আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-১

ভালবাসার গল্প: আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-১

আমি তোমাকে কিনছি, পুরো এক মাসের জন্য, আজ থেকে পুরো একমাস তুমি শুধু আমার বিছানায় থাকবে, এই এক মাসে তোমাকে শুধু আমাকে খুশি করতে হবে, এই সময়ের মধ্যে অন্য কারো দিকে তাকাতেও পারবে না তুমি।" আরমান শাহরিয়ার, মায়ার কানের কাছে এসে খুব লোভনীয় কণ্ঠে কথা গুলো বললেন, যার কারণে মায়ার লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।


কিছুক্ষণ আগে...

একটা বড় ঘরে একটা সিঙ্গেল সোফায় একজন হ্যান্ডসাম ব্যাক্তি বসে আছে, আর তার সামনে অনেক গুলো মেয়ে একটা লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে, সব মেয়েই একে অপরের থেকে অনেক বেশি সুন্দরী, তাদের মুখে লেগে আছে খুব লোভনীয় হাসি।

এখানে তাদেরকে চোখের সামনে বসে থাকা একজন বিশেষ ব্যাক্তির সামনে হাজির করা হয়েছে, তিনি দেখতে খুবই সুদর্শন এবং শহরের একজন বড় ব্যবসায়ী।

পুরো শহরে এই লোকটির অনেক মর্যাদা আছে, তার নাম আরমান শাহরিয়ার, 28 বছরের একজন খুব সুদর্শন যুবক, তার চেহারা এবং তার পেশীবহুল শরীর এমন ছিল যে সে যে কোনও মেয়েকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে। কিন্তু আরমান শাহরিয়ার প্রেম শব্দটি পছন্দ করেন না। সে তার জীবনের প্রতিটি সম্পর্ককে কেবল নিজের মতলবের জন্য বানিয়েছে।

আর ভালবাসা?? ভালবাসা কি, কেমন তার অনুভূতি সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না, 

আরমান শুধু মনে করে যে, আবেগ, অনুভূতি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে অসহায় করে তোলে। 

তাই তার কাছে অনুভূতি, আবেগ এসবের কোনো মূল্য ছিল না, যদি কোনো কিছুর মূল্য থাকে তাহলে তা হলো সম্পদ, খ্যাতি, মর্যাদা এবং তার নিজস্ব মনোভাব। 

আরমান শাহরিয়ার তার ঠান্ডা চোখে দূর থেকে মেয়েদের স্ক্যান করছিল, আর পাশে বসে তার নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার আরমানকে বলছে, "এরা আমাদের ক্লাবের কিছু সুন্দরী নৃত্যশিল্পী, আপনি আজ রাতে বিনোদনের জন্য তাদের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে পারেন। আমাদের নতুন ব্যবসায়িক চুক্তির জন্য এটি আমার পক্ষ থেকে একটি ছোট উপহার।"

লোকটির ঠোঁটে ছিল নির্লজ্জ হাসি, আরমান শাহরিয়ার হাতে ওয়াইনের গ্লাস ধরে ওই সব মেয়ের দিকে তাকায়, সব মেয়েই খুব ভালোভাবে তৈরি হয়ে এসেছিল, যখনই তারা জানতে পারল যে তারা মিস্টার আরমান শাহরিয়ারের‌ সামনে হাজির হতে চলেছে, প্রত্যেক মেয়ের চোখেই একটা আলাদা উত্তেজনা আর নার্ভাসনেস ছিল, প্রতিটি মেয়েই চাই সে জেনো শুধু তাকে নিতে চায়।

এই সমস্ত মেয়েরা আরমান শাহরিয়ার এর জন্য পাগল ছিল, সবাই শুধু মনে মনে দোওয়া করছিল যে, আরমান শাহরিয়ার যেনো তাকে লক্ষ্য করে।  প্রতিটি মেয়ে তার মুখে একটি প্রলোভনসঙ্কুল হাসি দিয়ে আরমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিল।

আরমান সবার দিকে তাকায় কিন্তু তার মুখে কোন বিশেষ ভাব নেই। যেন এইসব মেয়ের প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। সে তার ওয়াইনের গ্লাস থেকে একটা চুমুক নিয়ে বলে, "ননসেন্স, সবই ফালতু, যদি নতুন কিছু থাকে তাহলে দেখাও, এইরকম পুরানো এবং ইউস করা জিনিসগুলিতে আমার কোন আগ্রহ নেই।"

আরমানের এমন উদাসীন উত্তর শুনে, সমস্ত মেয়েরা একেবারে আঁতকে ওঠে, আরমান শাহরিয়ার সত্যিই একজন পাথর-হৃদয় ব্যক্তি। যে তিনি যা চান তা পেতে যে কোনও প্রান্তে যেতে পারেন। কিন্তু এত সহজে তার চোখে কোন কিছুই ভালো লাগেনা, তিনি খুব নির্বাচনী ব্যক্তি এবং তার পছন্দগুলিও খুব বিরল।

আরমানের কথা শুনে পাশে বসা লোকটি তৎক্ষণাৎ  বলল, "আরে, তুমি চিন্তা করো না, আমরা আমাদের ক্লাবের সবচেয়ে তাজা, এবং অস্পর্শিত মেয়ে তোমার সামনে তুলে ধরছি।"

এই বলে লোকটি ঐ সব মেয়েগুলোকে ওখান থেকে চলে যাওয়ার ইশারা দেয়। সেই সব মেয়েরা হতাশা আর মুখে বিষাদ নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়, তখন লোকটি তার এক গার্ডকে বলে, "যে সব নতুন মেয়ে ক্লাবে প্রবেশ করেছে তাদের ৫ মিনিটের মধ্যে হাজির করো।”

ওই গার্ড মাথা নেড়ে সাথে সাথে সেখান থেকে চলে যায়।

একটা ঘরে অনেক মেয়ে রেডি হচ্ছিল, তখন ওখানে একজন গার্ড এসে বলে, "আরে, চলো, এবার তোমাদের পালা, আজ তোমরা যার সামনে যাচ্ছ সে এই শহরের একজন বড় ব্যবসায়ী, তাকে মুগ্ধ করলেই জীবন সেট হয়ে যাবে, তার নাম আরমান শাহরিয়ার, তবে মনে রাখবে তাকে মুগ্ধ করা এত সহজ নয়।"

আরমান শাহরিয়ার নামটা শুনে সব মেয়েদের চোখ জ্বলে উঠল, কিন্তু ওখানে থাকা একটা মেয়ের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। সেই মেয়েটা বাকি সব মেয়েগুলোর থেকে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটা অবাক হয়ে গেল, এই নামটা সে কখনো আশা করেনি।

কিছুক্ষণ পর…. কিছু নতুন মেয়ে রুমে প্রবেশ করে, সেই নতুন মেয়েদের মধ্যে আরমানের চোখ পড়তেই তার চোখ যায় একটা বিশেষ মেয়ের দিকে।

লাল রঙের গাউন পরা একটি খুব সুন্দরী মেয়ে সেই মেয়েদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মুখে শূন্য অভিব্যক্তি। মেয়েটিকে দেখে আরমান ভ্রু কুঁচকে নেয়, ওই মেয়েটি আর কেউ নয়। মায়া আক্তার।

মায়া হলো আরমান এর প্রাক্তন স্ত্রী। দুনিয়ার  কেউ এ বিষয়ে জানে না, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া। আরমান মায়াকে ডিভোর্স দিয়েছিল কারণ মায়ার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

আরমান মায়াকে ওখানে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। আরমানের সামনে বসা লোকটি আরমানের উদ্দেশ্যে বলে, " এরা আমাদের ক্লাবের একদম তাজা তাজা মাল। এরা আজকেই জয়েন করেছে এই কাজে। এটা ওদের সৌভাগ্য যে আপনার মতো একজন অসাধারণ ব্যক্তির দ্বারা তারা তাদের ক্যারিয়ার শুরু করতে চলেছে।"

এই কথার কোনো উত্তর আরমান দেয় না। কারণ তার চোখ তো এক জায়গাতেই আটকে আছে। সব মেয়েরা এসে আরমানের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়ায়, মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। আরমানের দিকে সে একবারও তাকায়নি। আরমান উঠে দাঁড়ায়, ওয়াইনের গ্লাস টেবিলে রেখে সেই মেয়েদের কাছে যায়।

সোফায় বসা লোকটি খুশি হয়ে ভাবছিল যে আরমান এই মেয়েদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। আরমান সেই মেয়েদের চারদিক থেকে দেখেছিল।  কিন্তু বাস্তবে তার চোখ ছিল কেবল মায়ার দিকে, প্রতিটি মেয়ে তাদের স্টাইল, কাতিলআনা হাসি, এবং আবেদনময়ী শরীর দিয়ে আরমানকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিল। তাকে ছুঁয়ে তাকে প্ররোচিত করছিল। কিন্তু আরমানের ওখান কার কোনো মেয়ের প্রতিই আগ্রহ ছিল না।

সে শুধু মায়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল। ওকে দেখেই মনে হচ্ছে অন্য মেয়েদের থেকে একদম আলাদা। খুব স্বাভাবিক ভাবে একজায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। এখনো পর্যন্ত একবারো চোখ তুলে তাকায়নি। যেন সে তার প্রতি মোটেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না, মায়া আরমানকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তার দিকেও তাকাচ্ছে না, এই বিষয়টা আরমানকে আরো রাগিয়ে দিচ্ছিল।

আরমান মায়ার সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে লাইন থেকে টেনে নেয়। এবং তার অন্য হাত দিয়ে মায়ার কোমর শক্ত করে ধরে রাখে। মায়া আরমানের বুকের উপড় হুমরি খেয়ে পড়ে এবং শক্ত করে আরমানের শার্ট আঁকড়ে ধরে। কিন্তু তখনও আরমানের দিকে তাকাচ্ছিল না, আরমান মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে বলে, "আমি শুধু একে চাই...।"

আরমানের উত্তর শুনে লোকটা খুশি হয়ে যায়, কিন্তু অন্য সব মেয়েরা হতবাক হয়ে যায়, এই সাধারণ মেয়েটির মধ্যে এমন কী ছিল যে আরমান তার জন্য সেই সব সেক্সি হট মেয়েদের উপেক্ষা করল।

আরমানের শেষ পর্যন্ত কাউকে পছন্দ হয়েছে দেখে লোকটি খুব খুশি হয়ে যায়। ওনি বলেন, "অবশ্যই মিস্টার আরমান, আপনার পছন্দের দাম আছে বলতে হবে। ও সাধারণ হলেও সব মেয়েদের থেকে সুন্দরী। ও এইমাত্র যোগ দিয়েছে এই কাজে, আপনি যে মেয়েটির গায়ে হাত দিয়েছেন, এই মেয়েটি আপনার সেবায় উপস্থিত থাকবে, ও আজ রাতে আপনাকে বিনোদন দেবে।"

আরামান খুব মনোযোগ দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়, এক বছরের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে এই প্রথম সে মায়াকে এত কাছ থেকে সামনাসামনি দেখেছে, নইলে বিয়ের পর সে, না মায়াকে তার বাড়িতে থাকতে দিয়েছে আর না কখনো তার সামনে আসার অধিকার দিয়েছে।

বিয়ের পরও মায়া তার বাবার বাড়িতে থাকত, আরমান এবং মায়ার পরিবার ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ তাদের বিয়ের কথা জানত না। আরমান মায়াকে খুব ঘৃণা করত। সে কখনো মায়ার মুখও দেখেতে চাইনি নিজে থেকে, মায়া বিয়ের পর 1 বছর তার বাবার বাড়িতে থাকে এবং একদিন আরমান তার বাড়িতে ডিভোর্সের কাগজও পাঠায়। কখন তাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল এবং কখন শেষ হয়েছিল, কেউ সে সম্পর্কে কোনও খবর পায়নি।

আরমান তাদের সবাইকে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়, কারণ তার এখন আর কাউকে সহ্য হচ্ছিল না। তার চোখ তখনও নিচু হয়ে থাকা মায়ার মুখের দিকে, সে চোখের পাপড়ি তুলেও আরমানের দিকে তাকাচ্ছে না। 

আরমান ইশারা করার সাথে সাথে লোকটি, সব মেয়ে এবং গার্ডগুলোকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ওরা সবাই চলে যেতেই আরমানের অভিব্যক্তি আরও কঠোর হয়ে উঠল। আরমান মায়ার কোমরটা আরো একটু শক্ত করে ধরল যাতে মায়ার ব্যাথা করতে শুরু হল, 

আরমান:- "তাহলে এই ব্যবসা কবে থেকে শুরু করলে?" 

আরমানের কথাগুলো খুবই কড়া ছিল যা মায়ার হৃদয়কে ব্যথিত করছিল। এই বিয়ে তাদের দুজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও মায়া আরমানকে অনেক পছন্দ করতে শুরু করেছিল।

যে মুহুর্তে সে আরমানকে প্রথমবার দেখেছিল, তার হৃদয় আরমানের উপর পড়েছিল। আরমান বিয়েতে খুশি ছিল না। কিন্তু মায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আজ না হলে কাল সে আরমানের হৃদয়ে ঠিকই জায়গা করে নেবে। কিন্তু আরমান তাকে এই সুযোগ কখনো দেয়নি। মায়া বিয়ে টা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আরমানের কাছ থেকে সে যা পেয়েছে তা ছিল শুধুই অবজ্ঞা আর অবহেলা।

হঠাৎ একদিন যখন ডিভোর্স পেপার তার বাড়িতে আসে, তখন মায়ার সব আশা ও স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।  ও খুব খারাপ ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। আরমান তাকে ডিভোর্স পেপার সহ কিছু টাকা পাঠিয়েছিল ভরণপোষণ হিসাবে। যা মায়া স্পষ্টতই নিতে অস্বীকার করেছিল এবং ডিভোর্স পেপারে সই করেছিল। এবং সেই টাকা ফেরত পাঠিয়েছিল।

বিবাহ বিচ্ছেদের পর দুজনেই  আর কখনো একে অপরের মুখোমুখি হয়নি। কিন্তু মায়া স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে তাদের এমন ভাবে দেখা হবে। মায়া সাহস সঞ্চয় করে আরমানের চোখের দিকে তাকিয়ে খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল, "দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বাঁচার কোনো ইচ্ছে নেই, আমার কিছু শখ আছে যা পূরণ করার জন্য আমার টাকার প্রয়োজন। এখন আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আমাকে কোথাও না কোথাও থেকে তো আমার শখ পূরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমার অনেক টাকার দরকার।"

মায়ার কথা শুনে আরমানের গম্ভীর মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে যাই। গম্ভীর গলাতেই বলে ওঠে আরমান, "ওহ, তাহলে আমার প্রাক্তন স্ত্রীরও শখ আছে বুঝি? টাকার জন্য শরীর বিক্রি করার জন্য এই বাজারে নেমেছো? বাহ, শখ মানুষকে কত কি কিনা করতে শিখাই। আমি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে একদম ভালো করেছি, তোমার মতো মেয়েদের দিয়ে শুধু শরীরের আগুন নিভানো যাই, বউ করে সংসার করা যাই না। তোমার মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতাই নেই আমার বউ হওয়ার।" 

আরমান দাঁত কিড়মিড় করে কথা গুলো বলল। কেন জানে না, কিন্তু হঠাৎ করেই খুব রাগ লাগছে তার।

যদিও আরমানের কথাগুলো মায়াকে অনেক কষ্ট দিচ্ছিল। কিন্তু সে তার সমস্যাগুলো আরমানকে দেখাতে চায়না। আর কেনই বা সে দেখাবে, যে ব্যক্তি বিয়ের আগেও চিন্তাও করেনি, ডিভোর্স দেওয়ার আগেও ভাবেনি, তার মুখের দিকেও তাকায়নি, তার ফিলিংস নিয়েও ভাবেনি, তাকে কেন তার সমস্যা গুলো দেখাবে? 

মায়া মুখে একটা প্রলোভনসঙ্কুল হাসি দিয়ে আরমানের গলায় হাত রেখে বলল,"যদি এমনই হয় তাহলে চলুন, আমি আপনার ইচ্ছা পূরণ করব আর আপনি আমার ইচ্ছা পূরণ করবে। যাই হোক, গত কয়েকদিন ধরে আমার ইনকাম টা একটু ধীরগতিতে চলছে, আপনার মতো কোনো ধনী লোক পায়নি না, তার জন্য। আজ যখন আপনার মতো ধনী কাউকে পেয়েছি তখন আমি কোনো কমতি রাখতে চাই না। আপনি যেমন চাইবেন আপনাকে আমি তেমন সার্ভিস দেবো। আর আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে একটুও অভিযোগ করার সুযোগ দেব না, আজ পর্যন্ত আমি আমার গ্রাহকদের কাউকে খুশি না করে যেতে দেইনি।

আরমান অবাক হয়ে বলল, "গ্রাহকদের? কতজন গ্রাহক আছে তোমার?" 

আরমানের মুখে বিস্ময়ের ছাপ।‌ আর গলার আওয়াজে রাগের আভাস স্পষ্ট। আরমানকে অবাক হতে দেখে মায়া বাঁকা হেসে বললো, “আমার কতজন গ্রাহক আছে এতে আপনার কি যায় আসে মিস্টার আরমান শাহরিয়ার? এটা তো আমাদের নিত্যদিনের কাজ, এত লোকের কথা কিভাবে মনে রাখি বলুন।"

মায়ার এমন নির্লজ্জ কথা শুনে আরমানের মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো, চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। রাগে আরমান তার হাত দিয়ে মায়ার চিবুক শক্ত করে ধরলো। মায়া প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছিল কিন্তু ও ওর ব্যাথা আরমানকে দেখাতে চাইছিল না। মুখে ঝুলিয়ে রেখেছিল গা জ্বালানো হাসি।

আরমান:- "আমি ভেবেছিলাম তুমি ভালো মেয়ে, তাই তোমাকে ডিভোর্সের সাথে কিছু টাকাও পাঠিয়েছিলাম। তুমি যখন টাকাটা আমাকে ফেরত দিয়েছিলে, তখন আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো একজন আত্মসম্মানী মেয়ে, কোথাও না কোথাও আমার একটু অপরাধবোধ কাজ করেছিল। যে আমি কারো জীবন নষ্ট করেছি, কিন্তু আজ তোমাকে এইভাবে দেখার পর আমার সেই মায়া এবং সেই অপরাধবোধটাও চলে গেল। এখন মনে হচ্ছে যা করেছি একদম ঠিক করেছি। যাই হোক, তা তুমি আজ পর্যন্ত কত মানুষের বিছানা গরম করেছ? হ্যাঁ? কত মানুষ এই শরীর ছুঁয়েছ? কত মানুষের তৃষ্ণা নিবারণ করেছ তুমি? কি হলো বলো? উত্তর দাও। 

আরমান উত্তেজিত হয়ে মায়াকে কথা গুলো জিজ্ঞাসা করল। আরমানের কথা শুনে মায়া হাল্কা হেসে বলল, "বললাম না, আমার মনে হয় না এগুলো জেনে আপনার কোনো লাভ হবে। আমি অনেকের সাথে খেলেছি। বিশ্বাস করুন, আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে, আমি আপনাকে খুব খুশি করতে পারবো, একবার শুরু করে তো দেখুন, আপনার পুরো টাকা উসুল হয়ে যাবে।"

মায়ার কথাগুলো আরমানের রক্তকে আরও গরম করে দিচ্ছিল, ও মায়াকে বিছানার কাছে নিয়ে যায় এবং জোর করে তাকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দেয়, তখনো প্রলোভনসঙ্কুল হাসি মায়ার মুখে রয়ে যায়, আরমান রেগে গিয়ে নিজের সমস্ত পোশাক খুলতে শুরু করে। মায়াও আস্তে আস্তে তার শরীর থেকে জামাকাপড় সরিয়ে নেয়, আরমানের চোখের সামনে মায়া বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল। মায়ার কাছাকাছি এসে আরমান বলল, "তোমার কতটা অভিজ্ঞতা আছে দেখাও আমায়, আমি চাই তুমি আমাকে সন্তুষ্ট করো।" 

মায়া তার মুখে একটি ধূর্ত হাসি দিয়ে আরমানকে কাছে টেনে নেয় এবং আবেগের সাথে কিস করতে শুরু করে।

আরমান মায়াকে এমনভাবে কিস করতে শুরু যে মায়ার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে যাই। যেনো পুরো রাগটা মায়ার ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে। কিন্তু মায়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। চুপচাপ সহ্য করে নেয়। এরপর ওরা মত্ত হয় সেই আদিম খেলায়। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু এতে কোনো ভালোবাসা ছিল না। ছিল শুধু আরমানে রাগ। যা মায়ার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেলো। মায়া হাসিমুখে সব কিছু সহ্য করছিল, সে অনেক কষ্টে পাচ্ছিল তারপরও সে তার মুখে তার ব্যাথা প্রকাশ করতে দিচ্ছিল না। আরমান সারাটা রাত মায়ার সাথে কাটাই। 

সকাল বেলা……

আরমান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার পরে মায়া ওয়াশরুমে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। ভিতরে যেতেই মায়ার সমস্ত যন্ত্রণা এবং কষ্ট তার চোখের অশ্রু হয়ে ঝরতে থাকে। মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে নীরবে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঝরনার জল তার শরীরে পড়ছিল, তার শরীরে লাল এবং নীল চিহ্ন ছিল, যা বোঝায় যে আরমান কতটা নিষ্ঠুরভাবে তাকে আঁচড়ে খেয়েছে। তার শরীরে থেকে বেশি আত্মায় ব্যাথা লেগেছে। মায়া তার কণ্ঠস্বরকে চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

আরমান পোশাক পরে রেডি হয়ে নিয়েছে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।  যাওয়ার আগে সে তার কোট থেকে একটি চেক বের করে মায়ার কাছে এসে চেকটি মায়ার দিকে ছুড়ে দেয়, "এই ধরো, তোমার রাতের সেবার মূল্য।"

মায়া, নিজের ভেতরের কষ্ট লুকিয়ে, নির্লজ্জভাবে চেকটা তুলে নিয়ে তাকায়। চেকে লেখা পরিমাণ দেখে মায়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।

আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, "ধন্যবাদ স্যার, পরিমান দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমার সার্ভিস খুব পছন্দ করেছেন, অবশ্যই আবার আসবেন।"

আরমান মায়ার চুল মুঠো করে ধরে একটু কাছে নিয়ে আসে, এতে মায়া ব্যাথা পাই কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। আরমান রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, "প্রশ্নই আসে না, এই আরমান শাহরিয়ার একবার যেই জিনিস ব্যবহার করে তাতে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় না।”

মায়া একটু মন খারাপের ভান করে বলে, , "ওহ, এর মানে আমি আর আপনার সাথে রাত কাটানোর সুযোগ পাব না। সমস্যা নেই, আপনি না হলে অন্য কোন মোটা পার্টি ঠিকই পেয়ে যাবো, শহরে এমন লোকের অভাব নেই, যাইহোক, আজ রাতে আমার আরেকজন ব্যবসায়ীর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে, একটি সুন্দর পোশাক কিনতে হবে,তার পরে অনেক প্রস্তুত হতে হবে। আমি ব্যস্ত, আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো মিস্টার আরমান শাহরিয়ার।"

এই বলে মায়া চেক নিয়ে রুম থেকে চলে যায়।

আজ রাতে অন্য কারো সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট?? মায়ার এসব কথা শুনে আরমান অবাক হয়ে গেল। কেন জানি ওর খুব রাগ লাগছিল। এতে আরমান কনফিউজড হয়ে বিরক্ত নিয়ে মনে মনে বলে, “ও সারা শহরের মানুষ নিয়ে রাত কাটাক তাতে ওর কি?”

এই ভেবে আরমান সেখান থেকে সোজা তার অফিসের জন্য রওয়ানা দেয়। 

ক্লাব ছাড়ার পর মায়া সোজা হাসপাতালে যায়, তার ফোনে অনেক মিসড কল ছিল।

মায়া তারাহুরো করে একজন ডাক্তারের কেবিনে ঢুকে যায়। মায়াকে দেখে ডাক্তার বলেন, "আরে আপনি এসেছেন? আমরা আপনাকে অনেকবার ফোন করেছি, আপনি আমাদের ফোন ধরলেন না।"

ক্ষমা চেয়ে মায়া খানিকটা নার্ভাস কন্ঠে বলল, "আমি দুঃখিত ডাক্তার, আমি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম।  ডাক্তারবাবু ওনি কেমন আছেন?”

ডাক্তার মায়াকে বললেন, "আসলে গতরাতে ওনার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, বারবার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিল। তাই আপনাকে এতবার ফোন করেছি।"

ডাক্তারের কথা শুনে মায়ার হৃৎপিণ্ড হঠাৎ থেমে যায়, "এখন কেমন আছেন ডাক্তার?"

ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে উত্তর দিলেন, "উনি এখন ভালো আছেন, চিন্তা করবেন না।"

এই কথা শুনে মায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ডাক্তার মায়াকে বললেন, "উনাকে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে, উনি ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে আছে, আমি আপনাকে কোন মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে চাই না, আমরা জানি তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি এত টাকা খরচ করতে চান?"

কথাটা শুনে মায়ার চোখে পানি চলে আসে, "ডাক্তার কি বলছেন এসব, ওনাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই, আমি ওনাকে হারাতে চাই না।" 

ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে বলেন, "আমি বুঝতে পেরেছি, চিন্তা করবেন না, উপর ওয়ালার উপর ভরসা করুন। ওনার কেমোথেরাপি শুরু করার সময় হয়ে গেছে, আপনি বিলটা জমা করে দিন। আর হ্যাঁ ওনার কিন্তু অনেক দামি ওষুধ পত্র লাগবে তাই সবসময় টাকা রেডি রাখবেন।

মায়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মাথাটা একটু নেড়ে বলল, "হ্যাঁ ডাক্তার সাহেব, চিন্তা করবেন না, আপনি শুধু চিকিৎসা শুরু করুন, আমি সব খরচ বহন করব।" এই কথা শুনে ডাক্তার মৃদু হেসে মাথা নাড়েন।

মায়া হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে যায়, সেখানে একজন লোককে শুয়ে থাকতে দেখা যাই। উনাকে বেশ প্রাণহীন দেখাচ্ছিল, মাথা থেকে বেশ কিছু চুল উঠে গেছে। জামা পড়ানো না থাকলে শরীরের সব হাড় গোনা যাবে। ওনাকে দেখতে অবিকল একটা মৃতদেহের মতো। এই অবস্থায় লোকটিকে দেখে মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছিল। কারণ সেই লোকটি আর কেউ নয় তার জন্মদাতা পিতা, যিনি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিল।

ধীরে ধীরে ক্যান্সারের কারণে তার শরীর সম্পূর্ণ ফাঁপা হয়ে গেছে, মায়া তার সাহস জোগাড় করে এবং তার বাবার বেডের কাছে এগিয়ে যাই, হাসির আড়ালে তার মুখের দুঃখ লুকিয়ে রাখে। বিছানায় নির্জীব শুয়ে থাকা লোকটি মায়াকে দেখে যেন তার শরীরে প্রাণ ফিরে আসে, চোখ চকচক করে ওঠে, সে হাত এগিয়ে দিয়ে মায়াকে কাছে আসতে ইশারা করে।

মায়া কাছে এসে লোকটির হাত ধরে বেডের কাছে চেয়ারে বসে, "পাপা, কেমন আছো তুমি? জানো, আজ আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করেছি, ডাক্তার কি বলেছে জানো? তিনি বললেন যে তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। ঠিক আগের মতো।"

লোকটা জানতেন মায়া তাকে মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছে। সে যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে শুধু মৃত্যুর দিকে যেতে পারে। জীবনে বেঁচে থাকার দিকে নয়, তবুও মায়া তাকে উৎসাহ দিচ্ছিল, ওনি জানতেন মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছে আর সেই কষ্ট তার হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। বাবা তো তাই সব বুঝেন। ওনি নিজের জন্য নয়, তার মেয়ের জন্য চিন্তিত ছিল, মায়া দেখতে খুব সুন্দর এবং নিষ্পাপ ছিল, জানেননা ওনি থাকলে ওনার মেয়ে এই দুনিয়ায় কিভাবে বাঁচবে।

ওনার নাম আশরাফ তালুকদার।  মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তিনি। ওনার বাবা অর্থাৎ মায়ার দাদা এবং আরমানের দাদা ছিলেন স্কুলের বন্ধু।

অনেক আগেই তারা দুজনেই মায়া আর আরমানের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। আরমানের পরিবার জোর করেই মায়াকে আরমানের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। আর আরমান বিয়ে করে নিলেও তা মানতে রাজি ছিল না। যেহেতু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা দেওয়া হয়েছিল। মায়াকে ওদের বাড়িতেও আনতে দেয়নি এই বলে যে “ওই মেয়ে যদি এই বাড়িতে আসে তাহলে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।"

আরমানের দাদা জানতেন মায়া ভালো মেয়ে, আর আরমানও কেমন ছেলে তা তিনি ভালোই জানতেন। তাই ওনার মনে হয়েছিল মায়াই একমাত্র আরমানকে সামলাতে পারবে।

আরমানের দাদা শেষ ইচ্ছা হিসাবে চেয়েছিল দুজনের বিয়ে হোক। দাদার ইমোশনাল ব্লাকমেইল এ বাধ্য হয়ে আরমান মায়াকে বিয়ে করে নেয় কিন্তু তারপর মায়ার মুখও দেখেতে চাইনি। বিয়ের কিছু মাস পরই আরমানের দাদা মারা যান। 

বর্তমান....

আশরাফ:- আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিও না মামনি, আমি জানি আমার হাতে বেশি সময় নেই। পৃথিবীর কোনো চিকিৎসাই আমাকে সারিয়ে তুলতে পারবে না। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তিত নই, আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত। তুমি আমাকে এত দামী হাসপাতালে ভর্তি করেছো আমার চিকিৎসার জন্য কিন্তু এখন তার খরচ তুমি কিভাবে বহন করবে? তুমি আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই। আমি এই হাসপাতালে মরতে চাই না।"

মায়া সাথে সাথে তার বাবাকে বাঁধা দিয়ে বললো, "পাপা, থামো তুমি, তোমাকে কতবার বলেছি এমন ফালতু কথা বলবে না, তোমার কিছুই হবে না। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে, ডাক্তার আমাকে বলেছে সে তোমার উপর নতুন ওষুধ ব্যবহার করছে, যেগুলো আস্তে আস্তে কাজও করছে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে, বিশ্বাস করো।"

আশরাফ:- "এত টাকার ব্যবস্থা করছ কোথা থেকে তুমি? কিছু ভুল কাজ….." 

আশরাফ এই কথা বলতেই মায়া তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়, "না পাপা, আমি একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, এই চাকরির ভিত্তিতে তোমার চিকিৎসার জন্য লোন নিয়েছি।

তুমি চিন্তা করো না, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে, তারপর আমরা দুজনে বাড়ি যাব।"

আশরাফ একটু দুঃখী হয়ে যায়, মায়া তার পাপাকে দুঃখিত দেখতে পারে না, সে তার পাপার হাতে হালকা চুমু খেয়ে বলে, "পাপা, তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, তোমার কিচ্ছু হতে দেব না, কিছু না।" আশরাফ হালকা হেসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

বাবাকে এমন নিষ্প্রাণ অবস্থায় দেখে মায়ার খুব কষ্ট হয়, আল্লাহই জানে তাকে নিয়ে কি খেলা খেলেছে, ছোটবেলায় তার মা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, বিয়েও ভেঙে গেছে। এখন তার বাবাই তার শেষ ভরসা, আল্লাহতায়ালা এখন তাকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং ও ওর বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের কতটা মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে তা একমাত্র ওই জানে।

মায়া মনে মনে বলে, "I am sorry papa, আমি কি করছি তা বলতে পারব না। তবে তোমার জীবন বাঁচাতে আমি যেকোনও প্রান্তে যেতে প্রস্তুত। আমি জানি আমি যা করছি তা খুবই অন্যায়, যেই রাস্তায় আমি নেমেছি এতে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এবং আমি কখনই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না, তবে আমিও তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না, প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও।"

পাপাকে খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পর মায়া তার বাড়িতে ফিরে আসে। প্রথমেই সে একটা পেইন কিলার খেয়ে নেয়। কারণ তার শরীরে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছিল। আর হবে নাই বা কেন আরমান তো পুরো পশুর মতো ব্যবহার করেছে ওকে।

ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পর মায়া হালকা কিছু খায় এবং তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে, বিছানায় শুয়ে সে ক্লান্ত এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। 

রাতে মায়া রেডি হয়ে ক্লাবে পৌঁছালে ক্লাবের মালিক মায়াকে তার কাছে ডাকে। মায়া ক্লাবের মালিকের কাছে পৌঁছে বলল, "স্যার, আমাকে আপনি ডেকেছিলেন?”

ক্লাবের মালিক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন, আরে মায়া, তুমি এসেছ ভালোই হলো, আমি তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। তোমার ফোনে ঠিকানা পাঠিয়েছি, আজ রাতে তোমাকে ওখানে যেতে হবে।

মায়া ঠিকানা দেখার সাথে সাথে অবাক চোখ তাকায়, "শাহরিয়ার ম্যানশন!!" 

ক্লাবের মালিক একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, "জানো, তোমার সার্ভিস তার এত ভালো লেগেছে যে তোমাকে পুরো এক মাসের জন্য ভাড়া করে নিয়েছে। তুমি তো লটারি জিতেছ মায়া,  অভিনন্দন, এখন তুমি টাকার পুকুরে গোসল করবে।"

মায়া যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারণ সে এটা মোটেও আশা করেনি। মায়াকে অবাক হতে দেখে লোকটি বলল, "কি খুব অবাক হয়েছ তো? হওয়ারই কথা।" 

মায়া যেনো নিজের হুঁশ ফিরে পেলো, "স্যার, একমাস? খুব বেশি হয়ে গেল না?"

ক্লাবের মালিক চোখ ঘুরিয়ে বললেন, "তো?? এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? মেয়েরা এই সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে। আর তুমি এতো ভালো সুযোগ পেয়েও খুশি নও? যাও তাড়াতাড়ি ওই অ্যাড্রেসে চলে যাও। আমি ওনার থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন তোমাকে যেতেই হবে নাহলে আমার ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে।

লোকটার কথা শোনার পর মায়া শুধু মাথা নাড়ল, সে তখনও বিভ্রান্ত এবং অবাক ছিল। কিন্তু তার অর্থের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাকে এই কাজটা করতে হচ্ছে।

মায়া মনে মনে বলে, “জানি না আমার ভাগ্যে আর কি কি আছে?

আরো পড়ুন: আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা|সালমা খাতুন| পর্ব-২

Post a Comment

0 Comments