জীবনের গল্প: নির্বিচার|মারিয়া হাজান মারুফা| পর্ব-৩
বি:দ্র: এখানে ১৯৭৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কিছু ঘটনা উল্লেখ থাকবে! আমি যুদ্ধ নিয়ে ততটাও পারদর্শী নই! তাই এই সাল কয়েকের মাঝেই কিছু জীবন বৃত্তান্ত লিখবো! আশা করি আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না!
পরক্ষণেই গুলির শব্দে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়! মেঘ থেমে যায়! পেছন ফিরে দেখে দরজার সামনে একটা গার্ড গুলির আঘাতে বিধস্ত! মেঘ দরজার দিকে পা বাড়াতেই গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে" —মেঘ! আপনি আর এক-পা এগলেই আপনাকে গুলি করতে বাধ্য হবো আমি!'
মেঘ থেমে যায়! অভির দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ! গার্ডটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে! গার্ডের মৃত্যুর যন্ত্রণা গঙানির শব্দও সেই পুরুষকে গ্রাস করতে পারে নি! সে নিঃসংকোচে আঙুলের ঢগায় বন্দুক নাচিয়ে চলছে! ফিরোজা বেগম মেঘকে নিয়ে ঘরে যায়! আমেনা বেগম অভির হাত থেকে বন্দুক নিয়ে অভির গালে চড় বসিয়ে দেয়! —'টাসসসসসসস!'
দরজায় চৌকাঠে পা দিতেই থাপ্পড়ের শব্দ কানে আসে মেঘের! পেছন ফিরে দেখে অভির সামনে আমেনা দাড়িয়ে আছে! অভি মাথা নিচু করে আছে! মেঘ আগ বারিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে' —'যার হৃদয় পাপের রক্তে কুৎসিত! তাতে তোমার থাপ্পড়ও কিছু যায় আসে না ফুপি! সে তো পাপের রাজ্যের বাদশাহ!'
অভি মাথা তুলে মেঘকে পরখ করলো! মুচকি হেসে জবাব দিল' —'পাপের রাজ্যে তুমি শেহজাদি হয়ে এসেছে! দোয়া করো আল্লাহর কাছে যাতে আমার হাতে তোমার প্রাণ'টা না চলে যায়! তোমাকে শেষ করতে আমি দু-মিনিটও ভাববো না! কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে শেষ করতে আমার খুব কষ্ট হবে! ইউ বিলিভ মি?'
মেঘ কিছু বললো না! উল্টো ঘুরে ঘরের দিকে পা বাড়ালো! তখন'ই অভির কন্ঠে ভেসে আসে' —'তৈরি থেকে! কাল'কে বৌ-ভাতের জন্য ও-বাড়ি থেকে লোক-জন আসবে!'
মেঘ কিছু বলতে চেয়ে অভির দিকে ঘুরে তাকায় কিন্তু ততক্ষণে অভি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে! মেঘ দীর্ঘশ্বাস পেলে ঘরে যায়! ফিরোজা বেগম ঘর থেকেই এগুলো দেখলেন! মেঘ গিয়ে তার দাদিমাকেনিয়ে বিছানায় বসলো! কিছু বলার আগেই রহিমা দরজায় এসে হাজির! এক হাতে খাবারের প্লেট আর অন্য হাতে পানির জগ! মেঘ রহিমাকে দেখে জোরে-সোরে বলে' —'কি হয়েছে কি? বিরক্ত করছো কেন? আমরা তো তোমাকে ডাকি নি?'
মেঘ অভির রাগ রহিমার ওপরে ঝারে! রহিমা কোনো কথা বলে না! একটু নড়েচড়ে উঠে! রহিমার কোনো উত্তর না পেয়ে মেঘ রেগেমেগে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়! রাগে গজগজ করে এসে বিছানায় বসে মেঘ! ফিরোজা বেগম মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে' —'তুই বস আমি আসছি!'
ফিরোজা বেগম উঠে দরজা খুললেন! ফিরোজা বেগম কে দেখেই রহিমা বলে' —'বড় মা! আমেনা আপায় খাবার দিছেন মেঝো বউয়ের জন্য!'
রহিমার থেকে খাবার আর পানি নিয়ে টেবিলে রাখেন ফিরোজা বেগম! দরজার কাছে গিয়ে রহিমার উদ্দেশ্য বলে' —'যা অনেক রাত হলো তুইও খেয়ে দেয়ে ঘুমা!'
রহিমা ছোট করে উত্তর দিলো' —'আচ্ছা বড় মা!'
রহিমা চলে যেতেই ফিরোজা বেগম দরজা বন্ধ করে দেন! মেঘ বিছানা আধ-শোয়া হয়ে বসে পড়ে! অন্য পাশে ফিরোজা বেগম বসেন! মেঘকে অন্যমনস্ক দেখে ফিরোজা বেগম বলেন' —'কি হয়েছে মেঘ?'
'তেমন কিছু না দাদিমা! ভাবছি?'
ফিরোজা বেগম একটু নড়েচড়ে বসে বলেন' —'কি ভাবছিস?'
'ভাবছি! আমার জীবনটা এমন না হলেও পারতো?'
ফিরোজা বেগম নিশ্চুপে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন! মেঘ উঠে ফিরোজা বেগমের সম্মুখে বসে প্রশ্ন করে' —'আমি ছোট থেকেই সবার থেকে দূরে থেকে! থেকেছি না বরং আমাকে সবার থেকে দূরে রাখা হয়েছে? কিন্তু কেন দাদিমা?'
ফিরোজা বেগম প্রশ্ন এড়াতে বলেন' —'মেঘ তুই না ১২ তারিখে দেশে ফিরতি! কিন্তু আজকে তো ৯ তারিখ! এত তাড়াতাড়ি এলি যে?'
মেঘ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই বলে' —'প্রশ্ন ঘুরাচ্ছো দাদিমা?'
ফিরোজা বেগম চটপট উত্তর দেয়' —'কই না তো?'
মেঘ এক পলক ফিরোজা বেগমকে দেখে! শ্যামলা গায়ের গঠন! খয়েরি রঙে নীল প্যার দিয়ে তৈরি একখানা শাড়ি দিয়ে নিজেকে আবৃত্ত করেছেন তিনি! মাথার চুল শাড়ির আঁচল দিয়ে ডাকা! সামনে কিছু সাদা চুল কপালের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে! মেঘ মুচকি হেসে বলে' —'তুমি তো জানো দাদিমা! আমি ব্যারিস্টারি শেষ করার জন্য বিদেশে মানে অস্ট্রেলিয়াতে গেছিলাম! কিন্তু তুমি কি জানো? আমি দেশ ছেড়ে যেতে চাই নি? তবুও সবাই আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে? আর গত ২ তারিখে আমি ব্যারিস্টারি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি! কিন্তু আমার দেশে আমার সময়-তারিখ পড়লো ১২ ডিসেম্বর! এতদিন আমি কি করবো? কিন্তু বড় আপা যখন রোজ রোজ ফোন দিয়ে তারিন কে দেখাতো! তখন আমি আরও তাড়াতাড়ি দেশে আসার কথা ভাবতাম! তারিনের জন্য মনটা কেমন কেমন করতো? সারা দিন বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে থেকেও তাদের কাছে মন থাকতো না! সব সময় ভাবতাম কখন দেশে আসবো? আর দু'দিন আগে সকল আমার চার বান্ধবী দেশে আসার জন্য প্রস্তুত হলো তখন আমিও ঠিক করলাম এখনই তাদের সাথে আমিও দেশে যাবো! কিন্তু কথাটা বাড়ির কাউকে জানাবো না? তাদের একটা সারপ্রাইজ দেবো ভেবে তাদের সাথে এই দেশে পা বাড়ালাম! আজ মঙ্গলবার! আমরা পাঁচজন যখন ঢাকায় আসি তখন সময়সীমা ছিল বরিবার দিন ৪: ২০ মিনিট! সবাই মিলে এয়ারপোর্টের কিছুটা দূরে বাসা ভাড়া করলাম তাও আবার একদিনের জন্য! জার্নি করা শরীল কিছুতে'ই আর চলছে না! খাবারও হোটেলেই খেয়েছি সকলেই! পরদিন মানে সোমাবারে সেখান থেকে একটু দূরে একটা বান্ধবীর মামার বাসা! সেখানে সবাই মিলে ঘুরতে গেলাম! আর আজ সকালে সবার যে যার মতো বাড়ি চলে এসেছি! কিন্তু দাদিমা তুমি জানো বাড়িতে আসার পড় আমার সাথে কি কি হয়েছে? আমি বাড়ি এসেছিলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো ভেবে কিন্তু বাড়ি এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছি!"
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মেঘ! ফিরোজা বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে! মেঘ রিবতি নেওয়ায় তার যেনো অস্বস্তি লাগছে! মেঘ সেটা বুঝতে পারে তারপর আবারও বলতে শুরু করে' —'আমি যখন বাড়ি আসি তখন সন্ধ্যা ৬: ২৯ মিনিট! দরজায় পা রাখার আগে হাতে সময় দেখেছিলাম! কারণ ৭টার পর থেকে আপা আর আমার সাথে কথা বলতো না! কারণটা কি জানতে চাইলেও কোনোদিন জানতে দেয় নি আপা! আমি আমার সব জিনিসপত্র বাড়ির দরজার সামনে রেখেছিলাম! এগুলো সহ আমি যদি একসাথে বাড়ির ভেতরে যাই তাহলে সবাই বুঝতে পারবে! তাই আমি আমার জিনিসপত্র গুলো সাইডে রেখেছিলাম! যখন আমি দরজার কলিংবেল বাজালাম তখনই কেউ আসেনি দরজা খুলতে? আমি কিছুটা ভয় পেলাম! ভাবলাম সবাই কি কোথাও বেড়াতে গেলো নাকি? তারপরই মনে পরলো আপা বলেছি, সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের বাড়িতে কাজের মেয়েটা আর থাকে না! সে নিজের বাড়িতে চালে যায়! চারদিকে শরীল প্রলেপ ছড়িয়ে আছে! পায়ের নিচে ভারি বাতাস বইছে! কুয়াশার কোনো দিকে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না! সমস্ত ভয় একপাশে সরিয়ে রেখে দরজায় হাত রাখলাম! দরজায় হাত দিতেই বুঝতে পাই দরজা খোলা! ভেতরে এসে দেখি পুরো বাড়ি অন্ধকার! আমি বাড়ির আনাচে-কানাচে খুঁজতে লাগলাম লাইটের সুইচ কিন্তু পেলাম না! কিছুক্ষণ পর কারও উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ শুনতে পাই! আমি বুঝতে পারছি কেউ আমার কাছে আসছে! ভয়ে জড়োসড়ো হয় আমি দরজার দিকে এগোয়! অন্ধকারে দরজার শুধু আলোটুকু শুধু দেখতে পেয়েছিলাম! দরজার শেষ প্রান্তে এসেও আমি বেরিয়ে যেতে পারি নি! পুরুষালি শক্ত হাত আমাকে চাপটে ধরেছিল! আমি উপায়ান্তর না পেয়ে পুরুষটিকে হাতে কামড় দিয়েছিলাম! আমি ছিটকে সরে যাই কিন্তু পুরুষটি তখন আমার হাত চেপে ধরেছিল! আমি টান দিতেই একটা চড় বসে আমার কপালে!'
মেঘ থামে! চোঁখ বেয়ে অশ্রুকোণায় টুই-টম্বুড় হয়ে আছে! ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোঁখের জল মুছে মেঘ! ফিরোজা বেগম উঠে আলমারি থেকে একটা কম্বল বের করে আনেন! মেঘকে শুয়ে দিয়ে কম্বলটা সারা-শরিল আবৃত্ত করেন! ফিরোজা বেগম যেতে চাইলেই মেঘ তার হাত টেনে ধরে! ফিরোজা বেগম এসে মেঘের কপালে হাত বুলিয়ে চুম্বন করেন! মুচকি হেসে বলে' —'এ ঘরে অভি আসবে না! তুই ঘুমিয়ে পড়!'
'দাদিমা! তুমি বললে না তো? যে আমাকে কেনো সব সময় পরিবারের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে? এমনি আমি তো বড় বাবার কথাও জানি না? বাবা একদিন বলেছিল, কোনো এক দুর্ঘটনায় তারা সকলেই মারা গেছে? তাহলে এত সব আমাকে কেনো জানানো হয় নি? বলো দাদিমা?'
ফিরোজা বেগম মেঘের দিকে তাকান! মেঘ অনেক আশা নিয়ে ফিরোজা বেগমকে প্রশ্ন করছেন! মেঘের চোঁখে-মুখে ব্যকুলতা ছাপ স্পষ্ট! ফিরোজা বেগম ঘড়ির দিকে তাকালেন সময় ০১: ৪৭ মিনিট! ফিরোজা বেগম বলেন' —'মেঘ! আমরা এসব কথা বলেও বলতে পারবো! তুই আজকে'ই বাড়ি ফিরেছিস! অনেকটা ধকল গেছে তোর উপর দিয়ে! অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমিয়ে পড়?'
—'আমি জানতে চাই দাদিমা?'
ফিরোজা বেগম মেঘের পাশে বসলেন! কম্বলের এক কার্নিশে পা দুটি ঢেকে নিলেন! বালিশে হেলান দিয়ে বলতে শুরু করলেন' —'আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে আমাদের পরিবার একটা সুন্দর পরিবার ছিল! যেখানে সব সময় আনন্দ খুশিতেই মেতে থাকতো আমাদের পরিবারের সকল মানুষ! কখনো কাউকে কটুকথা বা বিরক্তিকর কথা কেউ বলতো না! তুই জানিস? আমি শুধু তোর বাবা ফরহাদ, অভির বাবা ফিরোজ আর আতিয়ার মা আমেনার মা নই! বরং আমি ফরিদারও মা!'
মেঘ চটপট প্রশ্ন ছুড়ে' —'ফরিদা কে দাদিমা?'
—'ফরিদাও আমার মেয়ে! তার ঠিক দু-বছর পরেই আমি তোর বড় বাবা ফিরোজ আর অভির মা মহিমার দিয়ে হয়! পরিবারের নতুন সদস্য নিয়ে সবাই তখন আনন্দিত! তখন ফিরোজের বয়স ছিল ২৩ বছর! ফিরোজের দু-বছরের ছোট ছিল ফরহাদ মানে তোর বাবা! তাহলে তো বুঝতেই পারছিস তোর বাবার বয়স তখন ২১ বছর! আমেনা আর ফরিদা ছিল জমজ বোন! দুজন দেখতে হুবহু এক হলেও তাদের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল তফাৎ! আমেনা সব কথা শুনলেও ফরিদা কখনো কারও কোনো কথা শুনেনি! সব সময় নিজের মতো চলেছে সে!'
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফিরোজা বেগম! পাশ ঘুরে দেখেন মেঘ এখনো তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! মেঘ কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে সবকিছু শুনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে আছে! ফিরোজা বেগম আবারও বলতে শুরু করেন' —'সালটা ছিলো ১৯৭৮ সাল তখন আমেনা আর ফরিদা নবম শ্রেণীতে পড়ে! দু'জন মিলে রোজ স্কুলে যেতো! রাস্ত-ঘাটে আমেনা চুপচাপ থাকলে ফরিদা ছিল চঞ্চল! বাড়িতে তার দুষ্টামি কম হলে বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্র সে বিশৃঙ্খল! তারা যখন স্কুলে যেতে পাশের গ্রামের একটা ছেলের সাথে মাঝে মাঝেই ফরিদা দেখা করতো! এমনি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঐ ছেলের সাথে ঘুরাঘুরিও করতো! অনেক মানা করার পরেও সে শুনে নি! একদিন তোর দাদু বাজারে যাচ্ছিল! যখন মাঝ-বাজারের উত্তর দিকে যে পুকুরটা আছে! ওখানে ও আর দুইটা ছেলে মিলে পুকুর ঘাটে বসে ছিলো! তোর দাদু সেদিন ওকে বাড়িতে এনে কতই না মেরেছিল!'
—'তোমার কষ্ট হচ্ছে দাদিমা?'
ফিরোজা বেগম আচলে মুখ লুকান! মেঘ বুঝতে পেরেছে প্রত্যেকটা মা তাদের সন্তান ঠিক কতটা ভালোবাসে? সন্তানের কথা মনে হলে'ই প্রত্যেকটা মা ব্যাকুল হয়ে পড়ে! সন্তানের ভালোর জন্য সব করতে পারে মা!
ফিরোজা বেগম কিছুটা নড়েচড়ে বসেন! তারপর জগ থেকে এক পানি পান করে আবারও বলতে শুরু করলেন''সেদিনের পর থেকে ফরিদা'কে ঘরবন্দি করে রাখা হয়! আমেনা একা স্কুলে যেতে বললে সেও একা একা স্কুলে যেতো না! তোর বড় বাবার বিয়ের ১বছরের মাথায় তোর বাবা-মায়ের বিয়ে হয়! তখন মহিমা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা ছিল! তখন মহিমাকে একটা অবসর নেওয়ার জন্য তোর মাকে কাজ করতে হতো! নতুন বউ শ্বশুড় বাড়িতে এসে পরের দিন থেকে বাড়ির কাজ করতো দেখে তোর নানা তোর মা'কে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়! তখন তোর বাবা পাশের গ্রামে ছোট্ট একটা স্কুলে প্রাইমারির শিক্ষক ছিল! সকাল ৭টাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো আর বাড়ি আসতো সন্ধ্যা ৬টাই! সেদিন যখন তোর মা তোর নানির বাড়িতে গেছিল! বাড়িতে তখন কাজের জন্য শুধু আমি একা ছিলাম! আমেনা আর ফরিদা তখন তাদের খালার বাড়ি বেরাতে গেছিল! আমার কাছে হাত লাগাতে তোর বড় মা মহিমা রান্না ঘরে এসে আমার সাথে কাজ করেছিল! তোর বাবা বাড়িতে এসে তোর বড় মাকে জিজ্ঞেস করে' —'ভাবি তুমি এখানে? নাজমা কই?'
মহিমা দু-হাত কোমরে রেখে জবাব দেয়' —'তার বাবা-মা এসেছিল! কদিনের জন্য ওবাড়িতে গেছে আবার চলে আসবে!'
তখন তোর বাবা কিছু বলে নি! এভাবে সাত-দিন পার হয় তবুও তোর মা ওবাড়ি থেকে এ বাড়িতে আসেনি! তখন তোর বাবা নিজে গেছিলো তোর নানার বাড়িতে! সেখানে তোর নানা-নানু যা-ইচ্ছা তাই বলেছিল তোর বাবা'কে! তখন তোর বাবা রেগে তোর মাকে সবার সামনে চড়' মেরেছিল! এতে তোর নানুর বাড়িতে উপস্থিত সকলেই তোর বাবাকে অনেক মেরেছিল! এমনকি তোর বাবা চার-দিন হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিল! মিথ্যা অপবাদে তোর বাবার শিক্ষকের চাকরিটা হাত ছাড়া হয়ে যায়! সেদিন তোর বাবা বাড়ির অনেক জিনিসপত্র ভাঙচুরও করেছিল! মহিমা সিঁড়ি বেরে নিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যায়! ফলে তার পেটে থাকা সন্তান নষ্ট হয়ে যায়! সবাই তখন মহিমাকে সুস্থ করার জন্য উতলা হয়ে পরে! তারপরে ছ-মাস কেটে যায় তোর বাবা-মা তোর নানুর বাড়িতে থাকতে শুরু করে! বাড়ির সবাই যখন তোর বাবাকে ভুলে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে তখন সবাই আবারও খুশি সংবাদ শুনতে পায়! তখন অদূরের কিছু লোকযাত্রী এসে আমেনা আর ফরিদাকে দেখে পছন্দ করে! তাদের ছেলের সাথে আমেনা আর ফরিদার বিয়ে কথা বার্তা পাকা হয়! তারা সময় দিয়েছি ছ-মাস! কিন্তু তখন আমেনা আর ফরিদার মেট্রিক পরিক্ষা ছিল সামনে! তাদের পরিক্ষার খরচ আবার বিয়ের খরচ তোর দাদু একা সামলাতে পারবে না! এটা ভেবে তিনি চিন্তায় চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল! অবশেষ পরিক্ষার চিন্তা শেষ হলেও দু-টো মেয়ের বিয়ের চিন্তা সব সময় তোর দাদুর মাথায় ঘুরতো! কিন্তু কি আর করার, অবশেষে বিয়ে ভেঙে গেলো! শত চেষ্ট করেও তখন আমেনা আর ফরিদার ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারি নি! কারণ তখন একবার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে তখন মেয়েকে কুঞ্জ বলা হয়! অতিসাধ্যে তখন বিয়ের জন্য ভালো ঘর পাওয়া যায় না!'
'আচ্ছা দাদিমা! ফরিদা ফুফু এখন কোথায়?'
ফিরোজা বেগম মেঘের দিকে তাকায়! ঘুমঘুম চোঁখে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে মেঘ! ফিরোজা বেগম প্রশ্ন ছুঁড়েন' —'তোর কি ঘুম পেয়েছে মেঘ?'
'না দাদিমা! তুমি বলো?'
ফিরোজা বেগম ঘড়ির দিকে তাকায় সময় ২টা ২৩ মিনিট! তিনি আবারও বলতে শুরু করেন' —এভাবে কেটে গেলো দু-বছর! তখন তোর বড় বাবা একটা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হয়! পরিবার স্বাভাবিক অবস্থাতে আনার জন্য তোর দাদু গ্রামের কিছু জমি বন্ধক রাখে গায়ের মুন্সি-মুরুব্বি'দের কাছে! তখন তোর বাবা-মায়ের কোল জুড়ে তোর বড় বোন! তোর নানুর বাড়ির লোকেরা আমাদের কিছুই বলেনি! কোনো যোগাযোগও করতো না আমাদের সাথে! এমনকি তোর বাবাও না! এরপর আমেনার বিয়ে ঠিক হয় শহরের এক ছেলের সাথে! পরিবারের লোকেরা আমেনাকে দেখে দিন-তারিখ ঠিক করে যায়! তোর বড় বাবা আর দাদু মিলে সব আয়োজন শেষ করে! বিয়ের কয়েকদিন আগে সম্ভবত ৬দিন আগে তোর ছোট ফুফুকে আর পাওয়া যায় না! অনেক চেষ্টা করেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি! বিয়ের দিন হঠাৎ তোর ছোট ফুফু ফরিদার লাশ পাওয়া যায়! সে বিয়ের দিন তোর দাদুও স্ট্রোক করে মারা যায়! সেদিন হঠাৎ করে তোর বাবা-মা ছোট্ট রোদেলাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসে! তখন রোদেলার বয়স পাঁচ বছর ছিল!"
মেঘ ফিরোজা বেগমের দিকে তাকায়! চোঁখ দু'টো অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে! পুরনো কথা শুধু কথায় নয়! ভেতরে লুকিয়ে থাকা অভিশপ্ত কিছু সময়! মেঘ বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারির কাছে যায়! বেশ কিছুক্ষণ আলমারির সামনে দাড়িয়ে থেকে আকাশি রঙের একটা শাল বের করে গায়ে জড়িয়ে নেয়! ফিরোজা বেগম মেঘের দিকে তাকায়! মুচকি হেসে বলে' —'শাল-টা তোর বড় মায়ের! বেশ মানিয়েছে তোকে?'
'বড় মায়ের শাল! কিন্তু এখানে কে রাখলো?"
'অভি!"
মেঘ আর কিছু বললো না! কলপাড়ে গিয়ে চোঁখে-মুখে পানি দিয়ে আবারও ঘরে আসলো মেঘ! শালটা গায়ে জড়িয়ে'ই বিছানায় শুয়ে পড়লো মেঘ! মাথা উঁচু করে বললো' —'এবার ঠিক আছি দাদিমা! তুমি বলো?"
'এভাবে কয়েক বছর কেটে যায়! তখন ছিল ১৯৮৭ সাল! এর মাঝে'ই আমেনার বিয়ে হয়ে যায়! তোর বড় আপা রোদেলাও বড় হয়! তখন অভির বয়স ছিল দু-বছর! তখন তোর বড় মা আর তোর মায়ের মাঝে দন্তও মিটিয়ে গিয়েছি! তারা ভালোভাবে মিলেমিশে থাকতে শুরু করে! আমি তখন সংসার থেকে অবসর নিয়েছি! সামনের সোমবার ছিল বাড়িতে অনুষ্ঠান! তারিখ ছিল ১৯ আগস্ট! অভির জন্ম তারিখ ছিল ১৯ আগস্ট ১৯৮৫ সে সুবাদে অভির দু-বছর পূর্ণ উপলক্ষে বাড়িতে আনন্দ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়! সবাই সেই দিন অভির জন্মদিন উপলক্ষে এ বাড়িতে এসেছিল! সেদিন সবার কাছে আরও একটা খুশির সংবাদও শুনতে পাই! তোর ফুফু আমেনা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা! সব মিলে আমাদের পরিবার তখন আবার আগের মতো হয়ে গেছিল! কিন্তু তোর দাদু মারা যাওয়ার আগেই তার যেটুকু সম্পত্তি ছিল তা তোর বড় বাবার নামে উইল করে দিয়েছিল! যখন উইল করা হয়েছিল তখন তোর বাবা ছিল নিরুদ্দেশ! কিন্তু তখন ঐ সম্পত্তি নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নি! যখন আতিয়ার জন্ম হয় তখন পরিবারে খুব টানাপোড়েন চলে! তখন আমেনার শ্বশুড় বাড়ি থেকেও খুব জোর-জবরদস্তি চলে! মেয়ে সন্তান হয়েছে তাই তারা আর আমেনাকে তাদের বাড়িতে নিবে না! তারা বলেছিল' —'যেদিন আপনার মেয়ে ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারবে সেদিন ওকে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন তার আগে নয়! তখন তোর মায়ের ঘনঘন শরিল খারাপ হতো! একটুতেই অসুস্থ হতো! বেশ কয়েকদিন থেকেই তোর মা দুর্বল হয়ে পড়ে! ডাক্তার ডেকে আনা হয়! তখন ডাক্তার খুশির খবর দেয়! কয়েক-মাস বাদেই তোর মায়ের কোল আলো করে তুই পৃথিবীতে এলি! তোর জন্ম তারিখ তুই জানিস তো মেঘ?"।
'হ্যাঁ ৮নভেম্বর!"
'উম-হুম! তোর জন্ম তারিখ ছিল ১০ই ডিসেম্বর ১৯৮৮ সাল! তোর নাম কে রেখেছে জানিস?"
'বাবা-মা'ই হয়তো?"
'না! তোর নাম রেখেছিল অভি! বর্ষাকাল ছিল তখন! যেদিন তোর মা ব্যথায় কাতর ছিল! হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো রিক্সা বা ভ্যানের দেখা পেলাম না! তখন'ই চারদিকে বৃষ্টি নেমে আসে! তোর মা যখন ব্যথা সহ্য করতে না পারায় কাঁদতে থাকে তখন তোর বড় মা দৌড়ে গিয়ে অন্য গায়ের দা-ই" কে নিয়ে আসে! চারদিকে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে! অভি আর তোর বড় বাবা বাজার থেকে ফিরেছে! নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী অনেক কষ্টে সেদিন তোর জন্ম হয়! সর্ব প্রথম অভি তোকে কোলে নিয়েছিল! ছোট্ট বাচ্চা দেখে বাজারের ব্যাগ ফেলে ছুটে আসে অভি! দা-ই" আমেনার কোলে বাচ্চা দিতেই অভি ছিনিয়ে নিয়েছিল তোকে! তুই যাতে পরে না যাস সে কারণে দু'পাশে দুহাতে ধরে ছিল অভি মা মহিমা! সেদিন অভি তোর কপালে চুম্বন করে বলেছিল —'মেঘলা! পিচ্চি মেঘলা!"
মেঘ মুচকি হাসলো! ফিরোজা বেগম মেঘের হাসি দেখেই বললো' —'ছোটবেলা খুব রঙিন হয়! কারও ছোটবেলার কথা মনে করে এক যুগ কাটিয়ে দেয়া যায়! কিন্তু বাস্তবে তা বিষের চেয়েও ধারালো তীর!"
মেঘের হাসি মিইয়ে গেলো! ফিরোজা বেগম তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন' —তারপর থেকে সবকিছুই ঠিক ছিল! তোর ফুফুকেও তখন তার শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা নিজেদের কাছে নিয়ে যায়! তুই আর অভিও ধীরে ধীর বড় হতে শুরু করলো! যখন তোর বয়স ৫বছর ছিল তখন তোর আর অভির বিয়ের কথা বলা হয়! কেননা তখন তোর বাবা জানতে পারে বাড়ির সব সম্পত্তি তোর বড় বাবার নামে লেখা আছে! কিন্তু তখন কেউ তোর বাবার চালাকি ধরতে পারে নি! তোর বড় বাবাও বিয়ের কথাতে রাজি হয়ে যায়! তার কয়েক মাসে পরেই তোকে তোর নানুর বাড়ি রাখা হয়! কিন্তু তার কারণ কি তা আজও জানি না আমি! ততদিনে অভি তোর প্রতি দুর্বল হয়ে ছিল! অভির বয়স তখন ৮বছর! সব সময় তোর সাথে হাসি-ঠাট্টা খেলাধুলায় মেতে থাকতো অভি! অভি নিজেও অনেক ক-বার গেছিলো তোর নানুর বাড়িতে কিন্তু তখন ওবাড়ির কেউ'ই তোর সাথে অভির দেখা করতে দেয় নি! কারণটা অজানা! আর যখন তোকে ইন্টার মিডিয়েট পড়ার জন্য বিদেশে পাঠাতে চাইলো তোর বাবা! তখন অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল তখন আমাদের কাছে তোর বাবা বলেছিল! যদি তোর পড়াশোনা খরচ আমরা বহন করি তাহলে তোর সাথে অভির বিয়ে হবে! সেদিন সবাই বাড়ির ছাদে আলোচনা করছিল! কোথা থেকে ঝামেলা শুরু করে কি হলো ছাদ থেকে মহিমা!"
কিছু বললেন না ফিরোজা বেগম তিনি দেখলেন মেঘ ঘুমিয়ে পড়েছে! গায়ের কম্বলটা আর একটু এগিয়ে দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ান তিনি! দরজার কার্নিশে এসে উল্টো ঘুরে ঘড়ির দিকে তাকায় সময় ৩টা ১৭ মিনিট! ঘরের বাতি বন্ধ করে দরজা ভিড়িয়ে চলে যায় ফিরোজা বেগম!
সকালে রহিমার চেচামেচিতে সবাই ঘুম থেকে উঠে! সবাই যে যার মতো কাজেই ব্যস্ত! ফিরোজা বেগম সকালে এক কাপ চা আর খবরের কাগজ দিয়ে বেলা ১০টা পার করে দিতে পারেন এটা অনার অভিজ্ঞতা! রহিমা আর আমেনা সবার জন্য খাবার বানাতেই ব্যস্ত! বাকি আছে আতিয়া আর আয়ত! তারা সকালে কিছু খেয়ে দেয়ে পড়তে বসে বেলা ১০ পর্যন্ত! আর অভির বাবা ফিরোজ, তাকে ঘুমের ঔষুধ দেয়া হয় বেলা ১০টার আগে ঘুম ভাঙে না! বেলা ১০টার পরেই বাড়ির সকলের ব্যস্ততা আরও বেশি হয়ে পড়ে! আমেনা রন্দন-শালা থেকে ডাক দেয়' —'আতিয়া!"
আমেনা ডাকতেই আতিয়া এসে হাজির' —'হ্যাঁ মা বলো! যা তোর ভাইয়াকে ডেকে দে?"
মা ঘরে তো আপুও রয়েছে?"
আমেনা খুন্তি উঁচু করে বলে' —'তোর এই আপু কে?"
আতিয়া ভয়ে ভয়ে বলে' —'মেঘলা আপু আছে তো?"
আমেনা দাঁতে দাঁত চেপে বলে' —'ভাবি বলবি! এখন যা ওদের দু'জন কে ডেকে পড়তে বস তাড়াতাড়ি?"
আতিয়া ছুটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেলো! দরজায় ঠোকা দিতেই আতিয়া দেখলো দরজা খুলে গেছে! হাত দিয়ে ঠেলা দিতেই দরজা সরে যায়! বিছানায় দু'জনকে ঘনিষ্ঠ দেখে আতিয়া চোঁখ ফিরিয়ে নেয়! দরজা আবারও ভিরিয়ে দিয়ে আতিয়া চলে আসে তার ঘরে!
মেঘের শরিলে অসহ্য ব্যথায় ভরে উঠেছে! নড়তে চেয়েও নড়তে পারছে না সে! মনে হয় তোর বস্তা তার উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে! চোঁখ খুলতে'ই মেঘ দেখে অভি তার নিস্তেজ দেহ মেঘের উপরে ছেড়ে দিয়েছে! মেঘ অভিকে ধাক্কা দেয়! এতে অভি সরে গিয়ে আবারও সে মেঘকে জড়িয়ে ধরে! মেঘের ঘাড়ে নাক ঘসিয়ে বলে' —'ত্যাগ দেখিও না মেঘবতী!"
মেঘ হিসহিসিয়ে উত্তর দেয়' —'যত্তসব আদিক্ষেতা!"
অভি হেসে মেঘকে আলগা করে দিলো! মেঘ উঠে নিজের শাড়ি ঠিক করলো! তবুও আঁড়চোখে মেঘ অভিকে কে দেখলো! লোকটা দেখছে নাকি? কিন্তু না অভি কম্বলে মুখ গুজে আছে! নিশ্চিতে শাড়ি ঠিক করে দরজার দিকে পা বাড়ালো মেঘ! পেছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসে' —'নতুন বউ সকালে গোসল না করলে বেমানান! ঐ যে নাক ফুলটা দেখছো না? এইটা আবার রাগ করবে?"
মেঘ রাগ দেখিয়ে দরজা পেরিয়ে বাইরে আসে! সামনে তাকতেই দেখে আতিয়া থ্রি-ডহাতে ছুটে আসছে তকর দিকে! কাছে এসেই মেঘকে জড়িয়ে ধরে আতিয়া! মেঘও আতিয়াকে জড়িয়ে ধরে! কিছুক্ষণ কথা বলার পরে আতিয়া মেঘের হাতে থ্রি-পিস ধরিয়ে দিয়ে বলে' —'এটা পড়ে নিচে এসো সবাই অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য?"
মেঘ অবুঝের মতো প্রশ্ন করে' —'আমাদের জন্য?"
আতিয়া দরজার দিকে ইশারা করে বলে' —'তুমি আর তোমার ওনি?"
আতিয়া ছুটে পালালো মেঘ মুচকি হাসে! ঘরে গিয়ে দেখে অভি নেই! মেঘ দরজা লাগিয়ে বিছানার কম্বল ভাজ করে একপাশে রেখে দেয়! অভি কোথা থেকে এসে বলে' —'বাহ! আসতে না' আসতে'ই এত দায়িত্ববোধ!"
মেঘ দেখলো ঘরের কলপাড় থেকে অভি গোসল করে এসেছে! কিন্তু না বলে মেঘও থ্রি-পিস নিয়ে কলপাড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়! অভি মুচকি হেসে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে পরিপাটি পরিদর্শন করে! কিছুক্ষণ বাদেই মেঘও গোসল সেরে কলপাড় ছেড়ে ঘরে আসে! মেঘ দেখে অভি তার দিকে তাকিয়ে হাতে ঘড়ি পড়ছে! বারান্দায় গিয়ে ভিজে কাপড় বাতাসে মেলে দেয় মেঘ! চুল মুছে চুলে ঝাড়া দিয়ে ঘরে আসে! দেখে অভি দরজার পাশেই দাড়িয়ে কি যেনো খুঁজছে! মেঘ কিছু না বলেই দরজা খুল! সামনে কালো পোষাকে আবৃত কাউকে দেখি পেছন ফিরে অভিকে জড়িযে ধরে মেঘ!
আরও পড়ুন: নির্বিচার| মারিয়া হাজান মারুফা| পর্ব-৪
0 Comments