প্রিয় কৃষ্ণচূড়া| অতৈন্দ্রিলা ঐন্দ্রি| প্রথম পর্ব
ভিন্ন ধাঁচের ছোট গল্প। ভুলত্রুটি ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন এবং দেখিয়ে দিবেন।)
লেখনিতে- —Otoindrila Oindri
পর্বসংখ্যা- ০১
মিস নিরুপমা একবা.......
কেনো করছেন আপনি এমন মি.সৌজন্য? আপনি যা চাইছেন তা হবার নয়। আপনার আর আমার সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন তা আপনি জানেন।
সৌজন্য এবার নিচে পড়ে থাকা একগুচ্ছ লাল কৃষ্ণচূড়া হতে কয়েকটি কুড়িয়ে নিলো। সামনে এগিয়ে গিয়ে গুটিকয়েক কৃষ্ণচূড়া নিরুপমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। নিরুপমা দেখলো তবে নিলো না। সৌজন্য ঠোঁট চওড়া করে হাসলো। হাসলে ছেলেটাকে ভীষণ সুন্দর দেখায়, টোল পড়ে কিনা। লম্বা গড়নের শ্যামবর্ণের ছেলে, দেখতেও মন্দ নয়। চোখজোড়া ধুসর। যে কোনো নারীই ওই আখিজোড়ার প্রেমে পড়তে বাধ্য। নিরুপমা বেশিক্ষণ তাকালো না, ওই চোখজোড়ায় চোখ মেলানো সম্ভব নয়। দৃষ্টি নত করলো।
সৌজন্য হেসেই শুধালো,
ভয় নেই! এগুলো দিয়ে প্রেম নিবেদন করছিনা। কানের কাছে গুজবেন? দেখতে ভালো লাগে।
নিরুপমা একপলক তাকালো, বরাবরের মতোই সৌজন্যের সাথে চোখাচোখি হলো। নিরুপমার আদলে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলো। যে আদলে সবসময় কঠোরতা বিরাজ করতো সেই আদলে আজ কঠোরতার জায়গায় অন্যকিছু স্থান পেলো। প্রশ্ন ছুড়লো,
এতো ভালোবেসে লাভ কী?
এবারও সৌজন্য হাসলো। ছেলেটা এতো হাসে কেনো? সবাই বুঝি প্রেমে পড়ে যাবেনা? হিংসে হলো নিরুপমার।
উত্তর এলো তৎক্ষণাৎ ই,
ভালোবাসা কী কোনো ব্যবসা যে সেখানে লাভ ক্ষতি হিসেব হবে?
এতো মেয়ে থাকতে আমাকেই কেনো পছন্দ হলো আপনার?
পছন্দ নয় ভালোবাসা বলুন!
এতে ক্ষতি আপনারই।
ভাববেন না, সব জেনে শুনেই পা বাড়িয়েছি। আপনার ওই কাজল কালো চোখের টাইম লুপে হারিয়ে গিয়েছি, ফিরে আসার কোনো উপায় নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার প্রশ্ন করলো নিরুপমা,
দুঃখবোধ হয়না?
সৌজন্য হাসলো,
ভালোবাসলে দুঃখবোধ থাকতে নেই। ভালোবাসা ভীষণ সূক্ষ্ম জিনিস জানেনই তো।
তবে আমি যে আপনার নই তা কেনো বোঝেন না?
চোখে চোখ রেখে সৌজন্য বললো,
কে বললো আপনি আমার নন? আপনি আমার, আপনি পুরোটাই আমার। আমার মন-মস্তিষ্ক পুরোটা জুড়েই তো আপনার বিচরণ তাহলে কীভাবে আপনি আমার নন?
চারটা বছর! সৌজন্য মশাই চারটা বছর কোনো কারণ ছাড়াই আপনি আমার উপর নষ্ট করেছেন। আর কতো?
উহুঁ, চার বছর পাঁচ মাস ছয় দিন আর নষ্ট নয়, ভালোবেসেছি।আপনিই বলুন ভালোবাসা কী কোনো পাপ?
ধৈর্য হারালো এবার নিরুপমা। কিছুটা কঠোরভাবেই বললো,
আপনি জানেন এসব কিছুর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আপনি আর আমি ভিন্ন ধর্মের তাই এসব কিছুই ভিত্তিহীন।
সৌজন্য একগাল হাসলো। নিরুপমা অবাক হলোনা। সৌজন্যের তরফ থেকে জবাব এলো,
আজ থেকে চার বছর আগে ১২ই এপ্রিল আপনাকে দেখেছিলাম, লম্বা ঘন চুলগুলোতে কৃষ্ণচূড়া গুঁজে ঠিক এই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচেই বসে বই পড়ছিলেন। কোনো কৃত্রিম কিছুই ছিলোনা আপনার মুখে। শুধুই ছিলো মাধুর্যতার ছোঁয়া। আশেপাশে বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। প্রকৃতি টাও আমার সাথে বেইমানি করে ভীষণ বৃষ্টি ঝড়ালো আর আপনি চলে গেলেন। এরপর রোজ এসে অপেক্ষা করেছি কবে আপনি আসবেন, কবে আপনাকে দেখবো। এক অদ্ভুদ ভালোলাগা কাজ করতো আপনাকে দেখে। কতবার এমন হয়েছে, ইন্টারভিউতে ব্যর্থ হয়ে বসেছিলাম তারপর আপনি এলেন, নিমিষেই সকল মন্দ লাগা হাওয়া হয়ে গেলো। আচ্ছা আপনি কী জাদুকর?
কথাটা বলে নিজ থেকেই ঠোঁট এলিয়ে হাসতে লাগলো। নিরুপমা মনোযোগ দিয়ে দেখে সেই হাসি। এ হাসিতে আনন্দ নেই, বিষাদে ছেয়ে রয়েছে এ হাসি। নিরুপমার বা'পাশের যন্ত্রটি আকষ্মাৎ কেঁপে উঠলো। তীব্রতর ভাবে লাফাতে শুরু করলো। সৌজন্য হাসি থামিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
এভাবে অনেকদিন পার হলো, দিন পার হলো, পার হলো মাস। এরমধ্যে হঠাৎই জানতে পারলাম আপনার নামটা। নিরুপমা, নিরুপমা চ্যাটার্জী। বুঝলাম আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মের। অনেকবার চেষ্টা করার পরও ভোলা হলো না আপনাকে। বুঝতে পারলাম ভীষণ কঠিন এক অসুখে পড়েছি আমি। সেই হতে এই ভালোবাসা নামক অসুখে পুড়ছি আমি। নিরাময় করার চেষ্টা করিনি আর।
বলেই চমৎকারভাবে হাসলো। নিরুপমা শুনলো, বুঝলো সবই তবে তারও তো কিছুই করার নেই। আজ যদি সে সৌজন্যের কাছে গিয়ে নিজ হতে কথা না বলতো নিশ্চিত ছেলেটা কিছুই জানাতো না কখনোই। নিরুপমার কন্ঠ এবার হালকা হয়ে এলো, শান্ত কন্ঠে শুধালো,
এবার নাহয় এখানেই ইতি টা টানুন! ভাগ্যে লেখা থাকলে পরজন্মে আবার আমাদের সাক্ষাৎ হবে। কাউকে কখনো এতোটাও ভালোবাসা উচিত নয় যাতে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলতে হয়। নিজের খেয়াল রাখুন এবার। আমার জন্য শুধু শুধু কেনোইবা নিজের শান্তিটুকু বিসর্জন দিচ্ছেন আপনি?যাইহোক, আসছি আমি।
সৌজন্য প্রতুত্তরে বললো,
আপনাকে ভালোবাসতে ভালো লাগে তাই ভালোবাসি। পাওয়া না পাওয়ার হিসেবটা ভালোবাসার সাথে খাঁটে না। পাবো না বলে ভালোবাসবো না এমনটা ভাবিনি! এগিয়ে দিতে পারি?
0 Comments