জীবনের গল্প: নির্বিচার|মারিয়া হাজান মারুফা| পর্ব-৪
জানালায় খুলতে'ই শিশির এসে চোখে-মুখে পরেছে মেঘের! হাত বাড়িয়ে শিশির ছুয়ে দিচ্ছে সে! তখনের কথা মনে পড়তে'ই লজ্জা মাথা নইয়ে নেয় মেঘ!
সামনে কালো পোষাকে আবৃত কাউকে দেখে পেছন ফিরে অভিকে জড়িযে ধরে মেঘ! ভয়ের চোটে জাপটে ধরেছে অভিকে! কিছুক্ষণ পরেই অভির বুক থেকে মাথা তুলে মেঘ! অভি মুচকি হেসে বলে' —'স্বামী তোর তোমার'ই! তোমার সম্পূর্ণ অধিকার কাছে আমাকে আলিঙ্গন করার!"
মেঘ কিছু না বলে'ই ঘরের ভেতরে যায়! হাসির খিলখিল শব্দে পেছনে তাকায় মেঘ! হাসির শব্দ সেই কালো পোষাকে আবৃত ওখান থেকেই শুনা যাচ্ছে! মেঘ এক-পলকে তাকিয়ে আছে! সাথে সাথে কালো কাপড় মাথা থেকে সরতেই দেখা যায় সে ছিল আয়াত! অভিও তার সাথে দাঁত কেলিয়ে হাসছে! মেঘের প্রচন্ড রাখ হয়!
অভি মুচকি হেসে বলে' —'যাক ভাই তোর কারণে হলেও বউটা তো আমাকে আলিঙ্গন করেছে!"
বলেই পকেট থেকে একশত টাকার একটা নোট আয়াতের হাতে ধরিয়ে দেয়! মেঘ বেশ লজ্জা পেয়ে যায়! এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো ভয় পাওয়া তার একদম'ই মানায় নি! তা আবার অভির সামনে তাকেই জড়িয়ে! মেঘের ভাবনা উবে যায় আমেনার ডাকে! তিনি বাইরে থেকে মেঘকে ডাকতে থাকেন' —'মেঘ! চলে আয় মা! অনেক বেলা হয়েছে!"
মেঘ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে! খাবার টেবিলে সবাই থাকলেও অভিকে দেখতে পেলো না মেঘ! আমেনার দেয়া থ্রি-পিস যে মেঘ পড়েছে এতে আমেনা বেশ খুশি হয়েছে! মেঘকে দেখে যে আনন্দিত হয়ে বলে' —'আমি ভেবেছিলাম কালকের ঘটনার জন্য তুই হয়তো রাগ করেই থাকবি?'
—'ফুপি! আমি বছরের পর বছর বাইরে থেকেছি! কেউ আমার সাথে ভালো ব্যবহার তো দূরে সামান্য কথা বলতেও দ্বিধা-বোধ করতো! এখানে আমার খারাপ লাগে নি! কিন্তু নিজের উপরে আমি কনফিউজড!"
আতিয়া কথা পিঠে কথা বসায়' —'সে মা আপু! তুমি না অস্ট্রেলিয়ান! তা ওখানে নিশ্চয়ই আমাদের থেকেও ভা-ল
আতিয়ার কথা শেষ হয় না! তাদের কথার মাঝে দরজার কলিংবেল বেজে উঠে! আতিয়া কিঞ্চিৎ রাগ করে বলে' —'কথায় শান্তিও নেই আমার!"
রহিমা গিয়ে দরজা খুলে দেয়! সময় পেরুতে না পেরুতেই রহিমা ডেকে বলে' —'মেঝো বউয়ের বাপের বাড়ির লোকেরা জিনিস পাঠিয়েছে!"
মেঘ অবাক হয়! তার জিনিসপত্র বলতে তো ওবাড়িতে কিছুই নেই! তাহলে কিসের কথা বলছে রহিমা! খাবার ছেড়ে হাত ধুয়ে উঠে মেঘ! মেঘকে অবাক হতে দেখে ফিরোজা বেগম প্রশ্ন করে! কিন্তু মেঘ কোনো উত্তর দেয় না! সোজা হেঁটে দরজার কাছে গিয়ে অবাকের চরম সীমানায় এসে পৌঁছায় মেঘ! এটা তার স্যুটকেস! যা সে কাল বাড়িতে এনেছিল! কিন্তু বাড়ির লোকেরা এটা এখানে পাঠালো কেন? তড়িঘড়ি করে মেঘ স্যুটকেস খুলতে থাকে! সমস্ত জিনিস মেঝেতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে! সবকিছু স্যুটকেস থেকে বের করে দেখে! হ্যাঁ সবকিছু ঠিক আছে! অস্ট্রেলিয়া থেকে আসার সময় বাবা-মা ভাই বোন-দুলাইয়ের জন্য যা এনেছিল সব এখানেই আছে! মেঘ আশ্চর্য না হয়ে পারলো! বাড়ির লোকেরা এটা খুললো না কেন? তারা এসব কি দেখারও প্রয়োজন বলে মনে করে নি? ভাইব্রেশনের শব্দে মেঘ তড়িঘড়ি তার ফোন খুঁজতে থাকে! রঙ-নাম্বার থেকে কল এসেছে ২২ বার! ঠিক একই নাম্বারও এখন'ই ফোন স্কিনে ভেসে আছে! মেঘ তড়িঘড়ি করে কল রিসির্ভ করে!
অপর পাশ থেকে কাঠ-কাঠ গলায় বলে' —'মিস মেঘলা রহমান! আপনা'র ব্যারিস্টারির তারিখ পরেছে আজ সকাল ১২ টাই! এতবার কল করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না! মূলত আমরা কেউ কল করতে চাইনি, বাধ্য হয়ে আপনাকে বলতে হচ্ছে! ১২টার পরে ক্যান্টিনে অবশ্যই আপনার দেখা চাই! বাইজি, আগরতলা ১২.খ! ধন্যবাদ!"
কল কেটে যায়! মেঘ স্তব্ধ! সে গত মাসে চাকরিতে জয়েন হয়েছিল! উপরের ভাস্য মতে তাকে বাইজি নগরের আগরতলার কোর্টে ১২ সেক্টরের খ নাম্বারে কার্য সম্পাদন করার জন্য দেয়া হয়! ১৩ নভেম্বর সেই কার্যটি সম্পন্ন হয়! অস্ট্রেলিয়া থেকেই একটা অফিসারের মাধ্যমে সে কাজটি করেছিল! আবার তারিখ পরেছি ১০ই ডিসেম্বর যা মেঘের একটুও খেয়ালে নেই! তাই সে স্যুটকেসে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুঁজতে থাকে! ওপর পাশের চেইনে ছিল কাগজপত্র! মেঘ ঘড়ির দিকে তাকায় সময় ১১ টা ২৪ মিনিট!
ফিরোজা বেগম রহিমাকে বলে' —'এগুলো মেঘের ঘরে দিয়ে আয়? মেঘ তুই ঘরে গিয়ে তৈরি হ?"
মেঘ মাথা নাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো! গোসল সেরে বেরিয়ে আসতেই দেখে রহিমা সব জামা-কাপড় ঘরে এনেছে! কালো একটা স্লিক শাড়ি হাতে নিয়ে কলপাড়ে গেলো মেঘ! রহিমা তার অন্য কাজের জন্য মেঘের ঘর ছেড়ে চলে গেলো! যাবার সময় কড়া করে বলে গেলো' —'মেঝো বউ! কিছু লাগলে ডেকে নিও!"
মেঘ কলপাড় থেকেই জবাব দেয়' —'আচ্ছা!"
কিছুক্ষণ পরেই শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো! বিছানায় গুছিয়ে রাখা কোর্ট ইউনিফর্ম টা পরিধান করে! প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে মেঘ! দরজায় এসে দেখা হয় ফিরোজা বেগমের সাথে! সামনে গাড়িসহ ড্রাইভারকে দেখিয়ে তিনি বলেন' —'যথা সময় তোকে তোর গন্তব্যে পৌঁছে দিবে! তুই নিশ্চিতে যা?"
মেঘ সময় থেকে ১২ টা ৪৩ মিনিট! তড়িঘড়ি করে গাড়ি উঠতে উঠতে মেঘ বললো' —'আছি দাদিমা!"
গাড়ি ছেড়ে দিলো! ফিরোজা বেগমও বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন! সোফায় বসতে না বসতেই দরজায় গাড়ির শব্দ শুনতে পান তিনি! উঠে দাড়াতেই অভি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে! কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো! ফিরোজা বেগমও অভির পিছু পিছু ঘরে দিকে গেলেন! কিন্তু দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন! দরজা ভেতর থেকে বন্ধ! তিনি আর ডাকাডাকি করলেন না! নিচে নেমে রহিমা ডেকে বললেন এক কাপ চা দিয়ে যেতে!
১২টা বাজা মাত্র সকলে কোর্টের ভেতরে উপস্থিত হয়! আসামি'কে কাঠ গোড়ায় দাড় করানো হয়! বিচারক সভা শুরু হয়! বিবাদী উকিল নিজের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুরু করেন!
'মাননীয় মহোদয়! যেহেতু বাদীর কোনো উকিল এখনো এখানে এসে হাজির হয় নি? সুতরাং আমরা কি কেস'টা শুরু করতে পারি?"
'দিস কেস ওয়ার্নিং ফর নাও!"
'ধন্যবাদ মাই লর্ড! মাননীয় বিচারক মহাশয় আমার মক্কেল "রুদ্র রওশন চৌধুরী" ওরফে রোদ তার দ্বারা এসব কাজ কখন'ই সম্ভব নয়! কারণ তিনি গত তিনবছর যাবৎ এদেশে ছিলেন'ই না! তিনি অস্ট্রেলিয়াতে তার মামা-মামির কাছে ছিলেন! এই তার প্রমাণ!"
বিবাদী উকিল সাহেব জনাব ইমরান হক কিছু কাগজ-পত্র সচিবের হাতে দিলেন! সচিব সেগুলো জর্জের কাছে পেশ করলেন! সকল কাগজপত্র দেখে বললেন' —'আর কিছু প্রমাণ থাকলে আপনি পেশ করতে পারেন?"
'আমি মেয়ের বাবা-মাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই মাই লর্ড?"
'অনুমতি দেয়া হলো!"
জর্জের অনুমতিতে প্রথমে মেয়ের বাবা এসে কাটগড়ায় এসে দাড়ালেন! গায়ে ময়লা একটা ছেড়া শার্ট! কালো গায়ের চেহারা বিবাদী পক্ষের উকিল নাকছিটকে প্রশ্ন করেন' —'আচ্ছা আকবর আলী! আপনার মেয়ে তো কলেজে পড়াশোনা করে তাইনা?"
'আগ্গে হ্যাঁ!"
'তা আপনি সামান্য একজন কাজের মানুষ হয়ে মেয়েকে কলেজে পড়াশুনা করাচ্ছেন ব্যাপারটা হাস্যকর না!"
'আমি চৌধুরী বাড়িতে কাজ করি! সে সুবাদে চৌধুরী বাড়িতে আমার মেয়ে ও স্ত্রীসহ আমাকে থাকার জন্য ঘর দেয়া হয়! আমার স্ত্রী ও মেয়ে সে ঘরেই থাকত! আর আমি বাইরে বড় গেটের কাছে দারয়ানের কাছে থাকতাম! সেদিন চারদিকে কুয়াশার মেলা ছিল আমার স্ত্রী আর আমি চৌধুরী বাড়িতে কাজ করছিলাম! এমন সময় দারওয়ান এসে বললো ছোট সাহেব আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো! তখন আমি আর আমার স্ত্রী গিয়ে দেখলাম আমাদের মেয়ে বিধস্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে! আমি গিয়ে মেয়ে মাথা আমার উরুতে নিয়ে বললাম কি হয়েছে মা! আমার মেয়ে বললো মা ছোট সাহেব! ছোট সাহেব! আর কিছু না বলেই মা-রা গেলো আমার মেয়ে! তাকে ধ-র্ষ-ণ করেছে ছোট সাহেব!"
রোদ রাগ সহ্য করতে না পেরেই বললো' —'নেমক হারামির বাচ্চা! তোকে পেলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো আমি!"
আদালতে সবার উপস্থিত আরও ঘন হলো! সবার মাঝে কানা-ঘুষা শুরু হলো! জর্জ ঘটায় বারি দিয়ে বললেন' 'অডার অডার অডার!"
সকলে শান্ত হতেই ইমরান হক আবারও তার যেরা শুরু করলেন' —'আচ্ছা আকবর আলী আপনার মেয়ের কি কলেজে কোনো বন্ধু ছিল! ইয়া মানে ছেলে বন্ধু! যাকে এক কথায় প্রেমিক বলা হয়!"
'অবজ্যাকশন ইয়র ওর্নার! মাফ করবেন দেরিতে আসার জন্য!"
(কি হতে চলেছে আদালতে? রোদ কি সত্যি অপরাধী নাকি কোনো ষড়যন্ত্র? মেঘ কি পারবে তার প্রথম কেসে জিততে? অভি কি মেঘ কে তার কাজ করতে দেবে? জানতে সাথে'ই থাকুন ধন্যবাদ! ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন! আজকের পর্বটা খুব ছোট হয়েছে তবুও কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু)
আরও পড়ুন: নির্বিচার|মারিয়া হাজান মারুফা| পর্ব-৫
0 Comments