ম্যারেজ প্রোপজাল| অরিত্রা অর্নি| পর্ব-১

ম্যারেজ প্রোপজাল| অরিত্রা অর্নি| পর্ব-১

সকাল সকাল রান্নাঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হলো সায়রা। হাতে এখনো আটা লেগে আছে৷ সেই কখন নাস্তা বানাতে বসেছে৷ এদিকে আজকে তার চাকরির ইন্টারভিউ আছে৷ সময় মতো পৌঁছাতে হবে। সায়রাকে এমন করে রান্নাঘর থেকে বের হতে দেখে কোকিলা আড় চোখে চেয়ে রইলো। সায়রা সেদিকে তাকিয়ে ছোট করে বললো"

আমি নাস্তা বানিয়ে দিয়েছি। আপনি চা গরম করে নিয়েন একটু। 

কেন ?  তুই কোন মহা ভারত অশুদ্ধ করতে যাবি শুনি? 

"সায়রা হাত ধুতে ধুতে বললো "

ইন্টারভিউ আছে! সেখানে যাবো। 

"কোকিলা মুখখানা আবার কুচকে ফেললেন। যেনো এই কথা শুনে সে মহা বিরক্ত "

আবার ইন্টারভিউ। আর কতো শুনি? এতোগুলো তো দিলি। একটা ও তো হলো না চাকরি। 

অনার্স পড়ুয়া মেয়ের চাকরি পাওয়া কি এতোই সহজ লাগে আপনার কাছে। আমি চেষ্টা তো করছি। 

"কোকিলা ভেংচি কাটলো। রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলোো"

বছর ধরে শুধু চেষ্টা ই করবে। আমাকে ধংস করে শান্তি হবে এই মুখপুরির। সংসারটা চলে কিভাবে। বাপের পেনশনের টাকা কি ফুরাবে না। তারপর দেখবো কেমন চাকরি পায়৷ সিয়ানা মেয়ে বিয়ে করবে না। চাকরি করবে। আমার হয়েছে জালা। 

"সায়রা সেসব শুনলো নিজের ঘরে থেকেই। সে এখন তৈরি হবে। সময় কম হাতে। একবার বাবার ঘরো ও যাওয়া দরকার। ওই মহিলা ঔষধ ঠিক মতো দিয়েছে কিনা কে জানে। সায়রা তৈরি হলো। একটা কামিজ পরে ওরনা গলায় পেচিয়ে নিলো। মুখে মাস্ক পরলো। কাধে একটা পুরো ব্যাগ আর হাতে প্রয়োজনীয় কাগজপএ নিয়ে রুম থেকে বের হলো। কোকিলা বেগম তখন বসার ঘরে বসে নাস্তা খাচ্ছে আর টিভিতে সিরিয়াল দেখছে। সায়রা সেদিক থেকে চললো জব্বার সাহেবের ঘরে। তিনি সায়রার বাবা। গত দুই বছর যাবত প্যারালাইজ হয়ে বিছানায় পরা। চলাচল করতে পারেন না৷ সায়রা গিয়ে দেখলো তিনি ঘুমাচ্ছেন এখনো। তাই আর ডাকলো না। বেরিয়ে এলো। কোকিলা বেগম যেনো সায়রাকে দেখে ও দেখছেন না। সায়রার কিছু টাকা দরকার। এখনো টিউশনির বেতনটা পায়নি। কিন্তু কোকিলা বেগমের এমন মুখ দেখে আর টাকা চাইতে ইচ্ছে করলো না। বেরিয়ে গেলো। গেটের সামনে আসতেই দেখলো দিশা আসছে। সায়রার দিকে তাকিয়ে ও পাশ কাটিয়ে চলে গেলো মেয়েটা বাড়ির ভেতরে। অবশ্য এসবে সায়রা তেমন কিছু মনে করে না। রোজকার কাহিনী। 

সত মা সত ভাই বোন। এরা আর তার সাথে কি কথা বলবে। এই তৃকুলে বাবা ছাড়া তার আর কেউ নেই। মা তো সেই কবেই দুনিয়া ছেড়েছে। সায়রা সামনে হাটতে লাগলো। হাতে যে টাকা আছে একান থেকে রিকশায় উঠলে সব শেষ। কিছুটা পথ হেটে গিয়ে সায়রা রিকশায় উঠলো। হাতের ঘরির দিকে চেয়ে দেখলো বেশি সময় ও নেই। আরেকদিকে রোদের তাপে শরীর ঝলসে যাওয়ার অবস্থা। ফাইলটা মাথার উপর ধরলো যাতে একটু হলেও রোদ কম লাগে গায়ে। পনেরো মিনিটের মাথায় ই গন্তব্যে পৌঁছালো সায়রা। বিশাল এক অফিসের সামনে। এই অফিসের নাম সে অনেক শুনেছে। রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে দিয়ে সায়রা

বড় গেট টা দিয়ে ঢুকলো। সামনেই বড় বর করে লেখা

SST Elegance। বিশাল বড় বিল্ডিং দাড়িয়ে আছে। এটা কয়তলা হবে হিসেন নেই। সায়রা মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে ঢুকলো। আজও যদি ফিরিয়ে দেয়। এর আগে ও বেশ কয়েক জায়গায় সে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছে কিন্তু চাকরি হয়নি। কারন হিসেবে একটাই ধরা হয় তার কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। তার মধ্যে সায়রা চেয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনার কম্পানিগুলোতে চাকরি। কিন্তু সে এ বিষয়ে পড়াশোনা করে না। চেষ্টা করেছিলো তবে হুট করে জব্বার  সাহেব এর চাকরি চলে যায় সাথে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর্থিক সমস্যার কারনে আর পড়া হয়নি৷ সায়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এরপর চলে গেলো ভেতরে। ইন্টারভিউ নেওয়া হবে টপ ফ্লোরে। লিফটের জন্য দাড়াতেই সায়রা হতবাক। কতো মানুষ দাড়িয়ে আছে। বেশিরভাগ ই মেয়ে। কি মর্ডান ড্রেস পড়ে আছে একেকজন। সায়রা এদের মাঝে এসে একবার নিজেকে দেখলো। কটনের সেলোয়ার-কামিজ পড়নে তাও নিজেই বানিয়েছে। হাতে একটা ঘরি। কাধে ব্যাগ। ফ্ল্যাট স্যান্ডেল। 

এসব ভাবতে ভাবতে লিফট এলো মানুষ খালি হতেই দাড়িয়ে থাকা সকলে উঠলো। সায়রা এক কোনে চুপটি করে দাড়িয়ে রইলো। আশেপাশের মেয়েরা একেকরকম কথা বলছে। কেউ কেউ তো অফিসে বস নিয়ে ও কথা বলছে। সায়রা কান খারা করে একটু শুনে ও নিলো। 

দশম ফ্লোরে এসে লিফট থামলো। সঙ্গে সঙ্গে সকলে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলো। যেনো তাদের ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। লিফট এর সামনে দু'জন মহিলা সাথে এলজন হুইলচেয়ার বসে একজন বয়স্ক মহিলা ছিলো। সায়রার আগে যে মেয়েটা বের হয়েছে সে তার হিল দিয়ে বয়স্ক মহিলার পায়ে পারা দিয়ে চলে গেছে। তিনি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠেছে। সায়রা বিষয়টা খেয়াল করে দৌড়ে আসে "

আপনি ব্যাথা পেয়েছেন ?  পা লাল হয়ে গেছে। আন্টি একটু দেখুন না বরফ পান কিনা। ( পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে) 

"সায়রা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করলো। মহিলাটার পায়ে ঢালতে লাগলো। আরেকটা মহিলা কোথা থেকে যেনো বরফ নিয়ে এলো। সঙ্গে একটা ছেলে ও এলো। মহিলার পায়ের দিকে চেয়েই ছেলেটা বলে উঠলো "দাদি আপনি ঠিক আছেন ?  আমি তূর্য স্যারকে ডেকে আনছি। 

খবরদার নাফিস ওকে ডাকবি না৷ ও মিটিং এ আছে। আমার কিছু হয়নি। এই মেয়ে উঠো তুমি। ( শেষের কথাটা সায়রাকে) 

এখানে একটা মলম লাগাবেন৷ ব্যাথা কমে যাবে। 

এদিকে আয় তো মেয়ে। 

"সায়রা এগিয়ে গেলেন। মহিলা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো "

তুই তো ভারি মিষ্টি মেয়ে। মাশাল্লাহ। 

"উওরে সায়রা মুচকি হাসলো৷ পাশে থাকা ছেলেটা এবার কাকে যেনো কল করলো। তখনই একজন কালো শার্ট পরিহিত লোক এলেন "

দাদিকে নিয়ে এক্ষনি হসপিটালে যাবে। স্যার এর মিটিং শেষ হলে আমরা ও আসছি। বুঝেছো। 

জি স্যার। 

নাফিস। আমি এখন বাড়িতে যাবো। পায়ে কিছু হয়নি তেমন। 

দাদি। 

নাফিস,, । 

_আচ্ছা দাদিকে বাড়িতে পৌঁছে দাও। 

"মহিলাটা সায়রার দিকে চেয়ে বিদায় নিলো। সায়রা এবার ঘরি দেখলো। অলরেডি বিশ মিনিট দেড়ি হয়ে গেছে। সামনে থাকা ছেলেটা ও চলে গেছে। এবার সায়রা গেলো। এখানে এসে সায়রা আরো হতবাক বিশাল বড় লাইন। অথচ সায়রা তো দেখেছে দশ থেকে বিশ জন ইম্পলয় নেওয়া হবে। সায়রা হতাশ হচ্ছে। তবুও সে সিরিয়ালে দাড়ালো। একজন একজন করে ঢুকছে। বেশি সময় নয় কয়েক সেকেন্ড এরপর ই বেরিয়ে আসছে। সায়রা বুঝলো না এরা কি চেহারা দেখছে শুধু। তবুও বসলো। ওয়েট করে করে সায়রার পালা এলো। সায়রার এই মুহুর্তে এসে বুক কাপছে। লিফটে যা শুনে এসেছে এই অফিসের বসের নামে। তবুও সায়রা ঢুকলো। তার মুখে ঘাম। কাপালে ও ঘামে সামনে থাকা চুলগুলো ও ভিজেছে। কেবিনের ভেতরে যেতেই মনে হলো শীতল হাওয়া এসে লাগলো শরীরে। সাথে খুব সুন্দর একটা ঘ্রান নাকে এসে লাগলো। সায়রা দেখলো একটু আগে যাকে দেখে এলো আ

বাইরে সে বসে আছে। সায়রা ভাবলো এটাই হয়তো বস। সে সালাম দিলো "

বসুন। 

"সায়রা বসলো। হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিলো। ছেলেটা সেটা নিলো। ফাইলটা খুললো ও না। আগে বললো "

আপনার নাম? 

জি, সায়রা আজমীর। 

পড়াশোনা ? 

অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট । 

কিন্তু এখানে তো,,,,, । 

জি,আমি জানি এখানে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ হয়। তবে এটা নিয়ে আমি কাজ করি। আপনারা চাইলে আমি কিছু সেমপল ও আপনাদের দেখাতে পারবো। 

জি, আপনি আসতে পারেন মিস সায়রা। 

"সায়রা চেয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। যেনো সে বুঝেনি "

সরি স্যার। আপনি তো আগেই এভাবে বলতে পারেন না। আপনি আমার কাজগুলো দেখবেন আগে,,, । 

সরি,মিস সায়রা। আপনার এই কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আপনি এই বিষয় নিয়ে পড়ছেন ও না। 

তাহলে,,,,,,। 

আপনারা এমন কেনো বলতে পারেন। সবাই মুখে একই কথা নিয়ে বসে আছেন। মানুষের কাজকে মূল্যায়ন না করে অভিজ্ঞতা দেখছেন। তাহলে নতুনরা কি করবে? 

দেখুন নতুনরা কি করবে সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নয়৷ আমাদের অভিজ্ঞ লোক দরকার। এটা কোনো ট্রেনিং সেন্টার নয়। এটা অফিস। কাজের জায়গা। 

"সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেবিনে ঢুকলো একজন। সাথে সাথে নাফিজ দাড়িয়ে গেলো। সায়রা সেদিকে ঘুরে তাকালো। লম্বা স্যুট বুট পরিহিত একজন লোক দাড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ের রং। মুখে হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। কেমন সাহেবদের মতো লাগছে। লোকরা কেমন করে চেয়ে আছে । নাফিস ছেলেটার দিকে উদ্দেশ্য করে লোকটা বললো"

এনি প্রবলেম, নাফিস ? 

নো স্যার,। 

তাহলে এতো সময় নিচ্ছো কেনো ? এতো সময় তো দেওয়া যাবে না। 

তাহলে আপনারা জবের জন্য ডাকেন কেনো মানুষকে। ঢং করার জন্য। ( সায়রা হুট করেই বলে বসলো কথাটা) 

"লোকটা এবার চায়লো সায়রার দিকে। এমন দৃষ্টিতে চায়লো যেনো সায়রা খুব অন্যায় কিছু বলে বসেছে। লোকটা দু পা এগুলো সামনের দিকে। সায়রা ততক্ষণে চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েছে।ঠিক সায়রার সামনে এসে দাড়ালো লোকটা "

জবের জন্য ডেকেছি। জোড় করে তো আনা হয়নি। অভিজ্ঞ না থাকলে এসেছো কেনো ? 

নতুনদের আপনারা চাকরি দেন না অভিজ্ঞতা নেই বলে। তাহলে আমার মতো নতুন যারা আছে তাদের অভিজ্ঞতা হবে কোথা থেকে শুনি। 

লোকটা এবার ভালো করে সায়রার দিকে লক্ষ্য করলো। ছোটখাটো একটা মেয়ে। গোলগাল মুখ। মুখটা ঘেমে থাকায় ফর্সা মুখ অন্য রকম লাগছে। সাথে তেজি কন্ঠ। আরেকদিকে নাফিস চেয়ে আছে বোকার মতো। এখনো সব কিছু শান্ত আছে ভেবে সে অবাক হলো। লোকটা সায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নাফিসকে বলে "

নাফিস, উনাকে রুহানির কাছে পাঠাও। ঘন্টা ধরে ইন্টারভিউ নিতে বলো। ততক্ষণ উনার ইন্টারভিউ চলবে যতক্ষন উনি নিজের কথা সামনে না রাখতে পারছে। "গট ইট"

ইয়েস স্যার।

"লোকটা চলে যেতে নিতেই সায়রা বলে উঠলো "

ও হ্যালো মিস্টার, ঘন্টা ধরে ইন্টারভিউ চলবে মানে।মগের মুলুক নাকি। 

নাফিস তোমাকে যা বলেছি তাই করো। ঢং করতে এখানে কাউকে ডাকা হয়নি। 

"বলতে বলতে লোকটা কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। সায়রা হা করে চেয়ে রইলো। তার কথার খোটা দিয়ে দিলো মুহুর্তের মধ্যে। কি অ্যাটিটিউড। নাফিস এসে সায়রার পেছনে দাড়ালো "

চলুন।

আচ্ছা উনি কে বলুন তো ? 

"নাফিস সামনে যেতে যেতে বললো "

আপনি যে বিল্ডিং এ দাড়িয়ে আছেন। যে কম্পানির চাকরি করতে এসেছেন উনি সেটার ওনার। 

"সায়রার মুখটা সঙ্গে সঙ্গে চুপসে গেলো। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো একটা শব্দ "

কিহ। 

জি। উনি সাদমান শাহারিয়ার তূর্য । "ওনার অফ এস,এস,টি এলিগেন্স"

Post a Comment

0 Comments