জন্মদাগ কি? জন্মদাগ কেন হয়?| What Is Birthmark?

জন্মদাগ (Birthmark) হলো ত্বকের এমন একটি অংশ যা জন্ম থেকেই বা জন্মের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায় এবং এর রঙ বা গঠন আশেপাশের ত্বকের থেকে ভিন্ন হয়। এটি এক ধরনের ত্বকের অস্বাভাবিকতা। অধিকাংশ জন্মদাগই নিরীহ এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর দিকে নজর রাখা জরুরি।



 জন্মদাগ কেন হয়?

জন্মদাগ হওয়ার সঠিক কারণ অনেক ক্ষেত্রে এখনও অজানা, তবে প্রধানত এটি দুই ধরণের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে:

রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা (Vascular Birthmarks):

যখন ত্বকের নিচের রক্তনালীগুলো সঠিকভাবে গঠিত হয় না, তখন এই ধরনের জন্মদাগ দেখা যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো একত্রিত হয়ে যায় বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রশস্ত হয়। এই ধরনের জন্মদাগগুলো সাধারণত লাল, গোলাপি বা বেগুনি রঙের হয়। উদাহরণস্বরূপ:

হিম্যানজিওমা (Hemangiomas):

এগুলো সাধারণত লালচে বা নীলচে-বেগুনি রঙের হয় এবং জন্ম থেকে বা জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায়। এগুলো প্রথমে ছোট থাকে, পরে বড় হতে পারে এবং ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।

পোর্ট-ওয়াইন স্টেইন (Port-wine stains):

এগুলো জন্ম থেকেই থাকে, গোলাপী, লাল বা গাঢ় বেগুনি রঙের হয় এবং সময়ের সাথে সাথে গাঢ় হতে পারে। এগুলো সাধারণত মিলিয়ে যায় না।

স্যালমন প্যাচ (Salmon patches)/অ্যাঞ্জেল কিস/স্টর্ক বাইট:

এগুলো হালকা গোলাপি বা লালচে দাগ যা সাধারণত কপাল, চোখের পাতা বা ঘাড়ের পেছনে দেখা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এগুলো প্রায়শই দেখা যায় এবং বেশিরভাগই ১-২ বছরের মধ্যে মিলিয়ে যায়।

রঞ্জক কোষের অস্বাভাবিকতা (Pigmented Birthmarks):

যখন ত্বকে রঞ্জক কোষ (মেলানোসাইট) একত্রিত হয়ে যায় বা অতিরিক্ত পরিমাণে রঞ্জক পদার্থ (মেলানিন) তৈরি হয়, তখন এই ধরনের জন্মদাগ দেখা যায়। এই ধরনের জন্মদাগগুলো বাদামী, কালো, নীল বা ধূসর রঙের হয়। উদাহরণস্বরূপ: * ক্যাফে-ও-লেই স্পট (Café-au-lait spots): এগুলো হালকা বাদামী রঙের চ্যাপ্টা দাগ।

জন্মগত মোল বা নেভি (Congenital moles/nevi):

এগুলো কালো বা বাদামী রঙের তিলের মতো দেখতে হতে পারে এবং এগুলো জন্ম থেকেই থাকে।

মঙ্গোলিয়ান স্পট (Mongolian spots):

এগুলো নীলচে-ধূসর রঙের দাগ যা সাধারণত নিতম্ব বা পিঠে দেখা যায়। এশীয় শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায় এবং শৈশবেই মিলিয়ে যায়। জন্মদাগের কারণ হিসেবে গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভ্যাস বা গর্ভাবস্থায় কোনো বিশেষ কাজকে দায়ী করা একটি ভুল ধারণা। এগুলোর সঙ্গে সাধারণত পূর্বজন্মের কোনো ঘটনার সম্পর্ক নেই বলে চিকিৎসাবিজ্ঞান মনে করে। জন্মদাগ সাধারণত জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক ও ডেভেলপমেন্টাল ফ্যাক্টরের কারণে হয়ে থাকে। কিছু জন্মদাগ পরিবারে বংশানুক্রমিক হতে পারে, তবে বেশিরভাগই এলোমেলোভাবে ঘটে থাকে। যদি আপনার বা আপনার শিশুর কোনো জন্মদাগ নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

Post a Comment

0 Comments