুল?

--বাসি

মেহেরুলের ছোট্ট উওর।  আমি আবারো বললাম

--তাহলে আমায় ছারা অন্য নারীকে কি করে নিজের করে নিবে?

--তবুও নিতে হয়ে অনু

এই কথা শুনে আমার কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছে করছিলে কোনো মতো চোখের পানি আটকিয়ে বললাম

--বিয়েটা না করলে হয় না মেহরুল?

--না হয় না

আমি আর কিছু বললাম না ওনাকে সাথে সাথে ওনাকে ছেরে বেলকনিতে আসলাম আরো অনেক কিছুই  বলতে চেয়েছিলাম বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু মনে হলো মানুষটা আর আমার নেই। যে মানুষ আমার নেই তাকে কি করে বুঝবো? 

সে না হয় একটু ভালো থাকার জন্য  আমায় কষ্ট দিলো তাতে তার কি সবাই সবার ভালো থাকাটা চায়। অনেক কেদে রুমের দিকে যেতে লাগলাম শাশুড়ীর রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বাক্য কানে এলো

''ডিভোর্স দিতে বলিস তোর ছেলেকে এমন অলক্ষি বাসায় রেখে লাভ নাই"  

এই কথাটা শুনে পা যেনো থমকে গেলো আমার।  হৃদয় ভেঙ্গে-চুরে খানখান হয়ে গেলো আর কিছু শোনার মতো শক্তি আমার নেই তবুও কান পাতলাম আমার শ্বাশুড়ি তার বোনকে বলছেন

--হুম ডিভোর্স দিতে বলব। আর শুনলি না মেয়ের মা কি বলেছিলে? বলেছিলো যে আমার মেয়েকে দিব যদি আপনার ছেলের আগের বউকে তারাতে পারেন 

--হুম শুনেছি তাই তো বললাম আর বিয়ের তো বেশি দিন নাই দু দিন পরেই বিয়ে এখন থেকেই তরজর শুরু কর

আমি আর দারিয়ে থাকতে পারলাম না ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে রুমে গেলাম। রুমে গিয়েও আরএক দফা আঘাত পেলাম মেহেরুল বিছানায় সুয়ে কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে!

আমি এবার আর দারিয়ে থাকতে পারলাম না পরে গেলাম ফ্লোরে....

Post a Comment

0 Comments