চির সখা| ইফা| পর্ব-২

জীবনের গল্প: চির সখা| ইফা| পর্ব-২

ইফা তার মামা বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতে তার মামাতো ভাই সোহেল ইফার দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 

তার মামা তো ভাইর এর নোংরা দৃষ্টি দেখে ইফার শরীর রাগে রিরি করে উঠলো।

সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়িতে ঢুকতে গেলে তার মামী এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো, আইছে নবাবের ব্যাটি কাল রাতে কোন নাগরের সাথে ছিলি। 

ব্যাস কথাটা শেষ করা হল কি না ঠাস্ করে ইফা তার মামীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,আমাকে কি নিজের মতো মনে করেন নাকি? মামাকে কি বলে দিবে পাশের বাড়ি কাক্কুর সাথে আপনার ইন্টু পিন্টু চলে। 

যেমন মা তার তেমন ছেলে সব ক্যারেটারল্যাস। ভবিষ্যতে মুখ সংযত রেখে কথা বলবেন নয়তো আপনার মুখ ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো, আর এই যে তোমাকে বলছি ভবিষ্যতে কখনো যদি আমার দিকে এই নোংরা দৃষ্টিতে তাকাও তাহলে চোখ খোলে হাতে ধরিয়ে দিবো। 

আমি আবার ছোট-বড় কম মানি।

রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে চলে গেলো ইফা তার রুমের দিকে।

এই দিকে তার মামী আর তার মামাতো ভাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর চলে যাওয়ার দিকে।

ইফা রুমে এসেই তপ্ত শ্বাঃস ফেললো। 

রাগে তার শরীর জ্বলজ্বল করছে, না পারছে তো মা ব্যাটাকে পুড়িয়ে ফেলতে।  

এই যে বাড়ির মানুষের এতো ঠাটবাট এইসব কোথা থেকে এইসব তো জাস্ট ওর বাবার টাকার থেকেই। 

ওর বাবার টাকায় খাবে আবার ওকেই কথা শুনাবে সেইটা তো হবে না। 

এইবার আর এক কানাকড়ি ও দিবো না মামীকে। দেখি কি করে থাকে এমন ঠাটবাট।

ঘুম থেকে উঠলো কেয়া।

রিপু তখন রুমেই ছিলো কেয়াকে ঘুম থেকে উঠে বসতে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো।

কেয়া আস্তে করে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো, 

— কি রে এখন শরীরটা কেমন? 

কেয়া একটু হাসলো তারপর বললো, 

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ইফা কোথায় ওকে যে দেখছি না?

— বাসায় চলে গেছে। 

— ওহ্! ইশ্ না জানি ওর বাসায় কি ঝামেলা হচ্ছে? 

— আরে দোস্ত চাপ নিসনা ও হচ্ছে আমাদের ইফা। 

যার রক্তের শিরায় শিরায় রয়েছে ত্যাড়ামি ওর মুখ তো মুখ না কাঁচি। 

ও ঠিক সামলে নিবে।

কেয়া একটু হাসলো।

রিপু কেয়াকে তাড়া দিয়ে বললো, দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয়। 

নাস্তা করে আবার আমাদের হসপিটালে যেতে হবে তোর টেস্ট করার জন্য, আর এমনিতেও এই অবস্থায় বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকতে নেই। 

মা তোর জন্য নাস্তা বানাচ্ছে, সব তোর পছন্দের। 

শুধু শুধু এতো কষ্ট করার কি মানে? তোরা যা খেতিস আমি ও তাই খেতাম। 

কাকিমার কষ্ট হবে তো।

ঠিক তখনই রিপুর মা বললো,আরে না কিসের কষ্ট। 

মেয়ের জন্য মা খাবার বানাবে তার জন্য কষ্ট কিসের। একদম এইসব নিয়ে ভাববেনা। বরং নিজের উপর যত্ন নেও। আর বাকিটা আমরা ঠিক সামলে নিবো। 

আর রিপু তুই চটজলদি যা তো তোর ভাই এর রুমটা পরিষ্কার করে দে আজ আবার তোর ভাই আসবে। 

কেয়া অবাক হয়ে বললো, রিপুর ভাই আছে? কই রিপু আমাকে তো বলিস নেই আগে! 

আরে ভাই তো সিলেট থাকে ওখানে হসপিটালে  জব করে। মাসে - দু মাসে একবার আসে তাই বলা হয়নি। 

রিপুর মা কেয়াকে ধরে নিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,এসো মা তোমাকে ওয়াশরুম অব্দি দিয়ে আসি ফ্রেশ হয়ে এসো।

কেয়া এখনো অনেকটা দুর্বল। 

কেয়া আস্তে আস্তে পা ফেলে ওয়াশরুম অব্দি গেল।

ওই দিকে রিফাত কেয়াদের পাড়ার টঙ এর দোকে বসে আছে। 

যদি কোন খবর পাওয়া যায় তা নিয়ে।

ঠিক সেই সময় কেয়ার চাচা ওই টঙ এর দোকানে এসে দোকানদারকে বললো,ও রহিম মিয়া একখানা মালাই চা দেও দেহি। 

রহিম চাচা চা বানাচ্ছিলো তখনই পাশের একটা লোক বললো,হে গো সবুজ মিয়া তোমার ভাতিজীরে দেখলাম মেলা রাইতে বাড়ি থেইকা বের করে দিছো। কামডা কি ঠিক করলাম। 

তোমারই ওতো রক্ত। তাহলে এই কামডা কি ঠিক হইলো। 

কেয়ার চাচা তপ্ত শ্বাঃস ফেলে ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে তারপর ডাহা মিথ্যা কথা বলতে শুরু করলো, 

আসলে বলতেও লজ্জা লাগছে চরিত্র ভালো না আমার মেজো ভাই এর পোলার লগে আকাম করতে গিয়া ধরা পড়ছে তাই বার করে দিছে।

দোকান ওয়ালা চা দিতেই কেয়ার চাচা “চা” টা নিয়ে ওয়ান টাইম গ্লাসে চুমুক দিতে লাগল।

কেয়ার চাচার মুখ থেকে এই রকম একটা কথা শুনে সবাই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

কারন এই তল্লাটে সবাই কেয়াকে ভালো জানে। কখনো ওর মধ্যে খারাপ কিছু দেখেনি। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করতো ।

কেয়ার চাচার কথা শুনে রিফাতের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল।

জহুরি চোখে পড়গ করতে লাগল, সে অনেক মানুষ দেখেছে এই পর্যন্ত। মানুষকে এক দেখাতে যে বুঝে নিতে পারে। 

সে কেয়ার চাচার কথা শুনে এইটুকু বুঝেছে যে তিনি মিত্যে কথা বলছেন। এমনিতে সে মিত্যে কথা এক দমই শুনতে পারে না। 

রাগে তার মুখ থেকে বিশ্রী গালি এল। 

— বাই****।

ফোনটা হাতে নিয়ে টাইপিং করতে লাগল। অতঃপর ট্রাইপিং করা শেষ হল মেসেজ টা সেন্ড করে দিলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে।

তারপর সে বসা থেকে উঠে দোকানদার কে চা এর দাম দিয়ে চলে গেল রিপুদের বাড়ির দিকে।

ইফা সবে মাত্র খেতে বসেছে। 

তাড়াতাড়ি খেয়ে হসপিটালে যাবে কেয়ার সাথে দেখা করতে। 

সবে মাত্র একটা লোকমা মুখে তুলে নিল। 

ঠিক সেই সময় মামা এসে ওর খাবার প্লেটটা কেড়ে নিয়ে বললো, তুই না কি তোর মামীর গা এ হাত তুলেছি। 

ময়মুরুব্বি কি সব ভুলে গেছিস?

ইফা ভ্রু জোড়া কুঁচকে তার মামার হাত থেকে খাবার প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো, 

আমি নির্দোষদের গা এ হাত তুলি না। তোমার রাক্ষসী বউ আমার নামে উল্টা-পাল্টা কথা বলবে আর আমি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবো সেইটা যদি মনে করে থাকো তাহলে সেইটা তোমাদের স্বপ্নের দোষ আমার না। 

ইফা আর কথা না বাড়িয়ে খাবার নিয়ে খেতে খেতে বললো,একটা কথা মনে রেখো এই বাড়িটা যেমন তোমার তেমন আমারও নানাজান কিন্তু আমাকে ও এই বাড়ির অর্ধেক অংশ লিখে দিয়েছে। 

তাই আমি আমার অধিকার জোড়েরই থাকবো। আর রইল খাওয়ার খরচ সেইটা কিন্তু আমার বাবাই দেই। 

তাই জবান নামিয়ে কথা বলবে, নয়তো পরের বার কিন্তু তোমাদেরই লস হবে। 

ইফার মামী তেড়ে এসে বললো,তুই কিন্তু অপমান করছিস। 

ইফা রুটির টুকুরোটা ছিঁড়ে তাতে সবজী ভাজি মাখিয়ে মুখে ঢুকিয়ে তারপর একপলক মামীর দিকে তাকিয়ে বললো,  মান থাকলো তো অপমান হবে আদোও তোমার মান আছে কিনা সন্দেহ। 

রুটির লাস্ট টুকরো তো মুখে দিয়ে না চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে নিয়ে পার্স নিয়ে চলে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

Post a Comment

0 Comments