আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-২

ভালবাসার গল্প: আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-২

শাহরিয়ার ম্যানশন….

মায়া অটো থেকে নেমে শাহরিয়ার ম্যানশনের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যেই বাড়িতে তার বউ হয়ে ঢোকার কথা ছিল সেই বাড়িতে আজ রক্ষিতা নামে ঢুকতে হচ্ছে। বিয়ের পর আরমান মায়াকে তাদের বাড়ি নিয়ে আসেনি। বিয়েটা মায়াদের বাড়িতেই হয়েছিল। কবুল বলার পর আর এক মুহূর্তও ওদের বাড়িতে থাকে নি। চলে গিয়েছিল নিজের ফ্ল্যাটে। আর বলেছিল ওই মেয়ে যদি ওদের বাড়িতে আসে তাহলে ওই বাড়িতে আর কোনোদিন পা দেবে না। সারা জীবনের জন্য পাড়ি দেবে বিদেশে। আরমানের মা চাইনি ছেলেকে হারাতে তাই বাধ্য হয়েই মায়াকে তার বাবার বাড়িতেই রেখে এসেছিল। মায়াও অনেক ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিল শুধু মাত্র ওর বাবার কথা ভেবে। ওর বাবার যে এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই ও ছাড়া।

মায়া গেটের সামনে গিয়ে দাড়োয়ানকে ডাক দিলো। দাড়োয়ান মায়ার পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে মায়া কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। শুধু বললো মিস্টার আরমান তাকে আসতে বলেছিল, তার সাথে দরকার আছে। দাড়োয়ান কল করলো আরমানের পার্সোনাল মেডকে। মেড যাওয়ার পারমিশন দিলে দাড়োয়ান গেট খুলে দিলো। মায়া ভিতরে প্রবেশ করলো। আর চারিদিকের সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে গেলো। রাজপ্রাসাদের মতো ডুপ্লেক্স বাড়ি। গেট থেকে সোজা মোরাম বিছানো রাস্তা কিছুটা গিয়েই তিন ভাগ হয়ে গেছে। মাঝখানে পানির ফোয়ারা। একটা রাস্তা গেছে বাড়ির মেন গেট পর্যন্ত। আর একটা গাড়ির গ্যারেজে। এবং আর একটা সুইমিং পুল ও বাগানের দিকে। বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ। আর সেই গাছে বিভিন্ন রং বেরঙের ছোট ছোট লাইট লাগানো। এটা রাত্রি বেলা হলেও চারিদিকে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। চারিদিকের সৌন্দর্য দেখে মায়া মুগ্ধ হয়ে গেলো। 

চারিদিক দেখতে দেখতে এগিয়ে গেলো বাড়ির মেন দরজার কাছে। কেন জানি মায়ার আজ খুব ভয় করছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেলে চাপ দিল মায়া।

আরমান নিজের রুমে সোফায় বসে আছে চোখ বন্ধ করে ও চোখের উপর এক হাত দিয়ে। কি হচ্ছে ওর সাথে ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। আজ যখন ও ক্লাব থেকে বেরিয়ে অফিসে গেলো, তখন অফিসে কোনো কাজেই মন বসাতে পারছিল না। বার বার শুধু মায়ার বলা কথা গুলো মনে পড়ছিল। কেন জানি ও মানতে পারছিল না যে মায়া আজ অন্য কোনো পুরুষের সাথে রাত কাটাবে। সারাটা দিন ও নিজের কাজে মন বসাতে পারেনি। যেই মায়া, ডিভোর্স লেটারের সাথে ওর দেওয়া টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিল সেই মায়া আজ নিজের ইচ্ছে পূরণের জন্য এই রাস্তায় নেমেছে সেটা কিছুতেই মানতে পারছে না ও। কিভাবে মানবে? ও যে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিল ওটা মায়ার প্রথমবার ছিল। আর তার প্রমাণ ছিল বিছানায় লেগে থাকা ব্লাডের দাগ। কিন্তু মায়া যে বলছিল ও এর আগেও অন্যের সাথে….. না না আর কিছু ভাবতে পারছিল না আরমান। ওর মাথা হ্যাঙ হয়ে যাচ্ছিল। মায়া কেনো ওকে মিথ্যা বলেছিল তাহলে? কেন ও নিজেকে আরমানের চোখে খারাপ বানাতে চাইছিল। কিচ্ছু বুঝতে পারছে না আরমান। তাই আর কোনো কিছু না ভেবে কল লাগিয়ে ছিল সেই ক্লাবের মালিককে। টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে মায়াকে একমাসের জন্য। 

মায়ার আসার সময় হয়ে গেছে। হয়তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। আরমান সোফায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে নিজের করা কাজের কথা ভাবছিল, আর বিরক্তও হচ্ছিল। ও কেন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে মায়ার বিষয়ে? কেনই বা রাগের মাথায় হুট করে মেয়েটাকে এক মাসের জন্য কিনে নিলো ও। আর কেনই বা মায়ার সাথে রাগের মাথায় রাত কাটালো? কি থেকে কি হয়ে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। ও তো ক্লাবে কোনো মেয়ের সাথে রাত কাটানোর জন্য যাইনি, তাহলে? ও তো ওর একটা ডিলের জন্য গিয়েছিল। ও তো মায়াকে ডিভোর্স দিয়েছিল ওর একমাত্র ভালোবাসা….মাইশার জন্য। তাহলে কেন আবার এই মেয়েটাকে ওর জীবনে ঢুকতে দিলো। ওর মাইশাকে কি ওর ঠকানো হলো না? 

মাইশা….ও তো এখনো ওর মাইশার কোনো খবর পাইনি। কোথায় আছে? কেমন আছে? আদেও কি এই দুনিয়ায় বেঁচে…. না না কি ভাবছে ও এইসব? মাইশা আছে, কিচ্ছু হতে পারে না ওর।‌ ঠিক একদিন খুঁজে পাবে ও ওর মাইশাকে। 

হঠাৎ দরজায় নক হওয়ার শব্দে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো আরমান। সোজা হয়ে বসে দরজার ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে আসার অনুমতি দিয়ে বলল, “Come in.”

দরজা খুলে প্রবেশ করলো আরমানের পার্সোনাল মেড রুবি। এই রুবিই আরমানের সমস্ত কাজ করে। আরমানের খাওয়া দাওয়া, রুম গোছানো, কাপড় ধোওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত যাবতীয় কাজ রুবিই দেখাশোনা করে। বয়স 26 এর কাছাকাছি। রুবি রুমে ঢুকে বলল, “স্যার যেই মেয়েটির আসার কথা ছিল ওনি এসে গেছেন।”

আরমান বুঝতে পারলো রুবি মায়ার কথা বলছে। আরমান বলল,“ঠিক আছে তুমি ওকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও। আর দরকার হলে আমি তোমায় ডেকে নেবো।”

রুবি:- “ওকে স্যার।”

এই বলে রুবি নীচে চলে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় আবারো নক হওয়ার আওয়াজ হয়। আরমান বুঝতে পারে এটা মায়াই হবে। আরমান আসার অনুমতি দিলে মায়া আস্তে করে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে। মায়ার চোখ যাই সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে থাকা আরমানের উপড়ে। 

আরমান:- “তো চলে এসেছো তুমি? অনেক টা লেট করে দিয়েছো”

মায়া আরমানকে বলে, "আমার বস আমাকে বলেছিল যে আপনি আমাকে এক মাসের জন্য ভাড়া করেছেন, মিস্টার আরমান শাহরিয়ার, আমি জানতাম না যে আমার সার্ভিস আপনি এত পছন্দ করবেন। শুধু আপনার কারণে আমার অন্য ক্লায়েন্টরা খুবই হতাশ, আজ আমি অন্য কারো সাথে যেতে চাইছিলাম। আমি তার জন্য অনেক প্রস্তুতিও নিয়ে ছিলাম, কিন্তু ক্লাবে পৌঁছে আমি জানতে পারি যে আমাকে আপনার কাছে আসতে হবে, তাই আমাকে অন্য ক্লায়েন্টদের সাথে আমার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে।" 

মায়া কথা গুলো নিজের মতো করে সাজিয়ে মিথ্যা বলে। এগুলো শুনে আরমান তার হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়, উঠে এসে মায়ার কাছে দাঁড়ায়, তারপর মায়াকে একবার উপর থেকে নীচ অবধি দেখে নিয়ে বলে,"তাহলে তুমি আজকে এই পোশাক পরে অন্য কাউকে খুশি করতে যাচ্ছিলে বুঝি?" 

আরমান ব্যাঙ্গাত্মক গলায় একথা বলে। কারণ আজ মায়ার পরনে ছিল সিম্পল থ্রিপিস। আবার মাথাতেও ওরনা দেওয়া।

মায়া আমতা আমতা করে বলল, "হ্যাঁ, আসলে আজ হোটেলে যাওয়ার কথা ছিল। আমি ওখানেই আমার ড্রেস চেঞ্জ করে নিতাম। একেবারে হট ড্রেস পড়ে তো আর বাইরে বের হওয়া যাই না।”

আরমান তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “ওহ তাই বুঝি? এই কাজ করতে লজ্জা লাগছে না। আর হট ড্রেস পড়ে বাইরে বের হতে লজ্জা লাগছ? বাহ!! তোমারো লজ্জা বলতে কিছু আছে তাহলে?

মায়া আরমানের কথায় কষ্ট পেলেও তা মুখে প্রকাশ করে না। মুখে হাসি নিয়ে মায়া বলে, “ওহ মিষ্টার এসব কথা বাদ দিন কাজের কথায় আসুন। আমি আমার কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরতে চাই।”

আরমানের মুখের অভিব্যক্তি আরো কঠিন হয়ে যাই। “খুব তাড়া দেখছি তোমার এই কাজ করার জন্য। আচ্ছা যাও আমার ডিনার নিয়ে আসো আমার রুমে। তোমার জন্য এখনো আমার ডিনার করা হয়নি। আর অবশ্যই নিজ হাতে রান্না করে আনবে।"

কথাটা শুনে মায়া যেন আকাশ থেকে পড়লো। "হোয়াট??? আমি মনে হয় ভুল শুনেছি, কি বললেন আরেক বার বলুন?"

আরমান চোখ সরু করে বলল, তুমি ঠিকই শুনেছ। আমি তোমাকে বলেছি আমার জন্য রান্না করে আনতে।”

মায়া ভ্রু কুঁচকে বলে, "আমাকে কি আপনার বাড়ির মেড মনে হয়? আমি তো এখানে রান্না করতে আসিনি। আমার কাজটা ঠিক কি আপনি খুব ভালো করে জানেন। তাই আমি আপনার জন্য রান্না করতে পারবো না।" 

আরমান:- "আমি তোমাকে কিনছি, পুরো এক মাসের জন্য, আজ থেকে পুরো একমাস তুমি শুধু আমার বিছানায় থাকবে, আর এই এক মাসে তোমাকে শুধু আমাকে খুশি করতে হবে, এই সময়ের মধ্যে অন্য কারো দিকে তাকাতেও পারবে না তুমি। তাই আমি যা বলবো চুপচাপ শুনবে।" 

আরমান শাহরিয়ার, মায়ার কানের কাছে এসে খুব লোভনীয় কণ্ঠে কথা গুলো বলল, যার কারণে মায়ার লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।

মায়া এক ঝটকায় আরমানের থেকে দূরে সরে এলো। তারপর রাগ নিয়ে বলল, “হ্যাঁ আপনি আমায় কিনেছেন। কিন্তু এই কাজের জন্য তো নয়। আমার কাজ শুধু আপনাকে বিছানায় খুশি করা। আপনার বাড়ির কাজের লোক হয়ে তো আসেনি।”

আরমান:- “তুমি কি পেপারে সাইন করার সময় দেখোনি ওখানে কি কি শর্ত দেওয়া ছিল? ওখানে স্পষ্ট করে বলা আছে এই এক মাস আমি যা যা বলবো তোমাকে আমার সব কথা শুনে চলতে হবে। তাতে ঘর মুছায় হোক বা রান্না করা বা আমার জামা কাপড় ধোয়া, আমি যা যা বলবো সব তোমায় শুনতে হবে।”

মায়া অবাক হয়ে বলল, “পেপার কিসের পেপার? কি সব বলছেন আপনি? এই কথা তো ছিল না।”

আরমান:- “এখানে আসার আগে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে আসোনি তুমি? তোমার বস তোমার সাইন নেইনি? আমার মনে হয় ওই পেপার টাও তোমার ওই ব্যাগেই আছে। দেখে নিতে পারো।”

মায়ার মনে পড়ে গেলো পেপারে সাইন করার কথা। মায় যখন ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসেছিল তখন ওর বস আবারো ওকে কল করে ডাকে। মায়া গেলে মায়াকে একটা পেপার দেয় সাইন করার জন্য। মায়া জিজ্ঞাসা করলে ওর বস জানায় ওদের ওখানে কাজ করলে এটাতে সাইন করতে হয়। মায়াও আর কোনোকিছু না ভেবে ওই পেপারে সাইন করে দেয়। সাইন করা হয়ে গেলে মায়াকে যেতে বলে। মায়াও চলে আসছিল কিন্তু ক্লাব থেকে বেরোনোর আগেই ওর বস আবারো ওর পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে আসে আর একটা ফাইল ধরিয়ে দেয় মিস্টার আরমান শাহরিয়ারকে দেওয়ার জন্য।

মায়া তাড়াতাড়ি ওর হাতে থাকা ব্যাগটা খুলে ফাইলটা বের করে। আর ফাইল থেকে বের করে সেই সাইন করা কাগজ। আর কাগজটা পড়ে দেখতেই মায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

মায়া তাড়াতাড়ি ওর হাতে থাকা ব্যাগটা খুলে ফাইলটা বের করে। আর ফাইল থেকে বের করে সেই সাইন করা কাগজ। আর কাগজটা পড়ে দেখতেই মায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

এটা একটা ডিল করা হয়েছে। যেখানে মায়াকে 50 লক্ষ্য টাকার বদলে এক মাসের জন্য কিনে নেওয়া হয়েছে মায়ার সম্মতিতে। এই এক মাস আরমান যা যা বলবে মায়াকে সব শুনতে। আর মায়া যদি এই ডিল ক্যান্সেল করতে চাই তাহলে মায়াকে 50 লক্ষ্য টাকা নেওয়ার বদলে এক কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। মায়া আর ভাবতে পারছে না। মাথা টা যেন পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

মায়া কাঁপা কাঁপা গলায় কোনোমতে বলল, “কি…কিন্তু ওনি তো আমায় মি..মিথ্যা বলে সাইন করিয়েছিল। আর..আর এই 50 লক্ষ্য টাকা তো আমি নিইনি। ফাঁসানো হয়েছে আমাই। আমি এই ডিল মানি না।”

আরমান:- “হ্যাঁ 50 লক্ষ্য টাকা তুমি নাওনি ঠিক আছে কিন্তু তোমার বস তো নিয়েছে। আর তোমার বস তোমাকে কি বলে সাইন করিয়েছে সেটা তোমাদের ব্যাপার। আমি তো কাগজে সব শর্ত লেখেই দিয়েছি এখন তুমি যদি শর্ত না পড়ে সাইন করো এতে তো আমার কিছু করার নেই।”

আরমান কথা গুলো বলতে বলতে মায়ার হাত থেকে ডিলের পেপার টা কেড়ে নিলো। মায়া তো স্তব্ধ হয়ে গেছে। ওর সাথে কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিভাবে ও এই লোকটার সাথে থাকবে? যে ওর সাথে সংসার না করেই ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। আর মায়া তো ভালোবেসে ফেলেছিল এই লোকটা। তাহলে কি করবে ও এখন? না কিছুতেই ও এই লোকটার সাথে থাকতে পারবে না। মায়া আর কোনো কিছু না ভেবেই ওর ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কল লাগালো ক্লাবের বসকে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই মায়া বলে উঠলো।

মায়া:- “স্যার কিভাবে পারলেন আমার সাথে এভাবে প্রতারণা করতে? কেন আমাকে মিথ্যা বলে সাইন করালেন পেপারে?

ওপাশ থেকে ক্লাবের বস বলে উঠলো, “কিসের কথা বলছো মিস মায়া?”

মায়া গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল, “যেই কন্ট্রাক্ট পেপারে আমার সাইন নিয়ে আপনি আমাকে বিক্রি করে দিয়েছেন 50 লক্ষ্য টাকার বদলে আরমান শাহরিয়ার এর কাছে তার কথা বলছি।”

ক্লাবের বস:- “ আমি তো বলেছিলাম যে আমাদের এখানে এই কাজ করলে পেপারে সাইন করতে হয়।‌ হ্যাঁ কারোর সাথে এক রাত কাটালে সাইন করতে হয়না তবে কোনো ক্লাইন্ট যদি কাউকে এক সপ্তাহ বা তারো বেশি দিনের জন্য বুকিং করে তাহলে আমারা পেপারে সাইন করিয়ে নিই।”

মায়া অসহায় গলায় বলল,“স্যার আমি এই কাজটা করতে পারবো না। আপনি ওনার টাকা ফিরিয়ে দিন।”

ক্লাবের বস অবাক হয়ে বলল, “হোয়াট?? কি বলছো এটা তুমি? এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না। আমি ওনার থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছি। আর কাগজটা তুমি পড়ে দেখোনি সেটা তোমার ব্যাপার। আমরা তো আর জোর করে সাইন করায় নি। আর কাগজটা পড়ে দেখেছো তো? ডিল ক্যান্সেল করলে ওনাকে 1 কোটি টাকা ফেরত লাগবে। আর আমি নিয়েছি 50 লক্ষ্য টাকা। তাই ওনাকে আমি এক কোটি টাকা দিতে পারবো না। আর তোমাকেও এই এক মাসের জন্য 50 লক্ষ্য টাকা দেওয়া হবে। তোমার তো ভাগ্য ভালো যে তুমি আরমান শাহরিয়ার এর মতো একজন ক্লায়েন্ট পেয়েছো। সব মেয়েরা এই সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে আর তুমি পেয়ে হারাতে চাইছো?”

মায়া:- “কিন্তু স্যার তাই বলে আমি ওনার বাড়ির কাজের লোকের মতো কাজ করবো?”

ক্লাবের বস:- “হ্যাঁ কাগজেতো লেখাই আছে ওনি যা বলবেন তোমাকে সব শুনতে হবে। তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে ওনি যা বলছেন করো।”

মায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওনি ফোনটা কেটে দিলেন। আরমান এতোক্ষণ সোফায় বসে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে মায়ার কথা শুনছিল। কল কেটে দিতেই আরমান সিগারেট টা এ্যাস্ট্রেতে গুঁজে দিয়ে মায়ার কাছে উঠে আসলো। তারপর মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল, “ভয় লাগছে মিস মায়া তালুকদার? ভয় নেই আমি শুধু তোমায় দিয়ে আমার সমস্ত কাজ করাবো। তোমার গায়ে হাত দেবো না। মনে নেই বলেছিলাম, এই আরমান শাহরিয়ার যেই শরীরে একবার হাত দেয় সেই শরীরে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় না। আমি তোমায় কাজের লোক বানিয়ে রাখতে চাই। তাই ভয় নেই। তুমি তো আবার নিজের সখ পূরণের জন্য সবকিছু করতে পারো আর এই কাজ করতে পারবে না। আর এই কাজের জন্য যথেষ্ট পারিশ্রমিক দেওয়া হবে তোমায়।”

মায়া মনে মনে ভাবলো, এই কাজটা করাই ভালো হবে ওর জন্য। এই কাজটা করলে ওকে তো আর বিভিন্ন পূরুষের বিছানায় যেতে হবে না। হ্যাঁ ওর একটু কষ্ট হবে, যেহেতু আরমানকে ও ভালোবাসতো। নাহ ও ওর বাবার জন্য সব কষ্ট সহ্য করে নেবে। এই কাজটাই ভালো হবে ওর জন্য। 

মায়া:- “আমি রাজি। আমাই কি করতে হবে বলুন।”

আরমান:- “বাহ!! এই তো এটাই আমি চাইছিলাম।‌ তোমার জন্য আমার এখনো ডিনার করা হয়নি। যাও, গিয়ে আগে রান্না করে আনো। ওয়েট রুবিকে ডাকি ও তোমাকে সব কাজ বুঝিয়ে দেবে।”

এই বলে আরমান ইন্টারকমে রুবিকে কল করে ওর রুমে আসতে বলে, সোফায় গিয়ে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরমানের ঘরের দরজায় নক হলো। আরমান আসার অনুমতি দিলে রুবি রুমে প্রবেশ করলো। আরমান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে বলল,

আরমান:- “রুবি! ওর নাম মায়া। আজ থেকে তোমার জায়গায় ও কাজ করবে। তুমি ওকে সব কাজ বুঝিয়ে দাও।”

রুবি এটা শুনে ভীতু গলায় বলল, “কিন্তু স্যার ওনি আমার জায়গায় কাজ করলে আমার কি হবে? আমি কোথায় যাবো? বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবা মা….”

রুবির কথার মাঝে আরমান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আরে থামো থামো!! তোমার কাজ কেড়ে নিচ্ছি না আমি। তুমি তোমার মাইনে পেয়ে যাবে। তোমায় আমি এক মাসের জন্য কাজ থেকে ছুটি দিচ্ছি তার জায়গায় ও কাজ করবে। আর তুমি তোমার এই এক মাসের মাইনেও পেয়ে যাবে। চিন্তা নেই।”

রুবি:- “কিন্তু স্যার আমার তো ছুটির দরকার নেই। আমি আমার কাজ গুলো করে নিতে পারবো।”

আরমান কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল, “রুবি আমার এটা একদম পছন্দ না যে কেউ আমার কথার উপরে কথা বলবে। তোমাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করো। এটা আমার অর্ডার। যাও উনাকে রান্না ঘরটা দেখিয়ে দাও উনি আমার জন্য রান্না করবে।” 

তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার দিকে ঘুরে বলল, “আর হ্যাঁ মায়া তোমাকে বলছি, তোমার হাতে সময় আছে মাত্র ত্রিশ মিনিট। এই ত্রিশ মিনিটের মধ্যে রান্না করতে হবে। আর রুবি তুমি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবে যেনো ওকে কেউ সাহায্য না করে।”

রুবি মাথা নেড়ে সায় জানাই। তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি আসুন আমার সাথে।”

এই বলে রুবি এগিয়ে যাই দরজার কাছে। মায়াও যাই রুবির পিছনে। আর আরমান তাকিয়ে থাকে ওদের যাওয়ার দিকে। ওরা বেরিয়ে গেলে আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ল্যাপটপ সেন্টার টেবিলে রেখে মাথা এলিয়ে দেয় সোফায়। ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হচ্ছে…

কেন মেয়েটাকে এভাবে কিনে নিলো ও? শুধুই কি শাস্তি দেওয়ার জন্য? কিন্তু কিসের শাস্তি দিতে চাইছে ও মেয়েটাকে…?

এই সবই ভাবছিল আরমান। ঠিক তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রীনে ভেসে উঠলো আবিরের নাম। 

(চলুন আবিরের পরিচয় টা দিয়ে দিই) 

আবির ওর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। আবিরের মা বাবা কেউ নেই। ও অনাথ। কলেজে আরমান আর আবির একই সাথে পড়াশোনা করেছে। তারপর আরমান বিদেশে চলে যাই। কিন্তু আবিরের সাথে যোগাযোগ ছিল। আরমান বিজনেসে জয়েন করলে আবিরকেও ডেকে নেয় ওর সাথে। আবির আগে ভাড়া বাড়িতে থাকতো। এখন আরমানদের বাড়িতেই থাকে। আরমানের দাদুই জোর করে নিয়ে এসেছিল। আবির আরমানের পি.এ কম বন্ধু বেশি।

আরমান ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবির বলে উঠলো, “কংগ্রাচুলেশন ভাই!! মিটিং টা সাকসেসফুল হয়েছে। ডিলটাও পেয়ে গেছি আমরা।”

আরমান:- “ওকে।”

আবির:- “কি ওকে?? এতো বড়ো একটা ডিল পাইয়ে দিলাম আমি আর শুধু ওকে?? অন্তত একটা থ্যাঙ্কস জানা।”

আরমান মেজাজ দেখিয়ে বলল, “পারবো না থ্যাঙ্কস বলতে। পারলে ডিল ক্যান্সেল করে দে।”

আবির অবাক হয়ে বলল, “আরে কি ব্যাপার?? মেজাজ এতো গরম কেন?”

আরমান:- “রাখতো তোর ফালতু কথা!! কাজের কথা বল। মাইশার কোনো খবর পেয়েছিস??”

আবির:- “আমি এতো বড়ো একটা মিটিং সাকসেসফুল করলাম আর এটা তোর ফালতু কথা মনে হচ্ছে? সব সময় শুধু মাইশা!! মাইশা! আর মাইশা!! তোর মাইশা জাহান্নামে….

আরমান:- “আবির!!! মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!!”

আবিরকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই আরমান চিল্লিয়ে উঠলো। আবির বুঝতে পারলো ও কি বলতে যাচ্ছিল। তাই ছোটো করে উত্তর দিলো।

আবির:- “সরি, আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।”

আর কিছু না বলেই আবির ফোনটা কেটে দিলো। আরমান রাগে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো সোফার উপর। তারপর দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো।

(আমাদের নায়কেরও বুদ্ধি আছে।‌ তাই ফোনটা সোফার উপর ছুঁড়ে মেরেছে। অন্য নায়কের মতো না যে রাগের মাথায় মেঝেতে ছুঁড়ে মারবে। তাহলে ফোনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। হি হি )

আরো পড়ুন: আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-৩

Post a Comment

0 Comments