ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-১৬
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দশটার উপরে। এখন ইশার হাতের মেহেদি তোলা হচ্ছে। এই অল্প কিছুক্ষনের মাথায় রঙটা একদম গাঢ় হয়ে ফুটে আছে ইশার হাতে— পায়ে। এইবার দেখে মনে হচ্ছে যে তার বিয়ে হয়েছে।
রাত অনেক ইশাকে কয়জন মিলে আরহানের রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইশা ইচ্ছাকৃত ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভয় নাকি লজ্জা সে জানে না। কিন্তু পুরো শরীরটা কেমন শিউরে উঠছে।
আরহানের রুমের দরজা খুলতেই সবাই হতবাক রুমের ভিতরটা এত সুন্দর করে সাজানো। দেখে বোঝাই যাচ্ছে কেউ একজন অনেক যত্নে অপেক্ষা করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার রুমের ভিতরে আরহান আগে থেকেই বসে আছে।
একি অবস্থা। আগে আমরা বউ রাখবো। তারপর না— তুমি ভিতরে ঢুকবে।”, আরহানের খালাতো বোন অবাক হয়ে বললো।
তোমার বউকে মেহেদী পরিয়ে দিলাম। আবার বাসরের জন্য তৈরি করে এনেছি। এমনি এমনি তো আমরা যাচ্ছি না।”, দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো আরেক বোন।
সবার সাথে ইফতিও দাড়িয়ে আছে। সে মাঝখানে এসে বললো, “ কি! টাকা দেওয়ার ভয়ে আগেই ভিতরে ঢুকে বসে আছিস?”
ইফতি কথা শেষ না করতেই আরহান প্যান্টের পকেট থেকে টাকার একটা ব্যান্ডেল বের করে দিতেই সবার মুখ হা হয়ে গেলো।
ইফতি হাত বাড়িয়ে ব্যান্ডেলটা নিয়ে দিলো এক দৌড়। ওর পিছু নিয়েছে বাকি মেয়েরা।
ইশা অবাক হয়ে সবার দৌড় দেখছে। এদের জীবনেই তো সুখ, আমাকে কিনা হায়নার আস্তানায় ছেড়ে দিয়ে নিজেরা আনন্দে মেতেছে।
আরহান তার দিকে এগিয়ে আসতেই ইশা আড় চোখে তাকিয়ে ঝটপট দুইধাপ পিছিয়ে গেলো। আরহান নিঃশব্দে একটা নিশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করতেই ইশার বুকের ভিতরে ধুক ধুক শুরু হলো।
দরজা বন্ধ করলেন কেনো?”, ইশা আড় চোখে তাকিয়ে বললো।
যাতে করে তোমার চিৎকার বাইরের কেউ শুনতে না পায়।”, শান্ত কন্ঠে বলেই আরহান হুট করে ইশাকে কোলে তুলে নিলো।
ইশা এক মুহূর্তের জন্য দম আটকে ফেলেছিলো। তারপর আরহানের চোখে চোখ পড়তেই যেনো মোমের মতন ভিতরে গলে যাচ্ছিলো।
এই ঘরটাও কি সুন্দর করে সাজিয়েছে।
আরহান আহমেদ তো আজকে পুরোই রোমান্সের মুডে আছে।
আচ্ছা, – ওনার কি ডাক রোমান্স পছন্দ? আবার বেঁধে রাখবেন– না তো।
ইশা হা করে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আবছা আলোয় কি সুন্দর লাগছে লোকটাকে, উফ-ফ! কন্ট্রোল ইশা। এই লোকের রূপে মুগ্ধ হয়ে নিজের ভেতরের রাগ দমিয়ে দিলে হবে না। তোরই তো জামাই কোথায় পালিয়ে যেতে তো পারবে না। মনের দ্বন্দ ভাবতে ভাবতে ইশা নিজেকে আরহানের বিছানায় আবিষ্কার করলো এমন মুহূর্তে তার টনক নড়ে উঠলো।
সে নড়ে চড়ে উঠতেই, আরহান তার দুই হাত ধরে তাকে বিছানায় চেপে ধরলো।
আরহান ইশার অস্থিরতা দেখে বললো, “ এমন ছটফট করছো কেনো?”
ইশা চেয়েছিলো বাঘিনীর মতন গর্জে উঠবে কিন্তু আরহানের নরম কন্ঠে সে গলে গিয়ে বিড়ালের চেয়েও নিচু স্বরে বললো, “ বন্ধ ঘরে আমার দম আটকে আসে।”
আচ্ছা! — তাই বুঝি?--- ধাপ্পাবাজির জায়গা পাও না? — আমাকে যে তোমার রুমে বন্ধ করে রেখেছিলে কই সেদিন তো তোমার দম আটকে যেতে দেখিনি।”, আরহানের এমন উক্তিতে ইশা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
এতো কথা না বলে। আপনি আমার উপর থেকে সরুন।”, ইশা কথা ঘুরিয়ে দিতে চাইলো।
কেনো?” আরহানের স্পষ্ট জিজ্ঞাসা।
আমি বলেছি তাই। যখন আমার কথার কোনো দাম নেই, আমাকে কিছু বলবেনই না— তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?”
ইশার কথায় আরহান অবাক হয়ে বললো, “ মানে? কি বলছো এসব?”
আপনার পিঠে আঘাত লেগেছে কিভাবে?-- সেটা কিন্তু আপনি আমাকে বলেনি।”, ইশা আরহানের চোখে চোখ রেখে অভিমানী গলায় বললো।
আরহান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। সেই সকালের কথা নিয়ে মেয়েটা এখনো তার উপর রাগ করে আছে। অবিশ্বাস্য।
আরহান ইশার কপালের চুল সরিয়ে কানের পাশে গুজে দিতে দিতে আলতো করে বললো, “ বললে কি – তুমি আমার ক্ষত ঠিক করে দিতে পারবে?” মুহূর্তে কঠিন চোখে বললো, “ তুমি কি ডাক্তার?”
ইশা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বললো,
“ এইভাবে নিজের বউয়ের তেজ দেখিয়ে কথা বললে —ক্ষত ভালো হওয়া তো দূরে থাকুক —আরো গাঢ় হবে।”
আরহান কোমল দৃষ্টিতে তাকালো —তারপর ইশার গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো, “ তাহলে বউকে আদর করলে বুঝি ক্ষত ঠিক হবে?”
আরহানের স্পর্শে ইশা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না।
এই বদরাগী লোকটা হঠাৎ এত রোমান্টিক হলো কি করে! নেশা করে আসেনি তো?
ইশার নীরবতা দেখে আরহান, ইশার হাতটা খেয়াল করলো। মেহেদী রাঙ্গা হাত দুটো কি সুন্দর লাগছে। আরহান হাত দুটো নিজের কাছে এনে এপিট ওপিট করে দেখতে লাগলো।
ইশা ভ্রু কুচকে বললো, “ কি করছে আপনি?”
মেহেদী হাতে না বরের নাম লিখতে হয়? আমার নাম খুঁজছি।”, বলেই সে নাম খুঁজতে লাগলো।
ইশা নিঃশব্দে একগাল হেসে বললো, “ জীবনেও খুঁজে পাবেন না।”
আর যদি খুঁজে পাই?”, বলেই আরহান ইশার দিকে তাকালো।
বলেছি তো পাবেন না।”, ইশা দৃঢ় কন্ঠে বললো।
আরহান ভালো করে ইশার দুই হাত দেখতে লাগলো। দুজনে পাশাপাশি শুয়ে আছে। ইশা আরহানের কৌতূহল চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে।
আরহানের হঠাৎ চোখ পড়লো ইশার হাতের অনামিকা আঙ্গুলের দিকে।
যেখানে সে তাদের বিয়ের আংটি পরে আছে। ঠিক তার পাশে ছোট্ট করে লেখা “Arhan”
নিজের নাম দেখে আরহান ঠোটের কোনে হাসি রেখে বললো, “ তোমাকে একটা প্রশ্ন করি।”
ইশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
আরহান ইশার হাত থেকে চোখ না সরিয়ে বললো, “ ধরো, কোনো একটা জিনিস —সেখানে আমার নাম লেখা আছে। এর মানে কি?”
ইশা ভ্রু কুচকে তাকালো। এটা কেমন প্রশ্ন? লোকটা তাকে বাসররাতে ধাধা জিজ্ঞেস করছে কেনো?
ইশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “জিনিসটা আপনার?”
আরহান সাথে সাথে ইশার দিকে তাকালো। ঠোঁট প্রসারিত করে বললো, “ এক্সাক্টলি!” বলেই ইশার হাত নিজের ঠোটের কাছে এনে অনামিকা আঙুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
তারপর ইশা আরহানের দিকে তাকাতেই তার কথার গভীরতা বুঝতে পারলো। মুহূর্তে আরহান এগিয়ে এসে ইশার ওষ্ঠ দুটি ছুঁয়ে দিলো।
বাইরে ঝড় বইছে। ঠাণ্ডা বাতাসে রুমের পর্দা উড়ে বেড়াচ্ছে। মোমবাতি গুলো একে একে নিভে যাচ্ছে , কিন্তু সে দিকে কারোর খেয়াল নেই, দুজনেই মেতে উঠেছে প্রণয়ের উন্মাদনায়।
রাহি আরহানদের বাড়ি থেকে বের হতেই সামনে থাকা একটি গাড়ি সজোরে হর্ন বাজিয়ে উঠলো। রাহি হকচকিয়ে সেদিকে তাকাতেই দেখলো গাড়ির ভিতরে কায়ান।
কায়ানকে ভয় পাওয়া তো দূরে থাক রাহির রীতিমতন তাকে দেখলে বিরক্তি হয়।
রাহি নিজের রাগ দমিয়ে হনহন করে গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, “ কি !— সমস্যা কি তোমার?”
রাহিকে দেখে কায়ান হা করে তাকিয়ে আছে। এতোদিন তাকে অফিসারের পোশাকে দেখলেও আজ রাহি আঁচল তুলে শাড়ি পরেছে। খোলা চুল, কপালে টিপ আর হাতে কাচের চুড়ি। কি ভয়ংকর রূপবতী লাগছে তাকে সে কি তা জানে?
কায়ান চোখ সরাতে পারছে না। এ জীবনের বহু নারীর সংস্পর্শে গেলেও কেউ তাকে এতোটা মুগ্ধ করেনি। দূর থেকে দেখেই তার দম আটকে আসছে কাছে গেলে তো নিশ্চিত মৃত্যু।
কি আশ্চর্য!” রাহির হুংকারে কায়ান পলক ফেলে তাকালো। তারপর হাল্কা কেশে উঠল —গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল, “ গাড়িতে উঠো।”
রাহি রাগে গজগজ করতে করতে বললো,” গাড়িতে উঠবো মানে কি?”
“ Don't ask questions. সুন্দর করে বলছি চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো। তুমি নিশ্চয় চাও না আমি তোমাকে জোর করি।”, কায়ান ঠাণ্ডা গলায় বললো।
রাহি কি করবে বুঝতে পারছে না। এই আপদ কেনো বার বার তার সামনে আসে সেটা সে বুঝে উঠতে পারে না। অবশেষে রাহি গাড়িতে উঠে বসলো।
কোথায় যাচ্ছি আমরা?”, রাহি কঠিন গলায় প্রশ্ন করলো।
বলেছি না আমাকে প্রশ্ন করবে না। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে না গিয়ে কোনো উপায় আছে তোমার কাছে?”, বলেই কায়ান রাহির দিকে তাকালো। সে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।
কায়ান লক্ষ্য করলো রাহির অনামিকা আঙুলে একটা আংটি। কায়ান ভ্রু কুচকে সাথে সাথে গাড়ি থামালো।
হঠাৎ ব্রেক কষতেই রাহি হতভম্ব হয়ে তাকালো।সে কিছু বলার আগেই কায়ান তার কব্জি ধরে আঙুল থেকে আংটিটা খুলে ফেলে বললো, “ এটা কিসের আংটি?”
রাহির দাঁতে দাঁত চিপে বললো, “ আংটিটা ফেরত দেও। ওটা আমার এনগেজমেন্টের আংটি।”
কথাটা কর্নগোচর হতেই কায়ানের মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো।
“What the fu.......*k!” বলেই রাগে কায়ান আংটিটা গাড়ির জানালা দিয়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিলো।
জানালার বাইরে গিয়ে আংটিটা পড়লো রাস্তার পাশের ঝোপের ভিতরে। রাহি মুহূর্তে একটা চিৎকার দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছিলো। কায়ান হাত বাড়িয়ে রাহিকে ধরে ফেলল। তারপর অগ্নি চোখে বললো, “ কোন গাধার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তোমার?”
“ মুখ সামলে কথা বলো।”, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলেই এক ঝটকায় রাহি কায়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে --গাড়ি থেকে নেমে গেলে।
কায়ান মুষ্টি বন্ধ করে নিজের রাগ সামলাচ্ছে। সে আড় চোখে রাহির দিকে তাকালো। ঝোপের মধ্যে রাহি মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে আংটিটা খুঁজছে।
কায়ান গাড়ি থেকে নামলো তারপর সে নিজের রাগ কমিয়ে একপাশে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়ালো। তারপর রাহির দিকে তাকিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
পৃথিবীতে এমন বোকা মেয়ে আছে সেটা তার জানা ছিল না। আর যাই হোক রাহি এমন বোকা হবে সেটা সে ভাবেনি।
সামান্য একটা আংটি সেটা নিয়ে এ রকম পাগলামি করার কি আছে? তার কি ধারণা খুব ---যেন আংটিটা খুঁজে পাবে?
কখনোই পাবে না, ভেবেই কায়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে রাহির কর্মকাণ্ড দেখতে থাকলো।
একপর্যায়ে যখন কায়ানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। তখন সে ঠান্ডা কণ্ঠে বললো, “তোমার কি মনে হয়? যে তুমি এই ঝোপের ভিতর থেকে ওই গাধার দেওয়া আংটি খুঁজে পাবে? যেই তার সাইজ দূরবীণ আনলেও কেউ সেটা খুঁজে দিতে পারবে না।”
রাহি হিংস্র বাঘিনীর চোখে শুধু একবার কায়ানের দিকে তাকালো।
কায়ানের বিরক্ত লাগছে, সে সিগারেটটা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত এখন অনেক হয়েছে।
তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে বললো, “ বাহ্! কি তোমার লীলাখেলা? যাকে দেও ---একদম দুই হাত ভরে। ঐদিকে আমার ভাই বউয়ের সাথে বাসর করছে? আর আমি! —আমি কি করছি? এই রাতের এই ঝোপের মধ্যে মশার কামড় খাচ্ছি। বাহ!”
শেষমেষ কোনো উপায় না পেয়ে কায়ান রাহির হাত ধরে টেনে তাকে ঝোপের থেকে তুলল। রাহি স-মানে কায়ানের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে।
আমার হাত ছাড়ো। তোমার সাহস কি করে হচ্ছে!”, রাহি সজোরে চেঁচিয়ে উঠে নিজের হাত ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
কায়ান নিঃশব্দে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, “ তোমার কি মনে হয় তুমি আংটিটা খুঁজে পাবে এই ঝোপের মধ্যে? শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছো।”
তোমাকে এইখানে থাকতে –কে বলেছে? এমনিতেই আমার যা ক্ষতি করার সেটা তুমি করে ফেলেছো। আর কি চাও? ছাড়ো আমাকে –যেতে দেও।”,রাহি যেনো চোখ দিয়েই কায়ানকে গিলে খাচ্ছে।
কায়ান রাহির হাত ছাড়লো না। বরং টান দিয়ে নিজের সামনে এনে শান্ত গলায় বললো, “ আমার সাথে একদম জেদ দেখাবে না। আমার কারণে আংটি হারিয়েছো?--- আমি এর থেকেও দামী আংটি কিনে দিবো। চল এখন আমার সাথে।”
“ কখনোই না। আমি তোমার সাথে যাবো না। আর তোমার থেকে-- আংটি কেনো নিবো আমি? আমার দামী আংটি চাই না। যেটা তুমি হারিয়েছো আমার সেটাই লাগবে।”, আঙ্গুল দিয়ে শাসিয়ে বলল রাহি।
কায়ান ভ্রু কুঁচকে রাহির আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্য কেউ হলে হয়তো এ আঙ্গুল এতক্ষণে কবরে চলে যেতো। কায়ান আস্তে করে আঙ্গুলটা নিচে নামিয়ে বললো, “ আচ্ছা। সেটাই দিবো। এখন চলো। আমার সাথে।”
“নাহ। বলেছি না— তোমার সাথে যাবো না। ছাড়ো আমাকে।”, রাহি আবার চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখো। শেষ বারের মতন বলছি। জায়গাটা ভালো না। চুপ চাপ আমার গাড়িতে গিয়ে বসো।”, দাঁতে দাঁত চিপে বলল কায়ান।
আচ্ছা। আর তুমি খুব ভালো মানুষ? -- তাই না!যে আমি তোমার সাথে যাবো?”, রাহি তাচ্ছিল্যের সাথে বললো।
কায়ান রাহির হাত ছেড়ে দিয়ে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে বললো, “ নাহ। আমি ভালো হওয়ার তো প্রশ্নই উঠছে না। আমি হলাম খারাপের বাপ।” বলেই রাহির কোমড় শক্ত করে ধরে তাকে কাধে তুলে নিলো।
রাহি ছটফট করেও লাভ হচ্ছে না। সাথে আজকে বন্দুকটাও নেই। সে শেষমেষ উপায় না পেয়ে চিৎকার করতে লাগলো। কায়ান সুন্দর মতন গাড়ির দরজা খুললো তারপর রাহিকে গাড়ির ভিতরে বসাতেই-- রাহি কায়ানের পিঠে সজোরে কয়েকটা ঘুষি মারলো। তারপর আবার চিৎকার করতে লাগলো।
কায়ান রাহির সিটের একদম দুই পাশে হাত রেখে তাকে আবদ্ধ করে ফেলতেই রাহি থমকে তাকালো। কায়ান একদম কাছাকাছি এসে বললো, “ আর একটা চিৎকার করলে কিন্তু….।” থেমে কায়ান একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেললো তারপর বললো, “ ছেলেদের মুখ বন্ধ করতে হয় বন্দুকের গুলি দিয়ে আর তোমার মতন সুন্দরীদের মুখ বন্ধ করতে হয় কি দিয়ে জানো?…” বলেই তর্জনী দিয়ে রাহির নিচের ঠোঁট স্পর্শ করলো।
রাহি অগ্নি চোখে এক ঝটকা দিয়ে কায়ানের হাত সরিয়ে দিলো। কায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো তারপর গাড়ির দরজা বন্ধ করতে করতে বললো, “ গুড গার্ল। এইভাবে চুপ করে থাকবে।”
রাহির ভিতরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছে না। আবার তার আংটিটাও হারিয়ে ফেললো। এখন এই কায়ান তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?
আরহানের বুকে মাথা রেখে ইশা ঘুমিয়ে আছে। আরহান চাদরটা টেনে ইশার গলা কাধ পর্যন্ত তুলে দিয়ে — ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তারপর আলতো করে ইশার কপালের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ইশার শান্ত ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকাতেই আরহানের মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো।
কায়ান এতদিনে তার উপর হামলার সাহস কোনোদিন দেখায়নি। তার মানে এইসবের পিছনে যে আছে সে আরো ভয়ঙ্কর। যদি তার উপর হামলা করতে পারে তাহলে তার কাছের মানুষের উপরও হুমকিস্বরূপ। তাহলে কায়ানের সাথে নিশ্চয়ই সেই লোকের হাত রয়েছে। এই সব কিছুর শেষ করতে হবে খুব জলদি।
কায়ান গাড়ি থামালো নিজের বিশাল বাড়ির সামনে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে রাহির দরজা খুলতেই সে কটমট চোখে তাকিয়ে বললো, “ এটা কোথায়?”
বলেছিনা বেশি প্রশ্ন করবে না।”, বলেই হাত ধরে রাহিকে গাড়ি থেকে নামালো কায়ান।
রাহি কোনোভাবেই ভিতরে যেতে চাইলো না। উল্টো দিকে দৌড় দেওয়ার আগেই তাকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। রাহি বুঝে গেছে এটা কায়ানের আরেকটা ফাদ। যে ফাঁদে সে পড়েছে নিজের বোকামির কারণে।
বাড়ির সামনেই শখানেক লোকজন প্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে আছে যেনো এইটা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র। আর বাড়ির ভিতরটা যেনো কোনো আট তারকা হোটেল। তবে লাইটগুলো সব বন্ধ কিছু কিছু আলো শুধু জ্বলছে। যার কারণে একদম ভূতুড়ে লাগছে পুরো বাড়িটা। রাহি এখন আর চেঁচামেচি করছে না। হায়নার আস্তানায় এসে চেঁচামেচি করাটা আরেক বোকামি হবে।
কায়ান রাহিকে একটা রুমে নিয়ে গেলো। তারপর তাকে বিছানায় রাখতেই। রাহির সম্পুর্ন শরীর অবশ হয়ে এলো। সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাতেই কায়ান সরে এসে বললো, “ ভয় নেই কিন্তু যদি আমার কথা না শুনো। তাহলে ভয়ের অনেক কারণ আছে।”
বলতে বলতে কায়ান নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে একপাশে রাখলো। রাহি রুমটা দেখছে। বিশাল রুম, সাথে মাস্টার বেড।
আমাকে এইখানে নিয়ে আসার কারণ?”, রাহি একটু দম ফেলে বললো।
কারণ ওই পেনড্রাইভ। ওটা আমার চাই।”, শান্ত শিথিল গলায় বললো কায়ান।
আর না দিলে?”, রাহির প্রশ্ন।
কায়ান একটু হেসে বলল, “ প্রশ্নই উঠছে না। আমি যেটা চাই সেটা হাসিল করেই ছাড়ি। যতদিন না পেনড্রাইভটা পাচ্ছি, তুমি আমার বন্দি হয়ে থাকবে।”
রাহি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। নিজের বোকামিতে ইচ্ছে করছে যেনো নিজেই নিজেকে একটা চড় মারে। কি সুন্দর এই লোকটার ভন্ডামিতে পা দিয়ে ফেললো। সে কিনা নিজে হেঁটে কায়ানের গাড়িতে উঠেছে। এটা কি সে কিডন্যাপ বলবে? না –নিজের পায়ে কুড়াল মারা?
পেনড্রাইভ দিয়ে তোমার কাজ কি? সেইখানে তো তোমার বিরুদ্ধে কিছু নেই।”, রাহি অনেকক্ষণ পর জিজ্ঞেসা করলো।
I know sweetheart. আমার বিরুদ্ধে কিছু নেই, কারণ আমি নিজের কাজের কোনো প্রুফ রাখি না। কিন্তু আমার যে একজনকে শায়েস্তা করতে হবে। যতদিন পেনড্রাইভটা তোমাদের কাছে আছে , আমি সেটা পারছি না।”
রাহি ভ্রু কুচকে বললো, “ হ্যাঁ, কারণ তুমি জানো এইসবের পিছনে কে আছে।”
Of course. আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব খবরের হেড কোয়াটার এইখানেই।”, কায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।
কে আছে এইসবের পিছনে?”, রাহি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
উহু, এটা জানার সময় এখনো আসেনি। শুধু এইটুকু জেনে রাখো। এই রুমের বাইরে যাওয়া তোমার জন্য নিষেধ।”, বলতে বলতে কায়ান নিজের শার্ট খুলে বিছানায় গা হেলিয়ে দিলো।
রাহি চোখ বড় বড় করে বললো, “ একি! তুমি এইখানে কেনো …..?”
কায়ান রাহির বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, “ এটা আমার রুম সুইটহার্ট। আর তুমি এই রুমেই থাকছো।”
কায়ান রাহির বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, “ এটা আমার রুম সুইটহার্ট। আর তুমি এই রুমেই থাকছো।”
“ তোমার মনে হচ্ছে না — তুমি বাড়াবাড়ি করছো?”, রাহি ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো।
“ নাহ একদমই না। তুমি হলে এখন আমার সোনার হরিণ। তাই তোমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।”, বলেই কায়ান হাই তুললো।
রাহি যেনো বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কি বলবে সে? নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে একবার আংটির কথা ভাবলো।
রাহির প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। সে বিছানা থেকে উঠে জানলার পাশের সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে রইলো। কিভাবে এইখান থেকে বের হবে সেই নিয়ে ভাবতে থাকলো।
কায়ান নিজের গায়ে চাদর টেনে বললো, “ তুমি যদি জানালা দিয়ে পালানোর প্ল্যান করে থাকো। তাহলে আগেই বলে রাখি আমার লোকেরা জানালার একদম নিচে দাঁড়িয়ে আছে।” বলেই কায়ান এক গাল হাসলো।
রাহি অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলো।
এই জাহান্নাম থেকে তার মুক্তির উপায় কি?
আরহানের ফোন ক্রমাগত বেজে চলেছে। ফোনের শব্দে ইশার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই সে টের পেলো তার পাশে আরহান নেই। গায়ে চাদর জড়িয়ে ইশা উঠে বসলো।
কোথায় গেলো লোকটা?
ইশা ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৯টা। এর মধ্যে গোসল সেরে তোয়ালে পেঁচিয়ে আরহান রুমে আসলো।
ইশা হা করে আরহানকে দেখছে।
আরহানের সুঠাম দেহে পানির বিন্দু চিক চিক করছে। ইশা মনে মনে বললো, কোনো ডাইনি আমার জামাইর দিকে নজর দিলে একদম চোখ ফুটো করে দিবো। উফফ –মাশাআল্লাহ!
আরহান ইশার পাশে বসতে বসতে বললো, “ গুড মর্নিং। —এখনো ব্যাথা আছে?”
আরহানের এইভাবে প্রশ্ন করায় ইশা চোখ নামিয়ে ফেললো কিন্তু কিছু বললো না। ব্যাথা দেওয়ার সময় তো মনে ছিলো না, এখন এসেছে ঢং করতে।
আরহান ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। চাদর জড়িয়ে দুই হাঁটু ভাজ করে বসে আছে সে। চুল গুলো এলোমেলো, গলা ও ঘাড়ে আদরের দাগ।
আরহান নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো তারপর বিছানার পাশের ড্রয়ার খুলে একটা লাল রঙের বক্স বের করে ইশার হাতে নিলো।
ইশা আড় চোখে, ভ্রু কুঁচকে সবটা দেখছে। বক্সটা এনে আরহান ইশার হাতে দিতেই সে আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো, “ এটা কি?”
আরহান চুলের পানি মুছতে মুছতে বললো, “ খুলে দেখো।”
ইশা আগ্রহ নিয়ে বক্সটা খুলতেই দেখলো ভিতরে একটা পেনডেন্ট। অসম্ভব সুন্দর! ইশা অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই আরহান বললো,
“এটা কালকে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমার মনে ছিলো না।”, একটু আফসোস করে বললো আরহান।
তারপর আরহান ইশার কাছ ঘেঁষে বসলো। কাধ থেকে ইশার চুল গুলো সরিয়ে পেনডেন্টটা পরিয়ে দিতে দিতে বললো, “ এতো চুপচাপ কেনো তুমি?” বলেই ইশার কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
ইশা শিউরে উঠে বললো, “ আপনি ভাবটা এমন দেখাচ্ছেন যেনো আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি।”
আরহান ইশার কাঁধে চিবুক রেখে বললো, “ বিয়ের আগে করিনি কিন্তু বিয়ের পর প্রেম করতে তো কোনো অসুবিধা দেখছি না।”
ইশা কিছু বলার আগেই আরহানের ফোন বেজে উঠল। আরহানের মনোযোগ চলে গেলো সেদিকে। ইশা বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই আরহান বললো, “ জাস্ট এ মিনিট।”
আরহান কথা বলতে বারান্দায় চলে গেলো।
ইশার বিরক্ত লাগছে।
ফোন যেনো তার আরেক সতীন।
ইশা পেনডেন্টটার দিকে তাকালো।
সবকিছুর মাঝেও ইশার খালি খালি লাগছে। মনে হচ্ছে তাদের দুইজনের মধ্যে কিছু একটা মিসিং। আরহানকে সে ভালবাসে, এইটা অস্বীকার করছে না।
তবুও এই মানুষটা যেনো এক রহস্য মানব। নিজের অনুভূতি সে এমনভাবে কুক্ষিগত করে রাখে আসল মানুষটি কেমন সেটা থাকে সবার আড়ালে।
ইশা আসল আরহানকে চায়। তাকে বুঝতে চায়। তার সব কথা শুনতে চায় কিন্তু সেখানে পৌঁছানো যেনো তার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
আরহান রুমে ঢুকলো চিন্তিত মুখে। খবর এসেছে রাহি নিখোঁজ। আর কায়ান বার্তা পাঠিয়েছে , “পেনড্রাইভ না পেলে তার পরবর্তী টার্গেট ইশা।”
আরহানের রক্তে যেনো আগুন বইছে। সে সাথে সাথে নিজের আলমারি থেকে জামা কাপড় বের করে তৈরি হতে লাগলো।
ইশা উদগ্রীব কন্ঠে বললো, “ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“ একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।”, বলেই আরহান নিজের ঘড়ি পড়তে লাগলো।
“ ইম্পর্টেন্ট কাজ? আজকে– কিসের ইম্পর্টেন্ট কাজ? আপনি কোথাও যাবেন না।”, ইশা জেদ দেখিয়ে বললো।
আরহান একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ইশার পাশে বসলো। তারপর বললো, “ না গিয়ে উপায় নেই।”
“এইসবের মানে কি? আজকে আমার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা।”, মুখ ফুলিয়ে বললো ইশা।
“ আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। ওকে?”, বলেই ইশার কপালে আদর মেখে দিয়ে উঠে পড়লো সে।
ইশা অভিমানী চোখে আরহানের চলে যাওয়া দেখছে।
রাহির সারারাত ঘুম হয়নি। সোফার এক কোণে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলো সে। ভোরের দিকে চোখ বন্ধ হয়ে এলেও, কিছুক্ষণ পর তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে সবার আগে সে বিছানার দিকে তাকায়।
কায়ান নেই!
কায়ানকে না দেখে রাহি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর ক্লান্ত চোখে রুমের চারিদিকে তাকালো। এই ঘরে মানুষ থাকে কি করে? রাহির যেনো দম বন্ধ হয়ে এলো। সে পা টিপে টিপে রুমের দরজা খুলতেই দেখলো দরজা বাইরে বন্দুক হাতে দুইজন দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।
রাহিকে দরজা খুলতে দেখে একজন বললো, “ ভিতরে যান। আপনার জন্য এই রুমের বাইরে বের হওয়া নিষেধ।”
রাহি রাগে কটমট করে এক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে ভিতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একজন তার জন্য ট্রে করে খাবার নিয়ে এলো। রাহি রাগ দেখিয়ে সবকিছু নিয়ে যেতে বললো।
কিন্তু পাশ থেকে একজন বললো, “ না। খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। যদি আপনি খেতে না চান— তাহলে হাত পা বেঁধে খাওয়ানোর অনুমতি আছে।”
রাহির ভিতরের সব সহ্য শক্তি যেনো শেষ প্রায়।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। রাহি নিশ্চুপে কায়ানের সম্পুর্ন রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেতে লাগলো। আশ্চর্যের ব্যাপার এই ঘরে কিছুই নেই। কোনো ভাবে যদি জানতে পারতো ওই পেনড্রাইভ নিয়ে কাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চায় কায়ান।
রাহি বিছানার পাশের ড্রয়ারে শুধু একটা ছবি পেলো। ফ্যামিলি ফটো। কায়ান ও আরহান ছোটবেলায় একসাথে— পিছনে তাদের বাবা মা। দেখে মনে হলো খুব উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম তাদের।
ছবিটা ভালো করে দেখার আগেই রাহির মনে হলো কে যেনো হন হনিয়া রুমে এলো। রাহি মুহূর্তে ছবিটা নিজের শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে পিছন ফিরতেই অবাক হয়ে তাকালো।
প্রায় অর্ধনগ্ন হয়ে একটা মেয়ে হিংস্র চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহি বিস্ময় নিয়ে বললো, “ কে তুমি?”
সামনে থাকা মেয়েটির পরণে পাতলা কাপড়ের একটি ছোট্ট জামা। যা তার শরীর ঢাকতে অক্ষম বললেই চলে।
“ আমি কে সেটা জেনে কি করবে? তুমি কে? তুমি নাকি কাল থেকে কায়ানের ঘরে আছো।”, মেয়েটি যেনো চোখ দিয়ে রাহিকে ভৎসনা করছে।
রাহি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো। এই প্রশ্নের উত্তর কি দিবে সে?
মেয়েটি রেগে উঠে বললো, “ তুমি তাহলে সেই নতুন মেয়ে? যার কারণে কায়ান আমাকে অবহেলা করছে।”
“ তোমাকে অবহেলা করছে মানে? তুমি কে?”, রাহির ভীষন বিরক্তি নিয়ে বললো।
মেয়েটি ঘৃণ্য চোখে রাহিকে দেখতে থাকলো তারপর বললো, “ কায়ানের ঘরে এমন সম্পুর্ন জামা কাপড় পরে আছিস কি করে? কিরে ও তোকে ছুঁয়ে দেখেনি?”
মেয়েটির মুখে হঠাৎ তুই ডাকে, নিজের ভীষন বাজে রকমের অনুভব হলো রাহির।
ছিঃ কি বিচ্ছিরি উপাধি।
রাহির গা গুলিয়ে এলো ঘৃণায়।
“ কিরে কথা বলছিস না কেনো?”, বলেই রাহির দিকে হিংস্র ভাবে এগিয়ে আসতেই এক ঠাণ্ডা কন্ঠ ভেসে এলো।
“ আমার রুমে ঢুকার সাহস হয়েছে কিভাবে তোর?”
কায়ানের কন্ঠ ভেসে আসতেই মেয়েটা জীর্ণশীর্ণ হয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। তারপর ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো কায়ান ভয়ানক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
কায়ানের পিছনে দাড়িয়ে আছে রুবান। সে সাথে সাথে একজনকে ডেকে পাঠালেন। ততক্ষণে দাঁতে দাঁত চিপে নিজেকে শান্ত করছে কায়ান।
হঠাৎ এক মধ্য বয়সী মহিলা এসে মেয়েটিকে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেলেন।
কায়ান রাহির দিকে তাকালো। মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের অন্ধকার দিকের সাথে এটাই হয়তো তার প্রথম পরিচয়।
রাহির শরীর থর থর করে কাপছে। সে সোফায় বসে পড়লো তারপর এক হাতে নিজের মাথা ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
কায়ান চুপ করে রাহিকে দেখছে। মাফিয়া জগৎ অনেক কুৎসিত, এর সম্পর্কে যত ফ্যান্টাসি বই লেখা হোক –না কেনো। সে সব শুধু কল্পনা।
এর ওয়ার্ল্ডের ভিতরের বাস্তবতা মানুষকে দুমড়ে মুচড়ে ছারখার করে ফেলে।
কায়ান এইসবের বাইরে নয়। মাফিয়ারা কখনও সাধু হয় না। ওদের হাতে লেগে থাকে রক্তের দাগ।
কিন্তু কে কি ভাবলো তাতে কায়ানের কিছু যায় আসে না।
তবুও রাহির চোখে মুখের এই ঘৃণা তার ভিতরে একটা ঝড় তুলেছে।
আরোও পড়ুন: রূপকথার শহর পর্ব-১৭| নবনী নীলা
0 Comments