মরিচিকা| মাহযুবা মালিহা| পর্ব-১

মরিচিকা| মাহযুবা মালিহা| পর্ব-১

আম্মু বল না কারা আসবে, কেন সকাল থেকে এত এত রান্না করতেছ , আমাদের এই শীতের মধ্যে তুলে কাজ করাচ্ছ তোমার কি মায়া দয়া হয় না।

রাশিদা সুলতানা রান্না করতে করতে নিজের দুই মেয়ে  মাহ্জ আর মারিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

-তোরা সেটা আসলেই দেখতে পারবি

মাহ্জ পিঁয়াজ গুলো কুচি করে কেটে মায়ের হাতে দিয়ে বলে উঠলো,

-সেটা তো সকাল থেকে শুনছি। তারা কি কোনো ভুত পেত যে নাম মুখে নিচ্ছ না,

রাশিদা সুলতানা তার বড়ো মেয়ে মাহ্জের কথায়  মেয়ের দিকে তাকালেন।মেয়ে তার ঘেমে নেয়ে শেষ। হলুদ বর্ণের মুখটা লাল হয়ে গেছে। কোমর থেকে হালকা উপরের চুলগুলোর বেহাল দশা।মেয়েটা তার বড্ডো শান্ত হয়ে গেছে ইদানিং। আগের সেই চঞ্চলতাটা আর নেই, কথাবার্তায় বড়ো বড়ো ভাব এসেছে।তার নিজের অনেক খারাপ লাগে। তাদের স্বামী স্ত্রীর ঝামেলার জন্য হয়তো মেয়েটার উপর পরিবারের দায়িত্ব অজান্তেই এসে পরেছে। রাশিদা সুলতানা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ছোট মেয়ে মারিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

-মারিয়া লিভিং রুম ভালোমত গুছানো হলে রুমে ড্রেস রেখে আসছি,গোসল করে পরে নে

মারিয়া মাথা চুলকে বলে উঠলো,

-আসলে মা একটু বাকি আছে।

-এইটুকু কাজ দিয়েছে সেটাও করতে পারিস নি,

মাহ্জ সালাত কেটে রেখে নিজের পরনের কালো ওড়না দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে উঠলো,

-মা আমি বাকিটা করছি এদিকে তো সব শেষের দিকে আমি ওদিকটা দেখছি,মারিয়া তুই গিয়ে গোসল করে নে তারপর আমি যাব,

-আচ্ছা তাহলে তুই কর,

বলেই মারিয়া দৌড়ে নিজেদের রুমে চলে গেল।মাহ্জ প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো 

-কি গো মা কারা এমন আসবে যে এত আয়োজন করছো আর আমাদের বলছো না কেন? বাবা কি নিষেধ করেছে?

-নিষেধ ঠিক করেনি আবার করেছে 

-কারা আসবে শুনি,

-তোর বাবার কোন বড়ো ভাই আসবে সপরিবারে 

-রাজনীতির কেউ তাই না,

-হয়তো,তোর বাবা তো কিছু বলে না,

মাহ্জ আর কথা বাড়ালো না সে জানে তার মায়ের এর চেয়ে বেশি জানার অধিকার নেই।মাহ্জ দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে লিভিং রুমে এসে বাকি কাজ গুলো করতে শুরু করলো,

রহমান ভিলা।তিন তালা বিশিষ্ট বাড়িটির নিচতলা ভাড়া দেওয়া আর উপর তলা গুলোতে মাহ্জদের তাসের ঘর।যা হয়তো একটু জোরে বাতাস বইলেই ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে। দুই তলার সামনের জায়গাটা উঠানের মতো ফাকা পিছনে ইটে গাথা রুম গুলো।।আর তিন তলায় চিলেকোঠার ঘর আর ছাদ তা নানা গাছে সাজানো 


এই রহমান ভিলার মালিক হাকিম রহমান।বাড়িটা তার বড্ডো শখের।আজ থেকে গুনে গুনে এক বছর আগে ঢাকার চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসেছেন সপরিবারএসেই নিজের জীবনের এক সময়কার স্বপ্নের পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। রাজনীতি তার বড্ডো ভালো লাগে।তবে তার স্ত্রী আর বড়ো মেয়ে যে একদম তা পছন্দ করেন না তা তিনি জানেন। কিন্তু ছোট মেয়ে আর ছেলে যে তার পাশে । হাকিম রহমান আর রাশিদা সুলতানার দুই মেয়ে এক ছেলে।বড়ো মেয়ে মাহজুবা বীনতে মানহা, সংক্ষেপে মাহ্জ ডাকে। ছোট মেয়ে মাহজাবীন মারিয়া আর ছেলে রাফাত রহমান আলিফ 


মাহ্জ নিজের হাতের সকল কাজ শেষে গোসল করে সবে মাত্র বেরিয়েছে। চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে।পরনে তার লাল খয়েরি রঙের থ্রিপিস আর সাদা রঙের প্লাজো।মাহ্জ নিজেকে এবার আয়নায় দেখেনি মাথায় ওড়না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। গোসলে যাওয়ার সময় শুনে গেছে যে অতিথি প্রায় চলে এসেছে।তাই তো তাড়াহুড়া করে বের হয়ে আসা 


মাহ্জ এসে মায়ের পাশে দাঁড়ালো। রাশিদা সুলতানা কামাল রঙের একটা কাতান শাড়ি পরেছেন।হাকিম রহমান গেছেন অতিথিদের আনতে। মারিয়া আর আলিফ তো দৌড়াদৌড়ি করছে। মারিয়ার নিজের গায়ের ওড়না যে কোথায় সে হয়তো নিজেও জানে না। রাশিদা একমনে তার বড়ো মেয়ে আর ছোট মেয়েকে নিয়ে ভাবছেন।এরা নাকি মাত্র এক বছরের ছোট্ট বড় তাহলে এদের ব্যবহারে এত তফাত কেন ? কই তার বড়ো মেয়ের মধ্যে তো কোনো বাচ্চাম নেই তাহলে এটা এত কেন চঞ্চল। পায়ের নিচে যেনো সরষে তার। তিনি ভাবছেন আচ্ছা তারা  তার বড়ো মেয়ের শৈশব কি নষ্ট করে দিয়েছেন এই বড়ো মেয়ের দায়িত্বের জন্য ,তাকে কি তারা খুব দ্রুত বড়ো হতে বাধ্য করেছেন।


রাশিদা সুলতানার ভাবনায় ছেদ ঘটলো মাহ্জের কথায় 


-এই মারি তোর ওড়না কই যে এখনি তো অতিথিরা চলে আসবেন যা ওড়না পড়।আর বাচ্চাদের মত এত দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন,

-আরে আপু তুই বড়ো হতে পারিস কিন্তু আমি তো সহজে বড়ো হব না বাচ্চা থাকতে হবে আমাকে অনেক দিন,

বলেই রুমের দিকে চলে গেল।আর মাহ্জ হাতের ইশারায় তার ছয় বছরের ছোট্ট ভাইকে ডেকে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে দিতে দিতে বললো,

-আর দুষ্টু করিস না, মেহমানরা পঁচা বলবে বুঝেছিস,

আলিফ ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়ালো।আর তখনি দরজা খোলার শব্দ হলো।মাহ্জ দরজার দিকে তাকালো। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ আর মধ্যবয়স্ক নারী ভিতরে প্রবেশ করছেন তার পিছনে দুটা মেয়ে।মাহ্জ অনুমান করলো একজন হয়তো তার চেয়ে এক দুই বছরের বড়ো হবে আরেক হয়তো ভার্সিটিতে পরে,

রাশিদা মাহ্জের হাত ধরে ওনাদের সামনে এগিয়ে গেলেন।মাহ্জ সালাম দিলো।ওনারা সোফায় এসে বসলেন। হাকিম কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে।মাহ্জ তার বাবার এমন ব্যবহার দেখে তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে বললো

"আপনার এই হাসি এমনিতে কই যা বাবা,কই বাড়িতে তো আপনাকে কখনো হাসতে দেখি না,

মধ্যবয়স্ক নারীটি মাহ্জের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

-তুমিই তাহলে হাকিমের বড়ো মেয়ে, কোন ক্লাসে পড় মা?

মাহ্জ সৌজন্য হেসে বলে উঠলো 

-এবার 6 এ উঠলাম 


মধ্যবয়স্ক নারীটি মাহ্জের হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বলে উঠলেন 


-দেখতো বোঝায় যায় না, বড়ো বড়ো মনে হয় 


মধ্যবয়স্ক পুরুষটি বলে উঠলো,

-মাশাল্লাহ হাকিম মেয়ে তো তোমার হুরপরি,কারো যেন নজর না লাগে

হাকিম রহমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন,

-আম্মু উনারা হলেন তোমার তৌফিক আঙ্কেল আর তাহমিনা আন্টি 


তাহমিনা শেখর পাশে থাকা মেয়েটা মাহ্জের কাধে হাত দিয়ে বলে উঠলো,

-আমি তাসনীম, তুমি অনেক সুন্দর দেখতে,

-তুমিও অনেক সুন্দর

এভাবেই আলাপ আলোচনা চলে।একে একে সবাই পরিচয় হয়।তবে মাহ্জ কিছুতেই বুঝতে পারছে বারবার সব কথার মধ্যে মণি কেন সে হচ্ছে। কথায় কথায় এই ভদ্র লোক আর ভদ্র মহিলাকে ওকে টেনে আনছে।তবে মাহ্জের তাদের বেশ ভালো লেগেছে বিশেষ করে এই তাসনীম নামের মেয়েটাকে,মেয়েটা অনেক মিশুকে।কথা বার্তার এক পর্যায়ে হাকিম বলে উঠলেন 


-ভাই অনুভব আসলো না,

-আরে কিছুদিন পর তো ওর HSC পরীক্ষা তার উপর ছেলে আমার এখন থেকেই ব্যবসা দেখে সেই নিয়েই ব্যস্ত 

-তা একটু থেকে পরে গেলেই হতো

তাহমীনা শেখ বলে উঠলেন

-বলেছি বলতো পরে আসবে

-আচ্ছা আমি কি এবার ফোন করব ভাই 

-করে দেখ 

তৌফিক শেখের অনুমতি পেয়ে হাকিম সাহেব ফোন লাগালেন সারিবকে। অন্যদিকে রাশিদা সুলতানা দুই মেয়েকে নিয়ে গিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা করছেন। নাস্তা সাজানোর একপর্যায়ে মাহ্জ বলে উঠলো 


-মা ওনারা কথায় কথায় মাকে টানছেন কেন 


পাশে থাকা মারিয়া মাহ্জের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো

-হয়তো তোকে ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ হয়েছে তাই বার বার টানছে 


মাহ্জ মারিয়ার পিঠে কিল দিয়ে বলে উঠলো 


মা ওকে নিষেধ কর তো এসব বলতে আমার ভালো লাগে না 

রাশিদা সুলতানা মারিয়ার দিকে চোখ রাঙালেন

দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়েছে অনেক ক্ষণ ।মাহ্জের এখন বিরক্ত লাগছে।এরা শুধু ওকে টানছে কথার মাঝে।কথায় কথায় মা তুমি এটা ওটা এসব বলেই যাচ্ছে।মাহ্জের মনে হচ্ছে এখান থেকে উঠে যেতে তবে তার তো উপায় নেই ভদ্রতা বলে যে একটা জিনিস আছে।তাই দাঁতের উপর দাঁত চেপে বসে আছে।কি মারিয়াকে তো এত কিছু বলছে না,সে তো দিব্যি রুমে গিয়ে ভাত ঘুম দিচ্ছে,

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।মাহ্জের মনে হলো এই সুযোগ এখান থেকে পালাবার।কারো কোনো কথা বলার আগেই মাহ্জ উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

আমি গিয়ে খুলছি বলেই নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ করে গিয়ে দরজা খুলে দিল।আর দরজা খুলতেই ভেসে উঠলো এক বলিষ্ঠ পুরুষের মুখ।পুরো দুধে আলতা গায়ের রং।লম্বা প্রায় অনেকটাই হবে।চোখ গুলো কুঁচ কুঁচকে কালো।পরনে সাদা রঙের একটা শার্ট। চুল গুলো স্টাইল করে কাটা।যে কোনো মেয়ে দেখলে ক্রাশ খেয়ে ফিট খাবে। তবে মাহ্জের প্রথম দেখাতেই ওর মনে উচ্চারিত হলো ছেলা মুরগি।মাহ্জের ফর্সা ছেলে কেন জানি পছন্দ না।তাই ছেলেটাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগলো না

মাহ্জ সৌজন্য হেসে বলল

-আসালামু আলাইকুম,কাকে চাই

ছেলেটা মাহ্জের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে । পা থেকে মাথা পযাবেক্ষণ করে।পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো।মাহ্জ হা করে ছেলেটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।যাক বাবা কিছু না বলেই ঢুকে পরলো যে।মাহ্জ ছেলেটার পিছনে গিয়ে যেই বলতে নিবে "এই আপনি ভেতরে ঢুকে এলেন কেন"

তার আগেই দেখলো ছেলেটা গিয়ে তৌফিক শেখের পাশে গিয়ে বসলো। ওদের কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারল এই সেই অনুভব।মাহ্জ ছেলেটার দিকে তাকালো। গম্ভীর মুখ করে সবার সাথে কথা বলছে। মুখে হাসির হ টাও নেই।সেসময় সারিব ও মাহ্জের দিকে তাকালো। দুইজনের চোখাচোখি হলো।মাহ্জ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল 

রাশিদা সুলতানা চোখের ইশারায় মাহ্জকে কেন জানি ভিতরে যেতে বলেন।আর মাহ্জ বাধ্য মেয়ের মত রুমে চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে আবারও তার ভাষ্যমতে ছেলা মুরগির দিকে তাকালো।

অনুভব শেখ সারিব।বাবা মার এক মাত্র ছেলে।তবে  জানি ছেলেটা অনেক বেশি গম্ভীর স্বভাবের।এসে থেকে এখন পর্যন্ত একটা বার হাসেনি।তাতে কেউ তেমন কিছু মনে করলো না। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাহিরে কেমন মেঘ জমেছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সবাই অবাক এই জানুয়ারি মাসে আবার কিসের বৃষ্টি।

আসলে এখন জলবায়ু ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।এটা কি মানব জীবনের জন্য কল্যাণকর না কি জানা নেই

অনুভবের সামনে প্রায় ৮ রকমের নাস্তা রাখা। এমনিতেই এসব আদিখ্যেতা তার পছন্দ নয়। তার উপর এই মারিয়া নামের মেয়েটা বারবার গায়ে পরে কথা বলতে আসছে।এসব কিছু সহ্য লাগছে অনুভবের।মন চাচ্ছে এখনই সব ভেঙ্গে তছনছ করতে। অনেক কষ্টে দাঁতের উপর দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করছে

এক পর্যায়ে অনুভবের ফোনে ফোন আসলো। অনুভব তা দেখে মুচকি হাসলো।এই প্রথম বার অনুভবকে সবাই হাসতে দেখলো। অনুভব ফোন নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো 

- excuse me 

বলেই বাহিরে ছাদের দিকে চলে গেল। এখানে থাকলে মন খুলে হয়তো কথা বলতে পারতো না নিজের প্রিয়তমা সাথে। একমাত্র এই ব্যক্তিই তার মুখের এই মুচকি হাসির কারণ হয়।অনুভব তার প্রেমিকা দিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ছাদের সিঁড়ি ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। এতক্ষণে বেশ জোরেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অনুভব কথা বলতে ছাদের দিকে চোখ যেতেই আটকে গেলো 

লাল খয়েরি রঙের থ্রিপিস পরা এক কিশোরীকে দেখে। পরনের ওড়নাটা ছাদের মেঝেতে পরে আছে। কিশোরীর হলুদ ফর্সা গায়ের রং যেনো বৃষ্টির পানিতে চিকচিক করছে।লালছে ঠোঁট গুলোতে বৃষ্টির পানি পড়াতে আরো আকর্ষণীয় লাগেছে।কিশোরী তার দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছে। ঠোঁটে তার মনোমুগ্ধকর হাসি 

অনুভবের চোখ আটকে গেছে। কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না কিশোরীর দিক থেকে।কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে তার।অনুভব নিজের অজান্তেই বলে উঠলো 

এই সেই  পিচ্চি যাকে দেখেছিলাম এখন তো পরিপূর্ণ রমণী লাগছে.....


Post a Comment

0 Comments