ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-১০
রাত পেরিয়ে ভোরের আলো আসতেই ইশার ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ খুলেই দেখে, তার পাশে ঘুমিয়ে আছে আরহান—শান্ত, স্থির। মুখে যেন যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত সৈনিকের প্রশান্তি।
ইশা নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। ইশা কি করে এই বিছানায় এলো তার জানা নেই। কাল রাতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটাও সে জানে না। ইশার বুকের ভিতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে। তার পাশে এই প্রথম কোনো পুরুষ ঘুমিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে। কি মনে করে এই বদরাগী লোকটা তার পাশে ঘুমিয়ে আছে কে জানে?
হঠাৎ আরহানের চোখ খুলে যায়, ইশার চোখে চোখ পড়ে।
গুড মর্নিং," বলে আরহান ঘুমভাঙা গলায়।
ইশা কয়েকবার চোখের পলক ফেলে উঠে বসতে বসতে বলল, “ মনে হচ্ছে, কোনো মেয়ের ঘুমিয়ে পড়া আপনার কাছে খুব স্বাভাবিক বিষয়।”
আরহান ঠোঁটে হালকা হাসি টেনে বলল, " আমি অস্বাভাবিক কিছু করেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।"
আমি যেই প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দিন।”, ইশা আড় চোখে তাকালো।
তুমি কি জানতে চাচ্ছো যে এক বিছানায় মেয়েদের সাথে আমার রাত কাটানোর অভ্যাস আছে কিনা?”, আরহানের স্পষ্ট উক্তিতে ইশা অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।
আরহান উঠে বসতে বসতে বলল,“ সত্যি বলতে মানুষ হিসাবে আমি একটু অসভ্য রকমের যেটা শুধু আমার কাছাকাছি এলেই বুঝতে পারবে।”
সেটা আমি এমনিতেই জানি।”, কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বলল ইশা।
“You're lucky. Do you know why?”,ইশা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আরহান বলল, “ Because I'm here to protect you so I won't behave like a pervert.” বলতে বলতে আরহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অন্যদিকে, এক অন্ধকার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কায়ান। তার গলায় কালো স্কার্ফ, চোখে আগুন। আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে সে নিজেকে বলে, “ এটাই সময়।”
একটা টেবিলে ছড়ানো ডিভাইসগুলো এক এক করে গুছিয়ে নিচ্ছে সে। ছোট সাইলেন্ট ড্রোন, ইনফ্রারেড ক্যামেরা, সিগন্যাল ব্লকার। প্রতিটি জিনিস সে নিজের হাতে পরীক্ষা করে নিচ্ছে।
রুবান পেছনে এসে বলল, “বস, নিশ্চিত?”
কায়ান উত্তর না দিয়ে একবার আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির চোখে চোখ রাখে।, “ আজ রাতে ভিলায় ঢুকবো আমি নিজে।”
রুবান চুপ করে থাকে। সে জানে, ঝড় আসতে চলেছে।
ভিলার পেছনে মাঠে দাঁড়িয়ে আছে ইশা, আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরহান, হাতে একজোড়া ট্রেনিং গ্লাভস।
তোমাকে আজ কিছু আত্মরক্ষার কৌশল শেখাবো," বলল আরহান।
কেনো? আপনি থাকতে আমার কেনো আত্মরক্ষা করতে হবে?" ইশার গলায় বিরক্তির সুর।
তুমি কি প্রতি রাত আমার সাথে এক বিছানায় কাটাতে চাও নাকি?," আরহান গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে।
ইশার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আরহান আরো বলল, “ আমি কায়ানের হাত থেকে তোমাকে বাঁচাবো, কিন্তু আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো না।”
ছি। এইসব বলতে লজ্জা লাগে না আপনার।”, ইশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
আরহান টান দিয়ে ইশার দুই হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো তারপর হাত দুটো পিছনে নিয়ে আটকে ফেলে বলল, “ নাহ, আমার লজ্জা পাওয়ার বয়স শেষ।”
মানে?”,
মানে জানতে হবে না। কেউ এইভাবে হাত আটকে ফেলে কিভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবে? ট্রাই করো দেখি।”, ইশা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছটফট করতে লাগলো কিন্তু পারলো না।
কিভাবে কারও হাত ছাড়িয়ে বের হতে হয় আরহান বুঝিয়ে দিলো। ইশা মনোযোগ দিচ্ছে।
আরহান এইবার পিছন থেকে ইশার দুই বাহু শক্ত করে ধরতেই ইশা চোখ কুঁচকে বললো,"এইভাবে পেছন থেকে ধরার মানে কি?"
ট্রেনিংয়ের অংশ। এইভাবে কেউ পিছন থেকে ধরলে কি করবে?”, ইশা চুপ করে কথা শুনছে।
পিছন থেকে ধরলে নিজের মাথার পেছনের অংশ দিয়ে হিট করবে। হাত পা কম নাড়াবে। টার্গেট কাছাকাছি আসলে তবেই হিট করবে।”
হয়েছে বুঝেছি। এইবার ছাড়ুন আমাকে।” বলেই ইশা ছটফট করতে লাগলো।
আরহান ইশাকে ছাড়ল না। বরং ইশার কানের কাছে গিয়ে বলল, “ এতো ছটফট করছো কেনো? বয়স কত তোমার?”
একুশ।”, বলেই আড় চোখে তাকালো ইশা।
মাত্র একুশ? পিচ্চি।”, বলেই এক হাতে ইশার মাথা ধরলো আরহান।
ছাড়ুন বলছি।”, বলেই ইশা আরহানের শিখানো ট্রেনিং তার উপরেই প্রয়োগ করলো। আরহান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ইশা মাথা ঝাকিয়ে বাড়ি দিতেই আরহান খেয়াল করে সরে গেলো।
তারপর ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো, “ বাহ্। গুড গার্ল। তারাতারি আয়ত্ত করে ফেলেছো দেখি।”, বলেই আরহান ইশার দুই বাহু ছেড়ে দিলো। তারপর বলল, “ আমার শেখানো ট্রিকস আমার উপরে প্রয়োগ করার ভুল আর কখনো করবে না। নেক্সট টাইম মাফ করবো না।” বলেই আরহান ভিলার ভিতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর আরহান প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে যাচ্ছে। গা ছুঁয়ে থাকা গাঢ় নীল জ্যাকেট, কানে হেডসেট। ইশা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাচ্ছেন?"
একটা ইনফরমেশন ট্রেস করতে হবে।," আরহান উত্তর দেয়।
আমি একা থাকবো নাকি?”
একা কোথায়। তোমায় পাহাড়া দিতে বাইরে কত মানুষ তার ধারণা আছে?”
কিন্তু ভিতরে তো আমি একা।”
আমি একজনকে আসতে বলেছি। ভয় পাওয়ার কারণ নেই।”
শহরের ভিতরকার রাস্তা ধরে গাড়ি চালাচ্ছিল আরহান। এমন সময় একটা রিকশা হঠাৎ ব্রেক কষে। পাশে এক বৃদ্ধা হাঁটছিলেন। আরহানের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলেন বৃদ্ধা।
আরহান গাড়ি থামিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে ধরল। " ঠিক আছেন আপনি?"
বৃদ্ধা কোনো কথা বলে না। অবাক দৃষ্টিতে আরহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।যেনো আরহানকে তিনি চেনেন। আরহান বৃদ্ধাকে তুলে নিজের গাড়িতে বসিয়ে কাছের হসপিটালের নিয়ে গেলো।
আরোও পড়ুন:
0 Comments