রূপকথার শহর! (পর্ব-৬)| নবনী নীলা

ভালবাসার গল্প: রূপকথার শহর! (নবনী নীলা)পর্ব-৬

ঘরটা আধা-আলো আধা-অন্ধকার। কারণ বসের বেশি আলোকসজ্জা পছন্দ না। ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে আছে। ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা দুজন দেহরক্ষী ছাড়া, পুরো ঘরে আর কোনো শব্দ নেই। ধোঁয়ায় ঢেকে আছে চারপাশ, একটা সিগারেট জ্বলছে ধীরে ধীরে। একপাশে রয়েছে বিদেশী মদের বোতল।



টেবিলের মাথায় বসে আছে কায়ান। তার ঠিক সামনে রক্তাক্ত এক বালক মেঝেতে লুটিয়ে আছে।

তখনই দরজা খুলে ঢুকলো জিসান। কায়ানের খুব বিশ্বস্ত একজন। জিসানের কপালে ঘাম, মুখে অস্বস্তি। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো।

কায়ান একবারও তাকালো না। শুধু সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল।

জিসান এগিয়ে এসে বলল, “ বস। একটা কথা ছিলো।”

কায়ান ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকালো।

জিসান ইতস্তত করে বলল, “ আজকে আহাদ মির্জাকে সরিয়ে ফেলার সময় সেখানে একটি মেয়েকে দেখা যায়। মেয়েটি পুরো ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ছিলো এটা নিশ্চিত তবে মেয়েটাকে ধরার আগেই…..।” জিসান চুপ করে গেলো।

কায়ানের ঠোঁটের কোণায় ব্যঙ্গাত্মক হাসি।, “ পালিয়ে গেছে?”

জিসান না সূচক মাথা নেড়ে বলল, “ আমরা পৌঁছানোর আগেই সেখানে সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অফিসার আরহান উপস্থিত হয়।”

কায়ান সামনে রাখা মদের গ্লাসে আঙুল দিয়ে বৃত্ত আঁকতে আঁকতে বললো, “ তুমি ঠিক দেখেছো সেটা সিআইডি অফিসার আরহান ছিলো।”

জিসান ঢোক গিলে বলল, “ জ্বি বস।”

অবশেষে সে এই শহরে এসেছে। গুড। আই লাইক ইট। আর সেই মেয়েটা কোথায়?”

এক মুহূর্ত নীরবতা রেখে তারপর জিসান হালকা গলায় আবার বলল, “ মেয়েটাকে তিনি সাথে করে নিয়ে গেছেন। দেখে দুজনকে খুব ঘনিষ্ট মনে হচ্ছিলো।”

আরহান আহমেদের সাথে কোনো মেয়ের ঘনিষ্ঠতা। ইন্টারেস্টিং। মেয়েটাকে আমার চাই । সর্বক্ষণ মেয়েটিকে নজরদাড়ির মধ্যে রাখবে।” ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি রেখে বলল কায়ান।

জিসান মাথা নিচু করে চলে গেল।

কায়ান নিঃশব্দে হাসলো।আরহান আহমেদ এই শহরে আসবে এটাই তো সে চেয়েছে। খেলা তো এইবার জমবে।

রুদ্র! তুমি কি বলছো তোমার কোনো আইডিয়া আছে?”, আরহান রাগে কড়মড় করে বললো।

স্যার। সত্যিই বলছি। আমি এখন নিকুঞ্জ ভিলার কাছেই আছি। কায়ানের লোক এই বাড়ির সামনে আছে এই মুহূর্তে।” রুদ্র ফিসফিসিয়ে বললো।

ওরা ঐখানে কি করছে?”

এখনো কিছু করেনি তবে ওদের টার্গেট ইশা। আমার মনে হয় ,ইশাকে ওরা আপনার সাথে দেখেছে হয়তো এইজন্যেই।”

আর ইউ ফাকিং কিডিং উইথ মি? ওরা আমার সাথে যাকে দেখবে তার ক্ষতি করবে?”

আমি সেটা বলিনি তবে আপনি তো জানেনই কায়ানের কাছে মেয়েরা একটা অবজেক্ট ছাড়া কিছু না।” রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।

আমি এক্ষুনি আসছি। ওরা কয়জন আছে?”, আরহান নিজের পিস্তল পকেটে ভরতে ভরতে বলল।

দুইজন।” রুদ্র বলা শেষ করতেই ফোন কেটে গেলো।

কায়ান যে কি চায় রুদ্র কিছুই বুঝে না। ঐযে কায়ানের লোক দুটো দাঁড়িয়ে আছে। ইনভেস্টিগেশন টিমের যে কেউ দেখলে বলে দিবে এরা কায়ানের হয়ে কাজ করছে। আর এদের ও সাহস আছে মৃত্যু পথ যাত্রী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রুদ্রর মায়া লাগছে কিছুক্ষণ পর এদের মৃত্যু হবে অথচ এরা জানে না। আর যার হাতে মৃত্যু হবে সে এতক্ষণে রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আরহান সেখানে উপস্থিত হলো। আরহানকে দেখে রুদ্র আস্তে করে সেলুট দিয়ে বলল,” স্যার।” তারপর একটু থেমে বললো, “ স্যার দূর থেকে নিশানা দিবো নাকি কাছে যাবো?”

বুদ্ধি কি হাঁটুতে রেখে ঘুরো? এটা আবাসিক এলাকা, গুলির শব্দে সবাই চলে আসবে। হাত দিয়ে কাজ সারতে হবে।” 

রুদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।

রুদ্র ঢিল ছুড়ে একজনের দৃষ্টি অন্য দিকে নিতেই। আরহান পেছন থেকে এসে দাঁড়ালো এক হাত দূরত্বে। হঠাৎই…একটি হাত সামনে থাকা লোকটির কাঁধে, আরেকটি ঘাড়ে। মুহূর্তেই একটি চটাস শব্দ।

একটি হালকা মোচড়েই ঘাড় ঘুরে গেল এমন এক কোণে, যেটা মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। কোনো চিৎকার নেই। কেবল নিঃশব্দ মৃত্যু।

আরহান পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো রুদ্রও নিজের কাজ সেরে ফেলেছে।

গুড। কেউ দেখার আগে লাশদুটো সরিয়ে ফেলো। আর সব  সিসিটিভি ফুটেজ রিমুভ করা চাই।” বলতে বলতে আরহান নিজের হাতের গ্লাফস খুলে ফেললো।

ইশার বাইরের থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তার ঘুম ভাঙ্গে রাত বারোটায়। শরীরটাও কেমন করছিলো তাই সে গোসলে গিয়েছে। গোসল শেষে সবে ঝর্নাটা বন্ধ করতেই দরজায় টোকা পড়লো। ইশা ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি হয়েছে মা ? তুমি ঘুমাও নি?”


উত্তরে কোনো জবাব এলো না। আবার টোকা পড়তেই ইশা বলল, “ মা একটু ওয়েট করো আসছি।”

ইশা চটজলদি তোয়ালে গায়ে পেঁচিয়ে নিলো। এতো রাতে মা কেনো এসেছে? ইশা দরজা খুলেতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ইশা চিৎকার করার জন্য মুখ খুলতেই আরহান হাত দিয়ে ইশার মুখ চেপে ধরলো।

ইশা হাত দিয়ে আরহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই,  আরহান অন্য হাতে ইশার দুই হাত পিছনে নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।

চুপ। একদম চিৎকার করবে না।”, আরহানের কথায় ইশা আরো ছটফট করতেই আরহান বলল, “ জাস্ট, ক্লাম ডাউন।”

এতক্ষণে আরহানের চোখ গেলো ইশার পরণের থাকা তোয়ালের দিকে। আরহান ইশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালো। ইশার ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তারা দুজনেই চুপ, যেনো একে অপরের হৃদস্পন্দন শুনতে পারছে।

আরহান ধীরে ধীরে তার দৃষ্টি ইশার দিকে স্থির করে বলল, “ এইভাবে তোয়ালে পড়ে কারোর সামনে আসা কতটা বিপদজনক সে ব্যাপারে তোমার কোনো ধারণা আছে ?”

ইশা এখনো ছটফট করে যাচ্ছে, নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার শত চেষ্টা।

আস্তে। এতো নড়াচড়া করলে তো তোয়ালেটা নিজের জায়গায় থাকবে না আর আমার চোখে সংযম ও থাকবে না।”, আরহান আরেকটু কাছে আসতেই ইশা আরহানের হাতে জোড়ে কামড় দিয়ে দিলো। আরহান চোখ বন্ধ করে ফেললো কিন্তু নিজের হাত সরালো না।

সাবধান। আমি ছুঁয়ে দিলে কিন্তু ক্ষত হয়ে যাবে।”, বলেই আরহান আলতো করে ইশার মুখ থেকে নিজের হাত সরালো।

ইশা দাঁতে দাঁত চিপে কড়মড় করে তাকালো। তারপর ট্রেনের গতিতে বলল, “ আপনার সাহস তো কম না। আপনি এত রাতে আমার ঘরে কি করছেন? নিজেকে কি মনে করেন আপনি? যা ইচ্ছে তাই করবেন? আপনার সাহস কি করে হলো আমার ঘরে আসার।”

আমার সাহস দেখতে চেয়ো না বিপদে পড়ে যাবে। আর এই তোয়ালে সরিয়ে জলদি জামা পড়ে আসো।”,

আপনার কথা আমি কেনো শুনবো? কি ভেবেছেন কি আপনি নিজেকে? অসভ্য লোক একটা।” রাগে ফুসতে ফুঁসতে বললো ইশা।

অসভ্যতামি না দেখতে চাইলে জলদি জামা পড়ে আসো নয়তো এইভাবেই তুলে নিয়ে যাবো।” বলেই আরহান ইশার একদম কাছে চলে আসলো।

আরোও পড়ুন:

রূপকথার শহর পর্ব-৭| নবনী নীলা

Post a Comment

0 Comments